ইনসাইড বাংলাদেশ

যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অচল হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/10/2021


Thumbnail

আজ ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজনৈতিক সহিংসতার এক কুৎসিত নজির স্থাপিত হয়েছিল। ওই দিন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতা ত্যাগের দিন। সেই দিন বিএনপি-জামায়াত চড়াও হয়েছিল আওয়ামী লীগের ওপর। আওয়ামী লীগ পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আর এরকম সহিংসতার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছিল এবং এই নারকীয় সহিংসতার মধ্যেই বিএনপি মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। দেশের একটি সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। আর এর মধ্যে দিয়েই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কবর রচনা হয়েছিল। তখনই প্রমাণিত হয়েছিল যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আর কোনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।

২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপুলভাবে বিজয়ী হয়। এই বিজয়ের পর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য নানারকম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকে। আর সেই পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবেই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে। বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি করা হয় এবং তিনি যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে থাকেন এ জন্যই প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরাসরি জানিয়ে দেয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে হবে নিরপেক্ষ। বিচারপতি কে এম হাসান এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শুধু জড়িত নয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন এই বিচারপতি। আর সে কারণে আওয়ামী লীগ বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে অস্বীকৃতি জানায়। আর এখান থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ঘুণ ধরেছিল।

বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান অস্বীকার করার পর তৎকালীন সময়ে যে সংবিধানের ধারা অনুসৃত হয়নি। পরবর্তী অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের জন্য আমন্ত্রণ না জানিয়ে বেগম জিয়ার পরামর্শে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী অনেকগুলো ধাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এবং সবগুলো ধাপ যদি অতিক্রান্ত হয়ে তবেই রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবেন এমন বিধান ছিল। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি স্বার্থ রক্ষার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়েই বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। এরই মধ্যে ২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারির নির্বাচন ঘোষণা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বে একটি ভাঁড়ামিপূর্ণ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, যে নির্বাচন কমিশন দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল।

আর এরকম পরিস্থিতিতে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। আর এই আন্দোলনের চাপেই এক সময় ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়কের প্রধান থেকে সরে যান এবং ১/১১ আসে। ১/১১ এর আগমনের মধ্য দিয়ে কার্যত বাংলাদেশে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর রচিত হয়। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্যারান্টি দেয় না ২০০৬ সালের অক্টোবর তার একটি বড় প্রমাণ। সেকারণেই ২০০৭ সালে ১/১১ সরকার আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সমালোচনা করেন স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খানসহ অনেকেই। এখন এই ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর হলো সেই দিন যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অচল হয়েছিল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭