ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার অসুস্থতা এবং রাখাল বালকের গল্প


প্রকাশ: 05/12/2021


Thumbnail

রাখাল বালকের গল্পটি মনে আছে? রাখাল প্রতিদিন মাঠে যেতেন গবাদি পশু নিয়ে। প্রতিদিনই তিনি বাঘ এলো বাঘ এলো বলে চিৎকার করতেন। তার চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন ছুটে আসতেন। কিন্তু দেখা যেত রাখাল বালক স্রেফ রসিকতা করার জন্য এটা করেছেন। কিন্তু একদিন সত্যি সত্যি বাঘ এলো। সেদিন রাখাল বালক চিৎকার করলো কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। সবাই মনে করলো রাখাল বালক বোধহয় দুষ্টুমি করছে। আর সেদিনই বাঘের আক্রমন হলো রাখাল বালকের উপর। এই গল্পটি অনেক পুরনো এবং বহুল ব্যবহৃত, বহুল চর্চিত। আর এখন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি যা করছে তাকে অনেকেই রাখাল বালকের গল্পের মতোই মনে করছে। 

বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তখন বিএনপি নেতারা বলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দেওয়া হলে যেকোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হলেন। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়িতে গেলেন। দ্বিতীয় দফায় বেগম খালেদা জিয়াকে আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হল। তখনও তার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি নেতারা আহাজারি করতে শুরু করলেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে আবার বাড়িতে ফিরলেন। এবার তৃতীয় দফায় বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন এবং বেশ কয়েকদিন হলো তিনি এভারকেয়ার হাসপাতলে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই বলা হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা বলেছেন, এই রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানিতে নিতে হবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। 

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতির জন্য বিএনপি লাগাতার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি করছে। এ কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি নেতারা যে সমস্ত কথাবার্তা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে যে বেগম খালেদা জিয়া বোধহয় মৃত্যুপথযাত্রী। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি বিএনপির নেতারা এমনটি বলেছেন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে এবং কোন কিছু ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনা লাগাতার ১০ দিন ধরে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা যদি সত্যি গুরুতর হতো এবং তিনি যদি মৃত্যুপথযাত্রী হতেন তাহলে এই দশ দিন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল থাকতো না। 

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একসপ্তাহ আগে বলেছিলেন, যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। কিন্তু এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া এখন স্বাভাবিক রয়েছেন, তিনি খাচ্ছেন এবং তার আগের চেয়ে অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো বলে এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। যদিও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছেনা। মেডিকেল বোর্ডের নামে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা জড়ো হয়েছেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তারাই অহর্নিশ কথাবার্তা বলছেন। আর এই কথাবার্তায় তারা এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, যেকোনো মুহূর্তে কিছু একটা ঘটে যেতে পারে, এরকম ঘটনা বলে তারা দুটি বিষয় করতে চাইছেন। 

প্রথমত, সরকারের উপর একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন যেন সরকার ভয় পায় যে খালেদা জিয়ার যদি শেষ পর্যন্ত কিছু হয় তাহলে দায়-দায়িত্ব তাদের উপর বর্তাবে। এই ভয় পেয়ে তারা বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায়। যদি বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া দরকার, তার অবস্থা অত্যন্ত মুমূর্ষ, এই কথাগুলো বলে যদি একটা সহানুভূতি আদায় করা যায়। সেই সহানুভূতি জনগণকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করায় সেইরকম একটি চেষ্টা বিএনপি করছে। তবে এরকম পরিস্থিতিতে পুরো ঘটনার বারবার বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুপথযাত্রী, যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, এসব বারবার বলার পর যখন ঘটনাগুলো ঘটছে না বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় ফিরে যাচ্ছেন বা সুস্থ-স্বাভাবিক আছেন তখন বিএনপির অবস্থা রাখাল বালকের মতই হয় কিনা সেটিই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭