কালার ইনসাইড

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত যত চলচ্চিত্র


প্রকাশ: 16/12/2021


Thumbnail

সময়টা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ, ঐ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় শুধুমাত্র ঢাকাতেই ৬ থেকে ৭ হাজার সাধারণ মানুষ সেই রাতে প্রাণ হারায়। বাংলাদেশে এই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস নামে পরিচিত। সেই দিন রাত ১২ টার পর (২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।

২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করায় ১৯৭২ সাল থেকেই বাংলাদেশ ২৬শে মার্চ কে "স্বাধীনতা দিবস" হিসাবে পালন করে আসছে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। এই দিনটি ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ বিজয় দিবস হিসাবে পালন করছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা ও যুদ্ধে বিজয় অর্জনের ৫০ বছর পূর্ণ হয়। তাই স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২১ সালকে "সুবর্ণজয়ন্তী" হিসাবে পালন করা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প নানা নিয়ে নানা ভাবনায় বহুবার ধরা দিয়েছে স্যালুলয়েডের ফিতায়। যুগে যুগে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনেক সিনেমা।

আজ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেখে নিতে পারেন সেরা বলে জনশ্রুতি আছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এমন কিছু সিনেমা।

ওরা ১১ জন

দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’। এটি স্বাধীন হওয়ার পরপরই নির্মিত হয় যুদ্ধের দগদগে ঘা বুকে নিয়ে। ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। এতে অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, খলিলউল্লাহ খান প্রমুখ। সিনেমাটিতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় করেছিলেন।

এই সিনেমায় ১১ জনের ১০ জনই বাস্তবের মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু।

আলোর মিছিল

এই সিনেমাটি ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ সিনেমার পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারুক, ববিতা, রাজ্জাক ও সুজাতা। ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়।

আবার তোরা মানুষ হ

বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। সিনেমাটিতে যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফারুক, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, চিত্রনায়িকা ববিতা, অভিনেত্রী রোজী আফসারী ও রওশন জামিল’সহ অনেকে।

অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত। ছবির তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা, উজ্জল ও আনোয়ার হোসেন। বিষয়গত দিক থেকে এই ছবিটিকে সে সময় একেবারেই অন্যরকম বলে মন্তব্য করেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা।

হাঙ্গর নদী গ্রেনেড

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সিনেমা নির্মাণ করেছেন চাষী নজরুল ইসলাম। তার একটি কালজয়ী সিনেমা ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’। প্রখ্যাত লেখক সেলিনা হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে একই নামে ছবিটি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম।

একজন সন্তানহারা মায়ের গল্প নিয়েই ছবির গল্প। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা সুচরিতা। এছাড়াও ছবির বিভিন্ন চরিত্রে সোহেল রানা, অরুনা বিশ্বাস, অন্তরা ও ইমরান অভিনয় করেন।

আগুনের পরশমণি

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’। নিজের লেখা উপন্যাস থেকেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর প্রমুখ। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি বেশ কয়েকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

মুক্তির গান

প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’। এটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। দক্ষিণ এশিয়া চলচ্চিত্র পুরস্কারে স্পেশাল মেনশন ও ২০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার পায় ‘মুক্তির গান’।

জয়যাত্রা

অভিনেতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। সদ্য প্রয়াত বিখ্যাত কাহিনীকার ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের গল্পে এটি নির্মিত। জয়যাত্রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী।

শ্যামল ছায়া

এটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর পরিচালক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। এটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০৩ সালে। ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদিকে। আরও অভিনয় করেছেন রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, স্বাধীন খসরু, শিমুল, চ্যালেঞ্জার, ফারুক আহমেদ, ডা. এজাজ ও তানিয়া আহমেদ।

গেরিলা

নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত আরেকটি সিনেমা ‘গেরিলা’। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাস থেকে নির্মিত। অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা হামলার চিত্র এতে উঠে এসেছে।

এছাড়াও রয়েছে মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’, আনন্দের ‘বাঘা বাঙ্গালী’, হারুন-অর রশিদের ‘মেঘের অনেক রং’ ছবিগুলো। তালিকায় রাখতে পারেন ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘আগামী’, ‘মাটির ময়না’, ‘খেলাঘর’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘জীবনঢুলী’, ‘৭১-এর সংগ্রাম’, ‘মেঘমল্লার’, ‘৭১-এর মা জননী’, ‘অনুক্রোশ’, ‘হৃদয়ে ৭১’, ‘অনিল বাগচীর একদিন’, ‘এইতো প্রেম’, ‘শোভানের স্বাধীনতা’, ‘ভুবন মাঝি’, 'লাল মোরগের ঝুঁটি', 'টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই' ইত্যাদি। 

নতুন করে মুক্তিযুদ্ধকে জানতে দেখা যেতে পারে 'চিরঞ্জীব মুজিব' সিনেমাটি। এটি মুক্তি পাবে আসছে ৩১ ডিসেম্বর।

তাছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। এই বায়োপিকে উঠে আসবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নির্মম ট্র্যাজেডি। তারুণ্য থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ের মুজিবের দেখা মিলবে ছবিতে। বায়োপিকটি নির্মাণ করছেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।

চলচ্চিত্রটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করবেন আরিফিন শুভ। আছেন এ দেশের আরও একঝাঁক তারকা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭