ইনসাইড বাংলাদেশ

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন: এবারও ৮১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/10/2021


Thumbnail

একাদশ জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ এর পর বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে এক নতুন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কোনো এক দৈব কারণে জনগণের ভোট ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাচ্ছেন প্রার্থী। দ্বিতীয় ধাপের স্থানীয় সরকার নির্বাচন (ইউপি) অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। প্রথম ধাপের মতো এ ধাপেও চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ৮১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে ২০৩ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৬ জন সদস্য ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হবেন। গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, প্রথম ধাপে ৭১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। স্থানীয় কিংবা জাতীয়, নির্বাচনের নামে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার এ অসুস্থ প্রক্রিয়াটিকে ভোটার-জনসাধারণের সঙ্গে একটি প্রতারণামূলক রাজনৈতিক প্রহসন হিসেবে দেখছেন ভোটাররা।

গত মঙ্গলবার ছিল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের সংখ্যা বাড়ে।  তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিএনপি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যে, তারা এ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কোনো উপ-নির্বাচনে যাবে না। যে যাই বলুক রাজনীতি যারা বুঝেন তারা জানেন বিএনপি এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বড় দল। ফলে এমন একটি দলের নির্বাচনে না থাকায় অনেক ভোটার এমনিতেই ভোট দিতে যাবেন না। ফলে নির্বাচনের জৌলুস যে হারাবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপিই একমাত্র দল না। ফলে বিএনপির ভোট বর্জনের সঙ্গে বিনা ভোটের নির্বাচন বিষয়টিও ঠিক মিলছে না অনেকের কাছে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অধীনে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা।

নাগরিক সুবিধা নয়, নির্বাচনে ভোট দেওয়া নাগরিক অধিকার। যেকোনো নির্বাচনে দুই বা তার অধিক প্রার্থী থাকবে, জয়ী হবে একজন। উৎসুক ভোটার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। দেশে এটিই ছিল নির্বাচন ও ভোটের পাটিগণিতিক হিসাব। তবে ইতিহাস যেমন পাটিগণিতের নিয়ম মেনে অগ্রসর হয় না, তেমনিভাবে নির্বাচন ও ভোটারের হিসাবও আগের মতো নেই। এখন চলছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন। কয়েকজন প্রার্থী থাকবে। তারপর একজন বাদে বাকি সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে। আর বেচারা জনগণের হা হুতাশ করা ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরা।

একাধিক নির্বাচন বিশ্লেষক বলছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে কারণ অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীই নির্বাচনে জিতবে ধরে নিয়ে অংশগ্রহণে উৎসাহ পাচ্ছে না। পাশাপাশি এর সঙ্গে রাজনৈতিক আঁতাতের বিষয়টিও আছে। সম্প্রতি কুমিল্লা-৭ আসনের  উপ-নির্বাচনই তার প্রমাণ। বিএনপি বর্জন করলেও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে জাতীয় পার্টি এবং ন্যাপের প্রার্থী ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টি এবং ন্যাপ প্রার্থী। জাতীয় পার্টির প্রার্থী লুৎফর রেজা দলটির কেন্দ্রীয় নেতা। তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শোনা গিয়েছে। টাকা খেয়ে নির্বাচন থেকে বসে যাওয়ার অভিযোগে জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে ব্যবস্থাও নিয়েছে তার বিরুদ্ধে। জাতীয় পার্টি এবং ন্যাপ প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর পর বিনা ভোটে এমপি হলেন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। ফলে রাজনীতি এখন একটি লাভজনক ব্যবসা, আর এ কারণে কথিত নির্বাচনে মানুষের ভোটের কোনো স্থান নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যে ৮১ টি ইউপি বিনা ভোটের চেয়ারম্যান পেতে যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- সিরাজগঞ্জ সদরের সায়দাবাদ, ছোনগাছা ও সায়দাবাদ, রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া, ধমাইনগর ও ব্রহ্মগাছা; যশোর চৌগাছার ফুলসারা; মাগুরা সদরের হাজরাপুর; বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়া, যাত্রাপুর, ষাটগুম্বজ এবং মোল্লাহাটের গাংনী; জামালপুর সদরের রশিদপুর; শেরপুর সদরের কামারেরচর, গাজীর খামার ও পাকুড়িয়া; কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের বলিয়ারদি, হালিমপুর ও মাইজচর; মানিকগঞ্জের সিংগাইরের বায়রা; নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল ও ভুলতা; চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর, মুরাদপুর, কুমিরা, সোনাইছড়ি ও ভাটিয়ারী, মিরসরাইয়ের করেরহাট, ধুম, ওসমানপুর, কাটাছাড়া, মঘাদিয়া, মায়ানী, হাইতকান্দি, ইছাখালী ও ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ; কুমিল্লার লাকসামের কান্দিরপাড়, গোবিন্দপুর, উত্তরদা, আজগরা ও লাকসাম পূর্ব; ফেনীর ফুলগাজীর ফুলগাজী, মুন্সিরহাট ও আনন্দপুর; বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার, বাকাল, বাগধা, গৈলা ও রত্নপুর; ভোলার দৌলতখানা উপজেলার চরখলিফা; মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রমজানপুর; শরীয়তপুরের সদর উপজেলার চন্দ্রপুর, চিতলিয়া ও বিনোদপুর এবং লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরলরেন্স। উল্লেখ্য, প্রথম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ২৬৭ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২১ জুন ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে এবং ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম ধাপের নির্বাচনে দুই দিনে ভোটগ্রহণ করে ইসি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ২১ জুন ৭টি জেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এবং এদিন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৬৯ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ২০ সেপ্টেম্বর ১৩ জেলায় ভোটগ্রহণ হয়। এদিন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৬৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় দফার নির্বাচনে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭