ইনসাইড পলিটিক্স

নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/10/2021


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে। তবে প্রকাশ্যে নয়, গোপনে নানা রকম অপতৎপরতার মাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জামায়াতের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদের খবর পাওয়া গিয়েছে এবং এই ঘটনার সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত আবার নতুন করে সংগঠিত এবং সক্রিয় হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা গুলো নিশ্চিত করেছে। একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী ফ্যাসিস্ট শক্তি জামায়াত। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। আর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও সেই সময় নিষিদ্ধ করেছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করেন জিয়াউর রহমান, তিনি জামায়াতকে রাজনীতি করার অনুমতি দেন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। এরপর থেকে জামায়াত বিএনপির ছত্র-ছায়ায় সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে যুদ্ধাপরাধী সেরামনি গোলাম আজমকে জামায়াতের আমির করা হলে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে প্রতিবাদে ফেটে উঠে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আর সেই প্রতিবাদে পুরোপুরি সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ।

সেই সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি প্রথম সামনে আসে। আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গীকার করে যে তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে তার নির্বাচনী ইশতেহারে। বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। আর এই বিচারে জামায়াতের  শীর্ষ নেতারা একে একে দণ্ডিত হন এবং তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারেই মারা যান যুদ্ধাপরাধীদের সেরা মনি গোলাম আজম। জামায়াতের মূল নেতৃত্ব মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা সহ একাধিক  নেতৃবৃন্দ সর্বাধিক শাস্তি পান। এই সময় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়। এসব কিছুর পর মনে করা হয়েছিল যে স্বাধীনতা বিরোধী এই অপশক্তিটি হয়তো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকাহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু এসব কিছুর পরও গণধিকৃত এই রাজনৈতিক দলটি আবার নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে এবং এই সংগঠিত হওয়ার পেছনে তাদের মূল লক্ষ্য হলো বর্তমান সরকারের পতন ঘটানো। 

জামায়াতের একটি সূত্র বলছে যে, তারা ২০৪১ কে ঘিরে পরিকল্পনা করছে। এবং ২০৪১ এ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের একটি নীল নকশা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। আর সেই নীল নকশা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে তারা মনে করছে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আর এই বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা নির্বাচন নয়, বরং তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান এবং রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে আরসার সক্রিয়তার প্রেক্ষিতে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এমন তথ্য আছে যে, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চেয়েছে। সাম্প্রতিক সময় যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনাগুলো ঘটেছে  সে সহিংস ঘটনার গুলোর নেপথ্যে যে জামায়াত ছিল তা সুস্পষ্ট । 

সামনের দিনগুলোতে শিক্ষাঙ্গনকে ঘিরে জামায়াত সক্রিয় হতে চেষ্টা করছে বলে একাধিক সূত্র মনে করছে। জামায়াতের নেটওয়ার্ক নতুন করে বেষ্টিত হচ্ছে। একদিকে তারা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে হাত মেলাচ্ছে অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে গোপন করে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচারের চেষ্টা করছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। জামায়াতের নতুন করে এ সক্রিয়তা দেশের রাজনীতিতে নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে বলে অনেকে মনে করেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭