ইনসাইড আর্টিকেল

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও বিকাশ (প্রথম পর্ব)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৬ অগাস্ট, ২০২১


Thumbnail

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ সম্পর্কে বলতে গেলে স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের রাজসাক্ষীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চেয়ে বোধ করি আর কেউ ভালো উপলব্ধি করতে পারবে না। ৭১ পরবর্তী সময়ের যথার্থ ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁর লিখা “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম” বইটি আমায় প্রেরণা যোগায়। তাই এই বইয়ের অনেক অংশ সংযোজন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে শৈশব থেকেই পিতার রাজনৈতিক জীবনের সান্নিধ্য ও শিক্ষা-দীক্ষা শেখ হাসিনার মেধা-মননকেও পরিপুষ্ট করেছে। অপরদিকে রাজনীতি ছাড়াও পরিবারের বড় মেয়ে হবার সুবাদে পিতার কাছে সকল কিছুর সমূহ উত্তর ও সমাধান তিনি পেতেন, খুব কাছ থেকে অবলোকন ও উপলব্ধি করেছেন বাবা ও মার সংসার, দল থেকে শুরু করে কিভাবে সমস্ত কিছুর সঠিক দেখভাল করতেন, তাই বলাই যায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা অনেক কাছ থেকে অবলোকন করেছেন তাঁর কন্যা হাসু বঙ্গকন্যা (শেখ হাসিনা)।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম” বইটিতে তিনি বলেন,

“পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে গণতন্ত্রকে কখনই স্থিতিশীল হতে দেওয়া হয়নি। তার জন্য প্রথম থেকেই সোচ্চার হয়েছিল এই বাঙালি জাতি। ১৯৫৮ সালে সেনাপ্রধান আইয়ুব খান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে শাসন ও শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত করবার জন্য যে স্বৈরতন্ত্রের পত্তন করেছিলেন তারই বিরুদ্ধে বাংলার জনগণ দীর্ঘদিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছিল।”

“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন অব্যাহতভাবে পরিচালিত করেন। আর এজন্য তাকে অনেক অত্যাচার নির্যাতন জেল জুলুম মিথ্যা মামলার হয়রানি সহ্য করতে হয়েছে। এমন কি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অকুতোভয় নেতা দেশ ও জাতির মুক্তির সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন বলেই তার আজীবনের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি দিয়ে দেশকে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের  মধ্য থেকে গড়ে তুলে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। স্বাধীন দেশে তখনও আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা দেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করবার জন্য উঠে-পড়ে লাগে। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, জনগণের অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা, নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও সময়োচিত পদক্ষেপ সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে যখন দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন এই ষড়যন্ত্রকারীরা  চরম আঘাত হানে-১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। আর তারপরই জন্ম নেয় আইয়ুব- ইয়াহিয়া পদাঙ্ক অনুসরণে দেশ শাসনের স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। যে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য এদেশের মানুষ স্বাধীনতা এনেছে, ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে, দু লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম দিয়েছে, সেই স্বাধীনতার মূল্যবোধ নস্যাৎ করে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেওয়া হল। সামরিক শাসন জারি করে গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাংলার মানুষকে আইয়ুবী কায়দায় শাসন ও শোষণ করা শুরু হল। যেখানে স্বাধীন দেশে নতুন চিন্তা-চেতনায় আমরা প্রগতির পথে যেতে পারতাম, সেখানে সেই পিছনেই যেতে হল। এই ক্ষমতা দখলের পিছনেও ছিল এক গভীর চক্রান্ত। যে অশুভ শক্তি বাংলার মানুষের স্বাধীনতা চায়নি, বাঙালি বিজয়ী হিসেবে পৃথিবীতে সম্মানিত হোক, বাংলার মানুষের সেই বিজয়ের মুকুটকে ধুলোয় লুণ্ঠিত করবার জন্যই এই চক্রান্ত করা হয়েছিল।”

“আমরা আন্দোলন করেছি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। একটা সামরিক জান্তাকে যদি আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন করতে পারি তাহলে গণতান্ত্রিক সরকারকে তো পরিবর্তন করা আরও সহজ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা থেকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আন্দোলনকে বেশি পরিচালিত করবার চেষ্টা করা হয়েছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, মিথ্যা অপবাদ ছড়ান হয়েছে, যার ফলে হয়ত সাময়িকভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যায়। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা যায় না।”

“বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু গণআন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। তার কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস ছিল।” “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম”

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি স্বাধীন বাংলাদেশের ভিতরে কালোবাজারি, অন্তর্ঘাত, লুট, গুম, গুজব, বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা রকম মিথ্যাচার, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, আওয়ামী লীগের কর্মী হত্যা, করে দেশকে বিষিয়ে তুলে। “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম”

এ প্রসঙ্গে ১৯৭৫ এর ২৬ শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন “রাজনীতি করেছি শোষণহীন সমাজ কায়েম করার জন্য। দুঃখের বিষয়, তারা রাতের অন্ধকারে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যকে হত্যা করেছে, ৩/৪ হাজারের মতো কর্মীকে হত্যা করেছে। আর একদল দুর্নীতিবাজ টাকা-টাকা পয়সা-পয়সা করে। তবে যেখানে খালি দুর্নীতি ছিল সেখানে গত দুই মাসের মধ্যে অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আজকে কিছু করা হয়েছে।” (প্রদত্ত ভাষণের অংশবিশেষ)

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কবলে যখন রাষ্ট্রব্যবস্থা পিষ্ট তখনি ইতিহাসের এই মহানায়ক নিজ দলের ভেতর স্বচ্ছতার আয়না তৈরি করতে চেয়েছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদের এক বৈঠকে সকল মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাব দিতে বলেন, যা ছিল ইতিহাসের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্ত। জানুয়ারি মাসেই তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ব্যুরো’ (পি.আই.বি) গঠন করেন। তথ্যসূত্র: বঙ্গবন্ধু কোষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  জীবন ও রাজনীতি ১ম খণ্ড। 

‘বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামেরে একটাই লক্ষ্য ছিল। সে লক্ষ্য ছিল মূলত গরীব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। অন্তত প্রতিটি মানুষের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কাজের ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশের মতো অনুন্নত দেশ তদুপরি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যেখানে নানা সমস্যায় জর্জরিত, সেই দেশে অর্থনৈতিক কর্মসূচি সফল করে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে সমস্যা দূর করার জন্য অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই বঙ্গবন্ধু এক মঞ্চের ডাক দিয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব দিয়েছিলেন। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে চেয়েছিলেন’।“বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম”

যারা বলেন বঙ্গবন্ধু তখন একাই সকল ক্ষমতার অধিকারী হন তাদের লক্ষ্য করা উচিৎ, যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশের শুধু সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন নয় তার সাথে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মসূচি সফল করার লক্ষেই পরিবর্তনশীল সাময়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিলো যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছ ও পার্লামেন্ট দ্বারা সমর্থিত।

পরিবর্তনশীল সাময়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন এই কথাটি বুঝতে হলে পার্লামেন্ট দ্বারা সমর্থিত বাকশাল এর গঠনতন্ত্রটি পড়ে সুচারু রূপে উপলব্ধির প্রয়োজন যে কি লিখা ছিল তাতে? 

একটা মানুষ কততা বিষিয়ে উঠলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বলতে পারেন "এই ঘুনে ধরা সমাজকে আমি চরম আঘাত করতে চাই... যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানীদের সে আঘাত করতে চাই এই ঘুনে ধরা সমাজ-ব্যবস্থাকে..." । কেনই বা স্বাধীন বাংলার বন্ধু উপাধি পাওয়া মানুষটি এমন মন্তব্য করলেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে? কি ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি এই কথার মাধ্যমে? এই কথাটি উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারা যায় পরিবর্তনশীল সাময়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা। তিনি উপলব্ধি করেন তাঁকে একাই প্রবল শক্তি প্রয়োগ করে এদের নির্মূল করতে হবে। আর তাতেই আঁতে ঘা হয়ে যায় ঘুনে ধরা সমাজের।

স্বার্থান্বেষী চরম আঘাত পাওয়া সেই মহল যার ভুল ব্যাখ্যা তৈরি করে অপপ্রচার চালায়, এবং তাঁরা সফল ও হয়। তারা তাদের নিজ স্বার্থ রক্ষার লক্ষে স্বাধীনতা পূর্বেও উল্লেখযোগ্য ছিলেন বোধ করি সফলতার সহিত এখনো বিদ্যমান।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাকশাল শব্দটির পূর্ণ অর্থবহ অবস্থান স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখনো অনেকের অজানা। কারণ সে সময়কাল থেকে এই শব্দটিকেই বিষিয়ে তলে একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রি মহল। বলতে গেলে সে সময় থেকে এখনো অনেকেরই অজানা বাকশাল এর গঠনতন্ত্র ও দূরদর্শী ফলপ্রসূ পক্রিয়া সম্পর্কে।  

“আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আওয়ামী লীগকে নিয়েই করা হয়েছিল ও ক্ষমতা আওয়ামী লীগ একদল হিসেবেই ভোগ করত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যখন ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ গঠন করলেন এবং চতুর্থ সংশোধনী পাশ করলেন তখন ‘আওয়ামী লীগ’ আর একদল সরকার গঠন করলেন না। বরং সরকারের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল অবস্থান করছিল তাদের সহযোগে সরকার গঠন করলেন। বহু দলের সমাবেশ এক মঞ্চে করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে নতুনভাবে সরকার গঠন করা হল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সকল দলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল। এখানেই ছিল বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা এবং উদার বিশাল হৃদয়ের পরিচয়।” “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম”

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় বলেন, “…কিন্তু একটা কথা এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। ভয় পাবেন না যে জমি নিয়ে যাব। তা নয়। পাঁচ বৎসরের প্ল্যানে বাংলাদেশের পঁয়ষট্টি হাজার গ্রামে একটি করে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এই কো-অপারেটিভের জমির মালিকেরা থাকবে। কিন্তু তার ফসলের অংশ সবাই পাবে। প্রত্যেকটি বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ – যে মানুষ কাজ করতে পারে, তাকেই কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এগুলি  বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফারটিলাইজার যাবে তাদের কাছে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস গ্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিলে যারা টাউট আছেন তাদেরকে বিদায় দেওয়া হবে।…’

আজকে আমার একটি মাত্র অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে, আমি বলেছিলাম ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে, জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে- এক নম্বর কাজ হবে, দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। গণ-আন্দোলন করতে হবে, আমি গ্রামে গ্রামে নামব। এমন  আন্দোলন করতে হবে যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান করে দেয় তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

দ্বিতীয় কথা, আপনারা জানেন আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয়, জাপানের এক একর জমিতে তার তিন গুণ বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সে জমিতে ডবল ফলাতে পারব না, দ্বিগুণ করতে পারব না, কেন ভিক্ষা করতে হবে!
আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের কাছে, যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যান্ট পরা কাপড় পরা ভদ্রলোক, তাদের কাছেও বলতে চাই, জমিতে যেতে হবে। ডবল ফসল করুন। প্রতিজ্ঞা করুন আজ থেকে ঐ শহীদদের কথা স্মরণ করে ডবল ফসল ফলাতে হবে।

ভাইয়েরা আমার, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে প্রত্যেক বৎসর আমাদের ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হল ৫৫ হাজার বর্গমাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে তাহলে ২৫/৩০ বৎসরে বাংলার কোন জমি থাকবে না হালচাষ করার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সে জন্য আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে। এটা হল তিন নম্বর কাজ। এক নম্বর দুর্নীতিবাজদের খতম করা। দুই নম্বর হল কলকারখানায়, ক্ষেতেখামারে প্রোডাকশন বাড়ানো। তিন নম্বর হল পপুলেশন প্ল্যানিং। চার নম্বর হল জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য এক দল করা হয়েছে।

আমরা তো কলোনি ছিলাম। দুই শ’ বছর ইংরেজদের কলোনি ছিলাম। পঁচিশ বছর পাকিস্তানিদের কলোনি ছিলাম। আমাদের তো সব কিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু তারপর বাংলার জনগণ কষ্ট করে কাজ করতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু তারা তাদের এগোতে, কাজ করতে দেয় না। আরেক বিদেশি সুযোগ পেল। তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে বাংলার মাটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করল। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করবার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার চোখের সামনে মানুষের মুখ ভাসে। আমার দেশের মানুষের রক্ত ভাসে। আমার চোখের সামনে আমারই মানুষের আত্মা। আমার চোখের সম্মুখে সে সমস্ত শহীদ ভাইয়েরা ভাসে, যারা ফুলের মতো ঝরে গেল, শহীদ হলো। রোজ কেয়ামতে তারা যখন বলবে- আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম, তোমরা স্বাধীনতা নস্যাৎ করেছ। তোমরা রক্ষা করতে পার নাই, তখন তাদের আমি কি জবাব দেব?

আরেকটি কথা, কেন সিস্টেম পরিবর্তন?  সিস্টেম পরিবর্তন  করেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য। সিস্টেম পরিবর্তন করেছি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য। কথা হল, এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অফিসে যেয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়, সাইন করিয়ে নেয়, যেন দেশে সরকার নই। দেখলাম, অনুরোধ করলাম, কামনা করলাম, কেউ কথা শোনে না,  চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।

ভাইয়েরা-বোনেরা আমার, আজকে যে সিস্টেম করেছি তার আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিল না। আমি বিশ্বাস করি না ক্ষমতা বন্দুকের নলে। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগণ যেদিন  বলবে ‘বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দাও’, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার রাজনীতি করে নাই। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে শোষণহীন সমাজ কায়েম করার জন্য। দুঃখের বিষয়, তারা রাতের অন্ধকারে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যকে হত্যা করেছে, ৩/৪ হাজারের মতো কর্মীকে হত্যা করেছে। আর একদল দুর্নীতিবাজ টাকা-টাকা পয়সা-পয়সা করে। তবে যেখানে খালি দুর্নীতি ছিল সেখানে গত দুই মাসের মধ্যে অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আজকে কিছু করা হয়েছে।

শিক্ষিত সমাজের কাছে আমার একটি কথা, শতকরা কতজন শিক্ষিত লোক? তার মধ্যে শতকরা পাঁচজন আসল শিক্ষিত। শিক্ষিতদের কাছে আমার একটি প্রশ্ন, আমি এই যে কথা বলছি, আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা?  ব্ল্যাক মার্কেটিং করে কারা?  বিদেশি এজেন্ট হয় কারা?  বিদেশে টাকা চালান করে কারা?  হোর্ড করে কারা?  এই আমরা, যারা শতকরা পাঁচজন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যে আছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্র সংশোধন করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। দুর্নীতিবাজ শতকরা পাঁচজনের মধ্যে, এর বাইরে নয়।” “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম”

৩০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ধানমন্ডিতে ৩২ নং সড়কের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অসুস্থ অবস্থায় শেখ লুৎফর রহমানকে ১২ মার্চ ১৯৭৫ খুলনা থেকে নিয়ে এসে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর পিতা মৃত্যুকালে যে টাকা রেখে গিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু সেটা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলামকে দেন এবং তা পিজিতে গরীব মেধাবীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য ‘শেখ লুৎফর রহমান ফান্ড’ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সামরিক স্বৈরশাসকরা এক লক্ষ টাকার সেই ফান্ডটি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর স্থগিত করে রাখে।  তথ্যসূত্র: আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু

১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ এই সময়ের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি জাতিকে স্বাধীনতার পূর্ণ সাধ গ্রহণের লক্ষ্যে বহির্বিশ্ব সহ দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। আজীবন লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দলমত নির্বিশেষে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির আশায়। পূর্বের বিশ্বাস আর নীতিতে অটল থেকে এই মহান নেতা সর্বস্তরের অভূতপূর্ব সাড়া পান গুটি কয়েক স্বাধীনতাবিরোধী লোভী ও স্বার্থান্বেষী মহল ব্যতীত। স্বল্প সময়ের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। চোরাকারবারি বন্ধ হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে কৃত্রিম খাদ্য সংকট নিয়ন্ত্রণের ফলে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় চলে আসে। 

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন প্রজন্মের প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার আপামর জনতা যখনি অগ্রসর হতে থাকে ঠিক তখনি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বাঙালির স্বপ্নগুলো নস্যাৎ করে দেয়া হয়। সেদিন স্বাধীনতাকামী সোনার বাংলার সেই সোনার মানুষগুলো ভাবতেই পারে নি, যে বীর বাঙালিকে বর্বর পাকিস্তানিরাও হত্যা করতে তাদের আত্মা কেঁপে উঠত, তাঁকেই এই বাংলার বুকে নৃশংসভাবে নিস্তব্ধ করে দেয়া হবে। স্বাধীন বাঙালি আবার নিজ গৃহে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে স্বপ্নহীন জাতিতে পরিণত হয়।

সাযিদ আল মামুন
লেখক ও গবেষক, সদস্য, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন