ইনসাইড বাংলাদেশ

মাইলাম: যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি শাখার সভাপতি?


প্রকাশ: 14/12/2021


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আলোচিত নাম উইলিয়াম বি মাইলাম। উইলিয়াম বি মাইলাম বাংলাদেশে অপরিচিত নন। ১৯৯০ সালের ২৭ জুন তিনি বাংলাদেশের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৯৩ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ক্যারিয়ার একজন কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব শেষ করার পর তাকে আবার ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল আফগানিস্তানের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য, যেখানে তিনি সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দেন। কূটনৈতিক চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি ওয়াশিংটনে উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে স্কলার হিসেবে আছেন। কিন্তু এটি তার আসল পরিচয় না।

উইলিয়াম বি মাইলামের মূল কাজ হলো তিনি একজন পেশাদার লবিস্ট। অর্থের বিনিময়ে যেকোনো দেশের সর্বনাশ করা, যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করাই তার প্রধান কাজ। তবে মনোজাগতিক ভাবে একজন প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ। তাঁর নীতি হলো যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেন প্রতিক্রিয়াশীল এবং মৌলবাদী দলগুলো থাকে এবং আস্তে আস্তে সেই দলগুলো বিকশিত হয়। এর পিছনে মাইলাম দর্শনের যুক্তি হলো যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যদি মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি না থাকে তাহলে সেই দেশগুলো আস্তে আস্তে কমিউনিস্টদের দখলে চলে যাবে এবং কট্টর সমাজতন্ত্র বিরোধী উইলিয়াম বি মাইলাম এই লক্ষে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে সবসময় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে সমর্থন করেন, তাদের মদদ দেন। আর এ কারণেই বিএনপি তাকে বেছে নিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে থাকার সময় বিএনপির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়েছিল এবং এসময় বিএনপির কাছ থেকে তিনি বেশকিছু ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মাইলাম ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালের ৩ আগস্ট তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এবং সেখানে তিনি ২০০১ সালের ৬ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময় আসলে মাইলামের মূল পরিবর্তন ঘটে। যেকোনোভাবেই তিনি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন এবং এই ধরনের দেশগুলোতে যদি শেষ পর্যন্ত সেক্যুলার শক্তির উত্থান ঘটে তাহলে এই দেশগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব ছাড়া হয়ে যেতে পারে বলেও মাইলাম ধারণা দিয়েছেন। আর এজন্যই তিনি কাজ করেন। বর্তমানে উড্রো উইলসন সেন্টারে চাকরি করলেও তিনি আসলে বিএনপি-জামায়াতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে সমস্ত তৎপরতা গুলো চলছে তার সবকিছুর মূলে রয়েছে উইলিয়াম বি মাইলাম। একজন প্রবীণ কূটনৈতিক হওয়ার কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অন্দরমহলে তার ভালো যোগাযোগ আছে। আর এই সুযোগটি তিনি কাজে লাগাচ্ছেন। মাইলামকে তথ্য-উপাত্ত দেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি কিছু ব্যক্তি, যারা মাইলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন এবং এই তথ্য-উপাত্ত গুলো নিয়ে তিনি হাজির হন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে। মাইলামের আরেকটি দিক খুব তাৎপর্যপূর্ণ। তাহলো তিনি কট্টর আওয়ামী বিরোধী। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তখনও তিনি আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেছিলেন। অনেকেই তাকে হেনরি কিসিঞ্জারের শেষ চিহ্ন হিসেবে মনে করেন। হেনরি কিসিঞ্জার যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, সবসময় বাংলাদেশের প্রগতিশীল উন্নয়নের বিরোধী ছিলেন, ঠিক তেমনই উইলিয়াম বি মাইলাম। আর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে লালন করেন জন্যই মাইলাম বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেন। এজন্যই তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, এজন্য তিনি জামাত-বিএনপি দেশ সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭