ইনসাইড বাংলাদেশ

আবারও ভুল পথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়


প্রকাশ: 30/11/2021


Thumbnail

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেকোনো সংকটে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ভুল পথে পরিচালিত হয়। গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে এক ধরনের অস্থির পরিস্থিতির তৈরি করেছিল। এবার আবার সেই একই ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি মনে করার কারণ হলো আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনার নতুন সংক্রমণ ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে আয়োজিত এক সভায় কিছু সিদ্ধান্ত। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এখন থেকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যে ’নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ চালু করেছিল তার পাশাপাশি ’নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ ব্যবস্থা চালু করবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইতিমধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ছয় কোটির মতো। দ্বিতীয় ডোজ টিকার সংখ্যা ৪ কোটির কাছাকাছি। শিক্ষার্থী, বস্তিবাসীদের টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব পর্যায়ে টিকা দেয়া হচ্ছে। তারপরও দেখা যায় অনেকেই টিকা নেয়নি। আগের চেয়ে টিকায় আগ্রহ একটু কম। এজন্যই ’নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এর বদলে ’নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ শীর্ষক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে জানিয়েছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটি আবার ভুল বার্তা দিবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ও চিকিৎসকরা। কারণ, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মাত্র ২৪ ভাগ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। তাছাড়া এর আগে একবার যখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ভ্যাকসিন না দেওয়া হলে রাস্তায় কেউ বের হতে পারবেন না জাতীয় কথাবার্তা বলেছিলেন তখন তিনি বিপুলভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, শ্লোগান হওয়া উচিত ’নো ভ্যাকসিন, নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। অর্থাৎ শুধুমাত্র ’নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ যদি বলা হয় সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দিয়ে মানুষরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তারা ভ্যাকসিন দেয়ার পর মাস্ক পড়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন ওমিক্রন সংক্রামিত হচ্ছে তখন মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনের ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান দেননি। বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার একই কথা বলছেন যে, টিকা দেওয়ার পরও মানুষকে মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানতে হবে। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার নতুন স্লোগানে ’নো মাস্ক’ কথাটি উঠিয়ে দিলে এক ধরনের ভুল বার্তা যাবে। তখন মানুষ অনেকে মনে করতে পারে যে, ভ্যাকসিন দিলে বোধহয় মাস্ক পরার দরকার নেই, সামাজিক দূরত্ব রাখার দরকার নেই, স্বাস্থ্যবিধির মানা দরকার নেই।

এটি সাম্প্রতিক সময়ের জন্য একটি খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কারণ, ওমিক্রন এখন বিশ্বের যে দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে সেটি বাংলাদেশেও আসতে পারে। কারণ, ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দুই মাসে প্রচুর অভিবাসী দেশে আসেন তাদের আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দুই মাসে বাংলাদেশে প্রচুর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। এই সমস্ত কারণে এই দুই মাস সময় মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা অত্যন্ত জরুরী। কাজেই এই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার স্লোগান পরিবর্তন করে যদি ’নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ ব্যবহার করে তাহলে সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য বিধিনিষেধগুলোকে মানুষ উপেক্ষা করতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, প্রতিবারই যখনই করোনার একটি সংক্রমণ এবং পরিস্থিতি তৈরি হয় তখনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্ভট এবং বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে। এবারও কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেই পথে যাচ্ছে? এই প্রশ্ন করেছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭