ইনসাইড থট

আমাদের কাছে নির্বাচন ছিলো আনন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/11/2021


Thumbnail

বেশি দিন আগের কথা নয়, একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা,তখন আমাদের কাছে নির্বাচন মানেই ছিলো আনন্দ। আমাদের কাছে তখন নির্বাচন ছিলো উৎসব।তখন আমি প্রাইমারির শিক্ষার্থী। সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলো। আমাদের গ্রাম থেকে মেম্বার পদে তিন জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো। একজনের প্রতীক কলসি,আরেক জনের মোরগ,অন্য একজনের মই। আমরা স্কুল থেকে ফিরেই মিছিল বের করতাম। একদিন মিছিল করতাম কলসি`র,আবার পরের দিন মোরগ প্রতীকের, পরদিন মই প্রতীকের। আবার এমন ও হয়েছে সকালে এক প্রার্থীর তো বিকেলে অন্য প্রার্থীর।

মিছিল শেষ হতো প্রার্থীর বাড়ি গিয়ে। আমাদের ১০/২০ টাকা বকশিস দিতো, তা দিয়ে বিস্কুট কিনে আনন্দ করে সবাই মিলে খেতাম। সপ্তাহে একদিন উঠান বৈঠক হতো, আমরা সব বৈঠকেই যেতাম, সেদিন খিচুড়ি রান্না হতো। আমরা বৈঠক শেষে মজা করে খেতাম। আবার নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসলে বড় বড় মিছিল হতো,মিছিল শেষে ঠোঙ্গা বোঝাই মুড়ি-গুড় দিতো,আমরা মজা করে খেতাম। প্রার্থীর বাড়িতে রাতভর আড্ডা হতো,ভোটাররা চা-পান খেতো,গল্প গুজব করতো,এ যেন মিলন মেলা। মোট কথা কে হারবে, কে জিতবে তা আমাদের চিন্তার বিষয় ছিলো না। নির্বাচন ছিলো আমাদের কাছে এক উৎসবের নাম।

তখন নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিড়ি, সিগারেট, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি পুরস্কার দেবার প্রচলন ছিলো।আমাদের ছোটদের দিতো বিস্কুট, ৫/১০ টাকা। আমরা লুকিয়ে মাঝে মধ্যে ২/১ টান বিড়ি-সিগারেট ও খেতাম।

চাকুরীজীবীরা নির্বাচনের দিন বাড়ি আসতো। বাড়িতে ভাল-মন্দ রান্না হতো, আমরা নতুন জামা কাপড় পড়ে ভোট কেন্দ্রে যেতাম। সারা দিন ভোট গ্রহণ চলতো। ভোট কেন্দ্রে মেলা বসতো। মেলায় খেলনা থেকে শুরু করে ভাজা জিলাপি, পিয়াজু, বিভিন্ন পিঠা সহ নানা ধরনের খাবার বিক্রি হতো। আমরা টাকা জমাতাম এই দিনের জন্য।

বিকেলে ফলাফল ঘোষণা হতো। আমরা বিজয় মিছিল করতাম। দুদিন ধরে গ্রামে চলতো বিজয় উৎসব। এরপর বিজয়ী প্রার্থী গরু জবাই করে গ্রামবাসীকে খাওয়াতো।

আমরা কবজি ডুবিয়ে খেতাম। সাত দিন পর আবার সবাই যার যার মতো স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করতো।কিছুটা রেষারেষি থাকলেও তা খুব বেশি প্রকাশ পেতো না।

বর্তমানে সেই উৎসব টা নেই। এখন ভোট আসে,ভোট যায়,আমরা আনন্দ পাই না। সেই মিছিল হয় না। রাতভর নির্বাচনী আড্ডা হলেও আগের সেই আমেজ টা নেই। ভোটের দিন আগের মতো আর কেউ সেজেগুজে  কেন্দ্রে যায় না। অনেকেই ছুটি নিয়ে বাড়ি আসে না। আগের সামাজিক সম্প্রীতি আর চোখে পড়েনা।

দিন পালটে গেছে। চারপাশে ডিজিটাল ফেস্টুন, ব্যানার, নির্বাচনী গান, মাইকিং, প্রজেক্টর, অথচ আমার ছেলেবেলার সেই হাতে আঁকা ব্যানারটা আমি খুঁজে পাই না। দড়িতে বাধা কাগজের পোস্টার এখন নেই। আমরা আর দলবেঁধে মিছিলে যাই না। মিছিল শেষে মুড়ি-গুড়ের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষা করি না।

আমার আগের মতো নির্বাচন চাই। আমার উৎসব চাই। আমি আবার দলবেঁধে ভোট কেন্দ্রে যেতে চাই। ভোটের দিন মেলা চাই। আমি ভোটকেন্দ্র গিয়ে গরম গরম গুড়ের জিলাপি খেতে চাই। আমি আবার ভোট গণনা শেষে বিজয় মিছিল করতে চাই। আমি আবার সামাজিক সম্প্রীতি চাই। আমার ছেলেবেলার দিনগুলো ফেরত চাই।আমি পরের নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে চাই।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭