ইনসাইড টক

‘এটা ঠিক যে উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতি করার চাপ অনুভব করি’


প্রকাশ: 11/12/2021


Thumbnail

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় বলেন, আমাদের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এটা আসলে কারোরই কাম্য নয়। সেই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটি একটি সামগ্রিক বিষয়। একটি ঘটনা দিয়ে সকলকে বিচার করা যাবে না। বিচার করলে বিচারটি সঠিকও হবে না। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এই বিষয়টি বিব্রতকর। রাজনীতিতে আমরা একে অপরের সমালোচনা করবো। কিন্তু সমালোচনার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত তরুণ রাজনীতিবিদদের যুক্তির সাথে পরিশীলিতভাবে সমালোচনা করার আদেশ, উপদেশ এবং একই সঙ্গে নির্দেশ দেন। এটি ওনি সংসদের ভিতরে-বাহিরে, দেখা হলেই মনে করিয়ে দেন। আমরা সে শিক্ষাই নিয়েছি এবং সেভাবেই চলার চেষ্টা করছি।

সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যগসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন সাংসদ তানভীর শাকিল জয়। পাঠকদের জন্য সাংসদ তানভীর শাকিল জয় এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে  তানভীর শাকিল বলেন, উত্তরাধিকারের রাজনীতিকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি। এখানে নেতিবাচকের কিছু নেই। এই যে অনেকে আমাকে বলে আমি নাসিম সাহেবের ছেলে। এতে আমি গর্বিত। কারণ আমি তো আর খন্দকার মোশতাকের ছেলে না। আমি মনসুর আলীর নাতি, মো. নাসিম সাহেবের ছেলে। এটা ভিতরে ভিতরে আমাকে শক্তি যোগায়। অনেক সময় এটি বলা হয়, শুধু বাংলাদেশে এবং ভারতে উত্তরাধিকারের রাজনীতি। এটি ঠিক নয়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি সব দেশেই আছে। আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকান, সিনিয়র বুশ, জুনিয়র বুশ, বুশের ভাই জেবা বুশ। এরা সবাই কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছে। বিল ক্লিন্টনের বউ হিলারি ক্লিন্টনও কিন্তু একই ধারায়ই রাজনীতিতে এসেছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন যার বাবা, সে হয়ত চিন্তা করে আমিও ব্যবসায়ী হবো। যার বাবা শিক্ষক, সে চিন্তা করে শিক্ষক হবে। ফলে যার বাবা বা মা রাজনীতিবিদ, সেও চিন্তা করে রাজনীতিবিদ হওয়ার। এখন উত্তরাধিকার সূত্রে আপনি রাজনীতিতে আসার পরে পারফর্ম করতে পারতেছেন কিনা, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আমার দাদা এবং পিতার জন্য আমার একটি রাজনৈতিক পরিচিতি আছে। কিন্তু আমি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর যদি জনগণের সেবা করতে না পারি, তাহলে কি আমি উত্তরাধিকারের রাজনীতি ধরে রাখতে পারবো? মানুষ আপনাকে নাসিম সাহেবের ছেলের জন্য বা মনসুর আলীর নাতি হিসেবে একবার ভোট দেবে, বারবার কি ভোট দেবে? আপনি কাজ না করলে কখনোই দেবে না। সুতরাং উত্তরাধিকারের রাজনীতি একটি ইতিবাচক দিক, যদি কাজে লাগান। আমার বাবা দাদার জন্য আমি এলাকায় অপরিচিত কেউ না। সবাই আমাকে চিনে, ভালোবাসে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। বকিটা নিজের উপর।

উত্তরাধিকারের রাজনীতি করতে গিয়ে কোনো চাপ অনুভব করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা ৪০ বছর রাজনীতি করেছেন। তিনি মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন, আমাদের জন্য আমাদের এলাকার মানুষের জন্য এত কিছু করেছিলেন। যখনই আমি সামনে এগিয়ে যাই তখন আমাকে পদে পদে তার সাথে তুলনার সম্মুখীন হতে হয়। আপনার বাবা এইগুলো করে দিয়ে গেছে। ফলে আমরা আশা করি আপনিও এগুলো করে যেতে পারবেন। মো. নাসিমের মত লোক তো আর যুগে যুগে আসবে না। এটা ঠিক যে চাপ অনুভব করি কিন্তু এই চাপটাই মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে গেলে আসতে আসতে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আরেকটি জিনিস মাথায় থাকতে হবে আর সেটা হল, প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আপনি যদি আপনার কাজে প্রচেষ্টাটা চালিয়ে যেতে পারেন তবে মানুষ অন্তত মনে করবে আপনি তো চেষ্টা করে যাচ্ছেন আন্তরিকভাবে, আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তরুণ রাজনীতিবিদদের যে স্খলন তা কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে তানভীর শাকিল বলেন, একটা জিনিস কিন্তু ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে আর সেটা হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের যেমন সুবিধা আছে ঠিক তেমনি কিন্তু অসুবিধাও আছে। যে কেও যেকোনো কিছু বলে দিচ্ছে, করে দিচ্ছি, ভিডিও করে ছেড়ে দিচ্ছে। আর তা অনলাইন মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে, আর সত্যি-মিথ্যার যাচাই কিন্তু পরে করা হচ্ছে। যতক্ষণে আপনি সত্যি-মিথ্যা যাচাই করতে পারছে ততক্ষণে আপনি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। আর এটাও হুট করে বন্ধ করা কিন্তু সম্ভব না। সবার ভেতর এটা নিয়ে একটা সচেতনতা তৈরি করা উচিৎ, রাজনীতিবিদদের মাঝেও এটা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা উচিৎ। আগে জেনো আমরা সত্য-মিথ্যাটা যাচাই করে। তাহলেই আমরা এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।

বাংলাদেশের পড়াশোনা এবং বাহিরের পড়াশোনার পার্থক্য সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের এবং বাহিরের বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক পার্থক্য আছে। ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচুর গবেষণার সুযোগ আছে। গবেষণার সুযোগ থাকার কারণে তাদের পাঠদানসূচি বাস্তবায়ন খুবই গোছানো প্রকৃতির হয়। যেসব শিক্ষক পাঠদান করেন, তার বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন। বইয়ে যে বিষয়টি আছে, তার বিসৃত ব্যাখ্যা করা বা ছাত্রকে একটু গবেষণার সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি তুলনামূলকভাবে বিদেশে বেশি। বাংলাদেশে বিশাল জনগোষ্ঠী। অনেক শিক্ষার্থী। এরপরও আমাদের মহামান্য শিক্ষকবৃন্দ যেভাবে শিক্ষা দান করছেন, এটাকেও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এটিও নজিরবিহীন সারা বিশ্বে। আমেরিকায় মতো জায়গায় একটি ক্লাস রুমে ১০ থেকে ১৫ জনের শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাস নেন একজন শিক্ষক। আর আমাদের এইখানে ২০০ থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী দিয়ে একটি শ্রেণীকক্ষ ভর্তি থাকে। সুতরাং তাদের অবদানকে অস্বীকার করা উচিত নয়। আমরা অনেক সময় শিক্ষকদের সমালোচনা করি। এটি ঠিক নয়। আমাদের শিক্ষার অনেকগুলো মাধ্যম। আপনি চাইলেই একদিনে এগুলো বন্ধ করতে পারবেন না। ধীরে ধীরে তাদেরকে মূল ধারায় আনতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এটিই করছেন। আমরা শুধু রাজনীতি নিয়েই বলি, কিন্তু রাজনীতি শিক্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমি মনে করি, শিক্ষা নিয়েও কথা বলতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭