দেশে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফাইভজি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকাল রোববার (১২ ডিসেম্বর) এ লক্ষ্যে এই সেবার পরীক্ষামূলক প্রদশর্নী হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার চারটি এলাকায় এবং ঢাকার বাইরে দুটি এলাকায় এই সেবা চালু করা হবে।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে, সংসদ ভবনের কাছে মানিক মিয়া এভিনিউতে, সচিবালয়ে এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় টেলিটকের বিটিএস বা বেইস ট্রানসিভার স্টেশনের মাধ্যমে এটি চালু করা হবে। ঢাকার বাইরে চালু করা হবে টুঙ্গিপাড়ায় এবং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায়। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্যতম একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।
আগামীকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে এই সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন। এ ছাড়া আজ শনিবার সকাল ১১টায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থান করবে।
জানা গেছে, টেলিটকের ফোরজি সিমেই ফাইভজি সেবা মিলবে। ফোরজি সিম ফাইভজিতে সক্রিয় করে নিতে হবে। তবে টেলিটক গ্রাহকরা সবাই এখনই এ সুবিধা পাবে না। প্রথম পর্যায়ে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহকের ফোরজি সিম ফাইভজিতে সক্রিয় করে দেওয়া হবে। আর ফাইভজি সেবা পেতে হলে মোবাইল হ্যান্ডসেটটিও ফাইভজি সক্ষম হতে হবে। ভয়েস কল বা মোবাইল ফোনে কথা বলতে এ সেবা কাজে লাগবে না। সেবাটি ইন্টারনেটের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
প্রথম পর্যায়ে কতজন গ্রাহক এই সুবিধা পাবে, এ প্রশ্নে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাব উদ্দিন জানান, সংখ্যাটি এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি। প্রথম পর্যায়ে ফাইভজি সেবায় ইন্টারনেটের গতি ফোরজির ১০ গুণ বেশি বা এক জিবিপিএস পর্যন্ত গতি পাওয়া যাবে। পরে আরো বাড়বে।
এর আগে গত অক্টোবরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং টেলিটক থেকে জানানো হয়েছিল, মধ্য ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকায় ১০টি বিটিএসে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করা হবে। পরে বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হবে ২০০ বিটিএসে।
এই সেবা চালুর লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) কয়েক মাস আগে টেলিটকের অনুকূলে ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৬০ মেগাহার্জ (৩৩৪০-৩৪০০) তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়।
টেলিটকের ১০০ মেগাহার্জ তরঙ্গের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শর্ত সাপেক্ষে ও অস্থায়ীভাবে। এ ক্ষেত্রে সব মোবাইল ফোন অপারেটরের জন্য ইউনিফায়েড লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুমোদনের পর এর সব শর্ত মানতে হবে টেলিটককে। এ ছাড়া অন্য অপারেটরদের জন্য ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের তরঙ্গের যে মূল্য নির্ধারণ করা হবে, তা টেলিটকের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
ফাইভজি সেবার জন্য নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে সরকার এরই মধ্যে টেলিটককে দুই হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকা। বাকি ৬০ কোটি টাকা টেলিটক নিজে বহন করবে। এ ছাড়া এই সেবার জন্য ২০০ বিটিএস প্রস্তুত করতে টেলিটকের আরো প্রায় ২২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায়।