ইনসাইড পলিটিক্স

আবারও শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগে?


প্রকাশ: 08/12/2021


Thumbnail

ডা. মুরাদ হাসান। সদ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুরের এই সাংসদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন, গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে গলা ফাটানো এই লোকটি ছাত্রজীবনে করতেন ছাত্রদল। তবে ক্ষমতার ঘূর্ণিপাকে নিজেও ভোল পাল্টেছেন। ছাত্রদলের পদধারী নেতা থেকে হয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতিও। বিষয়টি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খোদ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও জানতেন না। এরকম অনুপ্রবেশকারী লোক কিভাবে আওয়ামী লীগের এত উপরে স্থান পেল এটি একটি কোটি টাকার প্রশ্ন। পাশাপাশি মুরাদের মতো আরও কতশত হাইব্রিড, বিএনপি-জামায়াত করা, ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় ‘কাউয়া’ নেতা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অনেকেই বলছেন, ডা. মুরাদের মতো হাইব্রিডদের চিহ্নিত করতে দলের ভেতরে নতুন করে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। দলকে বাঁচাতে এসব অনুপ্রবেশকারীদের স্ব-মূলে উৎপাটন অতীব জরুরি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংকটে দলকে সঙ্গ দেওয়া পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরা। 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে ডা. মুরাদ যখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে (মমেক) পড়াশোনা শুরু করেন তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। তাই ক্ষমতালিপ্সু মুরাদ ক্ষমতার লোভে ছাত্রদলে নাম লেখান। ১৯৯৫ সালে হন মমেক শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও ছাত্রদলের পদেই থেকে যান মুরাদ হাসান। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নিজের ভোল পাল্টে নাম লেখান ছাত্রলীগে। হয়ে যান মমেক ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। এরপর ২০০০ সালে মমেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ নিয়ে সাচ্চা আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। মুরাদের মতো আরো অনেকেই খোলস পাল্টে আওয়ামী আদর্শের লোক হিসেবে নিজেকে জাহির করছেন বলেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ধারণা। 

বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষায় টানা তৃতীয় বারের মতো দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের সবচেয়ে পুরনো ও সমৃদ্ধশালী এ দলটি গরীব ও মেহনতি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত। তবে অনেক বড় এবং প্রাচীন দল হওয়ায় বিগত ১২ বছরে বিএনপি-জামায়াতের বহু নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। কয়েকদিন আগে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ জনিত কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরকে। এর আগে দলের ভেতরে নজিরবিহীন শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে দুর্নীতিবাজ, অনুপ্রবেশকারী এসব কাউয়াদের অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে দিয়ে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট থেকে শুরু করে কাউন্সিলর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ, যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমান, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম ওরফে সোহেল, যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকেও গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি ক্যাসিনো ব্যবসার বাইরে ঠিকাদারি থেকে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক জি কে শামীম গ্রেপ্তার হন। একই সময়ে সূত্রাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাব বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও অর্থ উদ্ধার করলেও প্রথমে তাদের ধরতে পারেনি। পরে অবশ্য তারা ধরা পড়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে পরিচালিত এ  শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছিল সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ। আওয়ামী লীগের যেসব পোড় খাওয়া নেতা, যারা এতদিন অনুপ্রবেশকারী ও সুযোগসন্ধানীদের কনুইয়ের গুঁতোয় টিকতে পারছিলেন না, তারাও মনেপ্রাণে চাইছিলেন এ রকম একটি অভিযান চলুক। তাদের অনেকে এ-ও বলেছেন যে, দুর্নীতি নিয়ে কাগজগুলোর উচিত বেশি বেশি রিপোর্ট করা। তাতে নব্য আওয়ামী লীগারদের দৌরাত্ম্য যেমন কমবে, তেমনি লাভবান হবে দেশও।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশে তাঁর মতো এরকম সাহস আর কারও নেই। নজিরবিহীন এ কাজটি ইতিহাসে অবশ্যই স্থান পাবে। অনুপ্রবেশকারীরা নিজেদের আদর্শের কৌশলী জাল বিস্তারের জন্য দলে প্রবেশ করে। নিজেদের মৌলিক উদ্দেশ্য গোপন রেখে অন্য একটি দলে প্রবেশ করে দলের তথ্য সংগ্রহ করে অথবা দলের রাজনীতি নিজেদের আদর্শিক পন্থায় প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। অন্যদিকে হাইব্রিড নেতৃত্ব বেশির ভাগ সময় সমগোত্রীয় আদর্শের রাজনীতি থেকে উঠে আসে। হাইব্রিড নেতাকর্মীরা দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব তৈরির কাঠামোর সীমাবদ্ধতা পুঁজি করে উপরের স্তরের নেতাদের আশীর্বাদে তাড়াতাড়ি নেতৃত্বে চলে আসেন। হাইব্রিড সম্প্রদায় রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়। যেসব হাইব্রিড নেতা দলে স্থান করে নিয়ে দলটির মূলধারার নেতা-কর্মীদের এড়িয়ে চলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে অঢেল সম্পদ বাগিয়ে নেন, দলের সংকটে পাশে থাকেন না, তারা দলের জন্য ক্ষতিকর বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭