ইনসাইড পলিটিক্স

কৌশলের খেলায় বিএনপি আবারও হারলো আওয়ামী লীগের কাছে?


প্রকাশ: 08/12/2021


Thumbnail

রাজনীতি একটি কৌশলের খেলা। আর এই কৌশলের খেলায় বারবার বিএনপি-আওয়ামী লীগের কাছে পরাজিত হচ্ছে। অন্তত গত ১৫ বছরে তাই হয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সর্বশেষ ডা. মুরাদ বিতর্কে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে এটি স্বীকার করছেন বিএনপি নেতারা। এমনকি বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যু এবং অন্যান্য বিষয়কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মুরাদ ইস্যুকে সামনে নেওয়া হয়েছে। আমরা যদি তর্কের খাতিরেও ধরে নেই যে রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য সত্য তাহলে বুঝতে হবে যে আওয়ামী লীগ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কৌশলের কাছে বিএনপি আরও একবার পরাস্ত হলো। কারণ মুরাদের ইস্যুটি আওয়ামী লীগের তৈরি না, শেখ হাসিনার তৈরি না, মুরাদের ইস্যুটি তৈরি করেছিলো বিএনপি। মুরাদ একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি জায়মা রহমান সম্পর্কে বেশকিছু মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্য গুলো নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রশ্ন তুলেন, কথা বলেন এবং মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেন। প্রথমে মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন যে অবিলম্বে ২৪ ঘণ্টার মাঝে মুরাদকে পদত্যাগ করতে হবে। এই বক্তব্যের পরপরই মাহিয়া মাহির সঙ্গে মুরাদের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। যে ফোনালাপটি দু বছরের পুরনো এবং এটি মুরাদের পদত্যাগের পটভূমি তৈরি করে। বিএনপি নেতারা মনে করেছিল যে মুরাদ ইস্যু দিয়ে তারা মাঠ গরম করবে এবং সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায় করবে বিএনপি'র পক্ষে। আর নারীসমাজ আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় জর্জরিত করবে। প্রধানমন্ত্রীর কৌশলের কারণে তা আর হয়নি।

একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে মুরাদ ইস্যুটি সামনে আসার সাথে সাথেই বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কিংবা নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ধামাচাপা পড়ে গেছে। মুরাদ কি বলেছেন না বলেছেন, তার অতীত, বর্তমান নিয়ে চর্চা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। রাজনীতিবিদদের শিষ্টাচার এবং দায়িত্বশীল কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাত্রা কিংবা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের প্রয়াস অনেকটাই ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। বিএনপি নেতারা এখন বলার চেষ্টা করছেন যে সরকার কৌশলে মুরাদ ইস্যুটি এনেছেন। সরকার মুরাদ ইস্যুটি আনবে কেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে যদি সরকার মুরাদ এর ব্যাপারে কিছু না করতো তাহলে বিএনপি এটি নিয়ে আন্দোলন করতো। আর যেহেতু সরকার করে ফেলেছে বিএনপি নেতারা অনেকটাই হতবিহবল হয়ে পড়েছে। তারা আসলেই ঘটনার জন্য প্রস্তুত না। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি কৌশলের খেলায় বিএনপি বারবার আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে হেরে যাচ্ছে। আমরা যদি ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথায় ধরি, সেই নির্বাচনের আগ দিয়ে বিএনপি পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ী হল। কিন্তু নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না বলে বেঁকে বসল। আওয়ামী লীগ সভাপতি সেইসময় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। সেসময় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলেন, গণভবনে দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বিএনপি কৌশলের খেলায় পরাজিত হয়। 

বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার চরম নিদর্শন প্রদর্শন করেন। তিনি প্রোটকল ভেঙ্গে গুলশানের বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত স্টাফরা গেটের দরজা পর্যন্ত খোলেননি। একজন প্রধানমন্ত্রী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফেরত আসেন। এটি রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট। এর ফলে বিএনপির ইমেজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যখন বিএনপির প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে যাওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব লুফে নেন এবং তাদেরকে গণভবনে ডেকে বৈঠক করেন। এই বৈঠক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশলের আরেকটি অনন্য নজির। এভাবে বিভিন্ন সময় কৌশলের খেলায় বিএনপি বারবার পরাজিত হচ্ছে। মুরাদ ইস্যুটি তারই সর্বশেষ উদাহরণ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭