ইনসাইড টক

‘বিএনপি কৌশলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/10/2021


Thumbnail

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সাম্প্রদায়িক ইস্যুসহ নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সাম্প্রদায়িক বিষয়গুলো খুবই দুঃখজনক, ন্যক্কারজনক। এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, এই কর্মকাণ্ডটি যারা করলো, এটা নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। শুধু নিন্দা জানিয়েই শেষ করা যাবে না। এই অপরাধীদের, এই সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদেরকে যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন এই ধরণের অপকর্মের সঙ্গে আর যাতে জড়িত হওয়ার দুঃসাহস না দেখে। এটা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। আমি মনে করি, এ কাজটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে সরকার শক্তভাবেই এই কাজটি করছে। এই বিষয়টিকে নিয়ে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তারা কিন্তু আর কেউ না, চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী। তারা বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, এই বাংলাদেশে নষ্ট করেছে। এরা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে, ধর্মীয় রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। এরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। এরা কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে বিরোধ করে, সংঘাত বাজায়, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাজানোর চেষ্টা করে। এর মধ্য দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে, রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করে।

আওয়ামী লীগের অন্ত:কলহ, এমপি-মন্ত্রীর স্ত্রী, ছেলেকে মনোনয়ন সহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা আছে বলে এখনো পরিষ্কার হয়নি। এই বিষয়টি আমরা দেখছি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। প্রশাসনের তো এই ধরণের নিষ্ক্রিয়তা, নির্লিপ্ততা দেখানোর সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের এবং সরকারের দায়িত্ব হলো এই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সিভিল প্রশাসন, যারাই থাকুক সকলে আইন অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের জীবন, মান-সম্মান, মর্যাদা, সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পূজা-পর্বণ সব কিছু যেন নির্বিঘ্নে করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। আইনের প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা করা। সে কাজটি প্রশাসন করবে। করা তাদের দায়িত্ব এবং তারা এই দায়িত্ব পালন করে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারো কোনো সংকীর্ণতা ধরা পড়ে নিশ্চয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা বোধহয় সমীচীন হবে না।

রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে অবগত। হিন্দুদের দুর্গাপূজাকে ঘিরে যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস করেছে, তারা কিভাবে করেছে, কার মাধ্যমে করেছে, পেছনে কারা মদদ দিয়েছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে পর্যালোচনা করছি এবং প্রয়োজনে আমাদের, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে আমরা নির্দেশনা দিচ্ছি, পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে-ময়দানে, গ্রামে-গঞ্জে মানুষের বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যাতে কোনো ধরণের হামলা করা না হয়, দাঙ্গা-হাঙ্গামা যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থাটি আমরা করে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, রংপুরের পীরগঞ্জে জেলে পাড়া একটি প্রত্যন্ত এলাকা। সেখানে মাইকিং হয়েছে। এটা আমরা আরো অনেক জায়গায় দেখেছি। কিন্তু ওইভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় কিছু করেছে, এ ধরণের কোনো খবর আমার কাছে নাই। এ ধরণের কোনো সংবাদ এখন পর্যন্ত আমি পাইনি।

পীরগঞ্জের ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীর নাম আসা প্রসঙ্গে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মাঝি পাড়ার ঘটনার সঙ্গে যে ছেলেটির নাম এসেছে, সেই ছেলেটি ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থক পর্যায়ের। তার নাম আসার সাথে সাথে কিন্তু তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বের করে দেওয়া হয়েছে। যেই শাখা কমিটিতে সে সদস্য ছিল, সেই শাখা কমিটিও কিন্তু বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং পুলিশ তাকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। আইন অনুযায়ী তার উপরে, তার কাছ থেকে আমরা যতটুকু জানি সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর সাথে আরো যারা জড়িত, যেমন মসজিদের মুয়াজ্জিন, সেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এখানে কিন্তু কে কোন ব্যক্তি, কোন দলের, এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আর দল হিসেবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে বিধায়ই তো সে এই ধরণের অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। সেকারণে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার করা হয়েছে এবং যে শাখা কমিটি তাকে জায়গা দিয়েছে, সেই কমিটিও কিন্তু বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই জায়গাটিতে দলীয়ভাবে কোনো ধরণের সংযোগ আছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। এটা খুব পরিষ্কার।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন। এটা ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। এই সংগঠনের সৃষ্টি থেকে অদ্যাবধি ধর্ম নিরপেক্ষ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য এই সংগঠনটি ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং এখানে কোনো ধরণের নীতি-আদর্শে সাম্প্রদায়িক শক্তি, সন্ত্রাসী শক্তি অথবা দেশবিরোধী শক্তির জায়গায় আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগী সংগঠনের থাকার কোনো সুযোগ নাই।নীতি আদর্শের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ তার সৃষ্টিলগ্ন থেকে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং এই নীতি লালন করি, পালন করি। বিভিন্নভাবে যারা বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, আওয়ামী লীগকে দায়ী করার চেষ্টা করেছে, তাদের ইতিহাস, তাদের অতীত, তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ, এরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। এরা জামাতে ইসলামের মতো সংগঠনের সাথে মিলে সরকার গঠন করে নির্বাচন পরিচালনা করে।

ব্লেইম-গেইম উল্লেখ করে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এখনো এরা ধর্মের নাম ব্যবহারকারী, ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যে সম্পর্ক, শান্তি এবং সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক আমাদের যে রাষ্ট্রীয় চরিত্র, সেটাকে বিনষ্ট করে যারা, তারাই কিন্তু বড় গলায় এখন প্রতিদিন আওয়ামী লীগের উপরে দায় চাপানোর চেষ্টা করতেছে। চোরের মায়ের বড় গলা। সেকম করেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এটা একটা ব্লেইম গেইম। তারা যে রাজনীতিটা করে একই ধারায়। ব্লেইম গেইমের মধ্য দিয়ে তারা যারা সাম্প্রদায়িক এই দাঙ্গা, হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করেছে, মানুষের জীবন, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, বাড়িঘর ভেঙ্গেছে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য, তাদেরকে বাঁচানোর জন্য, তাদেরকে আড়াল করার জন্য এই কাজটি কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তার দল কৌশলে এটা চালিয়ে যাচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭