ইনসাইড গ্রাউন্ড

বিজয় দিবস এবং জয় বাংলার ক্রিকেট


প্রকাশ: 16/12/2021


Thumbnail

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস এদিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশসহ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেয়ার দিন। ২৪ বছরের নাগ পাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়। একটি দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ‘প্রতীক’ হিসেবে ক্রিকেটের মাঠেও ছিল ‘জয় বাংলার’ উপস্থিতি।

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের উত্তাল সময়। ঢাকায় খেলতে এসেছিল কমনওয়েলথ একাদশ নামের একটি দল। ইংলিশ ক্রিকেটারদের আধিক্য ছিল সেই দলে, আর ছিলেন অন্যান্য দেশের বেশ কিছু ক্রিকেটার। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার অ্যালেক স্টুয়ার্টের বাবা মিকি স্টুয়ার্ট ছিলেন সে দলের অধিনায়ক। সে সময়কার পাকিস্তান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (পিসিসিবি) নির্বাচিত একাদশের বিপক্ষে তিনটি বেসরকারি টেস্টের একটির ভেন্যু ছিল ঢাকা। ১৯৭১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সেই ম্যাচ ঠাঁই নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। রকিবুল হাসান নামের ১৮ বছর বয়সী এক বাঙালি ক্রিকেটার সে ম্যাচে নিজের ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে পাকিস্তানিদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকুতি। পাকিস্তানিদের সামনে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন কাগজে-কলমে এক দেশ হলেও পশ্চিম আর পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে মানসিক দূরত্বটা। করাচির আজমত রানাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেন ১৮ বছরের তরুণ রকিবুল। তখন একজন ফটোগ্রাফার প্রথম খেয়াল করলেন ভিন্ন এক ব্যাপার। ছুটে এলেন ছবি তুলতে। খানিকপরই স্টেডিয়ামজুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ল— ‘জয় বাংলা’ স্টিকার নিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলছে একজন বাঙালি ছেলে। খানিক পরে স্টেডিয়ামে থাকা প্রায় ১৫ হাজার দর্শক স্লোগান তুলল- জয় বাংলা। পাকিস্তানি প্রশাসনের কাছে সেই ঘটনা ছিল দেশদ্রোহীতার সামিল। যে কারণে পরবর্তীতে হুলিয়া জারি করেছিল পাকিস্তানি মিলিটারি। পরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতেই রকিবুল ব্যাট ছেড়ে হাতে তুলে নেন অস্ত্র। দেখেছেন গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ব্যাট-বল হাতে বয়ে নিয়ে গেছেন প্রতিভার ধারা। সেই ব্যাটন এখন উত্তরসূরি মাশরাফী-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের হাতে।

স্বাধীন দেশের ক্রিকেট আমাদের স্বপ্ন, আবেগ ও ভালোবাসা। বাঙালি মাত্রই আবেগপ্রবণ, স্বপ্নবাজ। ক্রিকেটের সফলতা স্বপ্নবাজ বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে নতুন পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। ক্রিকেট আমাদের স্বপ্নকে আগামীর পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে আছে অনেক ক্রীড়াবিদের আত্মদানও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ২৫ মার্চ কালরাতে নির্মমভাবে নিহত হন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক মুশতাক। আক্রমণাত্মক ওপেনার ও ক্র্যাক প্লাটুনের নির্ভীক সদস্য জুয়েল মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি ধরা পড়েন পাক বাহিনীর হাতে। ঢাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেওয়া জুয়েলের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের স্মরণে বিজয় দিবসে আয়োজন করা হয় প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ।যথারীতি এবারও সাবেক তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া হয়েছে স্কোয়াড। প্রতি দলে রাখা হয়েছে ১৫ জন করে ক্রিকেটার। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর ক্রিকেটার শহীদ জুয়েল ও কালরাত্রিতে প্রাণ হারানো শহীদ মুশতাকের নামে খেলবে দুই দল।

১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবসে ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল এগারোটায়। দুই দলের ক্রিকেটার ছাড়াও এতে দেশ বরেণ্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও বোর্ড কর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

শহীদ জুয়েল একাদশ: মেহরাব হোসেন অপি, রকিবুল হাসান, সজল চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, সাজ্জাদুল আলম শিপন, আব্দুল হান্নান সরকার, মাহমুদুল হাসান রানা, হাবিবুল বাশার, নাসির আহমেদ নাসু, এনামুল হক মনি, সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবু, মুশফিকুর রহমান বাবু, মোর্শেদ আলী খান, মঞ্জুরুল ইসলাম, ওয়াহিদুল গনি।

শহীদ মুশতাক একাদশ: জাভেদ ওমর বেলিম, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, এহসানুল হক সিজান, হাসিবুল হোসেন শান্ত, আতহার আলী খান, তারেক আজিজ খান, তালহা জুবায়ের, মোহাম্মদ আলী, সানোয়ার হোসেন, আজহার হোসেন শান্ত, ফাহিম মুনতাসির সুমিত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭