ইনসাইড থট

যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ?


প্রকাশ: 19/11/2021


Thumbnail

আমার এই লেখা যখন বাংলা ইনসাইডারে যাচ্ছে সেদিনই আওয়ামী লীগের খুব গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী পরিষদের সভা হবে। এই সভাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে সম্প্রতি তৃণমূল লেভেলের নির্বাচন, অর্থাৎ এই যে চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মত সংগঠনের যে ফল হয়েছে তাকে ভরাডুবি ই বলা চলে। নিশ্চয়ই এটার মূল্যায়ন করা হবে। যেহেতু আমি আওয়ামী লীগের নেতাও নয়, এমন বড় কোনো কর্মী ও নয় এবং সম্প্রতি কালে কোন আওয়ামী লীগের নেতা বা গুরুত্বপূর্ণ কর্মীর সাথে আমার এ বিষয়ে আলাপ হয় নি। কিন্তু বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যে সকল খবর পড়েছি তাতে আমার নিজের মনেই কতগুলো প্রশ্ন জেগেছে। সেজন্যে ঐ প্রশ্ন গুলোর বিষয়ে আমি আজকে আলোকপাত করবো। কোন কোন পত্রিকার মতে ৪২% চেয়ারম্যান হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এবং বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের  অফিশিয়াল যে ক্যান্ডিডেট দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের জামানত বাজেয়াপ্রাপ্ত হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিশ্বে শুধু  উচ্চ পর্যায়ের একজন নন্দিত নেত্রীই নন, তাকে ভালোবাসার দিক থেকে তার নেতৃত্বের গুণাবলির দিক থেকে যে কোন বিশ্বের বাইলেট্রাল ইস্যু বা মাল্টিলেট্রাল ইস্যু গুলো নিয়ে যখন কোন গোলযোগ দেখা যায় সেসব জায়গায় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই তারা মনে করেন তিনি এ বিষয়ে সমাধান দিতে সক্ষম। 

অর্থাৎ নেত্রী এখন কোন পর্যায়ের নেতৃত্বে গিয়েছেন সেটা সকলেই বুঝে। বাংলাদেশের নির্বাচন যদি প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি হতো তাহলে নেত্রী পেতেন ৯৫% ভোট আর ৫% ভোট কেউ যদি দাঁড়াত বা কিছু হতো তারা পেতো। বিশ্বব্যাপী চেঁচামেচি হতো যে বাংলাদেশে কোন সঠিক নির্বাচন হয়নি। আসলে বাস্তব হচ্ছে যে, জননেত্রী শেখ হাসিনার তুলনা করার মতো এখন নেতা বা নেত্রীর  সামগ্রিক ভাবে যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে জার্মানির মিসেস মার্কেল সাথে নেত্রী সমপর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এখন অতীত হয়ে গেছেন। এই অবস্থা যেখানে সেখানে এমন অবস্থা কেনো ঘটলো, কালকে হয়তো নিশ্চয় আলাপ আলোচনা হবে এবং যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে তাদের ব্যাপারেও কোন না কোন কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে কারণ তারা সরাসরি নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করেছেন। কিন্তু একটি গভীরে যেতে হবে, আমরা সাম্প্রতিক কালে বেশি গভীরে যাই না। যেমন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী শুধুমাত্র জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক সহ কয়েকজনের মাঝে সীমাবদ্ধ রেখে এবং এর সাথে আমরা সাম্প্রতিককালে অনেকে আলাপ আলোচনা করার ফলে তাহেরও যে এর সাথে সম্পৃক্ত এই বিষয়টিও সামনে এসেছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড, মূল্যায়ন সেটি অনেক বলার পরেও হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না সেটি বোধহয় আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেও জানে না। ঠিক তেমনি ভাবে তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনটি প্রায় দুই বছর পরে যে নির্বাচন হবে তাতে এরা ফ্যাক্টর হবে। তবে অনেক নেত্রী শেখ হাসিনাকে আন্ডার এস্টিমেট করে ভাবতে পারে যে এই নির্বাচনে এমন ভাব হয়েছে যে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের ভেতরে মত-পার্থক্য এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে এটাকে সমাধান করে তারপরে জাতীয় নির্বাচনে জয় কঠিন হয়ে যাবে। অনেকেই ভাবছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে একটা চাপ আসবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ৬০ বছরের উপরে চিনি, আমি জানি ঐসব কিছুই না। এটাকে কীভাবে ঠিক করতে হবে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাথার মাঝে আছে।  

তবে আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায় যে, এই যে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ালো, এরা কেন দাঁড়ালো? বিদ্রোহী প্রার্থী সবসময়ই বেসিক লেভেল থেকে শুরু করে সব লেভেলেই দাঁড়ায়। তবে আওয়ামী লীগের এখন এমপি লেভেলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় কমেই গেছে বা নাই বললেই চলে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই পর্যন্ত একদম ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। তারপরও যদি কেউ হারে সে তো নির্বাচনে হার-জিত আছেই। কিন্তু তৃণমূল নির্বাচনে কতগুলো ফ্যাক্টর নির্ভর করে। যেহেতু ১৯৯৬ থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকে অফিশিয়ালি আমি কোন দায়িত্বে থাকি আর না থাকি, আমি গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের ঘুরেছি এবং নেত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী আমি বুঝেছি যে আমার কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্ব হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া, কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে সঠিকভাবে চলে তার জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই কমিউনিটি ক্লিনিক এর সাথে সম্পৃক্ত করা এবং তৃতীয় খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমার উপর এসে পড়েছে সেটি হচ্ছে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যারা বঙ্গবন্ধুর লোক তারা, বা যারা বঙ্গবন্ধু কিংবা নেত্রীর পক্ষে সরাসরি না তারাও এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে ইমপ্রেস হয়ে তারা যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে তার কন্যা ফলপ্রসূ করেছেন এটি সঠিক ভাবে বুঝতে পারে। অর্থাৎ এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রান্তিক নেতৃবৃন্দ যারা, এরা কেউ ইউনিয়ন পর্যায়ের উপরে না অর্থাৎ ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যানই হচ্ছে আমার সীমারেখা, তার উপরে কি হলো সেটা নিয়ে আমার কোন কোন কনসার্ন নেই। কিন্তু এই পর্যন্ত আমার নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং সেই ভাবে গত একবছর এটা ঠিক আমি যেতে পারিনি, কিন্তু আমি গেলেও যে বিরাট কিছু হতো তা না। সেই কারণের জন্যও আমার নিজেকেও অপরাধী মনে হচ্ছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন, ফরমালি কোন পোস্ট না থাকার পরও তিনি বিশ্বাস করতেন আমি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আমি একটা যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে চলেছি। তাহলে কি যোগাযোগ রাখলাম, সে জন্য আমাকে ব্যথা বেশি দিয়েছে। আমি যেটুকু জানতে পেরেছি, ইতিমধ্যে এসে কমিউনিটি ক্লিনিক দুই-একটা ভিজিট করে আনঅফিসিয়ালি তাতে দেখেছি যে প্রায় সব জায়গায় যারা বিদ্রোহী প্রার্থী, তাদের সাথে লোকাল এমপি, নেতা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত ইনভলব হয়েছে। যার ফলে তারা সাহস করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী হতে। তাহলে যদি কাওকে সাজা দিতে হয় তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় যারা গুলি চালিয়েছিলো শুধু তাদের সাজা দিয়েছেন কিন্তু যে সমস্ত ব্যক্তিরা তাকে হত্যার পরিবেশ তৈরি করে দিলেন তারা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকবেন তাতো হতে পারে না। সুতরাং আওয়ামী লীগকে নেত্রী যেভাবে চালাতে চান সেভাবে চালান এবং যেকোনো প্রসেসে নির্বাচন হোক না কেন যদি সঠিক নির্বাচন হয় তবে নেত্রী জিতবেন এবং এই জেতার জন্য উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ধোলাই দিতে হবে। এখানে শুধু যে লোক টা বিদ্রোহীভাবে চেয়ারম্যান হলো সেই শাস্তি পাবে তাহলে তা হলো না। 

আমি সে জন্য খুব জোর দিয়ে বলছি এবং আমার বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রেইনের ভিতরে এসব থাকে এটা হবে। কিন্তু আমার লেখার উদ্দেশ্য হলো এটা যেনো বেশি করে হয় তাহলে ভবিষ্যতে এমন কিছু হবে না, আওয়ামী লীগ আরো সুসংগঠিত হবে এবং অতীতের নির্বাচনের মত একি ফলাফল পাবে। এই যে লোকে বলে এখন নির্বাচনে একটা গ্রুপ আছে যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভোট দিতে যায় না, বিদেশীরা অনেক বড় বড় কথা বলে। আমাদের দেশ তুলনামূলকভাবে গরীব হলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করছেন, দলকে পরিচালনা করছেন। আমি মনে করি অতিতে নেত্রী অনেক ছাড় দিয়েছেন, এবার কোন অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া চলবে না। উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত কোন ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ শুরুতেই যেটা বলেছিলাম যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ। ওরা তো চেয়ারম্যান প্রার্থী, ওদের উপর থেকে যেভাবে বলছিলও ওরা তো ঐভাবেই নাচছে। ওদের মনে মনে তো ইচ্ছা ছিলোই কিন্তু তারা থেকে যেতো, তারা থামে নি কারণ তাদেরকে পেছন থেকে জোর দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তারা এখানে পুতুলের রোল প্লে করেছে, এখানে যদি শুধু মাত্র চেয়ারম্যানদের কে শাস্তি দেওয়া হয় তবে এখানে পুতুলকেই শাস্তি দেওয়া হবে কিন্তু সত্যিকারে আসল জায়গায় হাত দেওয়া হবে না। আমার বিবেক বলে সেটা একেবারেই অন্যায় হবে। আশা করি যতদিন নেত্রী দলের প্রধান আছেন, দেশ চালাচ্ছেন, দল চালাচ্ছেন ততদিন তিনি এরকম অন্যায় হতে দিবেন না। সুতরাং এবার আমরা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ধোলাইয়ের রেজাল্ট দেখার অপেক্ষায় রইলাম।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭