ইনসাইড থট

আপনারাই সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকারী এবং শেখ হাসিনার হত্যাচেষ্টাকারী


প্রকাশ: 05/12/2021


Thumbnail

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি এবং বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা সাম্প্রতিক সময়ে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে মনে হয় তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নয়, বরং তারা রাষ্ট্রবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তারা প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে, এই বিষয়টিকে তারা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিবে। বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী শাহদীন মালিক কয়েকদিন পূর্বে এক টেলিভশন টকশোতে বলেছেন, অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু হলে আওয়ামী লীগকে এর জন্য চরম মুল্য দিতে হবে। এই ধরণের বক্তব্য কতটা ভয়ঙ্কর সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিএনপি এবং তার তথাকথিত সুশীলরা আজ মানবতার কথা বলছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে  মায়াকান্না করছে। অথচ দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সর্বোচ্চ আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে মুক্ত করে গুলশানে নিজের বাড়ীতে থাকতে দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া তার নিজের পছন্দমতো আন্তর্জাতিক মানের অভিজাত হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পৃথিবীর খুব কম দেশেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি এই ধরণের মানবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। অথচ বিএনপি এবং তার মিত্রদের মুখে এই সম্পর্কে কোন বক্তব্য নেই। শেখ হাসিনার প্রতি তাদের কোন কৃতজ্ঞতাবোধ তো নেই-ই, বরং তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বারংবার মিথ্যাচার ও বিষোদ্গার করছে। তারা যে মানবিকতার কথা বলছে, তারা কী ভুলে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনাই প্রতিপক্ষের প্রতি মানবিকতা দেখিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষরা সেই মানবিকতা কখনও দেখায়নি। বরং তারাই জাতির পিতাকে সপরিবারে তাঁর নিষ্পাপ শিশুসহ হত্যা করেছিল। শেখ হাসিনাকে একুশে আগস্টে হত্যা করতে বিশেষ গ্রেনেড অপারেশন চালিয়েছিল। পৃথিবীর কোন দেশেই রাজনৈতিক কোন পরিবারের উপর এই রকমের নির্মমতা দেখা যায়নি।

এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জিয়াই বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড। ১৯৭৬ সালে স্বঘোষিত খুনীরাই বিদেশে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এটি স্বীকার করেছিল। জিয়াই খুনীদের সবাইকে বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসে চাকুরী দিয়েছিলো। জিয়াই ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার বিচার রুদ্ধকারী অসভ্য আইন ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কে বৈধতা দেয়া সহ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছিলো। একই ধারাবাহিকতায় তার স্ত্রী খালেদা জিয়া সরাসরি বিভিন্নভাবে খুনিদের পৃষ্টপোষকতা করে আসছিলো। আওয়ামী লীগ সহ এদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের দাবি সত্ত্বেও খালেদা জিয়া জাতির পিতার হত্যার বিচার রুদ্ধকারী আইন ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করেনি। খালেদা জিয়া জাতির পিতার এক খুনিকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতাও বানিয়েছিলো। একুশে আগস্টে শেখ হাসিনার মৃত্যু একেবারে অবধারিত ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

এতো কিছুর পরও শেখ হাসিনা তাঁর সর্বোচ্চ আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করেছেন। এই রকম মানবিক আচরণ পৃথিবীর  ইতিহাসে খুব কমই দেখা যায়। আমি নিশ্চিত, আজ খালেদা জিয়ার মতো শেখ হাসিনার অবস্থা হলে খালেদা জিয়া কোনোভাবেই শেখ হাসিনার প্রতি কোন মানবিক আচরণ করতেন না। একুশে আগস্ট এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে এটি সহজেই বুঝা যায়।

আজ যারা মানবিকতার কথা বলছেন, তারা কী ১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়েছিলেন কোনদিন ? তারা কী ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করার কথা বলেছিলেন কখনো ? শেখ হাসিনার চাওয়া ছিল খুব সামান্য - পিতা, মাতা, পরিবারের সবার হত্যার বিচার -যেটা ছিল তাঁর অধিকার। আপনারা তাঁকে সেই অধিকার টুকুও দেননি। এটা শুধু শেখ হাসিনার অধিকার ছিল না, সমগ্র জাতির অধিকার ছিল। জাতিকেও আপনারা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার বিচার শুরু হয়েছিল। ২০০১ এর পর খালেদা জিয়ার সরকারের সময় এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়। 

অন্যদিকে, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা সহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার উপর এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার বিচার নিয়ে খালেদা জিয়া কতোই না নাটক করলো। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বলা হলো, শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর  ভ্যানিটি ব্যাগে এই গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলেন হামলা চালানোর জন্য। বিচারের ক্ষেত্রে জজ মিয়া নাটক সাজানো হলো। পরবর্তীকালে বিচারে প্রমানিত হলো, খালেদা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা এই গ্রেনেড হামলায় যুক্ত ছিল।

শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের উপর এতো নির্মমতা, বর্বরতা  এবং অন্যায় আচণের পরও বঙ্গবন্ধু কন্যা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে তাঁর সর্বোচ্চ আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে মুক্ত করেছেন। থাকতে দিয়েছেন অভিজাত এলাকায় নিজের বাসভবনে। চিকিৎসা নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি হাসপাতালে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি এরকম মহানুভব মানবিক আচরণ সমকালীন পৃথিবীতে খুব কমই দেখা যায়। মানবাধিকার চর্চায় পশ্চিমা বিশ্বের যে সকল দেশ শীর্ষস্থানে, সেই সকল দেশেও এই রকমের মানবিকতার নজির বিরল। 

একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, বিএনপি এবং তাদের তথাকথিত সুশীল ব্যক্তিরা খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে যেভাবে রাজনীতি করছে, তাতে বুঝা যায় আইনের শাসনের প্রতি তাদের কোন সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ নেই। যারা প্রকৃত অর্থে আইনের শাসনে বিশ্বাসী, দণ্ডপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে বিদেশে চিকিৎসার দাবি  নিয়ে  তারা কখনো রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না । এই ধরণের দাবি সংবিধানের লংঘন। সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী এই ধরণের দাবি আইনের শাসনের পরিপন্থী।

এদেশে উল্লেখযোগ্য সংখক মানুষ কারাগারে রয়েছে। তাদের কয়জনের ভাগ্য হয়েছে সরকারের বিশেষ ক্ষমতায় দণ্ড স্থগিত করে জেলখানা থেকে মুক্তি লাভ । তাদের সবাই এদেশেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের কেও তো বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্য দাবি করে না। চিকিৎসাধীন অনেক মানুষ এদেশে মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া বিগত দুই বছরে এদেশে উল্লেখযোগ্য মানুষ করোনা মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা কি বাংলাদেশের নাগরিক না ? তারা কি মানুষ না ? এদেশের সকল মানুষের কথা না ভেবে শুধুমাত্র নিজেদের নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে আজ বিএনপি যেভাবে হৈচৈ করছে, সেটি দেশপ্রেমিক কোন রাজনৈতিক দলের আচরণ হতে পারে না। এই আচরণ দেশের প্রতিটি মানুষের মানবিক মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা, অসম্মান। এই আচরণ এদেশে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা। বিএনপির এই আচরণ আইনের শাসনের মূলমন্ত্র সমতার নীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সাংঘর্ষিক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭