ইনসাইড পলিটিক্স

আবার নানক-আজম: আওয়ামী লীগে চাঞ্চল্য


প্রকাশ: 14/12/2021


Thumbnail

জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের দুই জনপ্রিয় নেতা। একজন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, অন্যজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। একজন ছয়বারের এমপি, অন্যজন দুবারের এমপি। কিন্তু নানা কারণে মির্জা আজম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক একটা জুটি। এই জুটি প্রথা শুরু হয় যখন জাহাঙ্গীর কবির নানককে যুবলীগের চেয়ারম্যান এবং মির্জা আজমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। সেই সময়টা আওয়ামী লীগের জন্য একটা প্রতিকূল সময় ছিল। বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে চড়াও হয়েছিল আওয়ামী লীগের ওপর। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ইত্যাদির মাধ্যমে এক নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সংগঠনকে ঘুরে দাঁড় করানোই ছিল একটি প্রধান লক্ষ্য। সে সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানককে যুবলীগের চেয়ারম্যান এবং মির্জা আজমকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এই দুই নেতা যুবলীগকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে যুবলীগই ছিল আওয়ামী লীগের প্রধান শক্তি। এই সময়ে যুবলীগের সাংগঠনিক বিস্তার এবং শক্তিশালী অবস্থান গোটা আওয়ামী লীগের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। আর তখন থেকেই মির্জা আজম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক অনেক বেশি আলোচনায় আসেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় এরা দুজনে একসঙ্গে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। আবার আসার পর দুজনই একসঙ্গে নির্বাচন করেন। দুজনই একবার করে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর কবির নানক আর মির্জা আজম জুটির জনপ্রিয়তা অন্য কারণে। সাধারণত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোতে প্রধান দুই নেতার মধ্যে মতের অমিল থাকে এবং দুইজন দুই গ্রুপে থাকে। ছাত্রলীগের সভাপতির এক গ্রুপ, তো সাধারণ সম্পাদকের আরেক গ্রুপ। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের প্রায়ই মতের মিল থাকেনা। এরকম একটি পরিস্থিতি যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে সবসময় দৃশ্যমান, ঠিক সেইসময় একটি ভিন্ন অবয়ব নিয়ে এসেছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজম। তারা রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা দিয়েছিলেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজমের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক ছিল টিম ওয়ার্ক। তারা দুজন যেন একটি আত্মা হিসেবে সংগঠন গোছানোর কাজ করেছিলেন। তারা পরস্পর পরামর্শ নিতেন, তাদের কোনো পক্ষ ছিল না। দুজন মিলেই যেন একটি পক্ষ। আর এজন্যই তাদের নাম দেয়া হয়েছিল বগি এবং ইঞ্জিন। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই জুটি নিয়ে প্রশংসা করতেন। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর জাহাঙ্গীর কবির নানক যুবলীগের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। পরবর্তীতে নতুন সম্মেলন হলে মির্জা আজমও যুবলীগ ছেড়ে দেন। তারপর তারা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনীতি করছেন। দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক এখনো রয়েছে। কিন্তু একসাথে টিমওয়ার্ক করে কাজ করানো এবং দুইজনের লক্ষ্য এক বিন্দুতে মিলিত হওয়া সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে উঠছিল না। এখন যখন আওয়ামী লীগের নেতায় নেতায় বিভক্তি। একজন নেতা আরেকজন নেতার চক্ষুশূল, নেতারাই আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করছেন, সেই সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজমকে দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা কি বার্তা দিলেন? তিনি কি রাজনীতিতে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমকে দায়িত্ব দিলেন, যেন অন্য সবাই দেখে যে নেতায়-নেতায় কিভাবে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা যায়?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭