ইনসাইড ইকোনমি

শেয়ার ব্যবসার তিন রক্ষাকবচ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/11/2017


Thumbnail

আমরা বাড়ি বা গাড়ি কিনতে গেলে কি করি? ষোলো আনা খোঁজখবর নিয়ে তারপরই তো কিনি, তাইনা? তাহলে শেয়ার কেনায় এর ব্যতিক্রম হবে কেন? অনেকেই না বুঝে, বেশি লাভের আশায় শেয়ারবাজারে ছুটে আসেন। সেটা কি ঠিক?কোন উড়ো খবরে, কারো এসএমএস পেয়ে, টিভির পর্দায় হঠাৎ একদিন নাম শুনে বা মোটা মুনাফার সম্ভাবনার গুজবে কান দিয়ে শেয়ারে টাকা খোয়ানো লোকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে আমাদের শেয়ারবাজারে মহাবিপর্যয় নেমে আসে। সে সময় সর্বস্ব হারিয়েছে কত মানুষ। তাই শেয়ারে বিনিয়োগের আগে কোম্পানির আদ্যপান্ত জেনে তবেই টাকা ঢালুন।

ব্রোকার হাউজে বা বন্ধুদের আড্ডায় শুনলেন আগামী সপ্তাহে ‘অমুক’ কোম্পানির বড় একটা প্রাইস সেনসেটিভ খবর আছে। সবাই ওইটাতে বিনিয়োগ করছে।এটা শুনেই কি আপনি ঝাঁপিয়ে পড়বেন? না, আপনি খবরটা শুনবেন । তবে চূড়ান্ত বিচার বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। কোন কোম্পানির শেয়ারের খবর কানে এলেই প্রথমে দেখতে হবে এটি কোথাকার, কী ব্যবসা করে ইত্যাদি। খুলে ফেলুন তার ওয়েবসাইট।খুঁটিয়ে দেখুন তার হিসেব-নিকেশ। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।তবে, এ ক্ষেত্রে নিজের বুদ্ধিও খাটান। যে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনবেন, দেখে নিন তার পরিচালকমণ্ডলী কেমন। আপনি যদি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস না করেন, তাহলে যে প্রতিষ্ঠানের পরিচালা পর্ষদে শুধুই পরিবার-পরিজন, সে কোম্পানিত থেকে দূরে থাকুন। সেই সাথে পরিচালনা পর্ষদে থাকা পরিচালকদের নামে যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তাহলে সেটাও মাথায় রাখুন।

প্রশ্ন আসে তাহলে কি দেখে শেয়ার কিনব?
কোন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে প্রাথমিক ভাবে তিনটি বিষয়ে নজর দিলে শেয়ার কেনার বিষয়টা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। অনেকেই ভাবতে পারেন ব্যালান্স শিট থেকে এগুলো বের করা কঠিন, কিভাবে করবেন? এরও সমাধান আছে। ইন্টারনেট ঢুকে যা চাইছেন, তা লিখে ‘এন্টার’দিলেই পেয়ে যাবেন। শুধু দেখে নেবেন, তথ্যগুলো যেন সাম্প্রতিক হয়।

ব্যালান্স শিটে প্রথমেই নজর দিতে হবে ইপিএস অর্থাৎ আর্নিংস পার শেয়ারে। আমরা যাকে শেয়ার প্রতি আয় বলি। যে সংস্থার শেয়ার কিনবেন, তার লাভের কতটা আপনার, এটা তারই পরিমাপক। সংস্থার মোট আয় থেকে মোট ব্যয় এবং ডিভিডেন্ড (যে লভ্যাংশ

শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া হয়) বাদ দিলে যা থাকে, তাকে মোট শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করেলে, শেয়ার প্রতি আয় পাওয়া যায়। কোম্পানির অংশীদার হিসেবে এটা আপনার আয়। কোম্পানির আয় জানা থাকলে, নজর রাখতে পারবেন বেশি ইপিএস-এর দিকে। তাই বলে কম দামি শেয়ার কিনতে গিয়ে, কম ইপিএসের শেয়ারে বিনিয়োগ করলে কিন্তু সস্তার তিন অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এরপর প্রাইস টু আর্নিং রেশিও বা পিই এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা সব সময়ই বলে থাকি বেশি পিইর শেয়ার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কেন? কারণ, শেয়ার প্রতি আয় অনুযায়ী বাজারে শেয়ারের বর্তমান দর ন্যায্য না অন্যায্য, এটাই বলে দেবে এই পিই রেশিও। বাজারে শেয়ারের দামকে ইপিএস বা শেয়ার প্রতি আয় দিয়ে ভাগ করলে যে- অনুপাত পাওয়া যায় , তাই পিই। পিই রেশিও বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্র অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে। যে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের মোট মূল্যায়ন(বুক ভ্যালু) বেশি, সেটির জন্যই শুধু একটু উঁচু পি ই-তে শেয়ার কেনা যায়, অন্যথায় নয়।

তিন নম্বর, প্রাইস টু বুক ভ্যালু রেশিও বা পিবি। অর্থাৎ দাম অনুপাতে সংস্থার সম্পদের মূল্যায়ন। এটি বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনার রক্ষাকবচ। কারণ পি বি রেশিও আগেভাগেই জানিয়ে দেয় একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোম্পানির মোট সম্পত্তির কতটা অংশ আপনার অধিকারে। এবার বাজার দরের সাথে তুলনা করলে যা দাঁড়াবে, সেটাই হল পি বি। ধরুন কোন কোম্পানি যদি ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে, তবে আইন অনুযায়ী বুক ভ্যালুর সমানুপাতে বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কোনও কোম্পানির পি বি রেশিও ১ হলে নিশ্চিন্ত থাকুন। যদি কোম্পানি উঠেও যায়, শেয়ারের যা বাজার দর, ঠিক তত টাকা আপনি শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ফেরত পাবেন। পি বি ২ হলে, ফেরত পাবেন ৫০%, অর্থাৎ অর্ধেক। আর ৪ হলে ২৫%, মানে সিকি ভাগ। আজ তো লাভের হিসাব করলাম।অগামী দিন জানবো এর উল্টো পিঠে কি আছে?


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭