ইনসাইড বাংলাদেশ

ডা. মিলনের রক্তে স্বৈরাচারের পতন


প্রকাশ: 27/11/2021


Thumbnail

আজ শহীদ ডা. মিলন দিবস। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন জাসদ নেতা ডা. শামসুল আলম খান মিলন। স্বৈরাচারি সরকারের পতনে তার আত্মদান ছিল একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সে কারণেই এই দিনটিকে ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন গণতন্ত্রকামী মানুষ।

স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের উত্তাল পর্বে ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি সংলগ্ন রাস্তায় ছাত্র-গণআন্দোলন দমনে স্বৈরশাসক এরশাদ লেলিয়ে দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই বাহিনীর গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় প্রাণ হারান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা ও তৎকালীন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম মহাসচিব ডা. শামসুল আলম খান মিলন।

ডা. মিলনের শহিদ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-গণআন্দোলন উত্তাল রূপ ধারণ করে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। এরশাদ সামরিক স্বৈরাচার কারফিউ জারি করে গণঅভ্যুত্থান দমন করার শেষ অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ২৮ নভেম্বর কারফিউ ও সেনাবহিনী-বিডিআর-আর্মড পুলিশের বাধা ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগরীর রাজপথে মিছিল করে। শিক্ষার্থীদের বাধভাঙা দুঃসাহসিক মিছিলের মধ্য দিয়ে এরশাদ সামরিক স্বৈরাচারের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে। রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পরাজয় স্বীকার করেন সামরিক শাসক এরশাদ। ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় এরশাদ সরকার।

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণআন্দোলনের উত্তাল দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর পশ্চিম পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের নির্দেশে গুলিতে নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গণআন্দোলন পরিণত হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে। সেই আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছিল স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের। ঠিক তেমনই ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডা. মিলনের আত্মদান গণআন্দোলনকে এরশাদ সামরিক স্বৈরাচার পতনের গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করেছিল।

ডা. মিলন স্কুল জীবন থেকেই জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ ও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ছাত্র-গণআন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাজীবনে প্রবেশ করার পরও জাসদের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

পেশাগত সততা, দক্ষতা, সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় ডা. মিলন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ডা. মিলন তৎকালীন বিএমএ’র নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং ঢাকা কলেজের বায়োকেমিস্ট বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। সামরিক শাসনবিরোধী গণআন্দোলনের সমান্তরালে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে ধারাবাহিকভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি পালন করবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭