ইনসাইড আর্টিকেল

আজ সেই ভয়াল ৭ নভেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/11/2021


Thumbnail

আজ ভয়াল ৭ নভেম্বর, ইতিহাসের আরো একটি কালো দিন। বাংলাদেশে বিভক্ত-বিভাজনের যে রাজনীতি, সে রাজনীতির বড় একটি বাঁক হলো সাত নভেম্বর। এদিনের ঘটনা জাতীয় রাজনীতিকে যে প্রক্রিয়ায় আক্রমণ করে ওলটপালট করে দেওয়া হয়, তার রেশ থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশের রাজনীতি। তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের নামে ১৯৭৫ সালের এদিনে শুরু হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ফলে এ দিনটিকে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস বলেও পালন করে থাকেন। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পৃথক নামে দিনটি পালন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সমমান প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে দিনটি পালন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল দল ও সংগঠনগুলোর অনেকে দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। আর জাসদ দিনটিকে স্মরণ করে সিপাহী-জনতা দিবস হিসেবে। 

সাত নভেম্বর যা ঘটেছিল তার কোনো ভাবেই গণতান্ত্রিক ছিল না। একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি সরকার পরিবর্তন হবে শুধুমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে, অন্য কিছুর মাধ্যমে না। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। গণতন্ত্রের বদলে বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে স্বৈরাতন্ত্র। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অস্থিরতা চলছিল। সেই অস্থিরতার একটি পরিণতি ছিল সাত নভেম্বর। 

সাত নভেম্বরের আগে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছিল। এবং নভেম্বরের প্রথমদিকে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছিল খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে। এ সময় সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্যু, পাল্টা ক্যু, নিয়ম, নীতি, শৃঙ্খলা, কোনো কিছুই ছিল না। কিন্তু জাসদ এই সময়ে খালেদ মোশারফের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং এই সময়ে জাসদের গণবাহিনী এবং সৈনিক সংস্থা তাদের সমর্থিত সৈনিকদের অ্যাকটিভ করে। এই সৈনিক সংস্থার নেতৃত্বেই তারা জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে নেয় এবং একটিা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। স্বাধীন বাংলাদেশে ৭ নভেম্বর প্রথম প্রকাশ্যে হত্যার শিকার হন ২ জন সেক্টর কমান্ডার ও ১ জন সাব সেক্টর কমান্ডার। আর এই ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে ২১ জুলাই ১৯৭৬ সালে স্বাধীন দেশে প্রথম ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন আরেকজন সেক্টর কমান্ডার। এছাড়া সেনাবাহিনীর ভেতরে ১৩ জন হত্যার শিকার হন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও কোনও সেক্টর কমান্ডারকে সরাসরি কোন যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হতে হয়নি। আর তাই হত্যার নৃশংস ভয়াবহতা ৭ নভেম্বরকে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত করেছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।

এ অভ্যুত্থানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। দেশের রাজনীতিতে অস্ত্র ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার যে মধ্যযুগীয় স্বৈরাচারী নীতি, তার সূত্রপাত ঘটে ৭ নভেম্বর। দিনটি বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের দিন, বিশ্বাসঘাতকতার দিন, পাকিস্তানি ভাবাদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টার দিন। বাংলাদেশে যেন এ ধরণের ঘটনা আর কখনোই না ঘটে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭