ইনসাইড পলিটিক্স

ফ্রি স্টাইল বক্তব্যের লাগাম টেনে ধরছে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 08/12/2021


Thumbnail

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয় মেয়াদে এসে দল এবং সরকার যেন এলোমেলো। একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের নেতারা যে যার মত ফ্রি স্টাইলে কথাবার্তা বলছেন, অন্যদিকে দলেও চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে গেছে। যার যেটা বিষয় নয় সেই বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রের সমালোচনা করছেন ফ্রি স্টাইলে। লাগামহীন ভাবে কথা বার্তা বলছেন বিভিন্ন নেতারা। যে যেভাবে পারছেন ফেসবুকে বা ইউটিউবে তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের হাই কমান্ড। আর এই কারণেই ফ্রি স্টাইল কথাবার্তা বলার লাগাম টেনে ধরা হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশনা দিবেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কুরুচিকর, কদর্য কথাবার্তার জন্য মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান। এই মুরাদ হাসান গত তিন মাস ধরেই ফ্রি স্টাইলে লাগামহীন কথাবার্তা বলছিলেন। এমনকি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে চান এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করে এ ধরনের কথাবার্তা বলতে পারেন না। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সুনির্দিষ্ট কাজ রয়েছে এবং তারা শুধু মন্ত্রণালয়ের বিষয়েই  কথা বলবে এটি কাম্য। যার যে মন্ত্রণালয় সেই মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে তারা কথা বলবেন কিন্তু অনেক সময় দেখা যাচ্ছে মন্ত্রীরা তার মন্ত্রণালয়ের বাইরের বিষয়ে ফ্রি স্টাইলে কথাবার্তা বলছেন যেটি তার এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয় সেটি নিয়েও তিনি নাক গলাচ্ছেন।


যেমন সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী সব বিষয়ে নাক গলাতে গিয়ে নিজেই বিপদে পড়লেন। আর এ কারণেই মন্ত্রিসভার সদস্যরা অযাচিত ভাবে যেন সব বিষয়ে কথা না বলেন সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্য দলের মুখপাত্র রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্য রয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। এর বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে একজন মন্ত্রী রাজনৈতিক বক্তব্য, বিবৃতি দিতেই পারেন কিন্তু অন্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে যেন তিনি কথা না বলেন এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা অতীতে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এটা মানা হচ্ছিল না। যেমন পিয়াজের দাম কি হবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কি বা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিষয় নিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের বক্তব্য না দেয়াই সমীচীন বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। 

আবার দলের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে যে একই বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন একেক জন। এ বিষয়টিও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরকে চিন্তিত করেছে । তারা মনে করে যে দলের একটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ যেন কথা না বলে। যেমন সাম্প্রতিক সময় শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে একেক মন্ত্রী একেক রকম বক্তব্য দিয়েছে। এই বক্তব্য সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। কাজেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের যেকোনো বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান থাকবে এবং সেই সুস্পষ্ট অবস্থানের ভিত্তিতে আলোচনা করবে। আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্প্রতি আরেকটি প্রবণতা দেখা দিয়েছে আর তা হলো তৃণমূলের নেতাদের যথেচ্ছ কথাবার্তা। তৃণমূলের নেতারা ফ্রিস্টাইলে কথাবার্তা বলছেন এবং এসব কথা বার্তার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির শিষ্টাচার মানা হচ্ছে না। যে যেভাবে পারছেন বক্তব্য রাখছেন। এমনকি স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র নেতাদের সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন এটি কখনোই কাম্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগ এখন মনে করছে যে, এই বিষয়ে একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার। আওয়ামী লীগের আসন্ন কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ধরনের লাগামহীন কথাবার্তার লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এ ধরণের কথাবার্তা দলকে কি রকম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি ফেলতে পারে তার দুটি উদাহরণ সাম্প্রতিক সময় দেখা গেছে। একজন মুরাদ হাসান অন্যটি গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আর এই দুই বক্তব্য থেকেই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, কেউ যেন তার সীমারেখা অতিক্রম না করে। যার যেটুকু অবস্থান সেটুকু অবস্থান থেকেই যেন তার বক্তব্যটুকু রাখে এবং দলের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলা কে আওয়ামী লীগ কঠোরভাবে প্রতিহত করবে বলেও দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করা ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭