ইনসাইড ইকোনমি

স্বপ্ন নিয়ে প্রচেষ্টার এগিয়ে চলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/11/2017


Thumbnail

রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামলেই চোখে পড়ে ছোট ছোট শিশু জুস, পানি, পত্রিকা বা হাতে ফুল নিয়ে বিক্রির জন্য ছুটছে এ গাড়ি থেকে ও গাড়িতে। নাছোড়বান্দার মতো অনুরোধ করছে তার কাছে থেকে জিনিস কেনার জন্য। আবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলে দেখা যায় আমার আপনার সন্তানের বয়সী ছেলেমেয়েরা ব্যাগ টানছে, কেউ বা ভিক্ষা করছে। অথচ আর দশটা শিশুর মতোই এ বয়সে তাদের স্কুলে থাকার কথা।বন্ধুদের সাথে হাসি আনন্দ আর খেলাধুলায় শৈশব মুখরিত হওয়ার কথা। কিন্তু নির্মম বাস্তবতায় ক্ষুধা মেটানোর তাড়নায় এই বয়সেই পথে নামতে হয়েছে তাদের। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত এ শিশুদের কথা আমরা ক’জন ভাবি? কিন্তু একঝাঁক তরুণ ঠিকই ভেবেছে তাদের কথা। তাদেরও আছে শিক্ষার অধিকার। দায়িত্ব নিয়েছে তাদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার। আর এই শুভ চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশান।২০১৩ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে নামের মতোই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে বড় পরিবর্তনের দিকে। বিয়ে কিংবা জন্মদিনের মতো নানা উৎসবে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছে ফুডব্যাংক।শহরের ছিন্নমূল ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছে দু মুঠো খাবার। জরুরি প্রয়োজনে ব্লাড ডোনার্স গ্রুপের মাধ্যমে সংগ্রহ করছে রক্ত।



শুরুর কথা….
২০১৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইকরাম উদ্দিন আবির গিয়েছিলেন এক বস্তি জরিপে। সেখানে গিয়ে দেখেন , পলিথিন আর বাঁশ অথবা টিনের খুপরিতে কোনো রকমে ঠাসাঠাসি করে মাথা গুঁজে বাস করছে মানুষগুলো। তিন বেলা খাবার নিশ্চয়তা নেই, নেই স্যানিট্যাশন সুবিধা। আর শিক্ষা বা সচেতনতার তো প্রশ্নই আসে না। বাঁচার তাগিদে ছোট ছোট শিশুদের কেউ মানুষের বাসায় কাজ করে, কেউ বা আবার পথে পথে এটা ওটা বিক্রি করে। এগুলো দেখে নিজেই এ মানুষগুলোর জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন ইকরাম উদ্দীন। ভাবলেন, শুরুটা করবেন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই। এ কথা শেয়ার করলেন আরো পাঁচ তরুণের সঙ্গে। সে বছরই পয়লা ফেব্রুয়ারি শুরু হলো প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের পথচলা। তেজগাঁও বেগুনবাড়িতে বাসার ছাদে মাত্র ১১ জন শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হলো প্রচেষ্টা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। কয়েকমাসের মধ্যেই স্কুল চালানোর খরচ নিয়ে সংকটে পড়েন তারা। কিন্তু তারপরও হাল ছাড়েননি।২০১৪ সালে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন তার দ্বিতীয় স্কুলটি শুরু করে তেজগাঁও বাউলবাগে। এখন দুই স্কুল মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখানে শিশুরা বিনামূল্যে বই খাতা থেকে শুরু করে স্কুল ভ্যাগ, জুতা, পোশাক সবই পাচ্ছে। সাতশো টাকা মাথা পিছু খরচে প্রচেষ্টার একেকজন সদস্য একটা করে বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছেন। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন । মাত্র ৫ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে যে সংগঠনের জন্ম, তা আজ ২৩০ জনের একটি পরিবার হয়ে উঠেছে।

প্র্রচেষ্টা ফুড ব্যাংকিং:
শহরের অলি গলিতে প্রতিদিনই বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা থেকে শুরু করে কত ধরনের উৎসবে মেতে উঠি আমরা। উৎসব শেষে দেখা যায় প্রায়ই অনেক খাবার বেঁচে গেছে । যার বেশির ভাগই নষ্ট হয়। অথচ এই শহরেই এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিদিন আধপেটা খেয়ে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছে।এই খাবারগুলো যদি তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যেত তাহলে কেমন হয়? ঠিক এ কথাই ভাবছিলেন প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা আরিফ আর হোসাইন। জানালেন প্র্রচেষ্টার সদস্যদের। সানন্দে রাজি হয়ে তারাও নেমে পড়লেন ফুড ব্যাংকিংয়ের কাজে।কোথাও খাবার বেঁচে গেলে ০১৮৪২০০২০২৩ এই নাম্বারে ফোন করলে যত রাতই হোক প্রচেষ্টার সুপার ভলান্টিয়ার বাহিনী পৌঁছে যাবে।খাবার সংগ্রহ করে দিয়ে আসবেন অসহায় মানুষদের কাছে। তালতলা, খিলগাঁও থেকে তারা প্রথম যাত্রা শুরু করলেও, এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা শহরে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া উদ্যোগটি এখন পর্যন্ত মোট দেড়শ বার প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে খাবারের জোগান দিয়েছে।এছাড়া রয়েছে প্রচেষ্টার ব্ল্যাডব্যাংক। এর মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে জোগাড় করে দেওয়া হয় রক্ত । বর্তমানে প্রচেষ্টা ব্লাড ব্যাংকের ডাটাবেজে আছে ১০ হাজার ডোনারের তথ্য।চলতি বছর থেকে শুরু করেছে প্রচেষ্টা রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট।গাইবান্ধার বন্যা দুর্গত একটি এলাকায় ৪০টি পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে দিয়েছে সেলাই মেশিন, ছাগলসহ ফসলের বীজ।

এগিয়ে চলায় প্রচেষ্টার স্বপ্ন:
শিশুর মতোই দিন দিন বেড়ে উঠছে প্রচেষ্টা। স্বপ্ন দেখে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটা সুবিধাবঞ্চিত শিশুর কাছে পৌঁছে যাবে শিক্ষার আলো। দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নানা কষ্টের মধ্যে মুখে হাসি ফোটাতে নানা ভাবনার বাস্তব রূপ নিয়েই কাজ করে চলেছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাসেবীরা।




বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭