এডিটর’স মাইন্ড

রাজনীতির জোয়ার-ভাটা


প্রকাশ: 27/11/2021


Thumbnail

আজ ২৭ নভেম্বর। শহীদ ডা. মিলন দিবস। ১৯৯০ সালের এই দিনটিতে হালকা শীত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বসে অনার্স ফাইনালের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সবকিছু স্বাভাবিক, শান্ত। আচমকা কয়েকটি গুলির শব্দ। কৌতূহলী হয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরোলাম। এরপর আবার কয়েকটি  গুলি। হঠাৎ আতঙ্ক। ইতস্তত ছোটাছুটি। মিনিট কয়েক গোলাগুলির পর শুরু হলো মিছিল। কেউ ঠিকঠাক মতো বলতে পারছে না। ঘটনা টিএসসি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝামাঝি রাস্তাজুড়ে। খানিক পরই ‘ধর ধর’ চিৎকার। তারপর  মিছিল। মুহূর্তেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ল বিক্ষোভ। মিছিল করতে করতেই জানলাম বিএমএর (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) দুই নেতা ডা. মিলন ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের সশস্ত্র ক্যাডাররা গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হন ডা. মিলন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। ডা. মিলনের মৃত্যু যেন স্ফুলিঙ্গের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে দেয় সারা ঢাকায়, সারা দেশে। এক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয় দোকানপাট। অফিস-আদালত থেকে মানুষ বেরিয়ে আসে। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ঘোষণা করেন। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল রাজধানী। ‘এক দফা এক দাবি এরশাদ তুই কবে যাবি’। এই একটি স্লোগান সর্বত্র। এরশাদ কি তখনো জানতেন তার শাসনকালের আয়ু আর মাত্র সাত দিন? ২৬ নভেম্বর এরশাদের একান্ত অনুগত মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মুন্সীগঞ্জের এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘দেশে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। এরশাদ আরও ১০ বছর ক্ষমতায় থাকবেন’।  ডা. মিলনের মৃত্যু এক লহমায় সবকিছু বদলে দেয়। ৪ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়। ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অচল ছিল। অনেক নাটক হয়েছে পর্দার আড়ালে। কিন্তু এমন আচমকা আন্দোলনে এরশাদের নয় বছরের সাজানো বাগান ভেঙে যাবে তা কেউই ভাবতে পারেনি। এটাই হলো বাংলাদেশ। এ হলো জোয়ার-ভাটার দেশ। সকালে নদীর ঘাটে যেখানে নৌকা ভেড়াবেন, দুপুরে দেখবেন ভাটার টানে সে নৌকা চলে গেছে বহুদূর। দুপুরে নদীর বিরান বালু সন্ধ্যায় জোয়ারে স্রোতের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী যেমন এ দেশে সকাল-বিকাল রূপ পাল্টায়, এ দেশের মানুষের মনও ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যায়। ষড়ঋতুর এই দেশে কখন যে মানুষ আবেগে কান্না করে আর কখন যে রুদ্ররোষে সবকিছু তছনছ করে কেউ জানে না। অনিশ্চয়তা এবং নাটকীয়তাই এ দেশের রাজনীতির চরিত্র। এর প্রধান কারণ হলো জনগণের আবেগ। এ দেশের জনগণ যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বিস্ফোরণ। কখন যে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠবে কেউ জানে না।

এরশাদের পতনের পর সবাই জানত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতারা মন্ত্রিত্বের দফতর ভাগ-বাটোয়ারায় মশগুল। কিন্তু ওই নির্বাচনের ফলাফল হলো অন্যরকম। এরশাদের পতনের পর আওয়ামী লীগের কজন নেতা ভেবেছিলেন তাঁরা নির্বাচনে হেরে যাবেন? বিএনপি জয়ী হলো ’৯১-এর নির্বাচনে। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন। তখন কি বেগম জিয়া জানতেন ২০২১ বাংলাদেশে আসবে? তখন কি বেগম জিয়া জানতেন তাঁকে এরশাদের চেয়েও করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাঁর শয্যাপাশে থাকবে না তাঁর পুত্র, পুত্রবধূরা। তিনি কি জানতেন তাঁর দলের নেতারা তাঁর জন্য কিছুই করবেন না। শুধু তামাশা দেখবেন?

এরশাদের পতনের পর বেগম জিয়া সুযোগ পেয়েছিলেন গণতন্ত্র, সুশাসন এগিয়ে নেওয়ার। রক্তাক্ত রাজনীতির কবর রচনার। প্রতিহিংসার রাজনীতি উপড়ে ফেলার। বেগম জিয়া যদি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিণতি আঁচ করতেন তাহলে হয়তো তিনি রাজনীতির নতুন যুগের সূচনা করতেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতেন। মাগুরা, মিরপুরের উপনির্বাচনে কারচুপি করতেন না।

’৯১-এর নির্বাচনের পর বাংলাদেশে কজন ভেবেছিল শেখ হাসিনা ১৮ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করবেন। ’৯১-এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেই বলতে শুনেছি, শেখ হাসিনা থাকলে আওয়ামী লীগ চিরকাল বিরোধী দলেই থাকবে। আজ যাঁরা শেখ হাসিনাকে অজস্র উপাধিতে ভূষিত করেন তাঁরাই সেদিন শেখ হাসিনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ’৯৬-এ  আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার চেহারা সুরত পাল্টে গেল। আওয়ামী লীগের অনেকে এমন আচরণ করলেন যে আর কোনো দিন তাঁরা বিরোধী দলে যাবেন না। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনের ফল হলো উল্টো। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের উত্থান ঘটল। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিএনপি ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে মনোযোগী হলো। জনগণের ভোট নয়, অন্য কৌশলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এক আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠল। সে সময় বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যেসব মন্তব্য করেছিলেন, তা যদি তাঁরা এখন পড়েন তাহলে নিজেরাই লজ্জা পাবেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য ৪২ বছর অপেক্ষা করতে হবে’। বেগম জিয়ার চেয়ে এক কাঠি সরস ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক জিয়া। তৃণমূলের এক কর্মী সমাবেশে তারেক জিয়া বলেছিলেন, ‘অক্টোবর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কবর রচিত হয়েছে। এখন এর জানাজা পড়াতে হবে।’ বিএনপি-জামায়াত সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্য ছিল আরও কুৎসিত, অরুচিকর।

বিএনপি আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য কী না করেছে? প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে বিধান সংশোধন করেছে। নিশ্চিত হতে চেয়েছে বিচারপতি কে এম হাসানই যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন। দেড় কোটি ভুয়া ভোটার করেছে। নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে আজ্ঞাবহদের দিয়ে। আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। জজ মিয়ার নাটক সাজিয়েছে। সারা দেশে নির্বিচারে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হবিগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হলেন। হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনলে তাঁর প্রাণটা হয়তো বাঁচত। কিন্তু তাঁকে হেলিকপ্টার দেওয়া হয়নি। বেগম জিয়া যদি জানতেন তাঁর জীবনে এমন দিন আসবে, তাহলে হয়তো সেদিন তিনি এমনটা করতেন না। গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করা হলো। টঙ্গীতে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হলো। মুমূর্ষু রক্তাক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ঢাকায় আনতে বিলম্ব হলো দুই ঘণ্টা। বেগম জিয়া যদি ঘুণাক্ষরেও তাঁর ভবিষ্যৎ জানতেন তাহলে নিশ্চিত তিনি এ রকম অমানবিক কাণ্ড হতে দিতেন না। ক্ষমতা নিশ্চিত করতে বেগম জিয়া মইন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। কিন্তু সেই মইন উ আহমেদই বেগম জিয়ার গোটা পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়ালেন! আওয়ামী লীগ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে বলে ২০০১ সালে বিএনপির যেসব নেতা উল্লাসনৃত্য করেছিলেন তাঁরাই এখন ফেরারি। এমনটাই বাংলাদেশ।

মাঝেমধ্যে মনে হয়- মানুষ যদি তার ভবিষ্যৎ দেখতে পেত তাহলে এ হানাহানি, প্রতিহিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধ অনেকখানি কমে যেত। মানুষ যদি তার ভবিষ্যৎ জানত তাহলে হয়তো ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, মিথ্যাচার অনেকটাই কমে যেত। কিন্তু আবার অন্যভাবে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, মানুষের পরিণতি তার কাজেরই ফল। মানুষ যা করে তা-ই তার ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করে। আজ আপনি যা করবেন আগামীকাল তার ফলই আপনি ভোগ করবেন। কেউ তার কাজের ফলাফল দেখে যায়, কেউ দেখে না।

জিয়া যদি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল না করতেন। খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত না মেলাতেন। নির্মমভাবে তাহেরকে ফাঁসিতে না ঝোলাতেন (অথবা হত্যা না করতেন)। তাহলে আজ হয়তো তিনি এভাবে ইতিহাসে ধিকৃত হতেন না।

এরশাদ যদি তাঁর ওয়াদা রক্ষা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতেন তাহলে এ দেশের ইতিহাস অন্য রকম হতো।

বেগম জিয়া যদি জানতেন এ দেশে তাঁর ও তাঁর পুত্রের বিচার হবে। দুর্নীতির মামলায় তাঁকে জেল খাটতে হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতেও তাঁকে শেখ হাসিনার করুণার ওপর নির্ভর করতে হবে তাহলে ১০ বছরের ক্ষমতায় তিনি অন্যরকম হতেন। অনেক মানবিক, সহানুভূতিশীল হতেন। যারা ক্ষমতায় গেলে ভবিষ্যতের কথা ভাবে না বেগম জিয়া তাদের জন্য এক বড় শিক্ষা। তাই সুসময়ে মানুষকে শান্ত থাকতে হয়। ক্ষমতাবান মানুষকে হতে হয় সংযত। কাউকে ছোট করতে হয় না। মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হয়। ইতিহাসের পাতায় পাতায় আমরা দেখি যারা উদ্যত হয়েছেন, মানুষকে অসম্মান করেছেন, জনগণকে অবজ্ঞা করেছেন তাঁরা এর পরিণতি ভোগ করেছেন। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো ইতিহাস থেকে কেউ শেখে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭২ বছরের পুরনো দল। যুগে যুগে এ দলের নেতা-কর্মীরা নিগৃহীত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। আর সে কারণেই বোধহয় আওয়ামী লীগকেই এ দেশের মানুষ প্রাণভরে দিয়েছে। দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। এ সৌভাগ্য অন্য কোনো রাজনৈতিক দল পায়নি। তাই আওয়ামী লীগকে এ দেশের মানুষ অনেক দায়িত্বশীল, মানবিক ও সংযত দেখতে চায়। বিএনপি, জাতীয় পার্টি যা করেছে আওয়ামী লীগ তা করবে না, এটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। কিন্তু ইদানীং আওয়ামী লীগের কারও কারও কথা এবং কাজ অযাচিত অহমিকায় ভরপুর। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার কথাবার্তা, আচার-আচরণে মনে হয় আওয়ামী লীগের আগে দেশে কেউ ছিল না, আওয়ামী লীগের পরেও কেউ থাকবে না। আওয়ামী লীগ আজন্ম ক্ষমতায় থাকবে এমন অবাস্তব চিন্তার প্রকাশ্য রূপ দেখা যায় আওয়ামী লীগের কারও কারও মধ্যে। আওয়ামী লীগে অনেক রথী-মহারথী তৈরি হয়েছেন ইদানীং। এঁদের বেসামাল কাজ ও কথাবার্তায় বিস্মিত জনগণ। কেউ কেউ যেন গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের কথাই ধরা যাক। সরকারের কেউ কেউ যেন চাইছেন শিক্ষার্থীরা খেপে উঠুক। আন্দোলনে ঝাঁপ দিক। সারা জীবন দেখে এলাম শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়া। এখন কেন এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ করতে হবে? এটা তো সহজেই সমাধান করা যায়। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে আন্দোলন করছেন। দায়িত্বশীলরা তামাশা দেখছেন। ভাবখানা এই- কর দেখি কত দিন আন্দোলন করতে পারিস। জিনিসপত্রের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। গণপরিবহনে চলছে নৈরাজ্য, দেখার কেউ নেই। সারা দেশে খুনোখুনি শুরু হয়েছে, বন্ধের আন্তরিক উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কিছু নেতা জনগণকে শাসাচ্ছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেশের বেশ কয়েক জায়গায় আধা-পাতি নেতা জনগণকে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই’। যে দলটি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এত রক্ত দিল, এত আন্দোলন করল সেই দলের সিকি-আধুলি নেতারা এ করম অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কীভাবে? আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার আচার-আচরণে মনে হয় ভোট লাগবে না, জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা মূল্যহীন। সেদিন এক নেতা বললেন, ‘আওয়ামী লীগকে কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না’। ওই নেতার কথার প্রতিফলন দেখা যায় বাস্তবে। আওয়ামী লীগের অনেকেই এখন মনোনয়ন পেতে যত কসরত করেন, ভোট পেতে তা করেন না। দলের মনোনয়ন পেলেই হলো, এমন একটি রোগ আওয়ামী লীগে ভয়াবহভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। মনোনয়ন পেয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ব্যাধিতে আক্রান্ত আওয়ামী লীগ। যে দলের মহান নেতা জনগণকে সম্মান করতেন সবচেয়ে বেশি। যে দলের বর্তমান নেতা জনগণের কল্যাণে সবকিছু উৎসর্গ করেছেন সেই দলের খুচরা-পাতি নেতারা কথায় কথায় জনগণকে পিটিয়ে শায়েস্তা করতে চান।

একটু মিলিয়ে দেখুন ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি নেতারা যে ধারায় আওয়ামী লীগকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন, এখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সেই একই ভাষায় কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ জনগণকে পিষে ফেলতেও চান। ভয় দেখান। চোখ রাঙান। সদ্যবহিষ্কৃত গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের এক অডিও শুনলাম। এভাবে জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতা করতে পারেন, ভাবতে শিউরে উঠি। আওয়ামী লীগের অনেকে গত ১৩ বছরে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছেন। গাড়ি হয়েছে, বাড়ি হয়েছে, বিদেশে টাকার খনিও হয়েছে। এঁরা আওয়ামী লীগের অতীত জানেন না। আওয়ামী লীগের ত্যাগের ইতিহাস জানেন না। গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিস্ময়কর পরিবর্তন হয়েছে। এঁরা নিজেদের জনগণের সেবক ভাবেন না, জনগণের প্রভু ভাবেন। আওয়ামী লীগে কেউ কেউ মনে করেন তারাই শুধু প্রথম শ্রেণির নাগরিক, বাকিরা ক্রীতদাস। আওয়ামী লীগে কারও কারও ধারণা- ২০১৪ কিংবা ২০১৮-এর মতো বারবার তাঁরা বিপুলভাবে বিজয়ী হতেই থাকবেন। জনগণ বুড়ো আঙুল চুষবে। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই আওয়ামী লীগাররা জানেন না এ দেশটা জোয়ার-ভাটার। এ দেশের নদ-নদীর মতোই মানুষের মন। এক নিমেষেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এরশাদ ’৯০-এর নভেম্বরে জানতেন না ডিসেম্বরে তাঁর ভাগ্যে কী ঘটবে। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে বেগম জিয়া জানতেন না ২০০৭-এর জানুয়ারিতে তাঁর জন্য দীর্ঘ অন্ধকার টানেল অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগ কি জানে কাল কী ঘটবে?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭