ইনসাইড টক

‘চীনকে উদ্দেশ্য করেই বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে’


প্রকাশ: 12/12/2021


Thumbnail

‘অনেক কন্সপিরেসি থিউরি বানাতে পারি যে এর মধ্যে এখানকার অনেক মানুষের কথা শুনে হয়তো বলেছে কিংবা ডিফেন্স পার্চেজের বিষয় হতে পারে বা চীনের ব্যাপার হতে পারে। এটা বলা যেতে পারে। কিন্তু এগুলোর তো কোন এভিডেন্স নাই। কয়েকটা জিনিস যেটার মধ্যে এভিডেন্স আছে। একটা হলো যে, যেভাবে সাজানো হয়েছে তাতে বুঝা যাচ্ছে এটা চীনকে উদ্দেশ্য করে এটা করা হয়েছে। এটা বলা যেতে পারে। এটা তাদের যারা আলোচনা করে তারাই বলে। তাদের পত্রপত্রিকায়ও তাই বলছে। সেটা যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটার ব্যাপারে বাংলাদেশ কখনো উৎসাহী থাকবে না।’

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশের বর্তমান এবং সাবেক ৭ জন র‍্যাবের কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না করা সহ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কেমন আছে, কেমন হবে, যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ডে সম্পর্কে কিরুপ প্রভাব পড়বে ইত্যাদি সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

প্রশ্ন: র‍্যাবের সাত কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের সম্পর্কে কোনো ধরণের অবনতি ঘটবে কি?

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এটা যে বাংলাদেশে ব্যতিক্রম তা কিন্তু না। পৃথিবীর যেকোনো দেশেই এই ধরণের কাজ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় কাজটা ঠিক আছে। কিন্তু আমেরিকার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আমার মনে হয়না কোন ধরণের মোরাল অথোরিটি আছে। এর পেছনে দুইটি বড় কারণ আছে। তার একটি হলো তাদের দেশে পুলিশের দ্বারা বিচার বহির্ভূত হত্যা কাণ্ডের ঘটনা আমাদের দেশের থেকে অনেক বেশি। পুলিশের দ্বারা প্রতি বছর গড়পড়তা এক হাজারের বেশি মানুষের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সে দেশে এবং এটা আমি আমেরিকার সরকারি হিসাব থেকেই বলছি। তার উপর তাদের দেশে নিখোঁজ বা গুম হয়ে যায় এমন লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। এটা নিয়ে আমাদের পথ পত্রিকাগুলো কেন কথা বলে না সেটা আমি বুঝি না। বরং পুরো সম্মেলনটা করা হয়েছে চীনকে উদ্দেশ্য করে। সেই জায়গা থেকে দেখলে আমার মনে হয় না এটা আমাদের উপর কোন বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারবে। কারণ চীন যেই কাঠামো এখন সারা বিশ্বের সাথে তৈরি করে ফেলেছে তার সাথে সুদৃঢ়ভাবে অর্থনীতির একটা বিশাল সম্পর্ক রয়েছে। যেকোনো বিষয়েই তারা টাকা ঢালে না এটা ঠিক কিন্তু যেই বিষয়ে তারা টাকাটা ঢালে বিশেষ করে অবকাঠামো সেক্টরে সেই জায়গায় অন্য দেশ চীনের মত টাকা ঢালার অবস্থায় নেই। যেহেতু সম্মেলনটা চীনকেই উদ্দেশ্য করে করা তাই আমি মনে করি না এটা সঠিক পদক্ষেপ, অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতই কাজ করে বসলেন আসলে জো বাইডেন। আমি মনে করি যেহেতু তার দেশের মাঝেই বিশাল সমস্যা এবং করোনা মহামারীটাই থামাতে পারেনি এখনো ঠিক মত , অর্থনীতির ধস থামানে সেখানে এই ধরণের সম্মেলনের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর আমাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হবে এটা ঠিক না কারণ এই বিষয়গুলো আমেরিকা ইচ্ছাকৃতভাবেই সামনে নিয়ে আসে।

প্রশ্ন: গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর পরে এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কে কোনো ধরণের অবনতি ঘটবে কি?

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: আমেরিকার সাথে অনেক দেশেরই ভালো সম্পর্ক আছে কিন্তু সেসব দেশকে তারা আমন্ত্রণ জানায় নি, যার মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর। দেশটিতে আমেরিকার যে বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগ আছে তা ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও মিলিয়ে নেই। কিন্তু সিঙ্গাপুরকেও তারা এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় নি। এদিকে চিন্তা করলে আমার মনে হয় না এভাবে যোগফল মেলানোটা ঠিক হবে। এমন অনেক দেশকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে যাদের গণতন্ত্র নড়েবড়ে, এমনকি পাকিস্তানও এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলো যদিও দেশটি আমেরিকার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে। পত্র পত্রিকায় কিন্তু একটা বিষয় সেভাবে আসে নি আর তা হল আমন্ত্রিত দেশগুলোর মাঝে ৯০টা দেশ শেষ পর্যন্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে আর বাকিরা কিন্তু অংশগ্রহণ করে নি, এর মাঝে পাকিস্তানের নামটা এসেছে তার কারণ তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই আমন্ত্রণ জানায়নি বলেই যে সম্পর্ক খারাপ হবে সেভাবে দেখলে কিন্তু হবে না।

প্রশ্ন: রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করার জন্য আমেরিকা এই ধরণের কাজ করেছে?

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: কি নিয়ে চাপ সৃষ্টি করবে? কি কারণে? বাংলাদেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে এমন কোন পদক্ষেপ এখনও নেয়নি। একটা হতে পারে চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে বাংলাদেশের। তো চীনের সাথে তো সিঙ্গাপুরেরও বিশাল ইনভেস্টমেন্ট, সম্পর্ক আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সাউথ কোরিয়ান ছাত্র চীনে পড়ালেখা করতে যায়। সেই যায়গায় আমার মনে হয় না সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে। একটা হলো, হয়তো কিছু ইনফরমেশন গেছে এখান থেকে, সেগুলো নিয়ে নিয়েছে। আর বাংলাদেশ যেহেতু এটা নিয়ে বেশিকিছু বলবে না। কারণ, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং তো আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও হয়। কারণ, কাশ্মীরে যে অবস্থা, কাশ্মীরে তো সাংঘাতিক অবস্থা। ভারতের বিরুদ্ধে তো ওই ধরণের একটা স্টেপ নিলে ভারত একেবারে উল্টো জবাব দিয়ে দিবে। আমেরিকার এম্বাসেডর নিজেই তো বলেছে যেও আমি অবাক হয়েছি যে এটা করেছে কেন। তো সেই জায়গায় আমার মনে হয়না। এগুলো মাঝে মাঝে করে থাকে। এক সময় নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। নরেন্দ্র মোদির নিষেধাজ্ঞা তো উঠিয়ে দিলো যখন প্রধানমন্ত্রী হলো, সব মাফ হয়ে গেলো। তারপর তো বিরাট সম্পর্ক নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। আমেরিকা মূলত হলো প্রফিট দেখবে। তারা যেখানে প্রফিট আছে সেখানে যাবে। বাংলাদেশ তো আমেরিকার এমন কোন অর্থনীতি বা আমেরিকার প্রফিটের বিরুদ্ধে নেই। তো সেই জায়গায় আমার মনে হয়না সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোন অবস্থা আছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে আমেরিকা অস্ত্র বিক্রির জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিল। সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে কি?

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: গবেষকদের সমস্যা হলো, আমরা তো এভিডেন্স ছাড়া কথা বলতে পারিনা। অনেক কন্সপিরেসি থিউরি বানাতে পারি যে এর মধ্যে এখানকার অনেক মানুষের কথা শুনে হয়তো বলেছে কিংবা ডিফেন্স পার্চেজের বিষয় হতে পারে বা চীনের ব্যাপার হতে পারে। এটা বলা যেতে পারে। কিন্তু এগুলোর তো কোন এভিডেন্স নাই। কয়েকটা জিনিস যেটার মধ্যে এভিডেন্স আছে। একটা হলো যে, যেভাবে সাজানো হয়েছে তাতে বুঝা যাচ্ছে এটা চীনকে উদ্দেশ্য করে এটা করা হয়েছে। এটা বলা যেতে পারে। এটা তাদের যারা আলোচনা করে তারাই বলে। তাদের পত্রপত্রিকায়ও তাই বলছে। সেটা যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটার ব্যাপারে বাংলাদেশ কখনো উৎসাহী থাকবে না। কারণ, আমাদের সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা না। আর আমরা কোন ডিফেন্সে ফ্যাক্টে কখনো বাংলাদেশ যায়নি। ২০১০ সালে তারা চেয়েছিলো আমরা যেন আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাই। বাংলাদেশ তখনও রাজি হয়নি। এক সময় কুয়তে, ইরাকে পাঠানোর জন্য প্রেশার দিয়েছিলো, আমরা রাজি হইনি। কারণ, আমরা তো সব সময় বলে এসেছি সামরিক কাঠামোর মধ্যেই আমরা নেই। অর্থনৈতিক সম্পর্ক আমরা রাখতে চাচ্ছি। তো সেই জায়গায় আমেরিকা একটি ক্যাপিটালিস্ট কান্ট্রি (পুঁজিবাদী দেশ)। সেই প্রফিট যদি থাকে তো সে থাকবে। যদি দেখে অন্য জায়গায় প্রফিট বেশি, তাহলে সে চলে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ মনে হয়না অন্য জায়গায় অন্যকিছু চিন্তা করবে। এখন আমেরিকা চলে যাবে না যাবে সেটা আমেরিকার ব্যাপার। সে জায়গায় আমি মনে করিনা যে এই কারণে, এই কয়েকজন র‍্যাব সদস্যকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে সম্পর্ক খারাপ হবে, সেটা আমার মনে হয়না। কারণ, ফিলিপাইনসে এর থেকেও খারাপ অবস্থা, কিন্তু তারা তো আমন্ত্রিত হয়েছে এই সামিটে। তবে যেটা হলো, যেকোনো এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং কিন্তু অগ্রহণযোগ্য। একটাও যদি হয়, যার ফ্যামিলি যায় সে জানে। তো সেই জায়গায় আমি মনে করি এটা হওয়াতে হয়তো সচেতনতা বাড়বে। কিন্তু আমি জানিনা তাদের কাছে তথ্য আছে কিনা। আমাদের এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং কিন্তু অনেক কমে গেছে। কয়েকবছর আগে বেড়ে গিয়েছিলো। ২০১৬ সালের দিকে বেড়ে গিয়েছিলো কিন্তু ২০২১ সালে এসে কিন্তু অনেক কমে গেছে। আমেরিকার তুলনায় তো একেবারে কাছেই না। কিন্তু যেটা বললাম, ওই সতর্ক থাকা, সচেতনতা বাড়ানো দরকার। কারণ, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং যত কমানো যায়। বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারেও তো এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করছে ভারত। ওটা তো আর লিগ্যাল কিলিং না যে স্মাগলারদের মারা হচ্ছে। কারণ, ওরা তো আর আর্মস না। আর্মস ক্যারি করে না। তাতে কি ভারতের পুলিশের বিরুদ্ধে কিছু করেছে? করার সাহস আছে? করারই সাহস নেই। এখানে কি তথ্য গেছে বাংলাদেশ থেকে আমি জানিনা, কারা তথ্য দিচ্ছে, কাদের ওপর নির্ভর করছে আমার জানা নেই। তো আমি মনে করি না এতে আমি মনে করিনা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭