ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

জলবায়ু সম্মেলন: বড়দের আশ্বাস, ছোটদের হাত চুলকানো


প্রকাশ: 02/11/2021


Thumbnail

কপ-২১ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ওই সম্মেলনে মানব জাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্য বিশ্বের ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা ঐকমতের ভিত্তিতে আগামী দিনের জলবায়ু রক্ষায় একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হন। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ করার এই সিদ্ধান্তে ২২শে এপ্রিল ২০১৬ (ধরিত্রী দিবস) এ, ১৭৪টি দেশ নিউইয়র্কে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং তাদের নিজস্ব আইনি ব্যবস্থায় (অনুমোদন, স্বীকৃতি, সমর্থন, বা প্রবেশের মাধ্যমে) এটিকে গ্রহণ করা শুরু করে। কিন্তু বিশ্বকে রক্ষার এই সাক্ষরিত চুক্তিটি আসলে কতটুকু মানছে ধনী দেশগুলো সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা হয় গ্রিন হাউজ গ্যাসকে। আর এই গ্রিন হাউজ গ্যাসের মূল উপাদান কার্বন-ডাই-অক্সাইড। পৃথিবীর বাতাসে যত কার্বন ডাই অক্সাইড মিশছে, তার অধিকাংশই আসছে মাত্র চারটি দেশ থেকে - চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও রাশিয়া। আর যৌথ ভাবে এই চার দেশের সাথে অবস্থান করছে ধনী দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কপ-২১ বা প্যারিস সম্মেলনে এই সবগুলো দেশ একমত হয়েছিলো তারা নিজেদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন রোধ করবে এবং একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে  দেশগুলিও তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫° সে: এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য "প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে" বলে আশ্বাস প্রদান করে।

বিশ্বের সবচেয়ে কার্বন নির্গমনকারী দেশসমূহ

১. চীন: বিশ্বে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয় তার মাঝে সবচেয়ে বেশি নির্গত হয় চীন থেকে। দেশটি একাই ১১,৫৩৫ টন কার্বন নির্গত করে। যার মাথাপিছু পরিমাণ ৮.১টন। দেশটি ২০৬০ সালের মাঝে তাদের কার্বন নির্গমন শূন্যর কোঠায় নিয়ে আসার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ৫১০৭টন ও গড় ১৫.৫টন কার্বন নিঃসরণ করে। যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে ২০০৫-এর স্তরের অর্ধেক কার্বন ডাইঅক্সাইড কাটছাঁট করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকার করেছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে তারা কার্বন-নিরপেক্ষ হবে।

৩. রাশিয়া: বিশ্বের সবচাইতে বৃহৎ গ্যাস ও তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। দেশটি অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই আসে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে। দেশটি ১৭৯২টন কার্বন নিঃসরণ করে থাকে। যেখানে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ১২.৫টন। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন ৩০% কমানোর কথা বলেছে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ।

৪. ভারত: পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্র ও দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারত প্রতিবছর ২৫৯৭টন কার্বন নির্গত করে থাকে যার মাঝে মাথাপিছু নিঃসরণের পরিমাণ ১.৯টন। দেশটি ২০৩০ সালের মাঝে ৩৩-৩৫% কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন ঘোষণা অনুযায়ী ২০৭০ সালের মাঝে সম্পূর্ণ কার্বন নিঃসরণ মুক্ত রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার বদ্ধ।

৫. ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন: ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জোট ইইউ কার্বন নিঃসরণে প্রথমসারির দেশগুলোর ঠিক পরেই অবস্থান করছে। ইইউ অঙ্গীকার করেছে ১৯৯০-এর স্তর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৫৫ শতাংশ কমানো হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ জ্বালানি আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। ইইউ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন-নিরপেক্ষ হবে।

এবারের সম্মেলনে যোগ দান করেনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন। আর নিরাপত্তার কথা বলে আরেক অন্যতম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ তুরস্কও এবারের সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করেনি।

কপ-২৬ কেনো গুরুত্বপূর্ণ

`কনফারেন্স অব দি পার্টিজ`কে সংক্ষেপে `কপ` বলা হয়। এবারের সম্মেলন অন্যান্যবারের চেয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এবারের সম্মেলনে প্যারিস সম্মেলনের অধিকাংশ দেশই কার্বন নিঃসরণ কমাতে তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলবে। ফলে আমরা আগেভাগেই জানতে পারবো কপ-২১ বা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আমরা কতটুকু এগিয়ে রয়েছি। প্রতিবারের মত এবারের সম্মেলনে গ্লাসগোতে হাজির হয়েছে শত শত সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী, পরিবেশ কর্মী ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ। এবারে সম্মেলন শেষে প্যারিস চুক্তির একটি সুনির্দিষ্ট সর্বসম্মত ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। সব দেশকে সেই ঘোষণায় সই করতে হবে।

জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলতে শোনা যাবে অর্থের বণ্টন নিয়ে। ধনী দেশগুলো নষ্ট করা পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে গরীব রাষ্ট্রগুলো। ধনী দেশগুলো প্রতিবছর অনুদানের আশ্বাস দিয়েও তা আশায় গুড়েবালি হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কম। অতীতে যে মাত্রায় নিঃসরণ হয়েছে তার জন্য এসব দেশের দায় নিতান্তই কম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি তাদেরকেই বেশি পোহাতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্ব যে সমস্যাগুলোর সমক্ষিণ হচ্ছে তার মূলে রয়েছে, 

. সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি

. তাপমাত্রা বৃদ্ধি

. ঘন-ঘন সাইক্লোন

. বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত

এই ধরণের নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে ক্ষুদ্র ও গরীব দেশগুলো। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য তাদের টাকা-পয়সা দরকার। যেমন, কয়লার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সোলার বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে তাদের পুঁজি প্রয়োজন। আবহাওয়ার নেতিবাচক আচরণের সাথে খাপ খাওয়াতে তাদের টাকা পয়সা দরকার। উপকূলীয় বাঁধ শক্ত করতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

উন্নয়নশীল দেশের জন্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে অনেক বাকযুদ্ধ, টানাপড়েন চলবে। ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ২০২০ সালের মধ্যে দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেবে যাতে তাদের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা সহজ হয়। কিন্তু জাতিসংঘ সম্প্রতি বলেছে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। ফলে, এই প্রতিশ্রুতির মাত্রা বাড়ানোর জন্য ধনী দেশগুলোর ওপর চাপ রয়েছে। কপ-২৬ সম্মেলনে চীন কী কী প্রতিশ্রুতি দেয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণে এ মুহূর্তে চীনই এক নম্বর কার্বন নিঃসরণকারী দেশ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭