ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনীতি কি উত্তপ্ত হচ্ছে?


প্রকাশ: 22/12/2021


Thumbnail

২০১৫ সালের পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক মাঠ ঘিরে উত্তেজনা, সহিংসতা কিছুটা ম্রিয়মাণ ছিলো। এ সময়টাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম ছিলো না বললেই চলে। নামকাওয়াস্তে বাম মোর্চা এবং কয়েকটি ছোট ছোট দল যে হরতাল করেছে সেই হরতালগুলো জনমনে কোনো দাগ কাটতে পারেনি। সবমিলিয়ে দেশে একটা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছিলো। গত দেড় বছর ধরে মূল ধারার প্রত্যেকটি দলই রাজপথের বদলে ভার্চুয়ালি দলের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশেষ করে মহামারি করোনা থাবার শুরু থেকে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরোধিতার রাজনীতি মাঠের থেকে ইন্টারনেটেই বেশি দেখা যাচ্ছে। এসবের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে ইসি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নেতৃত্বে। সংলাপ নিয়ে অতীতের মতো এবারও দুই মেরুতে অবস্থান করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের কথা বললেও বিএনপি বলছে যে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, সংলাপও নয়। তবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল দাবি করছে নতুন আইনের কথা। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির এই সংলাপকে ঘিরে দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ অল্প সময়ের মধ্যেই গঠন করতে হবে নতুন কমিশন। ইতোমধ্যে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসেছে এবং গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। সংলাপ শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা আইন করতে বলেছি। আইন না মানলে কমিশনের সাজার বিধান থাকতে হবে নতুন আইনে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। সরকার চাইলে জাতীয় পার্টি সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের অনেকেই এবার নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন আইনের কথা বলছেন। এ ছাড়া গতকাল সংলাপে বসেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। পাশাপাশি অপরাপর দলগুলোও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বসবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। 

অন্যদিকে, আগের দুই সংলাপে অংশ নিলেও এবার রাষ্ট্রপতির ডাকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দোদুল্যমান বিএনপি। বিএনপি রাষ্ট্রপতি আহূত সংলাপকে 'অর্থহীন' বললেও ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেলে করণীয় নির্ধারণে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির হাই কমান্ড। 

তবে বিএনপি আসুক কিংবা না আসুক, বিএনপির জন্য নিজেদের অবস্থান বদলাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাঁচ বছর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ যে অবস্থানে ছিল, এখনও একই অবস্থানে রয়েছে দলটি। এবারও তারা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন ইসি নিয়োগের পক্ষে। যদিও এর আগের সংলাপে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া চার দফা প্রস্তাব ও ১১ সুপারিশে নতুন আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল। সর্বশেষ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে জানান যে, সময়-স্বল্পতার কারণে এবারে তারা আইন করতে পারছেন না। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন করা হবে। আর বিরাজমান দুই দলের এই বিরোধের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিচ্ছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এমতাবস্থায় সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে নির্বাচন। এ নিয়ে প্রত্যেকটি দলই নিজেদের মতো করে দল গোছাবে। রাজপথে নেমে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দেয়ার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো এখন রাজপথে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। এই চেষ্টার ফলে রাজপথে উত্তাপ-উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে যেনো কোনো ধরণের সহিংসতা না হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭