ইনসাইড পলিটিক্স

আইভী: আসল আওয়ামী লীগের প্রতিকৃতি


প্রকাশ: 10/12/2021


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবার মনোনয়ন পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এটি পুরনো খবর। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিবছর যেরকম বিভক্তি দেখা যায়, পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা যায় এবার নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগে সেটি নেই। বরং সেলিনা হায়াৎ আইভীর মনোনয়ন প্রাপ্তিটাই যেন সকলকে স্বস্তি দিয়েছে। তার প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমানও এই মুহূর্তে সেলিনা হায়াত আইভীর প্রকাশ্য বিরোধিতা করছেন না। এর ফলে দীর্ঘদিন পর আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করছেন মোটামুটিভাবে প্রকাশ্য আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখে। আইভীর রাজনীতিতে উত্থান এবং বেড়ে চলা একটি ঘাত-প্রতিঘাত এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ২০০৩ সালে তিনি প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন। তারপর তিনি টানা ১৮ বছর তিনি স্থানীয় সরকারের এই স্পর্শকাতর জায়গাটিতে নির্বাচন করছেন এবং বিজয়ী হচ্ছেন।

এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে এবং আইভী অনেক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০০৩ সালে তিনি যখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তখন একটি প্রতিকূল পরিবেশ ছিল আওয়ামী লীগের জন্য। কিন্তু আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিরোধীরা নয় বরং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো। সেই সময় ২০০৩ সালে নির্বাচনের সময় শামীম ওসমান দেশে ছিলেন না। কাজেই আইভীকে দলের ভেতর খুব বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু ওই সময় নির্বাচনের ফলাফল আটকে দেওয়া হয়েছিল এবং বিএনপিকে জেতানোর একটি গোপন চেষ্টাও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থানের কারণে। এরপর প্রতিটি নির্বাচনে আইভী যতটা না দলের বাইরে প্রতিপক্ষ হয়েছেন, তারচেয়ে বেশি সামলাতে হয়েছে তার আওয়ামী লীগের শত্রুতা। তবে আইভী দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাচিত  মেয়র থাকা এবং আবার পাঁচ বছরের জন্য মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চয়ই একটি বড় ঘটনা।

সেলিনা হায়াৎ আইভী রাজনীতিবিদ হিসেবে খুব স্পষ্টবাদী। তিনি যেটি বিশ্বাস করেন সেটি বলতে কোন রাখঢাক রাখেন না। তার সততা প্রশ্নাতীত। ১৮ বছর ধরে মেয়র পদে রয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। এমনকি এলাকাবাসী সবসময় মনে করে যে, সেলিনা হায়াৎ আইভীর অনেক ব্যাপারে সাফল্য নাই কিন্তু তার আন্তরিকতার অভাব নেই। সবসময় তিনি চেষ্টা করেছেন নগরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে সবসময় যেমন দেখা যায় যে, আসলে আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ নিজেই। আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ শত্রু পরাজিত করতে পারে না, ঘরের শত্রুরাই পরাজিত করতে পারে। আইভীর ক্ষেত্রে সে বিষয়টি যেন শতভাগ সত্য।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেমন আওয়ামী লীগ চেয়েছিলেন? আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকে কিভাবে দেখতে চেয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা দেখবো, যে বঙ্গবন্ধু সবসময় চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগের কর্মীরা হবে সৎ, নির্ভীক, দেশপ্রেমিক, জনগণের জন্য উৎসর্গিত প্রাণ। তারা একদিকে যেমন জনগণের প্রতি আন্তরিক হবে, অন্যদিকে আদর্শের প্রশ্নে থাকবে আপোষহীন। সেলিনা হায়াত আইভী সেই রকমই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী লীগের ভেতরেই তিনি যুদ্ধ করছেন আওয়ামী লীগকে কলুষমুক্ত করার জন্য, আওয়ামী লীগকে শুদ্ধ করার জন্য। এটি হয়তো বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এ কারণেই সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতো রাজনীতিবিদরা এখনও আওয়ামী লীগে টিকে আছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির অপত্য স্নেহ পাচ্ছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭