ইনসাইড থট

ফাইভ-জি ও এসডিজি লক্ষ্য ৯.সি অর্জন


প্রকাশ: 12/12/2021


Thumbnail

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-র দেয়া তথ্য অনুযায়ী অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত আমাদের দেশের ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ১২৯.১৮ মিলিয়ন যার মধ্যে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা হলো ১১৯.১১ মিলিয়ন, আইএসপি/পিএসটিএন গ্রাহক ১০.৭ মিলিয়ন। বিটিআরসি-র দেয়া ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা অনুযায়ী “গ্রাহক” তারাই যারা বিগত ৯০দিনের মধ্যে অন্ততঃ একবার ইন্টারনেট “এক্সেস” করেছেন।   

বিটিআরসি-র এই তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা শতভাগ মানুষের এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রকৃত সংখ্যা জানা না থাকলেও পূর্বোক্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে এটা এমনিতেই স্পষ্ট যে বাংলাদেশের সকল মানুষ চাইলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। একটা বিতর্ক হ’তে পারে এই নিয়ে যে, যেহেতু বিটিআরসি প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৮১.৩২ মিলিয়ন বা মোট জনসংখ্যার শত ভাগই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী (অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত) ফলে একাধিক সিমকার্ডের গ্রাহক হলে ও বিগত ৯০দিনে একবার “এক্সেস” নিয়ে থাকলে ইন্টারনেট গ্রাহকদের মধ্যে প্রকৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিছুটা কম হ’তে পারে। তারপরেও এই সব মিলিয়ে যে গ্রাহক সংখ্যা আমরা পাচ্ছি বৈশ্বিক পটভূমিতে উপস্থাপিত পরিসংখ্যান হিসেবে তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য এমনকি প্রদত্ত তথ্যের “গ্রাহক” থেকে “প্রকৃত ব্যবহারকারী” বের করে নিলেও সে হিসাবটা বাংলাদেশের জন্যে বিশেষ আশাব্যাঞ্জক এই কারণে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার শতভাগ মানুষের কাছে এখন কানেক্টিভিটি পৌঁছে দিতে পেরেছে। আর এতে এসডিজি লক্ষ্য ৯.সি অর্জনে আমাদের উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখেছে, ২০২১ সালে এর চেয়ে বড় খবর আর কী হতে পারে?

২০১০ সালে জাতিসংঘের গড়া “ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট” যার ব্যবস্থাপনা করে আইটিইউ ও ইউনেস্কো, সেপ্টেম্বর ২০১৭ মাসে তাদের বিশ্ব ইন্টারনেট পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানে একটি উদ্বেগের কথা উল্লেখ আছে যা বাংলাদেশের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রতিবেদনের ৭-এর পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ২০১৬ সালের মোবাইল বা ব্যক্তি পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্যবহার এসব দেশের জনসংখ্যার ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৭ সালের শেষে এসে ৪১.৩ শতাংশ হবার প্রক্ষেপণ রয়েছে, কিন্তু তার অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ অর্জনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ মনে করেছিলেন বিশ্লেষকগণ। অন্য এক অংশে বিবৃত আছে সে তুলনায় সামর্থ্যমূল্যে ভালো গতির নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট বৃদ্ধিও ঘটছে না যা ব্যক্তি পর্যায়ের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিসংখ্যানকে সমৃদ্ধ করতে পারে। ফলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই শ্লথ হারে যদি ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণ ঘটে তা হলে ২০২০ সালের মধ্যে এসডিজি-র লক্ষ্য ৯.সি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা এবং ২০২০ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ইন্টারনেটে সর্বজনীন ও মূল্যসাশ্রয়ী প্রবেশাধিকার প্রদানে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হওয়া) অর্জন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ২০২১ সালে পৌঁছে সেসব বিশেষজ্ঞ প্রক্ষেপণকে ভুল প্রমাণ করেছে।

একই প্রতিবেদনে বলা ছিল, এসব সংযোগ-পরিসংখ্যান আমাদের সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার আর ভোক্তার সামর্থ্য দুটোই যেন অনলাইন অভিজ্ঞতাকে চরমে বা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে কারণ ইন্টারনেট খরচ এখন এদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে।

২০১৬ সালে ফেসবুক ব্রিটিশ সংস্থা “ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)”-কে কমিশন করে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে ৪৬টি সূচক পরিমাপ গবেষণা করেছিল। বিশ্বের ৭৫টি দেশে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল আমলে নিয়ে ব্রডব্যান্ড কমিশন প্রতিবেদন বলছে, এই ৭৫ দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ ২-জি সিগন্যাল রেঞ্জের মধ্যে আছে যার মাধ্যমে কার্যকরী ইন্টারনেট সুবিধা বলতে যা বুঝায় তা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বিশ্বের ৭৬ শতাংশ মানুষ এখন ৩-জি আওতায় আছে ও ৪৩ শতাংশ মানুষ ৪-জি সুবিধার আওতায় এসেছে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে কানেক্টেড বা সংযুক্ত দেশগুলোরই একটি বড়ো জনগোষ্ঠী এখনও নিম্নমানের ইন্টারনেট ব্যবহারের আওতায় রয়েছে। এর পরিধি না বাড়াতে পারলে বা ক্রমান্বয়ে ২-জি থেকে ৩জি-৪জি সম্প্রসারণ না হলে বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোই উপযুক্ত সংযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে। বাংলাদেশ আজ ১২ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ফাইভ-জি চালু করে সে আশংকার মূলে আঘাত করেছে।

আইটিইউ-র যে গতির পরিসীমা তা অনুসরণ করে বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট যদি যথাযথ গতির ফোর-জি ও ফাইভ-জি ইন্টারনেট নিশ্চিত করে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিটিআরসি এই গতি পরিসীমা বেধে দিয়ে দেশের প্রকৃত গ্রাহকদের কখন নিশ্চিত করবে? ঘরে ঘরে ভাল গতির মোবাইল ইন্টারনেট এখনই নিশ্চিত করা সম্ভব যদি আমরা একটি জিএসএম রাউটার লাগিয়ে নেই, বাড়িশুদ্ধ সবাই তা ব্যবহার করতে পারে। প্রান্তিক পর্যায়ের স্কুলগুলো, কলেজগুলো, হাসপাতালের সব ক’টি বিভাগ বা যারা ঘরে বসে আয় করতে চান সে সবই কাজই তো সম্ভব। খুঁজে পেতে দেখলাম মোবাইল কোম্পানীগুলো এসব কাজে তেমন একটা মার্কেটিং করছে না। এক বাড়িতে ৫জন মানুষ থাকলে তাদের প্রত্যকের কাছে সিম কার্ডের সাথে ডাটা/ইন্টারনেট বিক্রি করাই এদের উদ্দেশ্য, আমাদের তারা বুঝতেই দিচ্ছে না যে একজনের সিম কার্ডে ডাটা কিনলে বাড়িশুদ্ধ সকলের তা কাজে লাগবে। পথে-ঘাটে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে যাদের দরকার হবে ছোট একটা ডাটা প্যাকেজ কিনে রাখলেই হলো, প্রয়োজন মতো সেটা ব্যবহার করা যাবে। কে বলেছে আমাদের কোন উপায় নেই!

ফলে আমারা বুঝতে পারছি ডিজিটাল বাংলাদেশে বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট পৌঁছে দেবার যে অঙ্গীকার তা কিন্তু আমাদের দুয়ারে পৌঁছেই আছে। সরকার সাহস করে ফাইভ-জি পর্যন্ত এনে দিয়েছে শুধু গতির নিশ্চয়তাটা যেন ঠিক থাকে সেটাই আমাদের দেখতে হবে।

আমাদের ঘরে ঘরে এখন ইন্টারনেট আছে। আর এসব অর্জন আমাদের গৌরবের। এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা আমরা যে গতিতে অর্জন করে যাচ্ছি, আমরা বেঁচে থাকি বা না থাকি- ২০৩০ সাল হবে বাংলাদেশের, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সেদিন বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ কথা বলবে।   

রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭