ইনসাইড পলিটিক্স

আম-ছালা দুটিই হারালো বিএনপি


প্রকাশ: 14/12/2021


Thumbnail

বিএনপি মনে করেছিলো বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কেন্দ্রিক আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেবে এবং এই আন্দোলন আস্তে আস্তে সরকার পতনের আন্দোলনে মোড় নেবে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ৮ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল যা গত ৪ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই আন্দোলনে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, বিএনপির নেতাকর্মীরাই ঠিকঠাকমতো অংশগ্রহণ করেনি। তাছাড়া এই আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার যে আকাঙ্ক্ষা বিএনপির ছিলো সেই আকাঙ্ক্ষাও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিও যেমন হয়নি অন্যদিকে আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। এটি বিএনপিকে আরেক দফা হতাশার দিকে ফেলেছে। বিএনপির নেতারাই এখন বলছে, আন্দোলনের চেষ্টা করে আম-ছালা দুই গেলো। যদি আন্দোলন না করতো, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতো এবং সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করতো তাহলে হয়তো খালেদা জিয়ার একটি মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হতো। কিন্তু যখন তারা রাজপথে আন্দোলনের দিকে পা বাড়ালো তখন সরকারও তার অনমনীয় অবস্থানে চলে গেল এবং সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো যে, বেগম খালেদা জিয়াকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে এরচেয়ে বেশি সুযোগ এ মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও আইনমন্ত্রী বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আইনগত বিষয়গুলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন এবং এটি সময় লাগবে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, এই যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি যে চাপ বা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করা সম্ভব নয় সেটি সরকার বুঝিয়ে দিলো। আর এর ফলে বিএনপি সমঝোতার শেষ সুযোগটুকু হারালো। বিএনপির অনেক নেতাই সেই সময় পরামর্শ দিয়েছিলো যে, বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুটি যেহেতু রাজনৈতিক ইস্যু নয় এটি একটি মানবিক ইস্যু, এই দাবিতে আন্দোলন না করাই শ্রেয়। বরং বেগম খালেদা জিয়াকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য সুযোগ দেয়া হয় এজন্য সরকারের সাথে আপসরফাই উত্তম। কিন্তু এটিতে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া রাজি হয়নি। তারেক জিয়া এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলো। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিলো যে খালেদা জিয়াও মুক্ত হবে, অন্যদিকে জনগণও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর এই প্রেক্ষাপট রচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। হঠাৎ করেই বেগম খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ তখন বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হলো না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এর কাছাকাছি সময়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কয়েকজন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে বিবৃতি দিলেন। আর সর্বশেষ মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সবকিছু একসূত্রে গাঁথা বলে অনেকে মনে করছেন।

অনেকে ধারণা করছেন যে, বিএনপি বিশেষ করে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ধারণা করেছিলেন যে, এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে যে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি তখন জনগণও মাঠে নামবে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন একযোগে ঘটবে। কিন্তু দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা তারেক জিয়া বুঝতে পারেনি যে, বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যু এখন জনগণের জাতীয় ইস্যু নয়। জনগণের এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। জনগণ এখন তাদের জীবন-জীবিকা, আয়-উন্নতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ইত্যাদি কাজেই বেশি ব্যস্ত। মানুষ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো অবস্থায় নেই। তাছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার যে, অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেটিও সাধারণ মানুষ ভুলে যায়নি। যার ফলে বিএনপির ৮ দিনের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ হয়নি। বিএনপির কোন কোন নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছিলেন যেন বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই হঠকারী কর্মসূচীর মতো শক্তি, সাহস কোনটাই বিএনপির ছিলো না। ফলে খালেদা জিয়াকেও তারা মুক্তি করতে পারলো না, আর অন্যদিকে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলো না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭