ইনসাইড পলিটিক্স

দলে এবং সরকারে নিষ্প্রভ কেন কাদের?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/11/2021


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি, একই সাথে সড়ক, যোগাযোগ এবং সেতুমন্ত্রীও বটে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে, মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এতকিছুর পরও দল এবং সরকারের ওবায়দুল কাদের যেন নিষ্প্রভ। একের পর এক সমস্যাগুলোতে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তার নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অনেকেই বিস্মিত হচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক হলো দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ। সাধারণ সম্পাদকই দলের সাংগঠনিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন এবং তিনি দল পরিচালনার ক্ষেত্রে দলের সভাপতির পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এখন যেন নিষ্প্রভ। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপট, দলে চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়ে যাওয়া, একের পর এক বিভিন্ন নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। আর এ অস্থিরতার ক্ষেত্রে দলের সাধারণ সম্পাদকের যেরকম সক্রিয়, বুদ্ধিদীপ্ত এবং তড়িৎ পদক্ষেপের দরকার ছিল সেটি লক্ষণীয় নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কার এবং মেয়র পদ থেকে তার বরখাস্তের ব্যাপারটি আওয়ামী লীগ সভাপতি করেছেন। এখানে ওবায়দুল কাদেরের আরও সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত ছিল বলে অনেকে মনে করেন। সারাদেশে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপট এবং নৌকার প্রতিপক্ষ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় আওয়ামী লীগকে নতুন সংকটের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, অথচ এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকা নিয়ে দলের ভিতরে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর এ ব্যাপারে নিঃস্পৃহতা এবং নির্লিপ্ততা দলের ভেতর সমালোচনা তৈরি করেছে। অনেক বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না বা যে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করা দরকার ছিল সেটি দলের সাধারণ সম্পাদক পারছেন না বলে অনেকে মনে করেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জায়গায় অন্তঃকলহ, কোন্দল দানা বেঁধে উঠেছে। সেই অন্তঃকলহ, কোন্দল দূর করার ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাছাড়া এবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই মনোনয়ন বাণিজ্যের উন্মোচনের ক্ষেত্রেও তিনি ব্যর্থ বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল মনে করেন। শুধুমাত্র দলের সাংগঠনিক তৎপরতা ক্ষেত্রেই নয়, মন্ত্রণালয়ের কাজেও তিনি আগের মত গতিশীল নন বলেই অনেকে মনে করছেন।

ওবায়দুল কাদের যখন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তিনি তৎপর ছিলেন, ছুটে বেড়াতেন। বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখতেন। এমনকি ঝটিকা সফরে যেতেন বিআরটিএ বা বিভিন্ন স্থানে। এখন যেন সেই ওবায়দুল কাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র অনলাইনে যুক্ত হয়ে কিছু লিখিত বক্তব্য পাঠ করা ছাড়া তার কার্যক্রম চোখে পড়ে না। এর ফলে সড়কে এক নৈরাজ্য চলছে, গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা দেশের জনগণকে জিম্মি করে ধর্মঘট করলো, তাদের কাছে সরকার নতি স্বীকার করল। এখন শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হচ্ছে, সড়কে আবার নতুন করে প্রাণ ঝরছে। এই সবকিছু বিষয়ে ওবায়দুল কাদের নির্লিপ্ত এবং এবং নিষ্ক্রিয় বলে অনেকে মনে করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে আক্রমণ করে লিখিত বক্তব্য দেখে দেখে পাঠ করায় যতটা মনযোগী দেশে বিরাজমান সংকট গুলো বিশেষ করে তার মন্ত্রণালয়ের সঙ্কটগুলো সমাধানে ততটাই উদাসীন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করছে। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে গণপরিবহনে যে নৈরাজ্য চলছে তার ঢেউ আছড়ে পড়বে সরকারের জনপ্রিয়তা উপরে। আর এ কারণেই ওবায়দুল কাদেরের আরো সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করেন দল এবং সরকার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭