ইনসাইড আর্টিকেল

স্মৃতিতে ৭৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ০৪ অগাস্ট, ২০২০


Thumbnail

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের। 

এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদের ‘ঘরে ফেরা’ শিরোনামে একটি লেখার অংশবিশেষ। লেখাটি নেওয়া হয়েছে ‘তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা’ বই থেকে।

স্মৃতিতে ৭৫

‘১৫ আগস্ট সকালে আব্বুর কাপাসিয়া যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু অভাবনীয়ভাবে ঘটনা মোড় নিলো অন্যদিকে। খুব ভোরে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে গেল। আমার সমবয়সী খালাতো বোন ইরিনা আগের রাতে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে থেকে গিয়েছিল। সে চিৎকার করে রিমিকে জড়িয়ে ধরল। রাজশাহীর এসপি (আমাদের এক মামা ও আম্মার মামাতো ভাই) সৈয়দ আবু তালেব দু’দিন আগে সরকারি কাজে ঢাকায় আমাদের বাসায় উঠেছিলেন। তিনি হতভম্বের মতো ঘর থেকে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তাঁর পাশে আব্বু ও কাজের ছেলে ইলিয়াস দাঁড়ানো। আমরাও একে একে বারান্দায় জড়ো হলাম। আম্মা চিন্তাগ্রস্ত কণ্ঠে বললেন, ‘হঠাৎ এত গোলাগুলি কোথা থেকে আসছে।’ আব্বু বারান্দা থেকে দ্রুত ছাদে ছুটে গেলেন। রিমি ও আমিও গেলাম আব্বুর পেছনে পেছনে। দু’-একটা গুলির শব্দ আবারও শোনা গেল। তারপর সব নিঃশব্দ হয়ে গেল। আব্বু নিচে নেমে বারান্দায় ইস্ত্রির টেবিলের পাশে রাখা ফোনে বিভিন্নজনকে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেই ভোরে ফোনে কাউকেই পেলেন না। এরপর আব্বুর নির্দেশমতো রিমিও ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলো। মিন্টো রোডে অধ্যাপক ইউসুফ আলীর সরকারি বাড়ির ফোন ধরলো তাঁর মেয়ে বেবি। বেবি জানালো যে, ওর বাবা নামাজ পড়তে গিয়েছেন এবং তাঁদের বাড়ির কাছেও অনেক গোলাগুলি হয়েছে। বেবি তখনও জানতো না মুজিব কাকুর ভগ্নিপতি খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের বাসাতেও অভ্যুত্থানকারীরা আক্রমণ করে তাঁকেসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করেছে। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত রিমির সহপাঠী ছিল। সেও নিহতদের মধ্যে ছিল। তাঁর বড় মেয়ে শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী আরজু মনি তাঁর স্বামীসহ তাঁদের ধানমন্ডির বাসায় ১৫ই আগস্ট ভোরে একই দলের গুলিতে নিহত হন। মুজিব কাকু ও তাঁর পরিবারের নিকটতম অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গরা একই দিনে, কাছাকাছি একই সময়ে অকালেই জীবন হারালেন। একটু সকাল হতেই আব্বু ফোনে খোন্দকার মোশ্‌তাককে পেলেন। তিনি আব্বুর কাছে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পিয়ন আনোয়ার আগের রাতে আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে এসে বেশি রাত হওয়ায় আমাদের বাসায় থেকে গিয়েছিলেন, তিনি চলে গেলেন। আমাদের বাড়ি যিনি দেখাশোনা করতেন সেই বারেক মিয়া (হাইয়ের বাবা) এবং ইলিয়াস বাইরে বেরিয়ে পড়লেন। একটু পর বারেক মিয়া রাস্তা থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে ঘরের কাছে এসে চিৎকার করে রেডিও অন করতে বলেন। রাস্তায় অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। তারা রেডিওতে কি এক ভাষণের কথা যেন বলাবলি করছে। আব্বু রেডিও অন করলেন। ইথারে ভেসে এল মেজর ডালিমের উত্তেজিত কণ্ঠ- ‘খুনি মুজিবকে হত্যা করা হইয়াছে।’ আমরা সবাই বাক্যহারা হয়ে গেলাম। বেদনায় বিমূঢ় আব্বু গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘মুজিব ভাই জেনে গেলেন না কে ছিল তাঁর প্রকৃত বন্ধু আর কে শত্রু। মৃত্যুর আগে যদি চিন্তার সময় পেয়ে থাকেন তাহলে হয়তো ভেবেছেন আমিই তাঁকে হত্যা করিয়েছি। আমি যদি মন্ত্রিসভায় থাকতাম কারও সাধ্য ছিল না মুজিব ভাইয়ের শরীরে কেউ সামান্য আঁচড় কাটে।’ সপরিবারে স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিনপুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, দশ বছরের বালক শেখ রাসেল, ছোট ভাই শেখ নাসের, দুই পুত্র বধূ সুলতানা কামাল খুকী ও পারভীন জামাল রোজীসহ মুজিব কাকু নিহত হন। দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। শিশু রাসেলকেও ছাড়েনি বর্বর ঘাতকের দল। ১৯৬৪ সালে যখন রাসেলের জন্ম হয়, আম্মার সঙ্গে আমি নবজাতক শিশুকে দেখতে গিয়েছিলাম। মুজিব কাকির কোল আলো করে রয়েছে ফুটফুটে রাসেল। আজ সে নেই! তাঁরা কেউ নেই! কি এক নির্মম ও অবিশ্বাস্য সত্যের মুখোমুখি আমরা সেদিন দাঁড়ানো! মুজিব কাকুকে হত্যার খবর রেডিও মারফত চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। ইলিয়াস রাস্তা থেকে আরও খবর নিয়ে এলো। অনেক মানুষ এই হত্যাকাণ্ডে উল্লাস প্রকাশ করেছে। হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে কেউ কেউ শ্লোগানও দিচ্ছে।

পঁচাত্তরে মুজিব কাকুর জনপ্রিয়তা ছিল শূন্যের কোঠায়। তার নেতৃত্ব সম্পর্কে হতাশাগ্রস্ত জনগণ তার স্বৈরশাসনের অবসান কামনা করছিল। যদিও তারা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেনি (অতীতে একই জনগণ তার জন্য প্রাণ আহুতি দিতে পর্যন্ত প্রস্তুত ছিল) তা সত্ত্বেও ধারণা করা যায় যে, দেশের অধিকাংশ মানুষ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেনি। দুর্ভাগ্য যে সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ড রুখতে বা সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে মুজিব কাকুর অনুগত রক্ষী বাহিনী চরমভাবেই ব্যর্থ হয়। একমাত্র বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতির জনকের হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করেন ও জেনারেল জিয়াউর রহমান নিয়ন্ত্রিত আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে দেশান্তরী হতে বাধ্য হন। মুজিব কাকুকে হত্যা করা হয়েছে- এই ঘোষণা শোনার পর আব্বু বলেছিলেন, মুজিব কাকু জেনে গেলেন না কে ছিল তাঁর প্রকৃত বন্ধু আর কে শত্রু। রাষ্ট্রপতি হিসেবে খোন্দকার মোশতাকের নাম ঘোষিত হওয়ার পর মনে হলো নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, মুজিব কাকুর অতি কাছের আস্থাভাজন এই ব্যক্তিটি নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সে ও তার মতো ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই জানতো যে, আব্বু মুজিব কাকুর পাশে থাকলে তারা আঘাত হানতে পারবে না। সে কারণেই কুমন্ত্রণা ও ভুল পরামর্শ দিয়ে তারা মুজিব কাকুকে আব্বুর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। মুজিব কাকুর আত্মীয়দের মধ্যে কেউ কেউ আব্বুর প্রতি তাঁদের ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আব্বু ও মুজিব কাকুর সম্পর্কে ফাটল ধরায় এবং হত্যাকারীদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথকে সহজ করে দেয়। আব্বুর নিঃস্বার্থ উপদেশ, সতর্কবাণী সব অগ্রাহ্য করে মুজিব কাকু স্বাধীনতার শত্রুদের বরণ করেন পরম বন্ধু হিসেবে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সকালবেলাটা ছিল উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা ও বেদনাসিক্ত। আশপাশের অনেকেই আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। আব্বুর সাবেক একান্ত সচিব আবু সাঈদ চৌধুরীসহ অনেকে সকাল থেকেই আমাদের বাসায় ফোন করা শুরু করলেন। কেউ কেউ আব্বুকে বাসা ছেড়ে যাওয়ার উপদেশ দিলেন। আম্মা বারবার আব্বুকে অনুরোধ করলেন, ‘তুমি বাসায় থেকো না, আশপাশে কোথাও চলে যাও। নিরাপদ জায়গায় গিয়ে দেখো পরিস্থিতি কি হয়।’ আব্বু বাসা ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালেন না। আব্বুর মুখমণ্ডলজুড়ে কি নিদারুণ বেদনার ছাপ। আব্বুর এক সতীর্থ উপদেশ দিলেন ভারতে আশ্রয় নেয়ার জন্য। আব্বু বললেন, ‘যে পথে একবার গিয়েছি সে পথে আর যাবো না।’ একাত্তরের সেই সময় ও আজকের সময়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। সেদিন বঙ্গবন্ধু জীবিত ছিলেন। তাঁরই প্রতিনিধি হিসেবে তাজউদ্দীন এক স্বাধীনতা-পাগল জাতির মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তিনি যদি পালিয়ে যান তাহলে হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীরা অপপ্রচারণার সুযোগ পাবে যে, তিনিই মুজিবকে হত্যা করিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। আব্বু বললেন, ‘বিশ্বাসঘাতক অপবাদ নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।’ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য আমাদের বাসা ঘিরে ফেললো। সামনের বড় রাস্তাজুড়ে সেনাবাহিনীর অতিকায় ট্রাকগুলো মূর্তিমান আতঙ্কের মতো একে একে বাসার সামনে জড়ো হলো। আব্বুর সঙ্গে আমরা বাসার টেলিফোনের পাশে দাঁড়ানো। সেই মুহূর্তে একজন অফিসার দ্রুতগতিতে আমাদের দোতলার বারান্দায় উঠে এলেন। ক্যাপ্টেন শহীদ হিসেবে পরিচয়দানকারী এই অফিসার আম্মাকে বললেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে আপনারা কেউ বাসার বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাইরের কেউ ভেতরে আসতে পারবে না।’ আব্বু প্রত্যুত্তর দিলেন, ‘বলুন হাউস অ্যারেস্ট। আমাদের গৃহবন্দি করলেন।’ ক্যাপ্টেন শহীদ আমাদের কাছে একটা চাকু চাইলেন। তাঁর হাতে চাকু দেওয়া মাত্রই তিনি টেলিফোনের তারটি দ্বিখণ্ডিত করলেন। তারপর ফোন-সেট সহকারে নিচে নেমে গেলেন। আমাদের নিচতলাটি একটি স্কুলকে ভাড়া দেওয়ার সময় আব্বু আব্বু সামনের রুমটি ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য খালি রেখেছিলেন (ষাটের দশকেও ঐ রুমটি তিনি অফিস, পড়ার ঘর ও বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করতেন)। সেই রুমটিকেই তারা তাদের থাকার জন্য বেছে নিল এবং বাসার ছাদের ওপর অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট-গান স্থাপন করল। তাদের ব্যাপার-স্যাপার দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত বিশাল কোনো বাহিনীর মোকাবেলা করতে যাচ্ছে। ছোট সোহেল আমার কোলে চড়ে দোতলার জানালা দিয়ে নিচের রাস্তায় জমায়েত আর্মির ট্রাকগুলো দেখে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো ‘ব’পা, মিলিটারি বন্দুক’ !

এর পর থেকে আমরা সবাই বাসায়, সবার কাছ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। সময় যেন আর কাটছে না। প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছে যেন একটি দিন। তারপর গভীর রাতে আমাদের দোতলার দরজার কলিংবেল আচমকা বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখা গেল যে হত্যাকারীদের অন্যতম মেজর ডালিম ও তার সঙ্গে অন্য একজন দাড়িয়ে রয়েছে। মেজর ডালিম জানাল যে আব্দুর নিরাপত্তার জন্য বাসায় আর্মির পাহারা বসেছে। নিরাপত্তা ঠিক আছে কি না সেটা দেখতেই তার আগমন। আব্বু তাকে ধমক দিয়ে বললেন যে তাদের আসার উদ্দেশ্য আসলে তিনি বন্দী হয়েছেন কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।

আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে আটকে পড়া সেই মামা চলে গেলেন পরদিন। আব্বু বলেকয়ে তাঁর চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। ইরিনা গেল কয়েক দিন পর। তাদের চলে যাওয়ার অনুমতি মিললেও আমাদের কারো বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না। আব্বু বহু কষ্টে নিচের তলা থেকে সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮ আগস্ট থেকে রিমি ও মিমির স্কুলে যাওয়ার অনুমতি জোগাড় করলেন। অন্তত বাইরের পরিস্থিতি রিমি স্বচক্ষে দেখে আমাদের জানাতে পারবে, যেটা আব্বু চিন্তা করেছিলেন। তাদের স্কুলে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড ঝামেলা পোহাতে হতো। তাদের ব্যাগ, বই, খাতাপত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করা হতো। স্কুল থেকে ফেরার পর আবারো একইভাবে আসতে হতো।

রিমির স্কুলের সহপাঠীদের ধারণা ছিল ১৫ আগস্টে আমাদের মেরে ফেলেছে। ওকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেখে তারা সবাই খুব চমকে গিয়েছিল। স্কুল থেকে রিমি শুনে এল যে আর্মির পাহারায় মুজিব কাকুকে টুঙ্গিপাড়ায় কবর দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় সে আর্মির পাহারা দেখল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে একটি ট্যাংক রাখা হয়েছে দেখতে পেল।

১৯ আগস্ট রিমি ১৪ বছরে পা দিল। আমার জমানো অনেক স্ট্যাম্প ও কার্ডের মধ্যে একটি কার্ড রিমির খুব পছন্দের ছিল। সেই কার্ডটি ওকে জম্মদিনের উপহার হিসেবে দিতেই সে খুশিতে আপ্লুত হয়ে উঠল। আব্বুও মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন, তিনি সচরাচর যা করেন না, কয়েক লােকমা খাবারও তার মুখে তুলে দিলেন।

২২ আগস্ট শুক্রবার সকালে আমাদের বাড়ির সামনে পুলিশের দুটি জিপ এসে থামল। এক পুলিশ অফিসার এসে আম্মুকে বললেন, স্যার আমাদের সঙ্গে আপনাকে যেতে হবে। আব্বুকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তা তিনি প্রকাশ করলেন না। আব্বু গােসল করে নাশতা খেয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন জামা-কাপড় নিতে হবে কি না। অফিসার বললেন, নিলে ভালো হয়। আপু একটা ছোট সুটকেসে কিন্তু জামা-কাপড় গুছিয়ে নিলেন। সঙ্গে নিলেন কুরআন শরিফ ও কালো মলাটের ওপর সোনালি বর্ডার দেওয়া একটা ডায়েরি, যাতে তিনি লিখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালের কথা ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তার নির্দেশনা। আব্বুর ঘরের সামনের বারান্দায় আমরা চার ভাইবোন দাঁড়িয়ে রয়েছি বিদায় দিতে। আব্বু আমাদের সবার মাথায় হাত বুলালেন। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, কী মনে হয়, কবে তোমাকে ছাড়বে ? আব্বু সিড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই এক হাত নেড়ে বললেন, Take it forever, ধরে নাও চিরদিনের জন্যই যাচ্ছি। আমরা দৌড়ে লতাগুল্ম ও ফুলে ছাওয়া দোতলার জলছাদে এসে দাঁড়ালাম। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় আব্বু বাড়ির বারান্দার ওপরের এই জলছাদে দাঁড়িয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ তার ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশে হাত নাড়তেন। আজ আমরা আন্ধুকে বিদায় দিতে তার উদ্দেশে হাত নাড়ছি। আব্বু জিপে উঠতেই রাস্তার উল্টো দিকের মুদি দোকানের সামনে দাঁড়ানো নীল বর্ণের জিনসের ট্রাউজার পরিহিত এক বিদেশি আব্বুর জিপের জানালার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তিনি আব্বুকে কী যেন বললেন, আব্বুও তাঁকে কী যেন উত্তর দিলেন। পুলিশ এবার তাকে বাধা দিল এবং আব্বুকে বহনকারী জিপটি শাঁ করে চোখের আড়াল হয়ে গেল। আমাদের মনে প্রশ্ন ছিল কে এই বিদেশি, তাঁর সঙ্গে আব্বুর কী কথা হয়েছিল। প্রায় এগারো বছর পর আলোড়ন সৃষ্টিকারী Bangladesh: The Unfinished Revolution গ্রন্থের রচয়িতা মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুল্টজ সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন। ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে আমাদের ডেমোক্রাসি বুলেভার্ডের বাসায় বেড়াতে এসে জানালেন যে তিনিই ছিলেন সেই বিদেশি যার সঙ্গে আব্বুর কথা হয়েছিল। লিফসুজ আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আপনাকে কী মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ? ‘আব্বু উত্তর দিয়েছিলেন। ‘আমার তা মনে হয় না।` আব্বু যেন ধরেই নিয়েছিলেন যে ঐ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া।’

[তাজউদ্দীন আহমদঃ নেতা ও পিতা’ বইয়ের ২১১ থেকে ২১৬ পৃষ্ঠা]



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে ঢাকাবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন