ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকারে সর্বোচ্চ সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/11/2021


Thumbnail

অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার অসুস্থতাকে একপ্রকার পুঁজি করেই রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে বিএনপি। যার ফলশ্রুতিতে দেশে একপ্রকার অরাজকতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা করছে কয়েক লাখ লোক জড়ো করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকার রাজপথ দখলে রাখতে পারে এবং সহিংসতা মূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে।

বিএনপি বেগম জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে দলের নেতা কর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতান্ডকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করার পরিকল্পনা করেছে দলটি।

বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটর করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়ে কিছু সুপারিশও করেছে। সেই সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দফতরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন, বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণে স্বনামধন্য আইনজীবীদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন, বিএনপির ঢাকাসহ দেশের সব কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং রাজধানীতে প্রবেশে কড়াকড়ি ও আবাসিক হোটেল-মেসে পুলিশি রেইড চালানোসহ এক ডজন সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশজুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় কর্মরত যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকার বাইরে ছিলেন, কর্মস্থলে তাদের যোগ দিতে বলা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনের ১২ দফা সুপারিশ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে ২১ নভেম্বর দেওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আটটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে ১২টি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে চারটি সুপারিশই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সংক্রান্ত। এগুলো হলো- খালেদা জিয়াকে আইনানুগভাবে চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে পাঠানোর কোনো সুযোগ রয়েছে কি না তা বিচার-বিশ্লেষণ করতে দেশের স্বনামধন্য আইনজীবীদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা যেতে পারে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিতকল্পে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। এমনকি বিশেষ প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের বাইরে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা, গৃহীত পদক্ষেপ এবং আইনি ব্যাখ্যা ও বাধ্যবাধকতা সবার মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

বাকি সুপারিশগুলো হলো- খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি-সংক্রান্ত। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর সব ধরনের অপচেষ্টা রোধ করতে হবে। রাজধানীসহ দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও মফস্বল এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে, যাতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার অজুহাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা মহানগরীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আগমন ও সমাবেশ ঘটতে না পারে। বাইরে থেকে ঢাকামুখী যানবাহনগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকেন্দ্রিক আন্দোলনে বাইরের জেলাগুলো থেকে লোকজন ঢাকামুখী হতে না পারে। পুলিশের টহল, চেকপোস্ট ও তল্লাশি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সন্দিগ্ধ ব্যক্তি ও মোটরসাইকেলসহ সন্দেহজনক যানবাহনে তল্লাশি জোরদার করতে হবে। রাজধানীর আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন মেসে যাতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতান্ডকর্মীরা অবস্থান করতে না পারে, সে জন্য পুলিশি রেইড চালানো যেতে পারে। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের সব বিএনপির কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কর্তব্য পালনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। আগাম গোয়েন্দাতথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি রোধ করা যায়।

পর্যবেক্ষণে যা বলা হয়েছে : খালেদা জিয়া বর্তমানে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তিনি সরকারে দেওয়া শর্তাধীন জামিনে থেকে চিকিৎসার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু তার অসুস্থতাকে পুঁজি করে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে। তার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে দলের নেতান্ডকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় নেতান্ডকর্মীরা সেটিকে ইস্যু করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ষড়যন্ত্র করছেন। তার অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতান্ডকর্মীদের রাজধানীতে জড়ো করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। লক্ষাধিক নেতান্ডকর্মীকে জড়ো করে ঢাকার রাজপথে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথ দখল করে রাখা এবং সহিংসতা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে। খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপি নেতা তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করে তার মায়ের অসুস্থতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন এবং সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

খালেদা জিয়ার মৃত্যু-পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, তাঁর মৃত্যু, জানাজা ও দাফন ইত্যাদি কর্মকান্ডকে ঘিরে দলের বিশেষ রাজনৈতিক পরিকল্পনার ছক রয়েছে বলে তথ্য আছে। জানাজা শেষে নেতান্ডকর্মীরা রাজপথে বসে পড়তে পারেন এবং তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া মারা গেলে তার কবর চন্দ্রিমা উদ্যানে তার প্রয়াত স্বামী জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দেওয়া হবে বলে জানা যায়। ফলে বিএনপি কর্তৃক চন্দ্রিমা উদ্যানকে দলীয় মাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সার্বক্ষণিক ব্যাপক লোকসমাগম ঘটানোর এবং সেটিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেশে ব্যাপক মিছিল, শোভাযাত্রা, ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতান্ডকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের বাইরে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে আইনি বিধি-বিধানের অপব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের সুহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণে বিদেশে যেতে ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছুক নয় মর্মে ইতিমধ্যে একাধিকবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিএনপির নেতান্ডকর্মীরা শুধু সরকার-বিরোধিতার স্বার্থে তার অসুস্থতাকে ব্যবহার করছে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭