এডিটর’স মাইন্ড

শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ কে


প্রকাশ: 13/11/2021


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন লন্ডনে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সেখানে রোড শো উদ্বোধন করলেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালি ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে।’ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর যখন এই চমৎকার উদ্যোগ, সেদিন বাংলাদেশে ঘটল অন্যরকম এক ঘটনা। হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হলো। বলা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়াতেই নাকি এমনটা করা হয়েছে। ভালো কথা। তাহলে, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরের আগে কেন দামটা বাড়ানো হলো না? কিংবা প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ মূল্যবৃদ্ধি করলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো? এ প্রশ্ন করলাম এজন্য যে এ ঘটনা কি কাকতালীয় না স্যাবোটাজ, এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন রোডশো করছেন, সে সময় বাংলাদেশ অচল! গণপরিবহন বন্ধ। চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ। পণ্য পরিবহন বন্ধ। লঞ্চ বন্ধ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে যারা বাংলাদেশমুখী হবেন, তারা তাৎক্ষণিকভাবে কী বার্তা পাবেন? তারা জানলেন, এখানে কথায় কথায় ধর্মঘট করা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে মাল আটকে থাকে। বিপিসি জানাল, এ মূল্যবৃদ্ধি ছয় মাস পরও করা যেত। তাহলে এ তাড়াহুড়ো কেন? কেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হলো না? কেন গণশুনানি ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধি? প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সময় কেন? এটা কি তাঁর আহ্বানকে ব্যর্থ করার জন্য?

প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে তেলেসমাতি কাণ্ড হলো, তাতে আমার মনে হয় সরকারের ভেতরে একটি শক্তিশালী অংশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। তাঁর শত্রুরাও এ কথা স্বীকার করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই তো সেদিন জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যতম প্রেরণাদায়ী প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিবেচিত হলেন। বাংলাদেশ যে এখন ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত, এটা শেখ হাসিনার অবদান। কিন্তু শেখ হাসিনার অর্জন, তাঁর স্বপ্নগুলোকে বিনষ্ট করতে যেন একটি মহল তৎপর। আর সে মহলটি অন্য রাজনৈতিক দল নয়, খোদ সরকারের ভিতরই দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন এবং উন্নয়ন কৌশল খুব স্পষ্ট, স্বচ্ছ। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করেন, লালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চান। এটাই তাঁর রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নও খুব সহজ এবং সোজাসাপটা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই জাতির পিতার সারা জীবনের স্বপ্ন। এজন্য তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল কথা ছিল জনগণকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। সারা জীবন তিনি ছিলেন জনগণের পক্ষে। শেখ হাসিনাও তাই। জনকল্যাণ এবং জনগণের ক্ষমতায়ই তাঁর রাজনীতির মূল সুর। কিন্তু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের একটি অংশ যা করল তা রীতিমতো নিষ্পেষণ। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। যারা এটা করেছে তারা একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালীদের প্রকাশ্য ও গোপন প্রেম-প্রণয় রয়েছে। এরাই বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যা হলো তা ভয়ঙ্কর। প্রথমে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানালেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা। এরপর এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যা বললেন তা পিলে চমকানোর মতো। তাঁর মতে আমাদের দেশে ডিজেলের মূল্য কম হওয়ায় ডিজেল ভারতে পাচার হয়। তাহলে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা ব্যর্থ? আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাচার রোধে অক্ষম? সরকারের কাজ পাচার বন্ধ করা। পাচার রোধে মূল্যবৃদ্ধি যেন অনেকটা চোরের ভয়ে গহনা বেঁচে দেওয়ার মতো। আমাদের মন্ত্রীরাই পারেন এ রকম দায়িত্বহীন মন্তব্য করতে। কাল কি ওই মন্ত্রী বলবেন- রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে এজন্য গাড়ি চালাবেন না? কদিন পর এ রকম যুক্তিও কি দেওয়া হবে- রাস্তায় ছিনতাই হয় তাই ঘর থেকে বেরোবেন না? ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা যে শেখ হাসিনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র তা স্পষ্ট হলো এর পরের ঘটনাপ্রবাহে। মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবহন মালিক, কাভার্ড ভ্যান মালিক ইত্যাদি নানা মালিকের সমিতি একযোগে ধর্মঘটের ঘোষণা দিল। মন্ত্রীরা নির্বিকার! জনগণকে জিম্মি করা হলো। আমরা সবাই জানি এসব মালিক সমিতির নেতা কারা। এসব মালিক সমিতি সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সংগঠন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন এসব সমিতি সে দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে। আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপি পরিবহন খাতের গডফাদার। তাঁর ইশারায় মালিক-শ্রমিকরা এক ঘাটে পানি খান। অর্থাৎ সরকারের একটি অংশ জনগণকে জিম্মি করল। ৫ নভেম্বর শুক্রবার। সারা দেশে একযোগে ১৭টি ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা। এর মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ। কিছু মন্ত্রীর কাজ হলো শুধু কথা বলা। এঁদের কথা এতই কর্কশ ও বিরক্তিকর যে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও আজকাল এদের কথায় কানে তুলা দেন। ব্যস, বকাউল্লা বকে গেলেন। পাতানো খেলার মতো বলতে থাকলেন ‘হুঁশিয়ার, সাবধান!’ মালিক সমিতির নেতারা মুচকি হাসলেন। তাঁরা জানেন এসব স্রেফ কথার কথা। যথারীতি মালিকপক্ষের দাবি মেনে নেওয়া হলো। সরকার কার প্রতিনিধি- জনগণের না মালিক পক্ষের? কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আছে যার দাম বাড়লে বাজারে চেইন রিঅ্যাকশন হয়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ল। সে ঢেউ আছড়ে পড়ল কাঁচাবাজারে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে যেন এক হরিলুটের খেলা চলছে। শাকসবজি, পিঁয়াজ-কাঁচা মরিচ থেকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে। বাজার দেখার কেউ নেই। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সে আগুনকে আরও ভয়াবহ করল। করোনার সময় থেকেই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এ সময় ডিজেলের দাম বাড়িয়ে জন অসন্তোষ সৃষ্টির জন্যই কি এ তৎপরতা? জনগণকে জিম্মি করতে দেওয়ার সুযোগ কেন মালিকদের দেওয়া হচ্ছে? টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। সব সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বলা হচ্ছে সরকার শক্তিশালী। বিপুল জনসমর্থন আছে সরকারের। ঘরে বাইরে সরকারের ক্ষমতা দৃশ্যমান বটে। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় মেয়াদে থাকা একটি সরকার কিছু সিন্ডিকেটের কাছে এত অসহায় কেন? শুধু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্য করি যে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন এবং নির্দেশ দেন তার উল্টো কাজ করাটা যেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের একটা অংশের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এরা যেন শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথাই ধরা যাক। দুর্গোৎসবে যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য শেখ হাসিনা যা করেছেন, অন্য কোনো সরকারপ্রধান তা করেননি। কিন্তু শেখ হাসিনার এ অর্জন ম্লান করতে যেন মরিয়া সরকারের প্রশাসন। প্রতি বছর দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপে তিন স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়। এবার রাখা হয়নি কেন? কুমিল্লার ঘটনার পর সরকারের ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে, কেন? সর্বত্র প্রশাসন এত নির্লিপ্ত, উদাসীন কেন? গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করল? জাতির পিতা সারা জীবন অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে গেছেন। শেখ হাসিনাও তা করেন। কিন্তু তাঁর সরকারের মন্ত্রী, আমলা, প্রশাসনের কজন এ চেতনা ধারণ করেন? প্রশাসনে এখন বকধার্মিকের আধিক্য চোখে পড়ে। এদের কারণেই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তা কি আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৫০ বছরে বাংলাদেশ নতুন বন্ধু পেয়েছে, তার নাম পাকিস্তান। সরকারের ভিতর প্রভাবশালী একটি অংশ যেন পাকিস্তানের সঙ্গে রোমান্সের জন্য ব্যাকুল। পাকিস্তানের কাছে পাওনা টাকার হিসাবে নেই। বাংলাদেশে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে নজরদারি নেই। পাকিস্তানের জন্য পুরনো প্রেম যেন উথলে উঠেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সরকারের ভিতর যারা মরিয়া তারাই শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ।

বাংলাদেশে এখন লাজলজ্জাহীন তৈল মর্দন প্রতিযোগিতা চলছে। শেখ হাসিনাকে এমন কোনো উপাধি নেই যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। তাঁর প্রশংসা, স্তুতিতে মন্ত্রী, আমলারা মুখে ফেনা তোলেন। কিন্তু বাস্তবে কাজ করেন তাঁর নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। সরকারের একটি অংশের একমাত্র কাজ জনগণকে যে কোনো প্রকারে কষ্ট দেওয়া। করোনাকালে তার ভূরি ভূরি নজির আছে। গার্মেন্টস চলবে, গণপরিবহন বন্ধ কিংবা অর্ধেক গাড়ি চলবে- এর মতো উদ্ভট সিদ্ধান্ত শুধু জনগণকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই। শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করা যাবে না। বাস্তবে দুর্নীতির এক নীরব প্রতিযোগিতা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭ ফাইল গায়েব হলো। দু-এক দিন তোড়জোড় দেখলাম, এখন তা বন্ধ। ফাইল রক্ষার দায়িত্ব আমলাদের, অথচ পিয়ন-দারোয়ানদের নিয়ে টানাহেঁচড়া করে লোক দেখানো নাটক হলো। শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছেন তা-ও তিন মাস হলো। এটা ধামাচাপা দিতে আমলারা এখন চাটুকারিতায় আরও বেশি মনোযোগী হয়েছেন। অনেকেই বিভিন্ন সময়ে বলার চেষ্টা করেন, শেখ হাসিনা যা চান তা-ই হয়। কথাটা সঠিক নয়। শেখ হাসিনার অনেক আকাঙ্খার উল্টো কাজ করছে সরকারের একটি অংশ এবং প্রশাসন। শেখ হাসিনার আকাঙ্খাগুলোকে যদি প্রশাসন বুঝত তাহলে এভাবে ডিজেলের দাম বাড়াত না, এভাবে পূজামণ্ডপে হামলা হতো না। এভাবে ফাইল চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হতো না। শেখ হাসিনার একমাত্র শক্তি হলো জনগণ। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে প্রতিপক্ষ ভয় পায়। সরকারের ভিতর একটি অংশ এখন শেখ হাসিনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাঁর জনপ্রিয়তা নষ্টের চক্রান্ত চলছে। এজন্য বাজারে ছড়ানো হয়- শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই হয় না। মন্ত্রীরা ঘুষ খান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে? আমলারা বেগমপাড়ায় বাড়ি বানান প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে? নীরবে পর্দার আড়ালে চলছে এক সর্বনাশা খেলা। এ খেলায় শেখ হাসিনার দুঃসময়ের আপনজনদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনে সৎ, যোগ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের আড়াল করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে বায়ু বাবলের মতো চাটুকার বলয় ঘিরে ফেলেছে। শুধু সরকার কেন, আওয়ামী লীগের একটি অংশও যেন শেখ হাসিনার বিপরীত স্রোতে চলছে। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ বন্ধে গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী না হলেও ৫০ বার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দলের নেতারা সে নির্দেশ কি মানছেন? শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া যাবে না। মন্ত্রী-এমপিরাই এ বক্তব্যের পর দ্বিগুণ উৎসাহে বিদ্রোহী প্রার্থী দিচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। এরা মারামারি করছেন। খুনোখুনি করছেন। আওয়ামী লীগের বাইরের শত্রুর দরকার নেই। আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু এখন আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতি ত্যাগের, ভোগের নয়। তিনি যা বলেন তা করেন। ৪০ বছর দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রায় ১৮ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করছেন। একটি কলঙ্কের দাগ তাঁর গায়ে লাগেনি। তাঁর চরম শত্রুও শেখ হাসিনার সততা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে ওয়ার্ড নেতার বাসায় টাঁকশাল থাকে! গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগে যারা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা কি শেখ হাসিনার অনুসারী? যখনই শেখ হাসিনা দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন, তখন বিএনপি-জামায়াত জুজুর ভয় দেখানো হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা ভাঙা রেকর্ডের মতো বিএনপিকে গালাগালি করেন। বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে বলেও খিস্তি করেন। বিএনপি নামের এক ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ দেখিয়ে নিজেদের অপকর্ম আড়ালের চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। এরাই শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ।

মাঝেমধ্যে ’৭৫-এর আগের দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জাসদকে সামনের প্রতিপক্ষ দেখিয়ে খুনি মোশতাকরা দলে এবং সরকারে সিঁধ কাটছিল। কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, পাটের গুদামে আগুন, সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব ঘটিয়ে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে জাতির পিতার অসামান্য অবদানকে জনদৃষ্টির আড়াল করা হয়েছিল। শূন্য থেকে বঙ্গবন্ধু কীভাবে দেশকে গড়ে তুলছিলেন সে কথা জনগণকে বুঝতে দেওয়া হয়নি। জাসদকে মাঠে নামানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে। বড় করে দেখানো হয়েছিল নানা বিশৃঙ্খলা। এ রকম একটি পরিস্থিতিতেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘটানো হয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমদরা ছিটকে পড়েছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে। ষড়যন্ত্রকারীরা ঘিরে ফেলেছিল বঙ্গবন্ধুকে। দলে এবং সরকারে। আমরা কি সে রকম একটা পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে? পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় পরিসরের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে বাংলাদেশে। এসবের সুফল পাবে এ দেশের জনগণ। বদলে যাবে বাংলাদেশ। তার আগে দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যেখানে পদ্মা সেতুর নির্মাণে মানুষের আবেগকে হত্যা করা হচ্ছে বরং পিঁয়াজের দাম বাড়ায় জনগণ ক্ষুব্ধ। মেট্রোরেলের সুবিধার চেয়ে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষ বিরক্ত। প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করতে করতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তি কি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত?

আমার এ উদ্বেগের কারণ একটাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর শেখ হাসিনা এখন সমার্থক। শেখ হাসিনা ছাড়া এই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ভরা। তাই শেখ হাসিনার আসল প্রতিপক্ষ কারা, তা এখনই চিহ্নিত করতে হবে। কারণ বাইরের শত্রুর চেয়ে ঘরের শত্রু ভয়ংকর!

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭