প্রকাশ: 26/11/2021
“ খালেদা জিয়া নাকি মারা গেছেন?” কিংবা “খালেদা জিয়া নাকি ক্লিনিক্যালি ডেড, এখন ঘোষণা দেওয়া বাকী?” গত দুদিনে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন বাংলাদেশ থেকে ৭১৭১ কিলোমিটার দূর থেকে পেয়ে আমি নিজেও বিভ্রান্ত।
বেগম খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন? তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা কেমন? এই প্রশ্নসমূহের সুস্পষ্ট কোন জবাব সাধারণ মানুষের কাছে নাই। প্রকৃত তথ্যের অনুপস্থিতিতে স্বভাবতই গুজব ডালপালা মেলছে।
রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রসঙ্গ তুলে কি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেশবাসীকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? নাকি এটা নিয়ে একধরণের রাজনীতি চলছে? নতুবা কেন প্রতিদিন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা দেশবাসীকে জানানোর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা সরকার “বিশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিন” প্রচার করছে না? রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কারণে অনেকেই হয়তো খালেদা জিয়াকে পছন্দ নাও করতে পারেন, তবে দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী হবেন। আর প্রকৃত সত্যটা জানতে পারলে গুজব বা অপপ্রচারের সুযোগও কমে আসবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কি কোন মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়েছে? খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য কী? এই মুহূর্তে কি দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব? নাকি তাকে চিকিৎসার জন্য জরুরী ভিত্তিতে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন? সেক্ষেত্রে বর্তমান শারীরিক অবস্থায় তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব কি না। বিদেশের চিকিৎসায় তার অসুখ নিয়ন্ত্রিত বা নিরাময়ের সম্ভাবনা কতটুকু? খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার লক্ষ্যে এইসব প্রশ্নের উত্তর জানা খুব জরুরী।
মিডিয়ার মাধ্যমে যতটুকু খবর পাচ্ছি, খালেদা জিয়া গুরুতর লিভারের অসুখে আক্রান্ত। তার সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসাবে স্টেমসেল থেরাপি বা লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন এতটাই উন্নত হয়েছে যে, ছিয়াত্তর বছর বয়স্ক একজন রোগির পক্ষে লিভার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে রোগির সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাই এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশেও অনেকদিন ধরে সফলভাবে লিভার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তাদের হাসপাতালেই সম্ভব। চিকিৎসার ব্যাপারটা চিকিৎসকরাই দেখলেই ভালো। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আনা যেতে পারে।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার রয়েছে। সেটি হলো, তিনি একজন দণ্ডিত আসামী। সুতরাং, বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে এক্ষেত্রে আইন কী বলে তাও বিবেচনা করে দেখতে হবে। আবার আইনকে পাশ কাটিয়ে চিকিৎসার পুরো ব্যাপারটা মানবিকভাবে দেখার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি যেভাবে বলা হচ্ছে, তা বলবার মত নৈতিক অধিকার কি তাদের আছে? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যাকারী, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী দল হিসেবে বিএনপি বর্তমান সরকারের কাছে কতটা মানবিকতা আশা করতে পারে? সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্ট করে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। তারপরও এটা সরকারের বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়।
বিএনপি বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার লক্ষ্যে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি তুলেছে। তবে এই দাবি কতটা যৌক্তিক আমরা জানি না। চিকিৎসার পুরো ব্যাপারটা নিয়েই একধরণের ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ভালোমন্দের চেয়ে রাজনীতিটাই তাদের কাছে মূখ্য। আমরাও চাই, খালেদা জিয়ার ঠিকমত চিকিৎসা হোক। তবে বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতার চেয়ে এই সুযোগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টাটাই যদি বিএনপির কাছে মূখ্য হয়, তাহলে আমাদের কিছু বলার নাই। সেক্ষেত্রে শুধু এটুকুই বলবো, দেশব্যাপী দুর্বল সংগঠন নিয়ে বিএনপি কতদূর যেতে পারবে সেটা যেন তারা বিবেচনায় রাখে।
লেখক: কবি ও চিকিৎসক, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসিত।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭