ইনসাইড টক

‘ছাত্রী তো ছাত্রী, বিবাহিত-অবিবাহিত বিবেচনার সুযোগ নেই’


প্রকাশ: 21/12/2021


Thumbnail

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিবাহিত মেয়েদের হলে থাকতে না দেয়ার বিষয়টি একেবারেই সনাতনী চিন্তা-চেতনা। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আইন ছিল যে, কোনো ছেলে যদি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে হয়, তাহলে তাকে আগে প্রক্টর অফিসে একটি দরখাস্ত করতে হতো এবং প্রক্টরের সম্মুখে তারা কথা বলবে। এই আইন অনেকদিন বলবত ছিল। সেই মানুষিকতায়, পারিপার্শ্বিকতায় মনে হয় হলগুলোতে বিবাহিত মেয়েদের না রাখার আইন থাকলেও থাকতে পারে। আমার জানা নেই। বিবাহিত জীবনের আলাদা কাহিনী থাকে। আলাদা কিচ্ছা থাকে। এটি যদি হলের সব মেয়েদের মধ্যে সংক্রমিত হয়, তারপর এমনও হতে পারে সব  মেয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিবাহের জন্য আগ্রহী হয়ে গেল। বিভিন্ন চিন্তা থেকে হয়তো এই আইনটি করা হয়েছিল। বিবাহিত জীবনের অনেক রোমাঞ্চকর কাহিনী আছে। ফলে অবিবাহিত মেয়েদের সাথে যদি বিবাহিতরা থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে বিয়ের প্রতি আগ্রহ-অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। এই ব্যাপারটি হয়তো একসময় চিন্তা-ভাবনা করা হতো। যার ফল এই আইন। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে না দেয়াসহ নানা বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিবাহিত লাইফের ভালো-মন্দ, সুখ-দু:খ, রোমাঞ্চ এগুলো জানার জন্য কি কোনো অবিবাহিত মেয়ের বিবাহিত মেয়ের দরকার? সোশাল মিডিয়া, ইন্টারনেট, এখানে-সেখানে এসবের সব উপকরণ অবাধে আছে। নিষেধাজ্ঞার কারণ যদি এটি হয়ে থাকে, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ছাত্রী তো ছাত্রী। তার থাকার প্রয়োজন আছে হলে। অন্য কোনো ভালো জায়গায় যদি সে থাকতে পারতো, তাহলে তো সে ওখানেই থাকতো। এটা সে বিবাহিত হোক, অবিবাহিত হোক। বিবাহিত মেয়েটি যে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে, তার কাছাকাছি যদি তার স্বামী থাকে, নিশ্চয় সে স্বামীকে ফেলে হলে থাকতে আসতো না। ওখানেই থাকতো। যার ঢাকা অথবা বড় শহরগুলোতে থাকার জায়গা নেই, তারাই নিরাপত্তার জন্য হলে থাকতে চায় এবং হলে থাকে। হলের জীবন তো আমি মনে করি আরামদায়ক কিছু না। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে আমি বিবাহিত, অবিবাহিত, এটি বিবেচনা করার মতো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। তবে যেহেতু আগে সনাতনী চিন্তাভাবনা থেকে এগুলো করা হয়েছিল, আমি মনে করি জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। 

তিনি বলেন, যে চিন্তা থেকে এটি করা হয়েছিল, প্রযুক্তির কারণে বিশেষ করে মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের কারণে বিবাহিত জীবনের রোমাঞ্চকর কাহিনী শুনে উদ্বুদ্ধ হতে হয় না। ফলে এটি একটি ভুল ধারণা। অতএব বর্তমানে এই আইনের আর প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি, হলে কোনো ছাত্রীর থাকাটা অধিকার। তার যদি মেধা থাকে এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদি সে সিট পায়, অবশ্যই তাকে ছিট দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, সন্তান সম্ভাব্য ছাত্রীরাও নাকি হলে থাকতে পারবে না। বিবাহিত যদি থাকে, তাহলে সে তো সন্তান সম্ভাব্যা হতেই পারে। বিবাহের পর অনেক ঘটনাই ঘটে। এগুলো তো প্রভোস্ট চাইলেই ঠিক করে দিতে পারে। আইনে যদি নাও থাকে প্রভোস্টের হাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছু ক্ষমতা ভার্সিটি দিয়ে থাকে। এখানে কেইস টু কেইস আলোচনা করে প্রভোস্ট একটি সিদ্ধান্ত দিলেই তো হয়ে যায়। এসব কেইস কয়টাই বা আছে। পাঁচ থেকে সাতটা। কিন্তু তা না। এটি এখন মিডিয়ায় পর্যন্ত চলে এসেছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে যেখানে আমাদের পড়াশোনা, গবেষণা বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করার কথা, সেসময় আমরা আলাপ করছি বিবাহিত মেয়ে হলে থাকতে পারবে কি পারবে না নিয়ে। 

ড. মীজানুর রহমান বলেন, উন্নত বিশ্বে বাচ্চা হওয়াকে সুসংবাদ মনে করে। ইউরোপে কেউ সন্তান সম্ভাব্য হলে, এই খবরটি গোটা এলাকায় জন্য একটি সু:সংবাদ হিসেবে দেখে। পাড়ার যত বয়স্ক মহিলারা আছে, তারা সবাই সন্তান সম্ভাব্যার যত্ন নেওয়ার জন্য সারাক্ষণ তার কি লাগবে, কি প্রয়োজন, এসবের খেয়াল রাখে। বাসে, ট্রামে, বিভিন্ন যানবাহনে সন্তান সম্ভাব্যদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। সকল যাত্রী সন্তান সম্ভাব্যর খেয়াল রাখে। টিকেট কাটার জন্য সন্তান সম্ভাব্যর লাইনে দাঁড়াতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে গর্ভবতী মহিলার দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন এটা বিরাট একটি অপরাধ। মনে হয় সে ভীষণ অপরাধ করেছে। এই যে দৃষ্টিভঙ্গি, এটি যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত থাকে, তাহলে তো খুবই দু:খজনক। 

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তো এসব ধ্যান-ধারণা, ডগমা, বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যম। তারাই তো এগুলো থেকে মুক্তির পথে নেতৃত্ব দেবে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যদি বলা হয় বিবাহিতরা হলে থাকতে পারবে না, অথবা কোনো মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়, বা সন্তান সম্ভাব্য হয়, তাহলে সে হলে থাকতে পারবে না, আমি মনেকরি এটি একেবারেই অমানবিক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭