নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০২ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮
লোক হাসানো বক্তব্যের জন্য নিজ দল ও দলের বাইরে পরিচিত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ রুহুল কবির রিজভী। তিনি যেমন দিনের পর দিন কার্যালয়ে বাস করাটা তাঁর বাৎসরিক রুটিনে পরিণত করেছেন ঠিক তেমনই লোক হাসানো বক্তব্য দেওয়াও একটা রুটিন কাজ। নির্বাচনের আগে অন্য নেতাকর্মীরা যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে রিজভী তাঁর স্বভাবসুলভ নিজেকে বিএনপি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখছেন আর সেখান থেকে লোক হাসানো ‘ভাড়ামো’ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
আর দিবেনই বা না কেনো? তারও তো বিনোদনের দরকার আছে, কিন্তু কে তাকে বিনোদন দিবে? দিনের পর দিন কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকেন। মাঝখানে গুঞ্জন ছিল কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন বিএনপি কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। সেখানে তারসঙ্গে হাস্যরসে অনেকটা সময় কাটে রিজভীর। এখন বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক সময়ই নিজ দলের লোকজন মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে যাচ্ছে। আর দলের ভেতরের কোন্দল তো আছেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মতন, ‘বড়ই চ্যালেঞ্জিং টাইম’ পার করছেন! এরকম চ্যালেঞ্জ অবশ্য তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। গত কয়েকবছরে ডাল-ভাতের মত দিয়ে হুংকার দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। ভোরের আলো ফোটার আগেই জনা পাচেক লোক নিয়ে ‘বিশাল মিছিল’ করে কার্যালয়ে ঢুকে গেছেন।
এত এত চ্যালেঞ্জের মাঝে রিজভী এখন নজরুল এবং রবীন্দ্র গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন। নজরুল-রবীন্দ্র গবেষক না হলে তিনি কীভাবে বলেন, ‘অনেকে রসিকতা করে বলেন যে, নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ বিএনপি করতেন। কারণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তিনি একটি উপন্যাস লিখেছিলেন ‘নৌকা ডুবি’ আর কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, তিনি কবিতা লিখেছিলেন,‘ আমরা শক্তি, আমরা বল, আমরা ছাত্রদল।` তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কথাটা উঠে এসেছে জাতীয় কবির হাত দিয়ে। আর ‘নৌকা ডুবি’ উপন্যাসটা লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অতএব বাঙালির এই কীর্তিমান দুই শ্রেষ্ঠ পুরুষ তাদের হাত দিয়ে আগেই আওয়ামী বিরোধী চিন্তা ফুটে উঠেছিল। যদিও এটা রসিকতা করে বলা হয়, তবুও কিন্তু এখানে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর এরকম বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসির হিড়িক পরে গেছে। কেউ কেউ তাকে পাগল এবং মানসিক ভারসাম্যহীন বলছে। আবার কেউ বলছেন, ‘এই মহান আবিষ্কারের জন্য রিজভী সাহেবকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হোক !!! একটা দলের নীতি নির্ধারনী লেবেলে এমন ফাউল লোকগুলো যখন থাকে তখন সেই দলের অবস্থটা কী হতে পারে তা সহজেই বোধগম্য।‘
রাশিদুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি লিখেছেন, ‘আমার বাড়ী পাবনা,এখানে পাগলা গারদে ছিট পাওয়া খুব মুশকিল। তবে এই নয়া পাগল যদি আসতে চায়। সেক্ষেত্রে আমরা পাবনা বাসি চেস্টা করে একটা সিটের ব্যাবস্থা করে দেব। দেশরত্ন শেখ হাসিনার দেশে শুধু আমজনতা না, পাগলের ও সমান অধিকার সেটা প্রমান করব।‘
মোহন পাটওয়ারী নামে একজন লিখেছেন, ‘পুরাতন পাগলে ভাত পায় নতুন পাগলের আমদানী।। একজন ছাএকে গরুর রচনা লিখতে বললে সে প্রথমে লিখে...গরু একটি গৃহপালিত পশু।। আর সে ছাত্রকে রিজভীকে নিয়ে রচনা লিখতে দিলে সেও লিখবে... রিজভী একজন গৃহপালিত নেতা সেজন্য অকারণে বকবক করে।‘
বক্তৃতাকালে তাঁর মুখে হাসি ছিল। সেই হাসিরও ভর্তসনা করেছেন অনেকে।
নাহিদ আলম নামে একজন লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় বড় বড় তারকাদের ব্যবহার করছে। বিএনপি কেনো পিছিয়ে থাকবে? তাইতো কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপির গৃহপালিত নেতা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল গবেষণায় মনোযোগ দিয়েছেন। পারলে তাদেরকেও বিএনপির প্রচারণায় নামিয়ে দেন! এরও একটা সমাধান আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রিজভীর মতই মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য ১০০ বছর আগে লিখেছেন, ‘বায়ু পরিবর্তন আবশ্যক’। রিজভীর আসলেই বায়ু পরিবর্তন আবশ্যক।‘
উল্লেখ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকাডুবি লিখেছিলেন ১৯০৬ সালে। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাটি সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়ে প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে।
রিজভীর বক্তব্যের ভিডিওটি নিচে দেওয়া হলো-
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
যে কোনো কিছুতে অসম্মত হওয়ার প্রবণতাকে টক্সিক পারসোনালিটি বলে। এ ধরণের মানুষ আশেপাশে থাকলে তাদের জীবন থেকে এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ এ ধরণের মানুষের ব্যবহার আপনার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, এমনকি সামাজিকভাবেও হেয় করে। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে এড়িয়ে চলতে পারাটাই নিজের জন্য মঙ্গল।
কথায় বলে, আপনি আপনার আশপাশের সবচেয়ে কাছের পাঁচজন মানুষের গড়। এর মানে হলো আপনার জীবনে গুরুত্ব পাওয়া মানুষগুলো আপনার চিন্তা, জীবনসঙ্গী বাছাই, পছন্দ, অপছন্দ, রুচি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এ সবকিছুতে প্রভাব ফেলে। আপনি এই মানুষগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। এই মানুষগুলো আপনাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়। এমনকি জীবন থেকে ছিটকেও পড়তে পারেন।
তাই ‘টক্সিক’ এই মানুষগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য আপনি আগে জীবন থেকে এই মানুষগুলোকে বিদায় করুন, নিজে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।
১. ‘টক্সিক’ মানুষেরা সাধারণত কোনো কিছুর দায়িত্ব নিতে চায় না। যেকোনো কিছুর দায়ভার অন্যের কাঁধে চাপাতে তারা ওস্তাদ। তাদের নিজেদের দুরবস্থার জন্য আপনাকে বা অন্যদের দায়ী করে। অন্যদিকে কৃতিত্ব নিজের দিকে টেনে নেওয়ার বেলায় পটু।
২. এরা সহানুভূতিশীল নয়। ‘টক্সিক’ এই মানুষেরা কখনো আপনার জুতায় নিজের পা গলিয়ে আপনার অবস্থা বা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে না। এই মানুষদের আপনি আপনার অনুভূতি বোঝাতে ব্যর্থ হবেন।
৩. সমালোচনা, কথা লাগানো তাদের অবসরের প্রিয় কাজ। বিয়ের পর মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, চরিত্রের বিশ্লেষণ, নেতিবাচক চর্চা-এগুলোতে তারা কখনোই ক্লান্ত হয় না। আপনি মনে রাখবেন, আপনার কাছে অন্যের সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলছে। এর অর্থ হলো আপনার সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলতেও তাদের নীতিতে আটকাবে না।
৪. সম্পর্ক মানেই বিশ্বাস, ভরসা আর স্বস্তির একটি জায়গা। তা হোক বন্ধুত্বের সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসার। কিন্তু এই সম্পর্ক যদি আপনাকে তিনটি উপাদানের একটি দিতেও ব্যর্থ হয় তবে বুঝতে হবে, কোথাও সমস্যা আছে।
৫. ব্যক্তিভেদে সম্পর্কের ধরন ভিন্ন হয়, সম্পর্কের সংজ্ঞাও একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে আপনার সঙ্গী যদি প্রতিনিয়ত আপনাকে ছোট করে কথা বলে, যেকোনো কাজে জবাবদিহিতা চায় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, সবসময় আপনাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে এমন সম্পর্ককে টক্সিক বলা যায়।
৬. আপনাকে আপনার পরিবার বা কাছের মানুষদের থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে এই টক্সিক মানুষেরা। এসব টক্সিক মানুষ আপনাকে ‘একঘরে’ করে ফেলতে পারে।
৭. এসব ‘টক্সিক’ মানুষদের সঙ্গে কথোপকথনের পর আপনার হালকা অনুভূত হয় না। বরং আবেগীয়ভাবে ভার ভার লাগে। আমাদের আশপাশেই রয়েছে অনেক ‘টক্সিক মানুষ’। এই মানুষদের সঙ্গে কথা বলার পর আপনার ওপর ‘নেতিবাচক এনার্জি’ ভর করে। মাঝেমধ্যে বিরক্তি, হতাশা আর রাগ আপনাকে গ্রাস করে।
৮. আসলে আমাদের জীবনে বাড়ির বাস্তুর প্রভাব খুব বেশি করে পড়ে।
৯. নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতেও পিছপা হয় না তারা।
মন্তব্য করুন
মানুষের
ব্যক্তিগত জীবনের কোনোকিছু খারাপ লাগলেও সেটি মাথা ব্যথার
কারণ কখনোই হয়নি, যে পর্যন্ত সেটি
সমাজের জন্য হানিকর বলে
বিবেচিত না হয়েছে!
ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক লোক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন, এই বয়সী ব্যক্তির অষ্টাদশী তরুণীর সাথে বিয়ে গ্রামে প্রায়শই কম করে হলেও ঘটে! সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা হলো সম্প্রতি তৃতীয় বিয়ে সম্পন্নকারী এই ব্যক্তি তার বিয়ে পরবর্তী সময়কে দারুণভাবে গ্লোরিফাই করে বেড়াচ্ছেন। একইসাথে তার মত অতি প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে স্বাভাবিকভাবেই তার সহধর্মিণী সহমত পোষণ করে আরও ঝাঁঝালো বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন এবং তিনি তা উপভোগও করছেন।
আজ বইমেলায় স্কুল, কলেজ পড়ুয়া অনেক
বাচ্চারা নববিবাহিত এই দম্পতির বই
কিনতে যেয়ে, শ্যুগা ( Sugar) ড্যাডি টার্মকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে এই ধরনের
বিয়ে অথবা ড্যাডি টাইপ
কারো সাথে থাকাকে জায়েজ
মনে করে নিচ্ছে! এই
কিশোরীদের সামনে প্রশ্নগুলো ছুঁড়ছে কারা? বোধহীন এই প্রশ্নগুলো করছেন,
তথাকথিত কিছু ইউটিউব চ্যানেলের
বুমধারী ব্যক্তিগণ, যাদের কাছে নিজ চ্যানেল
অথবা পেইজের কিছু সস্তা ভিউজ
প্রাপ্তি ছাড়া আর কোনো
দায়বদ্ধতা নেই!
আমাদের স্বল্পশিক্ষিত, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত অথচ মননে অশিক্ষিত সম্প্রদায়ের হাতে নতুন কিছু ভুলক্রমে চলে আসলে সেটি ভাজা ভাজা না করে আমাদের নিস্তার নাই। সম্প্রতি শ্যুগা (Sugar) ড্যাডি অথবা মম বিষয় নিয়ে অতি উৎসাহী হওয়ার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই মস্তিষ্ক বিবর্জিত শ্রেণী অতি সম্প্রতিই এই শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে! যার কারণে নিজ নিজ পেইজে ১৮+ কনটেন্টের মত বিষয়াদি ছাড়াও আরও বর্জ্য সংযুক্ত করে নিচ্ছে!
অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব ভদ্রলোকের সহধর্মিণী তাদের এই বিয়েকে প্রতিনিয়ত জাস্টিফাই করে যাচ্ছেন। তিনি ভুল করছেন এই জায়গাতেই! কোনোকিছু স্বাভাবিক মনে করলে সেটিকে বারবার বলে বুঝাতে হয় না এটি স্বাভাবিক! এই দম্পতি সমাজের একমাত্র দম্পতি নন, অন্য সবাই তাদের মত জাস্টিফাই করতে তো আসছেন না! তারা তবে কেন এই চেষ্টা করছেন? নিজ সম্পর্ককে স্বাভাবিক বোধ করলে অন্যের কাছে তা প্রতিষ্ঠিত করার এত তীব্র চেষ্টা কেন করছেন? তবে কি তাদের নিজেদের বিশ্বাসেই ঘাটতি রয়েছে?
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ভুল নয় কিন্তু সেটিকে প্রচারণার মাধ্যমে জৌলুসপূর্ণ করে প্রকাশ করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিভ্রান্ত করা, অত্যন্ত ভুল একটি পদ্ধতি! ১৮ বছর বয়সী কারো মাথায় সেই বোধ পুরোপুরি না-ই আসতে পারে, ষাটোর্ধ্ব কারো মাথায় এটি কেন কাজ করছে না সেটাই বোধগম্য নয়!
লেখক : ইফতেখায়রুল ইসলাম
এডিসি, ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স ডিভিশন।
(লেখকের
ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্য করুন
টাঙ্গাইল শাড়ি এবং টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো। বাংলাদেশে জন্ম, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি বলে মন্তব্য করছেন ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা নাসরিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে টাঙ্গাইল শাড়ি ও টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিদের নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেন, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর হিন্দু তাঁতি ভারত ভাগের পর পূর্ব বঙ্গ থেকে, বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বা বাংলাদেশ থেকে মুসলমানের অত্যাচারের ভয়ে ভারতে চলে এসেছেন। ভারতেই তাঁরা টাঙ্গাইলে যেভাবে শাড়ি বুনতেন, সেভাবেই শাড়ি বুনছেন। কিন্তু প্রচুর তাঁতি তো টাঙ্গাইলে রয়েও গেছেন। তাঁরাও বুনছেন টাঙ্গাইল শাড়ি।
আশির দশকে, আমি যখন থেকে শাড়ি পরতে শুরু করেছি, আমার সবচেয়ে প্রিয় শাড়ি ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি। দামে কম, মানে ভাল। আমার বাড়ির কাছে বেইলি রোডে ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির। ডাক্তারি চাকরি করতাম প্রথমে মিটফোর্ডে তারপর ঢাকা মেডিকেলে। বেতনটা পেলেই বেইলি রোডের দুটো দোকানে চলে যেতাম, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির থেকে কিনতাম টাঙ্গাইল শাড়ি, আর তার পাশের সাগর পাবিলিশার্স নামের বইয়ের দোকান থেকে কিনতাম বিস্তর বই। আমি প্রচুর বই পড়তাম, এবং খুব গুছিয়ে শাড়ি পরতাম। রঙ মিলিয়ে কপালের টিপ পরতাম, রঙ মিলিয়ে হালকা কানের দুল বা হাতের চুড়ি পরতাম। আমার যত শাড়ি ছিল, তার সত্তর বা পঁচাত্তর ভাগই ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি। টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতি আমার ভালবাসার কথা অনেকেই জানতো। আমার সেই জীবনকে এখন রূপকথা বলে মনে হয়।
এখন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশান ভারত পেয়েছে বলে চারদিকে বিতর্ক চলছে। ভারতের লোকেরা বলছে, কাজটা ভাল হয়েছে, বাংলাদেশের লোকেরা বলছে, কাজটা ভাল হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, টাঙ্গাইল থেকে তাঁতিরা ভারতে চলে গিয়ে একই পদ্ধতিতে যদি টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করতে পারেন, তাহলে কি তাঁরা টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব আইনত পেতে পারেন? এ নিয়ে কেউ বলছেন পারেন, কেউ বলছেন পারেন না। টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব হয়তো ভারতে চলে আসা তাঁতিরা পেতে পারতেন, যদি টাঙ্গাইল শাড়ি বোনা টাঙ্গাইলে বন্ধ হয়ে যেত, যদি টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার কেউ আর বাস না করতো টাঙ্গাইলে, যদি কারখানায় তালা পড়তো এবং যদি ভবিষ্যতে এই তাঁত শিল্প রক্ষা করার উপায় না থাকতো। তা কিন্তু ঘটনা নয়।
টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার তাঁতিদের মধ্যে বসাক বংশ বিখ্যাত। বসাক বংশের সবাই বাংলাদেশ ত্যাগ করেননি। প্রচুর বসাক রয়ে গেছেন টাঙ্গাইলে, এবং বংশ পরম্পরায় তাঁরা আজও শাড়ি বুনছেন। টাঙ্গাইল টাঙ্গাইলেই আছে, থাকবে। যে বসাক তাঁতিরা টাঙ্গাইল থেকে ভারতে চলে গিয়ে শান্তিপুরে স্থায়ী হয়েছেন, সেই শান্তিপুরও শান্তিপুরেই আছে, থাকবে। শান্তিপুরের বসাকরা কিন্তু যে শাড়ি বুনছেন, সেই শাড়িকে শান্তিপুরী শাড়ি না বলে টাঙ্গাইল শাড়ি বলছেন। শান্তিপুরের নাম তাঁরা চাইলেও বদলে দিতে পারেন না, বদলে টাঙ্গাইল রাখতে পারেন না। এই তাঁতিদের একজন পদ্মশ্রী পেলেও, শান্তিপুরে বোনা শাড়িকে টাঙ্গাইল শাড়ি বলে ডাকলেও শান্তিপুরের নাম টাঙ্গাইল হবে না এবং টাঙ্গাইলের নাম টাঙ্গাইলই রয়ে যাবে। এবং টাঙ্গাইলে বোনা শাড়ির নামও টাঙ্গাইল শাড়িই রয়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে টাঙ্গাইলের তাঁতিরা দু’দেশে ভাগ হয়ে গেছেন। টাঙ্গাইল নামের অঞ্চল তো শাড়ি বানায় না, শাড়ি বানায় মানুষ। মানুষই কারিগর। ঢাকায় যেমন আমার বাড়ির পাশে টাঙ্গাইল শাড়ির দোকান ছিল, আমি ভারতের যে শহরে এখন বাস করছি, সে শহরেও আমার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি টাঙ্গাইল শাড়ির দোকান। এখান থেকেও আমি যখন ইচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ি কিনতে পারি। দেশের কত কিছু মিস করি, টাঙ্গাইল শাড়ি মিস করি না। কলকাতায় মরণচাঁদের মিষ্টির দোকান দেখে একবার চমকে উঠেছিলাম। ঢাকার মরণচাঁদের দই আর মিষ্টি স্পেশাল ছিল। এখন মরণচাঁদের উত্তরাধিকারীরা যদি তাঁদের সিক্রেট রেসিপি নিয়ে ঢাকা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে কলকাতায় আসেন, এবং পুরোনো রেসিপি অনুযায়ী দই মিষ্টি বানান, তবে তাঁদের কেন অধিকার থাকবে না সেসবের স্বত্ব পাওয়ার? একবার তো শুনেছিলাম বাসমতি চালের স্বত্ব দাবি করেছে আমেরিকা। রসগোল্লার স্বত্ব নিয়ে বহুদিন মারামারি চলেছে পশ্চিমবঙ্গ আর উড়িষ্যার মধ্যে।
এখন জরুরি কথা হলো, শাড়ি পরা তো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে দু’দেশেই, তাহলে শাড়ির মালিকানা নিয়ে কী লাভ কার? আমি খুব চাই মেয়েরা শাড়ি পরুক, ভালবেসে পরুক। টাঙ্গাইল শাড়ি দু’দেশেই পাওয়া যায়। একই কোয়ালিটির, একই স্টাইলের। স্বত্ব নিয়ে যখন লড়াই চলছে, অনেকে হয়তো নামটা প্রথম জানবে শাড়ির। শাড়ি কেমন দেখতে চাইবে, পরতে কেমন তাও জানতে চাইবে। এভাবে আগ্রহ বাড়ুক। টাঙ্গাইল নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। টাঙ্গাইলকে কেউ ধরে বেঁধে কোথাও নিয়ে যায়নি। টাঙ্গাইল শাড়ি টাঙ্গাইলেরই থাকবে। ভারত সেই স্বত্ব ভুল করে পেলে ভারতকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশভাগের আগে টাঙ্গাইল ভারতবর্ষের অংশ হলেও দেশভাগের পর টাঙ্গাইল বাংলাদেশের অংশ। তারপরও এ কথা আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই যে কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে অর্থাৎ ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর তাঁদের জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব পাওয়ার অধিকার আছে বলে তাঁরা মনে করেন। সেক্ষেত্রে অন্য কোনও নামে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব তাঁরা পেতে পারেন, যেমন আদি টাঙ্গাইল শাড়ি বা নিউ টাঙ্গাইল শাড়ি। এই নামের মধ্যে রয়ে যাবে দেশ ভাগের আর সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। বাংলাদেশের কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব আমার আমার বলে চেঁচালে চলবে না, টাঙ্গাইলে যে তাঁতিরা শাড়ি বানাচ্ছেন, তাঁরা যেন টাঙ্গাইলে নিরাপদে বাস করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। যে বসাকরা টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করছেন, তাঁরা যেন তল্পি তল্পা গুটিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য না হন, তা দেখতে হবে। যেন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা আর না ঘটে দেশে।
টাঙ্গাইল শাড়ি এবং টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো। বাংলাদেশে জন্ম, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। বাংলাদেশ এবং ভারত...এই দু’দেশে বসবাসের সময় অনেকটা সমান হয়ে এসেছে আমার। বাংলাদেশ যতটুকু আমার, ভারতও ঠিক ততটুকু আমার। বাংলাদেশ আর ভারত দু’দেশের ক্রেতারা আমাকে ভুলতে বসেছে, এ যেমন ঠিক, আমাকে নিয়ে গর্ব করার লোকও এদেশে ওদেশে কিছু আছে...এও তেমন ঠিক।
টাঙ্গাইল শাড়ি তাঁতি তসলিমা নাসরিন
মন্তব্য করুন
সাম্প্রদায়িকতা
নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক
এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষের সমৃদ্ধি হোক।’
তিনি
আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’
সজীব
ওয়াজেদ আরও লিখেছেন, সবাইকে দুর্গাপূজার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
উল্লেখ্য,
গত ২০ (অক্টোবর) থেকে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব
। আজ রোববার মহাঅষ্টমী। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজা শুরু হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে
পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয় এবং ১১টায় কুমারী পূজা। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত
হয়।
রাত ৮টা ৬ মিনিটে সন্ধিপূজা
শুরু হবে। রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে পূজা শেষ হবে
পূজা সাম্প্রদায়িক অবসান ঘটাক শক্তির উৎসব
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যে কোনো কিছুতে অসম্মত হওয়ার প্রবণতাকে টক্সিক পারসোনালিটি বলে। এ ধরণের মানুষ আশেপাশে থাকলে তাদের জীবন থেকে এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ এ ধরণের মানুষের ব্যবহার আপনার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, এমনকি সামাজিকভাবেও হেয় করে। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। টক্সিক পারসোনালিটির মানুষকে এড়িয়ে চলতে পারাটাই নিজের জন্য মঙ্গল।
মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের কোনোকিছু খারাপ লাগলেও সেটি মাথা ব্যথার কারণ কখনোই হয়নি, যে পর্যন্ত সেটি সমাজের জন্য হানিকর বলে বিবেচিত না হয়েছে! ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক লোক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন, এই বয়সী ব্যক্তির অষ্টাদশী তরুণীর সাথে বিয়ে গ্রামে প্রায়শই কম করে হলেও ঘটে! সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা হলো সম্প্রতি তৃতীয় বিয়ে সম্পন্নকারী এই ব্যক্তি তার বিয়ে পরবর্তী সময়কে দারুণভাবে গ্লোরিফাই করে বেড়াচ্ছেন। একইসাথে তার মত অতি প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে স্বাভাবিকভাবেই তার সহধর্মিণী সহমত পোষণ করে আরও ঝাঁঝালো বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন এবং তিনি তা উপভোগও করছেন।
সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষের সমৃদ্ধি হোক।’