ইনসাইড থট

বেগম জিয়ার জন্য প্রস্তাবিত চিকিৎসা পদ্ধতি 'TIPS' বিষয়ে কিছু টিপস


প্রকাশ: 29/11/2021


Thumbnail

বেগম জিয়ার সাম্প্রতিক শারীরিক জটিলতার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা TIPS (টিপস)  নামে একটি চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলেছেন । TIPS এর পূর্ণরূপ হলো Transjugular Intrahepatic Portosystemic Shunt। এটি মূলত যকৃতের একটি শিরা 'হেপাটিক ভেইন' এর সাথে 'পোর্টাল ভেইন' এর একটি বাইপাস চ্যানেল তৈরী করে দেয়া হয়। লিভার সিরোসিসের কারণে পোর্টাল ভেইন এর প্রেসার বাড়লে এই 'টিপস' দিয়ে প্রেসার কমানো হয়। তাতে রক্তক্ষরণ রোধ হয়, তবে এটি লিভার সিরোসিসের কার্যকরি কোন চিকিৎসা নয়। এটি লিভার সিরোসিসের একটি জটিলতার চিকিৎসা মাত্র।

'টিপস' বিষয়টি ১৯৬৯ সালে প্রথম বর্ণনা করেন আমেরিকার ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেফ রস নামে একজন চিকিৎসক।  ১৯৮২ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রোনাল্ড  কলাপিন্টো মানুষের শরীরে ব্যবহার করেন। কিন্তু ১৯৮৫ সালে এন্ডোভাসকুলার স্টেন্টের বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত এটি সফলতার মুখ দেখেনি। ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মত সফল হন জার্মানির ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদল, যার নেতৃত্বে ছিলেন এম রোসলে। সেই থেকে এই চিকিৎসা পদ্ধতি লিভার সিরোসিস জনিত খাদ্যনালী বা আন্ত্রিক রক্তপাত বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তবে ২০১০ সালে 'দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন' এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধমতে, রক্তপাতের ৭২ ঘন্টার মধ্যে 'টিপস' করা গেলে তার কার্যকারিতা ভালো হয়। বিশ্বব্যাপি যকৃৎ প্রতিস্থাপনের হার বেড়ে যাওয়ায় 'টিপস' এর জনপ্রিয়তা এখন কমেছে। তাছাড়া 'টিপস' এর জটিলতাও কম নয়। প্রতি তিন জনের ভেতর একজনের (সাইন্টিফিক রিপোর্টস ২০১৭, চীন)  'টিপস' সত্ত্বেও এনসেফালোপাথি দেখা দেয়, যেটি লিভার সিরোসিসের অবধারিত শেষ পরিণতি। এছাড়া স্টেন্ট চিকন হয়ে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই।

১৯৮৮ সালে জার্মানিতে প্রথম সফলতা পেলেও এশিয়ার দেশগুলো 'টিপস'তে পিছিয়ে নেই। স্বাস্থ্য সাময়িকীগুলোর তথ্যভাণ্ডার ঘেটে সিঙ্গাপুরে 'টিপস' এর অস্তিত্ব মেলে ১৯৯৩ সালে, সফলতার পাঁচ বছর পরেই। এখন সেখানে অহরহই 'টিপস' হচ্ছে। ব্যাংককেও রেডিওলজিস্টরা হরামেশাই 'টিপস' করছে।  সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যবিষয়ক ব্রিফিং-এ দেশের প্রথিতযশা সম্মানিত চিকিৎসকগণ বললেন যে, উপমহাদেশে 'টিপস' হয় না। আধুনিক চিকিৎসা বিষয়ে যারা খোঁজ খবর রাখেন তাদের তাজ্জব বনে যাবারই কথা। মনীষা শেশরাও মানে নামের সিএমসি, ভেলোরের একজন রেডিওলজিস্ট এর থিসিস পড়ে জানলাম, 'টিপস' সিএমসি ভেলোরে ১৯৯৯ থেকেই হয়। সেখানে এখন দেদারছে 'টিপস' হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের অনেক চিকিৎসক আমার কলিগ, ঘনিষ্ট। টি রুমে বসে আজ যখন 'টিপস' বিষয়ে আলোচনা শুরু করলাম, তখন শুনলাম ভারতে অল্প বয়সের অনেক রেডিওলজিস্টরা এগুলো করে। লজ্জায় চেপে গেলাম, আমার দেশের প্রথিতযশা চিকিৎসকদের সাংবাদিক সম্মেলনে বলা কথাগুলো।

'টিপস' কোন সার্জারি নয়। ইদানিং দেশে হৃদপিন্ডে যে অহরহ স্টেন্টিং বা বেলুন পরানো হয়, এটি তেমনই। সাধারণত রেডিওলোজিস্টরা করে থাকেন। লোকাল ইনজেকশন দিয়ে অবশ করে করা যায়, আবার বিশেষ ক্ষেত্রে ঘুম পাড়িয়ে বা জেনারেল এনেস্থেসিয়া দিয়েও করা হয়। পুরা পদ্ধতি সম্পন্ন করতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে।

টিপস করার পর আয়ুষ্কাল নির্ভর করে রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যাবস্থার ওপর।  গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি নামের একটি জার্নালে ২০০৬ সালে প্রকাশিত নিবন্ধমতে, যাদের সিরোসিস আছে বা আন্ত্রিক রক্তপাত ছিল তাদের ভেতর যারা 'টিপস' চিকিৎসা পেয়েছে তাদের শতকরা ৮৮ ভাগ আরো দুবছর বেঁচেছে।  আবার ২০১৮ সালে প্রকাশিত ওপর গবেষণামতে 'টিপস' করা এ জাতীয় রোগীদের মধ্যে শতকরা ৭৮ ভাগ তিন মাসের বেশি বেঁচেছে। যাদের বয়স বেশি, যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হার্ট ফেইলুর রয়েছে এমন রোগীদের মধ্যে টিপস করার পরও অতি সত্বর মৃত্যুর হার বেশি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭