ইনসাইড পলিটিক্স

রাষ্ট্রপতির সংলাপ কি সান্ত্বনা পুরস্কার?


প্রকাশ: 21/12/2021


Thumbnail

রাষ্ট্রপতি গত ২০ ডিসেম্বর থেকে সংলাপের আয়োজন করেছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া কিভাবে হবে এনিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়ার জন্যই এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। গত ২০ তারিখে এই সংলাপে প্রথম অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। এরপর আস্তে আস্তে জাসদ সহ ১৪ দলের বিভিন্ন শরিক দলগুলোর অংশগ্রহণ করবে। এ বছরের বাকিটা সময় ধরেই সংলাপ চলবে। নতুন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে এই সংলাপ কতটা জরুরি তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এটা স্পষ্ট যে দেশের প্রধান প্রধান ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বিএনপি এই সংলাপে অংশগ্রহণ করছেনা। জামায়েত ইসলাম রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত নয় বিধায় তাকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ না জানানোটাই যৌক্তিক। কিন্তু অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে সেই রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে তে কতটা অংশগ্রহণ করবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। আর এই সমস্ত প্রধান প্রধান ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকটি কে বাদ দিয়ে এই সংলাপে কি সিদ্ধান্ত হবে সেটি একটি রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া দেশের সুশীল সমাজ এবং সুধীজন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার গত কিছুদিন ধরেই এনিয়ে নানারকম মতামত দিয়ে আসছিলেন। এখন প্রশ্ন হল যে সুশীল সমাজের মতামত গ্রহণের কোনো উপায় এই সংলাপের মধ্য দিয়ে খুঁজে বের করা হবে কিনা সেটিও দেখার বিষয়। 

একটি রাজনৈতিক সংলাপ নিঃসন্দেহে অর্থবহ উচিত। রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ এবং তিনি জাতির অভিভাবক। তিনি যখন এ ধরনের বৈঠক করেন তখন সেই বৈঠকটি অবশ্য অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু যেসমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সংলাপের আয়োজন করা হচ্ছে তা বাংলাদেশের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াতে কতটুকু অবদান রাখবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তাছাড়া এ ধরনের সংলাপের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াটি কি হবে সেটিও স্বচ্ছ নয়।  আমরা দেখেছি জাতীয় পার্টিতে অংশগ্রহণ করে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এরকম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো হতে বিভিন্ন প্রস্তাব সুপারিশ করা হবে কিন্তু রাষ্ট্রপতি এই ধরনের সুপারিশগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখবেন সেটি একটি বড় প্রশ্ন। যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকা হয়েছে সেই দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে। মহাজোটের মধ্য থেকে জাতীয় পার্টির ইতিমধ্যে বলা শুরু করেছে তারা আর গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে থাকতে চায় না। তারা সত্যিকার বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখতে চায়, অবদান রাখতে চায়। অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো তারাও এখন সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম কথাবার্তা বলছে। তাহলে এই দলগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চা-নাস্তার আয়োজন। 

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই বৈঠকগুলো যদি সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হতো এবং এই বৈঠকের মতামত গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যদি নির্বাচন সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন বা নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখা হতো তাহলে এই সংলাপ অর্থবহ হতো। যদি তা না হয় তাহলে পরে এই সংলাপ কেবল একটু সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে। যে রাজনৈতিক দলগুলো বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত তাদের কোনো খোঁজ খবর কেউ নেয় না সেই রাজনৈতিক দলগুলোকে বঙ্গভবনে ডেকে রাষ্ট্রপতি একটু আদর আপ্যায়ন করে তাদেরকে একটু সান্ত্বনা দিলেন। এই যদি হয় সংলাপের লক্ষ্য তাহলে এই সংলাপ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া কোন অবদান রাখতে পারবে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭