ইনসাইড থট

কি ঘটেছিল ৭ নভেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/11/2021


Thumbnail

খালেদ মোশাররফ যখন সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য বঙ্গভবনে দেনদরবার করছিলেন, তাহের তখন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগযাযোগ রেখে চলেছিলেন। জাসদের পার্টি ফোরাম এ সময় একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি ছিল ৯ নভেম্বর থেকে লগাতার হরতাল দেওয়া এবং ঢাকায় ব্যাপক শ্রমিক-ছাত্র-জনতার সমাবেশের আয়োজন করে একটি গণ-অভ্যূত্থান ঘটানো। জাসদের মূল রাজনৈতিক তত্ত্বের সঙ্গে এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্য পিকিংপন্থী দলগুলোর মতো তাঁরা ‘মুক্ত এলাকার বিস্তার ঘটিয়ে রাজধানী অবরোধ করার’ কৌশলে বিশ্বাস করতেন না।

৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাজদের পার্টি ফোরামের ইমার্জেন্সি ষ্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক বসে ঢাকার কলাবাগানের একটি বাসায়। এই কমিটির সদস্য ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আখলাকুর রহমান, মোহাম্মদ শাজাহান, হারুনুর রশীদ, মনিরুল ইসরাম, হাসানুল হক ইনু ও খায়ের এজাজ মাসুদ। সভায় হারুনুর রশীদ ও মোহাম্মদ শাজাহান উপস্থিত ছিলেন না। মো. শাজাহান তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। সভায় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচন চলছিল। কর্নেল তাহের সভায় এসে উপস্থিত হন। সরকারি চাকরিতে থাকার কারণে তাঁকে কোনো কমিটিতে রাখা হতো না। তবে তিনি ষ্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে অংশ নিতে পারতেন। তাহের উপস্থিত সবাইকে জানান, জিয়াউর রহমান টেলিফোনে তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ করেছেন।

কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর একজন তরুণ কর্মকর্তা আসেন অসামরিক পোষাকে। তিনি তাহেরকে ফিসফিস করে কিছু বলেন এবং তাঁর হাতে দুটো চিরকুট দেন। ওই ব্যক্তি চলে যাওয়ার পর তাহের একটি চিরকুট পড়ে শোনান। এটা জিয়ার হাতের লেখা:

আই অ্যাম ইনটার্নড, আই ক্যান্ট টেক দ্যা লিড। মাই মেন আর দেয়ার। ইফ ইউ টেক দ্যা লিড, মাই মেন উইল জয়েন ইউ (আমি বন্দী, আমি নেতৃত্ব নিতে পারছি না। আমার লোকেরা তৈরি। তুমি যদি নেতৃত্ব দাও, আমার লোকেরা তোমার সঙ্গে যোগ দেবে)।

তাহের প্রস্তাব দিলেন, জিয়াকে সামনে রেখে অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। আখলাকুর রহমান বেঁকে বসলেন। সভাবসুলভ কণ্ঠে বললেন, ‘ইতা কিতা কন? তাইনরে আমরা চিটি না।’ সভায় আর যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, বাস্তবিকই তাঁরা কেউই জিয়াউর রহমানকে চেনেন না, তাঁর সঙ্গে কোন দিন আলাপ হয়নি। সবার মুখে প্রশ্ন, জিয়াকে কি বিশ্বাস করা যায়? তাহের বললেন, ‘আপনারা যদি আমাকে বিশ্বাস করেন, ত াহেল জিয়াকেও বিশ্বাস করতে পারেন। হি উইল বি আন্ডা মাই ফিট’ ( সে আমার পায়ের নিচে থাকবে)। তাহের আরও বললেন, তিনি ইতিমদ্যে সৈনিক সংস্থার লোকদের অভ্যুত্থান ঘটানোর নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। তাহেরকে অনুরোধ করা হলো এই নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য। কারণ, অন্যদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। তাহের জানালেন, ‘এটা ওয়ানওয়ে কমিউনিকেশন। আমার লোকেরা যোগাযোগ না করলে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না।’ তিনি দ্বিতীয় চিরকুকটা বের করলেন। বললেন, এটা বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার গোয়েন্দা শাখা থেকে পাঠানো হয়েছে এবং এটু খুবই জরুরি বার্তা, তাকে লেখা:

খালেদ মোশাররফ’স মেন আর মুভিং ফাষ্ট। দ্যা আয়রন ইজ ট্যু হট। ইট ইজ টাইম টু হিট (খালেদ মোশাররফের লোকেরা খুব তৎপর। লোহা খুবই গরম। এটাই আঘাত করার উপযুক্তত সময়)

আখলাকুর রহমান তবু আপত্তি করছিলেন। তাহের বলশেভিক বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে লেনিনীয় কায়দায় বললেন, ‘টু লাইট আর নেভার’ (আজ রাতে অথবা কখনোই নয়)। সিরাজুল আলম খান হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। তাহের হাসানুল হক ইনুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। সভা শেষ হয়ে গেল। আখলাকুর রহমান রওনা হয়ে গেলেন ব্রাহ্মনবাড়িয়োর আখাউড়ার কাছে খড়মপুরে কল্লা শাহর মাজরেরর উদ্দেশে। তাঁর মাজারে মাজের ঘোরার বাতিক ছিল।

খায়ের এজাজ মাসুদের কাছে পুরো বিষয়টাই ‘বালখিল্য’ মনে হয়েছিল। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে চলে এলেন। এটাই ছিল তাঁর কমান্ড হেডকোয়ার্টার।

আবু তাহেরের নির্দেশিত অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার কথা ৭ নভেম্বরের প্রথম প্রহরে, রাত একটায়। অভ্যুত্থানের সাতটি লক্ষ্য ছিল:

১. খালেদ মোশাররফ চক্রকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা;
২. বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা;
৩. একটি বিপ্লবী মিলিটারি কমান্ড কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা;
৪. দলনির্বিশেষে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া;
৫. রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা;
৬. বাকশাল বাদে সব দলকে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা; এবং
৭. বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার বারো দফা দাবি বাস্তবায়ন করা।

নির্দেশনা ছিল রাত একটায় সুবেদার মাহবুব ফাঁকা গুলি ছুড়ে সংকেত দেবেন। তখন সৈনিকেরা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নেবে এবং ‘বিপ্লব’ শুরু করে দেবে। উত্তেজনার বশে সময় ঠিক রাখা যায়নি। এক ঘন্টা আগেই গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। একদল সৈন্য জিয়ার বাসায় গিয়ে জানান, তিনি মুক্ত, বিপ্লব হয়ে গেছে। জিয়া বেরিয়ে এলে সৈনিকেরা তাঁকে টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে নিয়ে আসেন।

তাহেরের লোকেরা ঢাকা বেতারের নিয়ন্ত্রন নেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গায়ে খাকি শার্ট-প্যান্ট, কাঁধে রাইফেল। তাড়াহুড়োয় টুপি ও বুট জোগাড় হয়নি। স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরেই চলে এসেছেন তাঁরা। এঁদের একজন ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের ছাত্রলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম। শফিকের মনে হয়েছিল, ‘বিপ্লব হয়ে গেছে, কিন্তু কী করতে হবে কেউ জানে না। পায়ে বুট না স্যান্ডেল-এটা দেখার মতো হুঁশ কারও ছিল না। ভোরবেলায় বেতারে একটা ঘোষণা দেওয়া হয়, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও বিপ্লবী গণবাহিনীর নেতৃত্বে সিপাহি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ঘোষণায় তাহের কিংবা জাসদের পরিচিত কোনো নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘোষক তাঁর নামটিও বলেননি।

ভোরে তাহের ও ইনু সেনানিবাসে যান এবং জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। জিয়া জানতে চান, সিরাজুল আলম খান কোথায়? জিয়া জাসদের মূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। সিরাজুল আরম খান তখন কোথায়, তা কেউ জানেন না। তাঁর এই হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে ধারণা করা হয়, তাহেরের এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং তিনি এর সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চাননি।

তাহের জিয়াকে ভোরে বেতারকেন্দ্রে নিয়ে আসতে এবং তাঁকে দিয়ে একটি ভাষণ দেওয়াতে চেয়েছিলেন। জিয়া তাহেরের সঙ্গে কোথাও যেতে চাননি। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা পরামর্শ দেন, সেনাপ্রধানের বেতারকেন্দ্রে যাওয়ার কী দরকার? ভাষণ তো এখানেই রেকর্ড করা যায়? এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর ওই সময়ের অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল কর্নেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। ততাঁর বর্ণনামতে, ‘ লে. কর্নেল তাহের একটি বেসামরিক জিপে করে দু-তিনজন লোকসহ সেখানে এসে উপস্থিত হন। এসেই তিনি জিয়াকে রেডিও ষ্টেশনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমরা জিয়াকে রেডিও ষ্টেশনে যেতে বারণ করি। এ সময় লে. কর্নেল আমিনুল হক ও তাহেরর মদ্যে ঝগড়া বেধে যায়। একপর্যায়ে আমিনুল হক তাহেরকে বলে বসেন, “আপনারা (জাসদ) তো ভারতের বি-টিম।” ফলে তাহের রাগান্বিত হয়ে সেখান থেকে চলে যান। শেষ পর্যন্ত জিয়ার ভাষণ সেনানিবাসেই রেকর্ড করা হয়। ৭ নভেম্বর সকালে এই ভাষণ প্রচার করা হয়। ভাষটি নিচে উদ্বৃত করা হলো:

প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশা আল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাস্য চেষ্টা করব। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বস্থানে-অফিস-আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও কলকারখানা পূর্ণভাবে চালূ থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন। খোদা হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

জিয়ার এই ভাষণে কোথাও জাসদ, গণবাহিনী বা তাহেরের উল্লেখ নেই। ভোরেই ‘সিপাহি বিপ্লবের’ ঘন্টা বেজে গিয়েছিল। এই ভাষণ ‘বিপ্লবের’ কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিল।

ঢাকা নগর গণবাহিনীর উদ্যোগে সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং জিয়া ও তাহেরের সেখানে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। জিয়া সেনানিবাসের বাইরে আসতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, একজন সৈনিক হিসেবে তিনি কোনো জনসমাবেশে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পক্ষপাতী নন। ততক্ষণে জিয়ার আশপাশে অনেক সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত হয়েছেন। জিয়া তখন অনেকটা স্বচ্ছন্দ ও ভারমুক্ত।

ছাত্রলীগ-গণবাহিনীর সদস্যরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চত্বরে শ্লোগান দিচ্ছেন, জিয়া-জলিল জিন্দাবাদ, জিয়া-তাহের জিন্দাবাদ। শহীদ মিনারে সকাল নয়টার দিকে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে আবুল হাসিব খান সবাইকে সমবেত হওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছিলেন। রাস্তায় বেশ কিছু ট্রাক দেখা গেল। ট্রাকে দাঁড়িয়ে সৈনিক ও অসামরিক জনতা মুহুর্মুহু শ্লোগান দিচ্ছেন, ‘জিয়া-মোশতাক জিন্দাবাদ’, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর’। কোনো কোনো ট্রাকে খন্দকার মেশাতাকের ছবি। ছাত্রলীগের ঢাকা নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম একটা ট্রাকে মোশতাকের ছবি ছিঁড়ে ফেলতে গেলে সৈনিকরা সালামের ওপর চড়াও হন। তাঁরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর তাঁরা সবাই শহীদ মিনার চত্বর থেকে সরে যান এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সায়েন্স অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হন।

হাসিব খানকে লালবাগ থানা দখল করার অনুরোধ জানান আনোয়ার হোসেন। হাসিবকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ হাসিনী ডিসব্যান্ড করা হয়েছে। আপনি থানা দখল করুন।’ হাসিব রাখি হননি। তাঁর কথা হলো, ‘আগে রেডিওতে পুলিশ ডিসব্যান্ড করার ঘোষণা দেন। তারপর দেখা যাবে।’ মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি ইউনিট গণবাহিনীকে বলা হয় মোহাম্মদপুর থানা দখল করতে। দেশে যদি বিপ্লব হয়ে থাকে, তাহলে আলাদা করে থানা দখল করার কী প্রয়োজন, এটা বোঝা গেল না। তবু গণবাহিনীর একটা দল মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের বলল, ‘আমরা বিপ্লব করেছি। আনারা আমাদের সাথে আছেন তো?’ এর কয়েক দিন পর ওই দলের এক সদস্য খোকনকে একা পেয়ে মোহাম্মমদপুর থানার কয়েকজন পুলিশ বেধড়ক পেটায়। খোকন ছিলেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক ধীর আলী মিয়ার ছেলে।

৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি সায়েম সন্ধ্যায় বেতার ও টেলিভিশনে একটা ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন:

রাষ্ট্রপতির পদে জনাব খন্দকার মোশতাক আহমদের পুনর্বহাল হওয়ার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত দাবি সত্ত্বেও তাঁরই অনুরোধক্রমে আমি রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি। জনাব খন্দকার মোশতাক আহমদের দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের যে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা যেকোনো উন্নয়নশীল দেশে বিরল এবং সেই দেশের জনগনের জন্য গর্বের বিষয়।...

পরিবর্তত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য আমরা কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।... এই কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হবেন। এতে তিনজন উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকবেন। তাঁরা হচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেরল জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনীর প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি তাওয়াব।... জননেতাদের সমন্বয়ে একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে।... রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে যেসব জননেতা আটক আছেন, তাঁদের অবিরম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।

বিচারপতি সায়েমের ভাষণের পরপরই খন্দকার মোশতাক আহমদের একটি ভাষণ প্রচার করা হয়। ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য যে অভূতপূর্ব বিপ্লব সংঘটিত হয়েছৈ’, ভাষণে তিনি সে জন্য দেশের সেনাবাহিনী, বিমানবাহনী, সকল নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও সর্বস্তরের জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জিয়া ঢাকা বেতার কেন্দ্রে যান। তাহের সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে বসে নতুন ও বিদায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণ শোনেন। উত্তেজিত সৈনিকেরা লিখিতভাবে তাঁদের বারো দফা দাবির একটি কাগজে জোর করে জিয়ার সই নেন। বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় জিয়াকে।


সূত্র: জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭