নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১২ অগাস্ট, ২০২১
পারিবারিক ব্যাপার
ফারুক একজন হেমলেট নয় যে বিশ্বাস করে তার জন্মই হয়েছে ‘সব কিছুই সঠিকভাবে করার জন্যে’ সে ছিল ঠান্ডা এবং হিসেবী। তার কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছে যে, তার আইকিউ (উপস্থিত বুদ্ধি) অসাধারণ উঁচু। হিটলারেরও আইকিউ (উপস্থিত বুদ্ধি) ছিল অসাধারণ উঁচু।
ফারুক বলেছে, সে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় নয় বরং রশীদের পরামর্শনুসারেই মোশতাককে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায় মুজিবকে হত্যা করে অন্য যে কাউকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার জন্য সে অনুতপ্ত নয়। তার দৃষ্টি ছিল রাষ্ট্রপতির পদে।
যখন সে শিশু ছিল তখন একজন আত্মীয় উৎসাহ দেয়ার সময় ফারুককে ‘ভ্রমর’ বলে ডেকেছিল। ডাকনামটা তার ভালমত যুতসই হয়েছিল এবং তা তাকে আত্মগরিমায় স্বতন্ত রেখেছিল।
তার চূড়ান্ত পর্যায়েও ‘আমি’ খুব বেশী উচ্চারিত হয়ঃ ‘আমি অভ্যুত্থান পরিচালনা করেছি---আমি মুজিবকে হত্যার আদেশ দিয়েছি, আমি মুজিবের মৃত্যুর আদেশ দিয়েছি....রশীদ তার চূড়ান্ত পর্যায়েও উচ্ছ্বাসহীন থাকে, কিন্তু সেও শুধু নিজের কথাই বলে। ফারুক কিংবা রশীদ কেউই ‘আমরা’ ব্যবহার না করলেও তারা দু’জনই মুজিব হত্যার ছক এঁকেছিল। ডালিম যখন ঘোষণা করে মুজিব সরকারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তখন সে গর্ব ভরে নিজের নাম ঘোষণা করে। রশীদ মুজিবকে গুলী করতে ব্যর্থ হওয়ায় হুদাকে নগণ্য ভাবে। হুদা ফারুকের ট্যাংকের উপর বসে আদেশ দেয়ার দাবীকে উপহাস করে। অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদে রমতদ্বৈততা দেখা দেয়, তাদের মধ্যে আগে বা পরে বিরোধ দানা বাঁধা অবশ্যম্ভাবী।
১৯৭৪ সালের গ্রীস্মকাল থেকে ফারুক এবং রশীদ মুজিবকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা ছিল ভায়রা ভাই এবং ঢাকা সেনানিবাসে পাশাপাশি বাড়ীতে বাস করত। তারা মিলিত হবার অবাধ সুযোগ পায় এবং এক বছর যাবৎ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মুজিব হত্যার ছক আঁকে।
ফারুক ও রশীদ তাদের নারকীয় পরিকল্পনা সম্পাদন করার ব্যাপারে আস্থাশীল ছিল। তারা ছিল উচ্চাভিলাসী তরুণ এবং বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করার পক্ষপাতী কিন্তু তারা ছিল চতুর এবং অবিলম্বে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিক হবে এটা তারা ভালভাবেই জানত।
তাদের একজন প্রথম সারির ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ল। রশীদ বলেছে তার পছন্দ ছিল মুবি সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী মোশতাক। মোশতাক যেতার মামা এই সত্যটা সে চেপে যায়।
ফারুক তার ভায়রার পরামর্শে মোশতাককে প্রথম সারির ব্যক্তি বানাতে সম্মতি জানায়।
এটা ছিল একটা পারিবারিক সম্পর্ক
তারুণ্যের প্রতীক রশীদ দাবী করেছে যে, সে মোশাতাককে অভ্যুত্থানের বড়জোর দু’সপ্তাহ আগে পরিকল্পনায় এনেছিল। কে কাকে এনেছে?
মোশতাক মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছিল, কিন্তু সে অতি কাপুরুষোচিতভাবে তার কাজ করল। তার সাহসের অভাবের জন্য সে ছলনার আশ্রয় নিল। ফারুক ও রশীদ বিচক্ষণ হলেও তারা মোশতাকের মতো ফন্দিবাজের সমক্ষক ছিল না।
ষড়যন্ত্রকারীদের বেশী পছন্দনীয় ছিল কয়েকজন উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ই অভ্যুত্থান সংঘটিত করার ব্যাপারে। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যন্ত্রের মতো আচরণ করবে মোশতাক বিশ্বাস করেনি। যদি অভ্যুত্থান সফল হয় তবে কর্মকর্তারা তাকেও হটিয়ে দিত। কিন্তু রশীদ ও ফারুকের সাথে লেনদেন অত্যন্ত সহজ। সে রশীদকে এমনভাবে মাথায় বুদ্ধি দিল যাতে করে রশীদ ভাবে যে তারা মোশতাকের খুব আপন।
হয়তোবা একারণে ডালিম মুজিব সরকারকে উৎখাতের ঘোষণা দেয়ার সময় গর্বের সাথে নিজের পরিচয় দিয়েছিল। এতে বাংলাদেশের বাইরের অনেকেই প্রথমে বিশ্বাস করেছিল যে, সম্ভবত ডালিমই অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে।
কলকাতার সাংবাদিকরা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংবাদ প্রেরণ করেছে এবং পরবর্তীতে ঢাকা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে-তাদের এই ভুলটা করা উচিত হয়নি। তবুও ১৫ আগষ্টের রক্তাক্ত অধ্যায়ের একমাস পরেও কলকাতার কিছুকিছু সাংবাদিকদের কল্পনাপ্রসূত গল্প এক পর্যায়ে যা এই অভ্যুত্থানটিকে প্রায় সম্মানের পথে নিয়ে গিয়েীছল-তারা ( যেসব সাংবাদিকরা) প্রত্যেকেই হয় নিন্দনীয়ভাবে নতুবা অসৎ বিপদগামী। কিন্তু তাদেরকে জ্ঞানী মনে করার ফলশ্রুতিতে হয়তোবা তাদের এই খবরগুলো অনেক ক্ষেত্রে গৃহীত হয়।
অলীক কাহিনী সত্য হিসেবে গৃহীত হলে এটি খুব ক্ষতিকর হতে পারে। সাংবাদিকদের কিছু কিছু মনগড়া গল।প ১৯৭৫ সালে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীকালে বিচারের পথে অনেক মেঘের সৃষ্টি কলে। হয়তোবা এসব গল্পগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই তৈরী করা হয়েছিল।
কলকাতার ‘সানডে’ পত্রিকা ১৯৭৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম পাতায় তার বাড়ীর লনে তোলা ডালিম এবং তার ‘সুশ্রী স্ত্রী’ তাসনিমের ছবিসহ প্রচ্ছদ কাহিনী প্রকাশ করে। তাসনিম তেমন সুন্দরী ছিল না বলে প্রতিবেদক বলেন, কিন্তু তার চেহারাই মনে হয় ১৫ আগষ্টের ভোরের সংঘটিত অভ্যুত্থানের ট্যাংকগুলিকে অগ্রসর হতে উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। তাসনিম মুজিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গাজী গোলাম মোস্তাফার ছেলেদের হাতে তার বিয়ের অনুষ্ঠানে অপমানিত হয়। গল্পটি এগিয়ে চলল। বিচার চেয়ে ডালিম এবং তার স্ত্রী তাসনিম বন্ধুবান্ধব পরিবেষ্টিত হয়ে শেখের বাড়ীতে যায় সেখানে যেতে গাজী এবং তার ছেলেরা অস্বীকার করে, এর পূর্বে তারা গাজীর বাড়ী তছনছ করেনি। মুজিব গাজীদের কীর্তির জন্য রাগ করলেন, কিন্তু এব্যাপারে কিছুই করেন না। মেজর ডালিম বেরিয়ে এসে ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করে। সেই প্রতিজ্ঞা পরে বাস্তবে রূপ নিল।
এই লেখনীতে ডালিমের জন্য লেখকের সহানুভুতি এবং প্রশংসা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। নিশ্চিতবাবে বর ও কনে তাদের বিয়ের রাতে মুজিবের বাড়ীতে যেতে পারে না।
ডালিম ও তাসনিমের বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৪ সালে নয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সে আহত হয়েছিল। এ কারণে এটি তাকে যুদ্ধ হতে দূরে রাখে, কিন্তু কলকাতায় কর্মরত একজন বাঙালী কূটনীতিকের মেয়ে তাসনিমকে জয় করার সময় দেয়।
সানডে পত্রিকায় এঘটনার বিবরণ এভাবে দেয়া হয় যে, ডালিমের বোনের বিয়েতে গাজী গোলাম মোস্তফার এক ছেলে উচ্ছৃংখল আচরণ করে। সে ডালিমের বোনকে উত্যক্ত করে। যার জন্য ডালিম তাকে চড় মারে।
গাজী ডালিমকে মুজিবের বাড়ীতে নিয়ে যায়, তখন তাসনিমও তার স্বামীর সাথে ছিল।
সবসময় বিরোধ নিস্পত্তিকারী মুজিব-গাজী এবং ডালিমের হাত মিলিয়ে দিলেন ও বিরোধ দুর করে খুশী হলেন এবং উপস্থিত সবাইকে মিষ্টি খেতে দিলেন।
তখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে।
কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেস হলো না।
কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা গাজীর নয়া পল্টনের বাড়ী আক্রমণ করে তছনছ করে এবং হুমকি দেয় যে ডালিমের কিছু হলে শহরে রক্ত বয়ে যাবে। অনেকে বলেন, ডালিম নিজেই ট্রাকে করে গাজীর বাড়ীতে সৈন্য এনেছিল, কিন্তু তার বন্ধুরা কি করেছেতার জন্য সে দায়ী নয় বলে দাবী করে। সে বলে, গাজী আমাকে জোর করে নিয়ে যায়। তাই আমি কিভাবে এটি করতে পারি?
সেনাবাহিনীর জেনারেল হেড কোয়ার্টার (জিএইচ কিউ) গাজীর বাড়েিত তছনছের ঘটনা তদন্ত করে এবং এর সাথে যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিল তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেয়। কারণ শৃংখলাই সেনাবাহিনীর আইন। যেসব কর্মকর্তা নিজে হাতে আইন তুরে নিয়েছে তাদের বিনা শাস্তিতে যেতে দেয়া যায় না।
মুজিবের কয়েকজন বন্ধু এই চাকরিচ্যুতি থামানোর জন্য মুজিবের কাছে অনুরোধ করেন, কিন্তু এব্যাপারে মুজিব ছিলেন অটল। তিনি বলেন, “এটা সেনাবাহিনীর সদর দফতরের সিদ্ধান্ত”।
ডালিম, তার স্ত্রী তাসনিম, শাশুড়ী হেনা মুজিবের বাড়ীতে ঘনগন যাতায়াত করত এমকি ডালিম চাকরি থেকে অপসারিত হবার পরেও।
তাসনিমের মা স্বাধীনতার পর পুনরায় পড়াশুনা আরম্ভ করে। সে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন ছাত্রী ছিল। শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা সকলেই তাকে তার বয়সের কারণে তাকে হেনা ভাবী বলে ডাকতে পছন্দ করতেন। সে ছিল বেগম মুজিব এবং হাসিনা দু’জনেরই বান্ধবী। মুজিবের বাড়ীতে সে ঘন্টার পর ঘন্টাকাটাতো।
ডালিম তার মায়ের সাথে থাকতো। সে যখন বিদ্যালয়ের ছাত্র তখন তার মা মারা যায়। তার মৃত্যু তার জন্যে ছিল শোকাবহ, এবং একটি যুবতী মেয়েকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নিয়ে আসায় সে তার পিতার সাথে দীর্ঘদিন সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রেখেছিল।
ডালিম বেগম মুজিবকে বলত, “আমি যখন বালক ছিলাম তখন আমি মাকে হারিয়েছিল। এখন আপনিই আমার মা।” সে বাঙালীর প্রথানুযায়ী বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে বেগম মুজিবের পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা দেখতো।
সে তার অনেক নিজস্ব সমস্যা নিয়ে বেগম মুজিবের কাছে আসত। তার কোন সন্তান ছিল না এটিই ছিল তার চিন্তার বিষয়। বেগম মুজিব তাকে সান্তনা দিয়ে বলতেন, “দুই বা তিনবছর হয়েছে তুমি বিয়ে করেছ। তোমার সন্তান হবে।” আশ্বাস নিশ্চিত না হওয়ায় একসময় তিনি ( বেগম মুজিব) একজন চিকিৎসকের নাম করে তার সাথে তাকে এবং তার স্ত্রীকে আলোচনা করতে পরামর্শ দিলেন।
আপাত: দৃষ্টিতে মনে হয় ডালিম বেগম মুজিবের প্রতি অনুগত ছিল।
সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অপসারণের পর ডালিম যখন ব্যবসা শুরু করে মুজিব তখন তাকে সাহায্য করেন। মুজিব এবং ডালিম দু’জনই মাঝে মাঝে এক সাথে মুড়ি খেতেন। যা ছিল দু’জনেরই প্রিয় খাদ্য। ডালিম অনুভব পোষণ করতো যে তার সাথে চরম ভুল করা হয়েছে।
খুব স্পষ্টভাষী রেহানা একদিন ডালিমকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, কখন আপনি আমার বাবার নানা ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করবেন, আপনি কেন আমাদের বাসায় আসেন? হেনা তার জামাতাকে র্ভৎসনা করে বলে “ তোমার দায়িত্বহীন কিচু বলা উচিত নয়।”
ডালিম রেহানাকে বলে “যখন সময় আসবে তখন তুমি জানতে পারবে কারা তোমাদের বন্ধু।”
ডালিম কয়েকদিন মুজিবের বাড়ী থেকে দূরে রইল।
যদি ডালিম বিয়ে অনুষ্ঠানের রাতেই ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে প্রতিশোধ নিয়ে চেয়েছিল তবে কেন সে গাজী গোলাম মোস্তফাকে ক্ষমা করল? ডালিম তার কয়েকজন বন্ধুকে বলেছে,“তাকে হত্যা করে আমি আমার হাত নোংরা করতে চাইনি।”
গাজী গোলাম মোস্তফা ছিলেন অজনপ্রিয় এবং সবসময় যে কোন বিপদ ঘটিয়ে নিজের চামড়া বাঁচানোর জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতেন। ডালিমের হাতে ছিল এর চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ডালিমকে যারা খুব ঘনিষ্ঠবাবে জানত তাদের মধ্যে একজন পরামর্শ দিয়েছিল যে, সে মুজিবের ভেতর তার পিতার বিকল্প দেখতে, যাকে সে একসময় হত্যা করতে চেয়েছিল। ডালিমের ভেতর প্রচন্ড প্রতিহিংসা ছিল এবং অনেক সময় সে বিবেকহীন মানুষের মতো আচরণ করতো। তার এক বন্ধুর সাথে যখন একটি মেয়ে প্রতারণা করে তখন সে মেয়েটির হোষ্টেলে যায় এবং শুধু সে মেয়েকেই নয়, তার বন্ধুদেরও হত্যার হুমকি দেয়।
তা সত্ত্বেও মুজিব হত্যা ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সতর্ক পরিকল্পনার অংশ এবং সম্মানের কোন বিষয় নয় কিংবা একটি মনস্তাত্ত্বিক নাটকও ছিল না।
মুজিব ও তার পরিবারের হত্যাকান্ডের পর তাসনিম কিছু দিনের জন্য বিকৃত মস্তিস্কের মতো আচরণ করে। সবাই হত্যার মানসিকতায় থাকা মেজরদের না রাগানোর জন্য সতর্ক ছিলেন। কিন্তু তাসনিম কোন আমলেই দিল না; বরং মেজরদের দেখলেই সে থুথু ফেলত।
বেশ বড়মাপের চোরাচালান হচ্ছিল এবং কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিও এর সাথে জড়িত ছিল। চোরাচালান দমনে সরকারী কঠোর প্রচেষ্টা ছিল অকার্যকর। ১৯৭৪ সালে সশস্ত্র বাহিনীকে চোরাচালান দমন করার জন্য সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এটি ছিল সাংঘাতিক রাজনৈতিক ভুল।
সরকার এর মাধ্যমে এই অনুভূতি সৃষ্টি করে যে, বেসামরিক প্রশাসন যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী সেখানে সফল হবে।’ স্বাধীনতার এক বচর পর ১৯৭২ সালের শেষ দিকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের প্রভাব রাখতে শুরু করে।
১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ভোটের ৭২ শতাংশ ভোট পায়। কিন্তু ঢাকা সেনানিবাসে প্রদত্ত ভোট হয় এর ঠিক বিপরীত।
সূত্র : কারা মুজিবের হত্যাকারী? লেখক- এ,এল, খতিব, পৃষ্ঠা ৪৮-৫১
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা
করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।
পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস
তৈরি হতে পারে।
এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে
পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী
দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা
করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে
যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।
ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে।
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে
পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের
মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে
ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও
আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ
তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই
এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু
১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু
করে।
ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ
ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা
অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ
এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।
ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড
শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয়
দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল
করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ
সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।
মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের
বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান
রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন
এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে
সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা
গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র
বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের
মাধ্যমে হয়েছিল।"
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও
ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের
যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি।
আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক
সংযোগ নেই।"
মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন
নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন
করে না।
মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে
কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ
মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।
মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।
বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।
আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।
মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।
মশা. মাছি রাজধানী জনজীবন সিটি কর্পোরেশন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।