ইনসাইড বাংলাদেশ

একাত্তরের শত্রু-মিত্র: ৫০ বছর পর


প্রকাশ: 15/12/2021


Thumbnail

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। কাল বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের উপর একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। তারা অপারেশন সার্চলাইটের নামে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালীর উপর শুরু করে অমানবিক নির্যাতন, ,নিপীড়ন হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, লুণ্ঠন। কিন্তু নিরস্ত্র বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে। অভূতপূর্ব লড়াই, সংগ্রাম এবং সাহসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করে বাঙালি জাতি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কেবল পাকিস্তানই যে বাংলাদেশের শত্রু ছিল তা নয়, আরো অনেক দেশই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা করেছিল। এই যুদ্ধে যেন বাংলাদেশ জয়ী না হতে পারে সেই চেষ্টাও চালিয়েছিল। ৫০ বছর পর আমরা যদি একটু মিলিয়ে দেখি তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে ৫০ বছর আগের শত্রুপক্ষ এখন কতটা বন্ধু হয়েছে!

পাকিস্তান: একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে সব সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। বাংলাদেশ এখন একটি সফল দেশের নাম, অন্যদিকে পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন চেষ্টা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তিনি বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করছেন এবং একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি করছেন। এর মূল স্বার্থ হলো অর্থনীতি। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে স্যালাইন দেওয়ার জন্যই হয়তো তারা বাংলাদেশের সহায়তা চায় এখন। পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের কৃপাপ্রার্থী একটি রাষ্ট্র বটে।

চীন: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের অন্যতম রাষ্ট্র ছিল চীন। তারা সেই সময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই শুধু করেনি, পাকিস্তানকে সহায়তা দিয়েছে। অবশ্য সেই চীন এখন বদলে গেছে। একাত্তরের শত্রু চীন এখন বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুও বটে। তবে এই বন্ধুত্ব কতটুকু আন্তরিক, আর কতটুকু স্বার্থের, এই নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে আলাদা উচ্ছ্বাস দেখানো চীন আসলেই বাংলাদেশের বন্ধু নাকি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক করছে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন বটে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ১৯৭১ সালে হেনরি কিসিঞ্জারের ভূমিকা বাঙালি জাতি কখনো ভুলবে না। সেই সময়ে নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিরুদ্ধে সবকিছুই করেছিল। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং জন এফ কেনেডিসহ বিভিন্ন ডেমোক্রেট নেতারা বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। একাত্তরে মার্কিন প্রশাসনের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে অব্যাহত রয়েছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্রে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা ছিল, তেমনি সাম্প্রতিক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যে আচরণ করছে সেটিও এক ধরনের বাংলাদেশ বিরোধিতা বলেই অনেকে মনে করে। আর সে কারণেই একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের কতটুকু আপন, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

সৌদি আরব: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সৌদি আরবও বাংলাদেশের বিরোধী ছিল। তবে সৌদি আরব বাংলাদেশের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রেও অতটা সক্রিয় ছিল না। এখন অবশ্য সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম ভালো মিত্র এবং বন্ধু। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের অবস্থান সময়ে সময়ে বিভিন্নভাবে পাল্টে যাচ্ছে, গেছে, হয়তো ভবিষ্যতেও যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭