ইনসাইড পলিটিক্স

‘আলাল’ ইস্যুতে বিএনপি কি লজ্জিত?


প্রকাশ: 10/12/2021


Thumbnail

বিরোধী রাজনৈতিকদের নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে দলের নেতাদের নোংরা অশ্লীল মন্তব্য করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশ্লীল শব্দ ব্যবহারে বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করছেন। আলালের ওই বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে বহুদিন ধরে। বক্তব্যটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরাসরি কিছু না বললেও দলের অনেক নেতাই আলালের মন্তব্যে বিব্রত বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা যায়নি। অন্যদিকে সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে নারীবাদীরাও চুপ। আলালের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতিও দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় রাজনীতিবিদদেরই নিজেদের মান মর্যাদা, শালীনতা রক্ষা করার এখন চূড়ান্ত সময় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আলাল প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে অশালীন কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখন কপালে তিলক চন্দন দেয়। আর মোদির সঙ্গে গিয়ে ফষ্টিনষ্টি করে। এইতো চলছে।’ আলাল একজন নারীর বিষয়ে ‘ফষ্টিনষ্টি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। নারীকে হেয় করা, গালি দেয়া পুরুষতন্ত্রের  বহুদিনের চর্চা। এই আপত্তিজনক শব্দের তীব্র বিরোধীতা করা দরকার। রাজনীতিতে বিরোধিতা থাকবে। পক্ষ বিপক্ষ থাকবে। এখানে নোংরামি আসবে কেন? ইতোমধ্যে ডা: মুরাদ হাসান অশালীন, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা খুইয়েছেন। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সংসদের পদও হারাতে পারেন। মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা হবার সম্ভাবনাও আছে। কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করার জন্য যদি একজনকে সব হারাতে হয়, দল ব্যবস্থা নেয়, তাহলে  বিএনপি নেতৃত্বকেও এর জবাব দেওয়া উচিত যে, তারা আলালের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নিলেন। 

বিএনপিতে শুধু আলাল একাই নন, যে  অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করছে। বিএনপির অনেক নেতাই একাধিকবার নারীদের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছেন। আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। বিএনপির নতুন প্রজন্মের নেতা ইশরাক হোসেন যে গালাগালি করেছেন তাতে নিজেকে মুরাদের কাতারেই নামিয়ে এনেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। তিনি বলছেন, মুরাদকে তিনি পেটাবেন। তাই নয়, মুরাদকে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলেছেন! এটা বক্তৃতা নয় জঘন্য গালি। গালি অপরাধী মুরাদকে দিন, তার পিতাকে কেন? এ ছাড়াও সাংসদ রুমিন ফারহানা, সাবেক সাংসদ আসিফা আশরাফী পাপিয়া, রেহানা আক্তার রানু, শাম্মী আখতাররা সংসদে দাঁড়িয়ে শিষ্টাচার বর্জিত যেসব মন্তব্য করেছেন, তা কোনোভাবেই রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। 

আমরা একটা নতুন দুনিয়াতে বাস করি। আমাদের উচিত এসব নিয়ে কথা বলা। কিন্তু সুশীল সমাজসহ নারীবাদী নেতৃত্বের এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ মুরাদের বক্তব্যের পর ৪০ জন নারীবাদী নেতা তার সমালোচনা করলেন। বিবৃতি দিলেন। সুশীল সমাজ মুরাদের বক্তব্য নিয়ে গোটা আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। মুরাদের আপত্তিকর বক্তব্যকে তারা অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করলেন। তাহলে কি শুধু আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী যখন আপত্তিকর মন্তব্য করবে সেটি অপরাধ হবে? আর বিএনপির কেউ করলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না? বিএনপি নেতৃত্বকে এসব দেখা উচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দেওয়ায় আলালের দল ও রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত। আলাল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম পরিপন্থী, অসঙ্গতিপূর্ণ এবং অসভ্যতার চরম উদাহরণ। কোনো সভ্য সমাজের সভ্য রাজনৈতিক কর্মী এ ধরণের কথা বলতে পারে না। আলালের রাজনীতিতে থাকা উচিত নয়। কিন্তু দু:খজনক হলো বিএনপি নেতৃত্ব এ ধরনের অশালীন বক্তব্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। যেখানে আওয়ামী লীগ অশালীন বক্তব্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না, সেখানে বিএনপিরও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শেখা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭