ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি: বিএনপির ‘নতুন’ রাজনীতি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/11/2021


Thumbnail

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিশেষ ভালো না বলে জানিয়েছে বিএনপি। গত ১৩ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৮ নভেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম জিয়া ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’। পাশাপাশি এ দাবি আদায়ে মাঠেও নেমেছে বিএনপি। তবে সরকারের ভাষ্য, আইন অনুযায়ী সেই সুযোগ পেতে হলে খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে৷

অবশ্য যারা বেগম জিয়ার চিকিৎসা করছেন, তাদের কেউ এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে বলেননি যে আসলে কি অবস্থায় আছেন বিএনপি নেত্রী। এ রকম পরিস্থিতিতে কি কারণে তাকে বিদেশে যেতে হবে, বিদেশে গেলে তিনি কি সত্যি সুস্থ হয়ে উঠবেন, নাকি বিএনপি সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্য বার্ধক্যজনিত নানা রোগের কারণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বেগম জিয়াকে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে তা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি সরকার যদি মানবিক কারণে শেষমেশ অনুমতি দেয়, তাহলে সরকার যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, তা কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে, সমান্তরাল এ কথাও রাজনৈতিক অঙ্গনে উচ্চারিত হচ্ছে।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন, কথাটি কি হাসপাতালে যারা ওনাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেসব ডাক্তাররা দিচ্ছেন নাকি বিএনপি নেতারা ‘রাজনৈতিক অভিলাষ’ বা ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ থেকে এসব মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ওনার নির্বাহী ক্ষমতা বলে এ বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখিয়েছেন৷ খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে থাকতে দিয়েছেন মর্মে এমন মন্তব্য করেন তিনি৷ খালেদা জিয়ার করোনা না হোক, তিনি যে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত এ কথা সত্য। তার চিকিৎসকরা বলছেন, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার প্রতিদিনই অক্সিজেন লাগছে ২-৩ লিটার৷ তার শরীরে ইলেকট্রোলাইট, অর্থাৎ সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ও ক্লোরিন উপাদানের পরিমাণ বেশ কমছে৷ কোনোভাবেই বাড়ানো যাচ্ছে না রক্তের হিমোগ্লোবিন৷ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়ানো হয়েছে ইনসুলিনের পরিমাণ৷ এছাড়া স্বাস্থ্যের অন্য প্যারামিটারগুলোর অবস্থাও অবনতির দিকে৷ কিডনির ক্রিয়েটিনিন বাড়ছে৷ তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও একেবারে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না ডায়বেটিস৷ শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ এর আগে গত ৭ নভেম্বর ২৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি গুলশানের বাসায় ফিরেছিলেন৷

খালেদা জিয়ার রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, বাংলাদেশে সব ধরণের চিকিৎসাই সম্ভব, সব ধরণের চিকিৎসার প্রাপ্যতা আমাদের দেশেই আছে। আমরা এ দেশেই সব চিকিৎসা দিতে সক্ষম। যদি কেউ আমার এখানে বোর্ড করে বিদেশী চিকিৎসক এনে চিকিৎসা দিতে চায় তবে সেটাও এখানে সম্ভব। খালেদা জিয়া এর আগে বিএসএমএমইউ তে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখন তিনি এভারকেয়ারে আছেন। তবে তারা যদি আবার চায় তবে আমরা আবার এখানে তাকে চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত।

শর্তসাপেক্ষ অথবা নি:শর্ত, যে সাপেক্ষেই হোক, বিএনপি এখন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি জন্য সরকারের ওপরই নির্ভর করছেন। ইতোমধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের কয়েকটি দলের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। পাশাপাশি বিএনপিপন্থী ১৫ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। দলটির নেতারা বলেছেন যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকারের নির্বাহী আদেশেই যেহেতু সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়েছিল, সেহেতু এই বিধিতে সরকারের হাতেই খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসকরাই বলবেন তার কোন দেশে চিকিৎসা দরকার৷ সব কিছুতে রাজনীতি ঢোকালে আসল রাজনীতি উধাও হয়ে যায়। যেটা বিএনপির হয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তারেকের দণ্ড মওকুফের চক্র থেকে বেরই হতে পারছে না বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন যে ‘খালেদা জিয়ার যদি কিছু একটা হয় সে জন্য সরকার দায়ী থাকবে।’ কিন্তু এই কথা দলটি গত তিন বছর ধরে বলে আসছেন। তবে এই তিন বছরে খালেদা জিয়ার বিশেষ কিছু হয়নি। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে অসুস্থ বিধায় মাঝে মাঝে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, তার ব্যাধি মারাত্মক কিছু নয় এবং এর চিকিৎসা দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিএনপি নেতারা এসব রাজনৈতিক অভিলাস অথবা রাজনৈতিক চক্রান্ত থেকে এসব মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছেন কিনা, এ প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া কারাগার থেকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান৷ নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়৷ এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করে করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ সর্বশেষ ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করেন ৷ এর আগে ৬ মে বিদেশে পাঠানোর আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে দেয় সরকার৷



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭