ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে শর্মিলার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/10/2021


Thumbnail

শাশুড়ির চিকিৎসার দেখভাল করতে লন্ডন থেকে ঢাকায় উড়ে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। ঢাকায় আসার পর শাশুড়ির চিকিৎসা বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও তিনি নানা রকম মতামত দিচ্ছেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলছেন। এই সব কথা-বার্তা নিয়ে বিএনপিতে এক ধরণের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের। 

শর্মিলা রহমান সিঁথি বেগম জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী। দুই সন্তান নিয়ে কোকোর মৃত্যুর পর তিনি লন্ডনেই রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার দুঃসহ দিনগুলোতে বারবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসে তিনি আলোচনায় এসেছেন। বিশেষ করে তার বড় ছেলের স্ত্রী একজন চিকিৎসক হওয়ার পরও যখন দেশে আসেননি, তারেক কন্যা জাইমা রহমান ব্যারিস্টার হওয়ার পরও যখন দেশে আসেননি, তখন সিঁথির ঢাকায় আসা এবং বেগম জিয়ার খোঁজখবর নেওয়াটা প্রশংসিত হয়েছে বিএনপির মধ্যে। এক সময় রাজনীতি থেকে অনেক দূরে থাকা শর্মিলা সিঁথি এই দুঃসময়ে বেগম জিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বিএনপির অনেকের প্রশংসাধন্য হয়েছেন, আস্থাভাজন হয়েছেন। সেই আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতিদান হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেছেন কিনা, সে প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যেই ওঠেছে। 

বেগম খালেদা জিয়া যখন জেলে যান, তখনও তিনি দু’দফা এসেছিলেন। এরপর দেখা গেছে ২০১৮ এর নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। তারেক জিয়ার আপত্তি সত্তেও সিঁথির পছন্দে বেশ কয়েকজন ঐ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিল। সেখান থেকেই বিএনপিতে শর্মিলা যুগের সূচনা হয়েছে। অনেকেই শর্মিলা সিঁথিকে তারেক জিয়ার প্রতিপক্ষ মনে করেন এবং বিএনপির রাজনীতি নিয়ে জিয়া পরিবারে যে বিভক্তি এবং মেরুকরণ, সেখানে শর্মিলা সিঁথি একটি পক্ষ বলেই অনেকে মনে করেন। যে কয়বার তিনি দেশে এসেছেন এবং বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা-বার্তা বলেছেন, সে কয়বারই তিনি তারেক জিয়ার বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আন্দোলন এবং বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সিঁথির অবস্থান তারেক জিয়ার অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী বলেই বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন। এবারও দেশে এসে তিনি তারেক জিয়ার পছন্দের ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি দেখা সাক্ষাৎ বা কথা-বার্তা বলছেন না। বরং তিনি দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা বলছেন, যারা একসময় বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন বা বিএনপির রাজনীতিতে এখন কোণঠাসা। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঁথির সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎ করতে চেয়েও সাক্ষাৎ পাননি। অন্যদিকে বিএনপিতে তারেকের বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করে আছেন বলে শোনা যায় এরকম নেতা মেজর হাফিজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে সিঁথির কথা হয়েছে বলেও জানা গেছে। অবশ্য যাদের সাথে সিঁথির যোগাযোগ হয়েছে বা কথা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন যে, এটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা এবং বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যেই। কিন্তু বিএনপির বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, তারেককে নিয়ে যখন একটি মেরুকরণ এবং বিএনপির মধ্যেই যখন তারেককে নিয়ে কোনো কোনো মহলের অস্বস্তি, সেই সময়ে সিঁথির রাজনীতিতে নাক গলানো ইঙ্গিতবাহী। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলে যখন তারেক জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেই চলে। সকলেই বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথা বলছেন। এমনকি বিএনপিপন্থী সুশীলরাও নতুন নেতৃত্বের পক্ষে কথা বলছেন। সেই সময়ে সিঁথির ভূমিকা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সিঁথি এখানে নিশ্চয় বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেখভাল করার জন্য এসেছেন। কিন্তু এটিই তার একমাত্র লক্ষ্য যে নয়, তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। বরং এর মধ্য দিয়ে একটি রাজনীতি মেরুকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে সিঁথি কি হতে যাচ্ছেন তারেকের বিকল্প নেতা?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭