সোশ্যাল থট

করোনা নিয়ে ভাইরাল যত ‘ভুয়া খবর’; সত্যটা কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:১৮ পিএম, ০২ এপ্রিল, ২০২০


Thumbnail

করোনাভাইরাস নিয়ে বহু বিভ্রান্তিকর এবং ভুয়া পোস্ট এখন সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছেয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, তাই সাম্প্রতিক ও সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া এ ধরনের পোস্টে আসা তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক আসল ঘটনা।

বিল গেটসের ভুয়া বার্তা 

আমেরিকান ধনকুবের বিল গেটসের লম্বা একটি মেসেজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়েক হাজার শেয়ার হয়েছে। এই বার্তায় তিনি করোনাভাইরাস মহামারির সময় জীবনের ইতিবাচক দিক নিয়ে মানুষকে ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছেন। এই মেসেজটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ভেরিফায়েড (যাচাই করা) কিছু অ্যাকাউন্টে, জাতীয় সংবাদপত্র ওয়েবসাইটগুলো এবং সুপারমডেল নেওমি ক্যাম্পবেলের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। কিন্তু বিল গেটসের সঙ্গে এই মেসেজের কোনো সম্পর্ক নেই। এক ব্যক্তি নিজে এই মূল পোস্ট দিয়েছেন বলে বিবিসির কাছে দাবি করেছেন। 

লন্ডনের মোহাম্মদ আলি নামে ওই ব্যক্তি বলেন ১৬ মার্চ তিনি ফেসবুকে এই মেসেজটি পোস্ট করেছিলেন, কিন্তু তিনি বলেননি যে মেসেজটি বিল গেটসের দেওয়া। এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না যে তিনিই সর্বপ্রথম এই পোস্টটি দিয়েছিলেন। তবে পাবলিক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এর আগে আর কেউ এই মেসেজটি পোস্ট করেছে বলে অনুসন্ধানে দেখা যায়নি। এই মেসেজটির সঙ্গে বিল গেটসের নাম কিভাবে জুড়ে গেল, তাও স্পষ্ট নয়।

সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকলাপ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করার যে বিশেষ সফটওয়্যার টুল রয়েছে, যার নাম ক্রাউডট্যাঙ্গেল, তাতে দেখা যাচ্ছে এই মেসেজের সঙ্গে বিল গেটসের নাম প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ২২ মার্চ। বিল গেটসের নাম দিয়ে পোস্ট করা এই বার্তায় যেমন বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস আমাদের কী শেখাল? আমি জোরালোভাবে মনে করি সবকিছুর পেছনেই একটা আধ্যাত্মিক কারণ রয়েছে। সেটা ভালো হোক, কি মন্দ। এই করোনাভাইরাস নিয়ে আমার কিছু অনুভূতি তুলে ধরলাম।’ 

খাবার দান করা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও

সম্প্রতি মাত্র কয়েক দিনে এক কোটি বার যে ভিডিও মানুষ দেখেছে তাতে দাবি করা হয়েছে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য রাস্তায় খাবার প্যাকেট রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু পোস্টে বলা হয়েছে এই ভিডিও ছবি তোলা হয়েছে তুরস্কে। আবার অন্য কিছু পোস্টে বলা হয়েছে এই ছবি ইরাক বা ভারতের কোনো শহরে তোলা। বেশিরভাগ পোস্টে ওই দেশ যেভাবে দরিদ্রদের সাহায্য করছে তার প্রশংসা করা হয়েছে। এই ভিডিও ছবি সঠিক কিন্তু এটি দুমাসের পুরনো, কাজেই এই বিভ্রান্তিমূলক। ওই দান করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য নয়, ওই খাবার দান করা হয়েছিল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য।

এই ভিডিও সম্পর্কে আরো অনুসন্ধান করেছেন তথ্য অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞরা এবং তারা ঘটনাস্থল সফলভাবে চিহ্ণিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা ভিডিওতে একটি দোকান অথবা বিজ্ঞাপন লক্ষ্য করেছেন যেখানে তুর্কি ভাষায় লেখা আছে, ‘খুব সস্তা’। সেই সূত্র ধরে তারা আরো দীর্ঘ একটি ভিডিও ক্লিপ খুঁজে পেয়েছেন যেটি ছিল তুরস্কের কনিয়া শহরের একটি অনুষ্ঠানের লাইভ স্ট্রিমিং এবং সেটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। দুটিতেই পেছনে বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ড, ভ্যান, গাছ সব হুবহু মিলে গেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তারা নিশ্চিত করেছে এর সঙ্গে কোভিড-১৯ এর কোনো যোগাযোগ নেই।

ভুয়া টেক্সট মেসেজ

সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু ভুয়া ছবি যেগুলো দেখে মনে হচ্ছে সেগুলো ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া ছবি। সেখানে মানুষ অপ্রয়োজনে বেশি ঘরের বাইরে গেলে তাদের জরিমানা করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওইসব ছবিতে দাবি করা হচ্ছে সরকার মানুষের গতিবিধির ওপর নজরদারি করছে এবং যারা বাসা থেকে বের হচ্ছে তাদের জরিমানা করছে। একটি ছবি বলা হয়েছে, গ্রেটার ম্যানচেসটার এলাকার পুলিশ বিভাগের ছবি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিনা কারণে আপনার ঘর থেকে বেরনোর জন্য আপনাকে ৩৫৫০ পাউন্ড ৭৩ পেনি জরিমানা করা হলো।’ এটি পুরো ভুয়া।

ব্রিটিশ সরকার এই সপ্তাহে এ বিষয়ে সরকারের নিয়মাবলী ব্যাখ্যা করে টেক্সট বার্তা দিয়েছে। সরকার বলেছে, ইউকে সরকারের দিক থেকে জারি করা তথ্য বলে দাবি করা অন্য সব পোস্ট ভুয়া। এসব পোস্ট যারা স্ক্যাম করে তাদের কাজ নাকি আসল তথ্যের স্ক্রিনশট নেওয়া ছবিতে রদবদল ঘটিয়ে এসব মেসেজ তৈরি করা হয়েছে সেটা পরিষ্কার নয়।

হেলিকপ্টার জীবাণুনাশক ছড়াচ্ছে না

এই গুজব এখনো চলছে- এখনো ঘুরছে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে। এটা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। একই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বয়ানের মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এতে মানুষকে বলা হচ্ছে ঘরের ভেতরে থাকতে, কারণ করোনাভাইরাসের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য রাত সাড়ে এগারোটা থেকে হেলিকপ্টার থেকে বাতাসে জীবাণুনাশক ছড়ানো হবে। কিন্তু এমন কিছু কোথাও হয়েছে বা হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।

সম্প্রতি লন্ডনের একটি হাসপাতালের একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের ডাক্তার ও নার্সদের একটি গ্রুপে এই মেসেজ পাঠানো হয়েছে। বিবিসি মনিটরিং বিভাগ যারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে গুজব ছড়ানোর ওপর নজর রাখছে, তারা বলছে একই বয়ানের মেসেজ, হেলিকপ্টার জীবাণুনাশক স্প্রে করছে-ছড়িয়েছে কেনিয়া, ইতালি, রাশিয়া ও নেপালে। এ ধরেনের মেসেজ বেশি ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে, কাজেই কারা এসব ছড়াচ্ছে তা খুঁজে বের করা কঠিন। যদিও এসব মেসেজ শুনতে অবাস্তব, কিন্তু অনেক মানুষ এগুলো বিশ্বাস করছে এবং শেয়ার করছে। কারণ যারা তাদের এগুলো পাঠাচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তাদের কাছের মানুষ- বিশ্বাসযোগ্য মানুষ- পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা সহকর্মী।

ইতালির পুলিশ দেশজুড়ে লকডাউন বলবৎ করেনি

একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে যাতে দাবি করা হচ্ছে ওই ছবিতে ইতালির লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করতে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তা লঙ্ঘন করার জন্য ইতালির পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতে এই ভিডিওর একটি ভার্সান টুইটারে পোস্ট করার পর সেটি দেখার জন্য ক্লিক করেছে সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ। কিন্তু এই ভিডিও তোলা হয়েছিল ব্রাজিলে।

এটা সাও পাওলোতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ভিডিও এবং এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্কই নেই। এই একই ভিডিও ছবি সেখানে গ্লোবো নামে একটি সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল, যখন তারা ওই ব্যক্তির গ্রেপ্তারের খবর করেছিল। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ টি-শার্ট পরে আছে। মার্চ মাসে ইতালির আবহাওয়া টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়ানোর মতো গরম নয়।

স্পেনের হাসপাতালের ছবি ও ভয়েস মেসেজ

হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি ভয়েস মেসেজ যেখানে আরবি ভাষায় একজন জেরুজালেমের একটি নামকরা হাসপাতালের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করছে। ওই কণ্ঠের সঙ্গে ছবিও যোগ করা হয়েছে যেখানে রোগীদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আরবের বেশ কিছু সংবাদ সাইটের নিবন্ধে এই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এবং খবরে লেখা হয়েছে ইসরায়েলের হাসপাতাল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কি রকম হিমশিম খাচ্ছে।

হাসপাতাল থেকে এই খবর নাকচ করে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে এটা ওই হাসপাতালের ছবি নয়। বিবিসি ট্রেন্ডিং বিভাগ থেকে এই ছবি ভালোভাবে যাচাই করা হয়েছে এবং তারা জেনেছে এটি মাদ্রিদের একটি হাসপাতালের চিত্র এবং মাটিতে পড়ে থাকা রোগীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে খবরে বলা হচ্ছে। এই ছবি প্রথম পোস্ট করা হয়েছিল স্পেনের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে। ওই ছবিতে হাসপাতালের বালিশ ও বিছানার চাদরে যে লোগো দেখা যাচ্ছে সেটার সঙ্গে মাদ্রিদের হাসপাতালের চাদর ও বালিশের লোগোর মিল রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি



মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

তবে কি তাদের নিজেদের বিশ্বাসেই ঘাটতি রয়েছে?

প্রকাশ: ০৯:২৯ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের কোনোকিছু খারাপ লাগলেও সেটি মাথা ব্যথার কারণ কখনোই হয়নি, যে পর্যন্ত সেটি সমাজের জন্য হানিকর বলে বিবেচিত না হয়েছে!

ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক লোক সম্প্রতি বিয়ে করেছেন, এই বয়সী ব্যক্তির অষ্টাদশী তরুণীর সাথে বিয়ে গ্রামে প্রায়শই কম করে হলেও ঘটে! সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা হলো সম্প্রতি তৃতীয় বিয়ে সম্পন্নকারী এই ব্যক্তি তার বিয়ে পরবর্তী সময়কে দারুণভাবে গ্লোরিফাই করে বেড়াচ্ছেন। একইসাথে তার মত অতি প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাথে স্বাভাবিকভাবেই তার সহধর্মিণী সহমত পোষণ করে আরও ঝাঁঝালো বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন এবং তিনি তা উপভোগও করছেন।

আজ বইমেলায় স্কুল, কলেজ পড়ুয়া অনেক বাচ্চারা নববিবাহিত এই দম্পতির বই কিনতে যেয়ে, শ্যুগা ( Sugar) ড্যাডি টার্মকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে এই ধরনের বিয়ে অথবা ড্যাডি টাইপ কারো সাথে থাকাকে জায়েজ মনে করে নিচ্ছে! এই কিশোরীদের সামনে প্রশ্নগুলো ছুঁড়ছে কারা? বোধহীন এই প্রশ্নগুলো করছেন, তথাকথিত কিছু ইউটিউব চ্যানেলের বুমধারী ব্যক্তিগণ, যাদের কাছে নিজ চ্যানেল অথবা পেইজের কিছু সস্তা ভিউজ প্রাপ্তি ছাড়া আর কোনো দায়বদ্ধতা নেই!

আমাদের স্বল্পশিক্ষিত, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত অথচ মননে অশিক্ষিত সম্প্রদায়ের হাতে নতুন কিছু ভুলক্রমে চলে আসলে সেটি ভাজা ভাজা না করে আমাদের নিস্তার নাই। সম্প্রতি শ্যুগা (Sugar) ড্যাডি অথবা মম বিষয় নিয়ে অতি উৎসাহী হওয়ার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই মস্তিষ্ক বিবর্জিত শ্রেণী অতি সম্প্রতিই এই শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে! যার কারণে নিজ নিজ পেইজে ১৮+ কনটেন্টের মত বিষয়াদি ছাড়াও আরও বর্জ্য সংযুক্ত করে নিচ্ছে!

অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব ভদ্রলোকের সহধর্মিণী তাদের এই বিয়েকে প্রতিনিয়ত জাস্টিফাই করে যাচ্ছেন। তিনি ভুল করছেন এই জায়গাতেই! কোনোকিছু স্বাভাবিক মনে করলে সেটিকে বারবার বলে বুঝাতে হয় না এটি স্বাভাবিক! এই দম্পতি সমাজের একমাত্র দম্পতি নন, অন্য সবাই তাদের মত জাস্টিফাই করতে তো আসছেন না! তারা তবে কেন এই চেষ্টা করছেন? নিজ সম্পর্ককে স্বাভাবিক বোধ করলে অন্যের কাছে তা প্রতিষ্ঠিত করার এত তীব্র চেষ্টা কেন করছেন? তবে কি তাদের নিজেদের বিশ্বাসেই ঘাটতি রয়েছে?

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ভুল নয় কিন্তু সেটিকে প্রচারণার মাধ্যমে জৌলুসপূর্ণ করে প্রকাশ করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিভ্রান্ত করা, অত্যন্ত ভুল একটি পদ্ধতি! ১৮ বছর বয়সী কারো মাথায় সেই বোধ পুরোপুরি না-ই আসতে পারে, ষাটোর্ধ্ব কারো মাথায় এটি কেন কাজ করছে না সেটাই বোধগম্য নয়!

লেখক : ইফতেখায়রুল ইসলাম

এডিসি, ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স ডিভিশন।

(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)



মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো: তসলিমা নাসরিন

প্রকাশ: ০১:৫০ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

টাঙ্গাইল শাড়ি এবং টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো। বাংলাদেশে জন্ম, কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি বলে মন্তব্য করছেন ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। 

তসলিমা নাসরিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে টাঙ্গাইল শাড়ি ও টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিদের নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেন, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর হিন্দু তাঁতি ভারত ভাগের পর পূর্ব বঙ্গ থেকে, বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বা বাংলাদেশ থেকে মুসলমানের অত্যাচারের ভয়ে ভারতে চলে এসেছেন। ভারতেই তাঁরা টাঙ্গাইলে যেভাবে শাড়ি বুনতেন, সেভাবেই শাড়ি বুনছেন। কিন্তু প্রচুর তাঁতি তো টাঙ্গাইলে রয়েও গেছেন। তাঁরাও বুনছেন টাঙ্গাইল শাড়ি। 

আশির দশকে, আমি যখন থেকে শাড়ি পরতে শুরু করেছি, আমার সবচেয়ে প্রিয় শাড়ি ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি। দামে কম, মানে ভাল। আমার বাড়ির কাছে বেইলি রোডে ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির। ডাক্তারি চাকরি করতাম প্রথমে মিটফোর্ডে তারপর ঢাকা মেডিকেলে। বেতনটা পেলেই বেইলি রোডের দুটো দোকানে চলে যেতাম, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির থেকে কিনতাম টাঙ্গাইল শাড়ি, আর তার পাশের সাগর পাবিলিশার্স নামের বইয়ের দোকান থেকে কিনতাম বিস্তর বই। আমি প্রচুর বই পড়তাম, এবং খুব গুছিয়ে শাড়ি পরতাম। রঙ মিলিয়ে কপালের টিপ পরতাম, রঙ মিলিয়ে হালকা কানের দুল বা হাতের চুড়ি পরতাম। আমার যত শাড়ি ছিল, তার সত্তর বা পঁচাত্তর ভাগই ছিল টাঙ্গাইল শাড়ি। টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতি আমার ভালবাসার কথা অনেকেই জানতো। আমার সেই জীবনকে এখন রূপকথা বলে মনে হয়। 

এখন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই অর্থাৎ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশান ভারত পেয়েছে বলে চারদিকে বিতর্ক চলছে। ভারতের লোকেরা বলছে, কাজটা ভাল হয়েছে, বাংলাদেশের লোকেরা বলছে, কাজটা ভাল হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, টাঙ্গাইল থেকে তাঁতিরা ভারতে চলে গিয়ে একই পদ্ধতিতে যদি টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করতে পারেন, তাহলে কি তাঁরা টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব আইনত পেতে পারেন? এ নিয়ে কেউ বলছেন পারেন, কেউ বলছেন পারেন না। টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব হয়তো ভারতে চলে আসা তাঁতিরা পেতে পারতেন, যদি টাঙ্গাইল শাড়ি বোনা টাঙ্গাইলে বন্ধ হয়ে যেত, যদি টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার কেউ আর বাস না করতো টাঙ্গাইলে, যদি কারখানায় তালা পড়তো এবং যদি ভবিষ্যতে এই তাঁত শিল্প রক্ষা করার উপায় না থাকতো। তা কিন্তু ঘটনা নয়। 

টাঙ্গাইল শাড়ি বোনার তাঁতিদের মধ্যে বসাক বংশ বিখ্যাত। বসাক বংশের সবাই বাংলাদেশ ত্যাগ করেননি। প্রচুর বসাক রয়ে গেছেন টাঙ্গাইলে, এবং বংশ পরম্পরায় তাঁরা আজও শাড়ি বুনছেন। টাঙ্গাইল টাঙ্গাইলেই আছে, থাকবে। যে বসাক তাঁতিরা টাঙ্গাইল থেকে ভারতে চলে গিয়ে শান্তিপুরে স্থায়ী হয়েছেন, সেই শান্তিপুরও শান্তিপুরেই আছে, থাকবে। শান্তিপুরের বসাকরা কিন্তু যে শাড়ি বুনছেন, সেই শাড়িকে শান্তিপুরী শাড়ি না বলে টাঙ্গাইল শাড়ি বলছেন। শান্তিপুরের নাম তাঁরা চাইলেও বদলে দিতে পারেন না, বদলে  টাঙ্গাইল রাখতে পারেন না। এই তাঁতিদের একজন পদ্মশ্রী পেলেও, শান্তিপুরে বোনা শাড়িকে টাঙ্গাইল শাড়ি বলে ডাকলেও শান্তিপুরের নাম টাঙ্গাইল হবে না এবং টাঙ্গাইলের নাম টাঙ্গাইলই রয়ে যাবে। এবং টাঙ্গাইলে বোনা শাড়ির নামও টাঙ্গাইল শাড়িই রয়ে যাবে।  

মনে রাখতে হবে টাঙ্গাইলের তাঁতিরা দু’দেশে ভাগ হয়ে গেছেন। টাঙ্গাইল নামের অঞ্চল তো শাড়ি বানায় না, শাড়ি বানায় মানুষ। মানুষই কারিগর। ঢাকায় যেমন আমার বাড়ির পাশে টাঙ্গাইল শাড়ির দোকান ছিল, আমি ভারতের যে শহরে এখন বাস করছি, সে শহরেও আমার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি টাঙ্গাইল শাড়ির দোকান। এখান থেকেও আমি যখন ইচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ি কিনতে পারি। দেশের কত কিছু মিস করি, টাঙ্গাইল শাড়ি মিস করি না। কলকাতায় মরণচাঁদের মিষ্টির দোকান দেখে একবার চমকে উঠেছিলাম। ঢাকার মরণচাঁদের দই আর মিষ্টি স্পেশাল ছিল। এখন মরণচাঁদের উত্তরাধিকারীরা যদি তাঁদের সিক্রেট রেসিপি  নিয়ে ঢাকা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে কলকাতায় আসেন, এবং পুরোনো রেসিপি অনুযায়ী দই মিষ্টি বানান, তবে তাঁদের কেন অধিকার থাকবে না সেসবের স্বত্ব পাওয়ার? একবার তো শুনেছিলাম বাসমতি চালের স্বত্ব  দাবি করেছে আমেরিকা। রসগোল্লার স্বত্ব নিয়ে বহুদিন মারামারি চলেছে পশ্চিমবঙ্গ আর উড়িষ্যার মধ্যে।

এখন জরুরি কথা হলো, শাড়ি পরা তো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে দু’দেশেই, তাহলে শাড়ির মালিকানা নিয়ে কী লাভ কার? আমি খুব চাই মেয়েরা শাড়ি পরুক, ভালবেসে পরুক। টাঙ্গাইল শাড়ি দু’দেশেই পাওয়া যায়। একই কোয়ালিটির, একই স্টাইলের। স্বত্ব নিয়ে যখন লড়াই চলছে, অনেকে হয়তো নামটা প্রথম জানবে শাড়ির। শাড়ি কেমন দেখতে চাইবে, পরতে কেমন তাও জানতে চাইবে। এভাবে আগ্রহ বাড়ুক। টাঙ্গাইল নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। টাঙ্গাইলকে কেউ ধরে বেঁধে কোথাও নিয়ে যায়নি। টাঙ্গাইল শাড়ি  টাঙ্গাইলেরই থাকবে। ভারত সেই স্বত্ব ভুল করে পেলে ভারতকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশভাগের আগে টাঙ্গাইল ভারতবর্ষের অংশ হলেও দেশভাগের পর টাঙ্গাইল বাংলাদেশের অংশ। তারপরও এ কথা আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই যে কাঁটাতার পেরিয়ে টাঙ্গাইলের যে তাঁতিরা এপারে অর্থাৎ ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরাও বুকের ভেতর তাঁদের জন্মের ভূমি টাঙ্গাইলকে লালন করেন, তাঁদেরও স্বত্ব  পাওয়ার অধিকার আছে বলে তাঁরা মনে করেন। সেক্ষেত্রে অন্য কোনও নামে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব তাঁরা পেতে পারেন, যেমন আদি টাঙ্গাইল শাড়ি বা নিউ টাঙ্গাইল শাড়ি। এই নামের মধ্যে রয়ে যাবে দেশ ভাগের আর সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। বাংলাদেশের কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব আমার আমার বলে চেঁচালে চলবে না, টাঙ্গাইলে যে তাঁতিরা শাড়ি বানাচ্ছেন, তাঁরা যেন টাঙ্গাইলে নিরাপদে বাস করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। যে বসাকরা টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করছেন, তাঁরা যেন তল্পি তল্পা গুটিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য না হন, তা দেখতে হবে। যেন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা আর না ঘটে দেশে।    

টাঙ্গাইল শাড়ি এবং টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতিরা অনেকটা আমার মতো। বাংলাদেশে জন্ম, কিন্তু  নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। বাংলাদেশ এবং ভারত...এই দু’দেশে বসবাসের সময় অনেকটা সমান হয়ে এসেছে আমার। বাংলাদেশ যতটুকু আমার, ভারতও ঠিক ততটুকু আমার। বাংলাদেশ আর ভারত দু’দেশের ক্রেতারা আমাকে ভুলতে বসেছে, এ যেমন ঠিক, আমাকে নিয়ে গর্ব করার লোকও এদেশে ওদেশে কিছু আছে...এও তেমন ঠিক।



টাঙ্গাইল শাড়ি   তাঁতি   তসলিমা নাসরিন  


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক: সজীব ওয়াজেদ জয়

প্রকাশ: ১২:৫০ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০২৩


Thumbnail

সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষের সমৃদ্ধি হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’

সজীব ওয়াজেদ আরও লিখেছেন, সবাইকে দুর্গাপূজার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

উল্লেখ্য, গত ২০ (অক্টোবর) থেকে শুরু হয়  শারদীয় দুর্গোৎসব । আজ রোববার মহাঅষ্টমী। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজা শুরু হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয় এবং ১১টায় কুমারী পূজা। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

রাত ৮টা ৬ মিনিটে সন্ধিপূজা শুরু হবে। রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে পূজা শেষ হবে


পূজা   সাম্প্রদায়িক   অবসান   ঘটাক   শক্তির   উৎসব  


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য স্বচ্ছ নয়: এডিটরস গিল্ড

প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশের মিডিয়াও মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসতে পারে—ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের এমন বক্তব্যে উদ্বেগ জানিয়েছে এডিটরস গিল্ড।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনটি।

এতে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর স্পষ্টভাবে বলেছে, বাংলাদেশে যাদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু করেছে এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। ঘোষিত নীতিমালায় গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম পেশাজীবীদের বিষয়ে কিছুই ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই ২৪ সেপ্টেম্বর পিটার হাস একটি সাক্ষাতকারে বলেন যে, বাংলাদেশের মিডিয়াও মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আসতে পারে। 

পিটার হাস এর এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে মার্কিন সরকার বাংলাদেশের মিডিয়ার ওপর তার আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে নাকি মিডিয়া পেশাদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব মতপার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বিবাদমান দলগুলোর কোনো পক্ষ না নিয়ে টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং অনলাইন পোর্টালে নির্বাচনের পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো কভার করছেন এবং নির্বাচনকে একাধিক ফরম্যাটে কভার করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আমরা জানতে চাই কী কারণে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের মিডিয়াকে হেয় করার জন্য ব্যস্ত সক্রিয়তা শুরু করেছিলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য যথেষ্ট স্বচ্ছ নয় এবং এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ সম্প্রসারণের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে জনগণের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার এবং গণমাধ্যমের উপর অদৃশ্য সেন্সরশিপ আরোপ করার একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা যেতে পারে, যা গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নীতির পরিপন্থী। এবং শাসন।


মন্তব্য করুন


সোশ্যাল থট

'সাকিবের এমন সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করা উচিৎ'

প্রকাশ: ০৭:১১ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail জেনিসিয়া বর্ণা ও মেহের নেগার

তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিবের নারীদের নিয়ে তার একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয় এবং এর পরই তীব্র সমালোচনার মুখে পরেন এই ক্রিকেটার। সাকিবের অসম্মাজনক পোস্টকে নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এছাড়া এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক নারী তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় তার এই পোষ্ট নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) কথা বলেছেন দুইজন কর্মজীবী নারী। তাদের মধ্যে একজন হলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নিউজরুম এডিটর ও  নিউজ প্রেজেন্টার জেনিসিয়া বর্ণা। অন্য আরেকজন হলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক ব্যবস্থাপক মেহের নেগার।

সাকিবের ফেইজবুক পোষ্ট প্রসঙ্গে প্রথমেই বর্ণা বলেন, আমার মনে হয় সবার দেখার ধরণ এবং পয়েন্ট অব ভিউ এক নয়। সাকিব যা বলেছেন সম্পূর্ণই তার নিজের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলেছেন। তার সাথে আমার বা আপনার মতামত মিলবে এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তিনি যা বলছেন তার সাথে আমি একমত নই। 

আমি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছি পাশাপাশি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে নিউজরুম এডিটর ও প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করছি। ক্লাস, অফিস সামলে আমি বাসা বেশ ভালো ভাবে সামলে নিতে পারি। আমার দৈন্দিন জীবন ব্যাবস্থা নিয়ে আমি এবং আমার পরিবার বেশ খুশি। 

তিনি বলেন, এসময়ে এসে নারী পুরুষ সকলে যেখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে সেখানে আমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সাকিবের এমন মন্তব্য অহেতুক। একজন নারী যখন শিক্ষিত এবং  সাবলম্বী হবেন তখন তিনি তার সন্তান কেও সঠিক শিক্ষা দিতে পারবেন, নিজের এবং পরিবারের খরচ বহন করতে পারবেন। কখনোই একজন চাকরিজীবী স্ত্রীদের জন্য সমাজ পরিবার ধ্বংশ হয় না। বরং একজন কর্মজীবী মহিলার জন্য সমাজ এবং পরিবারের বন্ধন শক্ত হয় ভালো হয় । আর একজন চাকরিজীবী স্ত্রী সবসময় চারদিক মানে পরিবার, সমাজ,চাকরি সবকিছুই সমানভাবে সামলানোর ক্ষমতা রাখেন। একজন কর্মজীবি নারী সবসময় অনেক গোছানো হয়।

এবার আসি পর্দার কথায় পর্দার সাথে চাকরীর কোনো সম্পর্ক নেই। চাকরী করলেযে কেউ পর্দা করতে পারবে না এমন কোনো বাধ্যকতা নেই। আমি মনে করি পর্দা করার ইচ্ছে থাকলে যে কোনো অবস্থাতেই করা সম্ভব। অনেক নারীই আছেন যারা চাকরী করেন না, কই তারাতো পর্দা করেনা তাহলে তাদের উদ্দেশ্য সাকিব কি বলবে?  

পাশাপাশি হিসাবরক্ষক ব্যবস্থাপক মেহের নেগার বলেন, যদিও এটা তানজিম হাসান সাকিবের ব্যক্তিগত অভিমত। কিন্তু তিনি পুরো নারী সমাজকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছেন। তাছাড়া উনি বাংলাদশেকে রিপেজেন্ট করছেন তাই উনার এমন মন্তব্য একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। উনাকে অনেকেই অনুসরণ করেন তাই তার এমন মন্তব্য সমাজের কর্মজীবী নারীদের উপর নেগেটিভ ইমপেক্ট পরতে পারে।

মেহের বলেন, একজন শিক্ষিত এবং কর্মজীবী নারী অন্য সাধারণ নারীদের চেয়ে অনেক বেশি স্মাট এবং রেসপন্সিবিল হন বলে আমি মনে করি। কর্মজীবী নারীরা যেমন সাহসিকতার সাথে অফিসের কাজ সামলান ঠিক তেমনি সংসারও সামলান। চাকরীজীবী স্ত্রীরা হাজবেন্ডের সাথে সংসারে কন্ট্রিবিউট করে হাজবেন্ডের  চাপ কমিয়ে আনেন।

এমনকি সন্তানদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠা এবং তাদের সুন্দর চরিত্র গঠনে অনেক বড় ভূমিকা রাখেন একজন শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারী। তাই স্বামী এবং সন্তানদের হক নষ্ট হওয়ার কথা একদম অযৌক্তিক। আর পর্দা করা একজনের ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার । কেউ পর্দা করতে চাইলে সে যেকোনো অবস্থাতেই পর্দা করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, পর্দা চাকরি করার উপর নির্ভর করে না। সামগ্রিকভাবে একজন শিক্ষত এবং কর্মজীবী নারী দেশের অর্থ সামাজিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে পারিবারিক বন্ধন শক্ত করে সর্বক্ষেত্রে সমান ভূমিকা রাখেন। তানজিম হাসান সাকিবের এমন সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা  পরিবর্তন করা উচিৎ।

উল্লেখ্য, নারীদের নিয়ে তানজিম সাকিবের অসম্মাজনক পোস্টটিতে তিনি বলেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।



সাকিব   কর্মজীবী নারী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন