ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

টিপু সুলতান এবং সিরাজ উদ-দৌলার সাথে তুলনা ইমরান খানের

প্রকাশ: ১০:২০ এএম, ১১ এপ্রিল, ২০২২


Thumbnail টিপু সুলতান এবং সিরাজ উদ-দৌলার সাথে তুলনা ইমরান খানের

পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। কিন্তু তাঁর আমলে পাকিস্তানের অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না। ইমরান সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা লাখো পাকিস্তানিকে দরিদ্র করেছে। ইমরান ক্ষমতায় আসার বছর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের মোট দেশজ উৎপাদন ছিল ৩১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে তা ২৯ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ সময় ইমরানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, পাকিস্তান নরওয়ে কিংবা ডেনমার্ক হয়নি। বরং পাকিস্তানিদের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশিদের তুলনায় কমেছে। 

ইমরান খানের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি আর তার বিশ্বকাপ জয়ের ফেসভেলু তাকে ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয় পেতে সহযোগিতা করেছিলো। তবে তার এই জয় নিয়েও নানা রকমের গুঞ্জন শোনা যায়। অনেকে তার জয়ের পিছনে পাকিস্তানের ক্ষমতার পেছনের চালক সেনাবাহিনীর সরাসরি আশীর্বাদের কথা উল্লেখ্য করে। তবে তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি খোলন বদলানোর একক চেষ্টা শুরু করেন। তিনি পশ্চিমা ব্লক বিশেষ করে আমেরিকার বলয় থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে রেখে চীনের প্রতি একটু বেশি ঝুঁকে গিয়েছিলেন যা তাকে পশ্চিমের বিশেষ নজরে ফেলে দেয়। পশ্চিমা বিরোধী এই নীতির ফলেই তাকে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়তে হয়েছে এবং হেরে বিদায় নিতে হয়েছে বলে ইমরান খান সহ তার দলের নেতা কর্মীরা শুরু থেকেই সরব। 

তবে ইমরান খান যে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে চলেছেন সেই অভিযোগ ইতিহাসের দুই চরিত্র টিপু সুলতান ও নবাব সিরাজ উদ–দৌলার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাঁরা দুজনই দেশপ্রেমিক ছিলেন। জীবনের শেষ অবধি পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েছেন। ইমরান খান যদি রাজনীতির মাঠে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে না পারেন তবে অনেকেই হয়তো তাঁকে টিপু সুলতান কিংবা সিরাজের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করবেন।

ক্ষমতা গ্রহনের শুরুর দিকে ইমরান খান তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বেশ কঠোরভাবে দমন করতে পেরেছিলেন। তখন মনে করা হয়েছিল, ইমরান খানের বিরোধীদের ঘুরে দাঁড়াতে কঠিন হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক উল্টো। বিরোধীরা শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, একজোট হয়ে ইমরান খানের ওপর চরম আঘাত হেনেছেন। তাঁকে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ছুঁড়ে ফেলেছেন।

ইমরান খান দেশের কোনো খাতেই সংস্কারের ছোঁয়া রেখে যাননি। যদিও ক্ষমতায় আসার আগে তিনি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বস্তুত তাঁর আমলে রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভ– আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব হয়েছে। তাই ইমরান খানের পর যিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন তাঁকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন ইমরান। শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিবাজ দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় ২০১৮ সালে পাকিস্তান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪০তম ছিল। সর্বশেষ তালিকায় দেশটির অবস্থান ১২৪। এক্ষেত্রে ধীরে হলেও পরিবর্তনের পথে হাঁটছিলেন ইমরান খান। তাঁর এই পরিণতি কীভাবে হল? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইমরান খানের রাজনৈতিক উত্থান ও যাত্রা পথের দিকে নজর দিতে হবে।

ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে

১৯৯২ সাল, ইমরান খানের জীবনে অন্যতম সেরা একটি বছর। বয়স ৪০ বছর ছুঁতে যাওয়া ইমরানের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতে নেয় পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দেশ–বিদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা ইমরানের। বিশ্বকাপ জয়ের পর খেলা থেকে অবসর নেন তিনি। ওই সময়ই জীবনে নতুন একটি অধ্যায়ের যাত্রা শুরু হয় তাঁর। তা হলো– রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা। স্বপ্ন ছিল, এক দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন।

বিশ্বকাপ জয়ের পর নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তহবিল গঠনে নামেন ইমরান খান। উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর মায়ের নামে একটি ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলা। এর আগে ১৯৮৫ সালে তাঁর মা শওকত খানম ক্যানসারে মারা যান। তাঁর তহবিলে লাখো মানুষ অর্থ দান করেন। ওই সময় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। পরবর্তীতে নওয়াজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। ইমরানের ক্যানসার হাসপাতাল চালু করতে ব্যাপক সহায়তা ও অর্থ প্রদান করেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে হাসপাতালটি চালু হয়।

ওই সময় ইমরান খানকে অনেকেই ‘বয়স্ক বাঘ’ বলতে শুরু করেন। কেননা তিনি বয়সের কারণে ইতিমধ্যে খেলা ছেড়েছেন। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনছেন ব্যক্তি জীবনেও। খেলোয়াড় জীবনে ইউরোপীয় ভাবাদর্শের ইমরানের ‘প্লে বয়’ ইমেজ ছিল। কিন্তু রাজনীতিতে এসে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ইমরান কয়েক দশকের ওই ভাবমূর্তি পুরোপুরি বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন। 

ইমরান বিশ্বাস করতেন, আধুনিক শিক্ষা তাঁকে পশ্চিমের দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করেছে। সে অনুযায়ী তিনি পাকিস্তানের পরিবর্তন আনার পথ খোঁজেন। তাঁর এমন মনোভাব সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ইমরান সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। তখনই পাকিস্তানের মানুষ বুঝেছিল, ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ নিয়ে ইমরান রাজনীতি শুরু করছেন।

দল গঠনের সূচনা

সময়টা ১৯৯৪ সালের শেষ দিক। কখন ইমরান রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন, এমন অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় ইমরান মৈত্রী গড়ে তোলেন জেনারেল হামিদ গুল ও মোহাম্মদ আলি দুররানির সঙ্গে। হামিদ গুল পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। আর আলি দুররানি জামাতে ইসলামের তরুণ শাখা ‘পাসবান’–এর প্রধান ছিলেন। আফগান জিহাদিদের সঙ্গে দুজনেরই সুসম্পর্ক ছিল।

তবে রাজনৈতিক দল গঠনের আগের এই মৈত্রী প্রায় তিন দশক ধরে ইমরানকে ভুগিয়েছে। দেশে–বিদেশে তাঁর নামে একটি রটনা রটে, ইমরানের সঙ্গে পাক সেনাবাহিনীর সখ্য রয়েছে। এমনকি ক্ষমতায় আসার আগ মুহূর্তে রটেছিল, ইমরান খান সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি ‘পুতুল সরকারের’ প্রধান হবেন। আসল ক্ষমতা পর্দার আড়ালে থাকা সেনাবাহিনীর হাতে থাকবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ইমরান নিজেও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

যদিও ওই সময় ইমরান বুঝেছিলেন, আসল পরিবর্তন আনতে গেলে পাকিস্তানিদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত ক্ষমতার সুবিধা ভোগ করা অভিজাতদের প্রভাব কমাতে হবে। তাই তিনি মধ্যবিত্তদের রাজনীতি সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে মধ্যবিত্তদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

১৯৯৫ সালে ইমরানের ব্যক্তিজীবনে বড় পরিবর্তন আসে। তিনি বিয়ে করেন জেমিমা গোল্ডস্মিথকে। ২২ বছর বয়সী জেমিমা যুক্তরাজ্যের একজন ধনকুবেরের মেয়ে। এর পরের বছর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা। রাজনৈতিক দল গঠন করেন ইমরান। নাম দেন পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)।

শুরুটা ভালো ছিল না

রাজনৈতিক দল গঠনের এক বছরের মাথায় সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন ইমরান। উচ্চাশা ছিল অনেক, তবে ফলাফল হতাশাজনক। একটি আসনেও জিততে পারেনি পিটিআই। ওই নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন) ইমরানের নতুন দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়তে চেয়েছিল। ৩০টি আসনে পিটিআইয়ের প্রার্থীদের সমর্থন দিতে চেয়েছিল। তবে ইমরান সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফলাফল পিটিআই পায় মোট ভোটের মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আসন শুন্য। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের পিএমএল–এন ও বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৪৬ শতাংশ ও ২২ শতাংশ ভোট পায়।

ইমরান খান ১৯৯৯ সালে আল্লামা তাহিরুল কাদরির নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী ইত্তেহাদে যুক্ত হন। পিপিপিসহ ১৯টি বিরোধী দলের জোট ছিল এটি। এর পরেই পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। ক্ষমতায় বসেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। রাজনীতিকদের অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে রাজনীতিকদের সুযোগ দেন মোশাররফ। নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। ওই সময় গোয়েন্দারা পারভেজ মোশাররফকে বলেছিল, নির্বাচনে পিটিআই ১০টির বেশি আসন পাবে না। এর পরেও ইমরান খানকে ৩০টি আসন দিয়ে তাঁর সঙ্গে জোট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেনাশাসক মোশাররফ।

অন্যদিকে ইমরানের ধারণা ছিল, তাঁর দল শতাধিক আসনে জিতবে। তাই সেনাশাসকের ওই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। ভোটের ফলে দেখা যায়, পিটিআই মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দলভিত্তিক হিসাবে পিটিআইয়ের অবস্থান ১০। ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচনে সবচেয়ে ভালো ফল করে পিপিপি। মুসলিম লিগ–কায়েদ (পিএমএল–কিউ) পায় ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে পিএমএল–এন পায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। মোশাররফের আমলের ওই নির্বাচনে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যান ইমরান। ওই সময় নবগঠিত পিএমএল–কিউ সরকার গঠন করে।

ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু

পরিবর্তনের শ্লোগান নিয়ে শুরু করলেও শুরুতে ধুঁকতে হয়েছে ইমরানের দল পিটিআইকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পিপিপি সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় ইমরানের দল। একইসঙ্গে পাঞ্জাবে জোট সরকারের সঙ্গী হয় পিটিআই।

কেন্দ্রে পিপিপি সরকার বেশ সমালোচিত হয়। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অভিযোগ ডালপালা মেলেছিল। এমনকি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ায় পিপিপি সরকার। তবে সব ছাপিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় বেনজির ভুট্টোর নিহত হওয়ার ঘটনা পিপিপিকে চরম সংকটে ফেলে দেয়। দলটি একজন ‘ক্যারিশমাটিক’ নেতাকে হারায়। 

এ সুযোগ কাজে লাগান ইমরান। জনগণের কাছে আগে থেকেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল। এবার তরুণদের মন জয়ের উদ্যোগ নিতে শুরু করেন তিনি। গত দশকে পাকিস্তানে তরুণ ভোটারদের সংখ্যাও বাড়ছিল। ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি: রাইজ টু পাওয়ার’ নামে একটি বই লিখেছেন ফিলিপ ই জোনস। ওই বইয়ে তিনি লিখেছেন, সামাজিক পরিবর্তনে পিপিপির তুলনায় পিটিআইয়ের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।

পিপিপির নেতাদের বেশির ভাগ সামন্তবাদী। অন্যদিকে পিটিআইয়ের যাত্রা শুরু হয় নব্য উদারবাদী পুঁজিবাদের আমলে। তাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের যাত্রা দলটির নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, যা তরুণ ভোটারদের মন জয়ে কাজে লেগেছে। এর ফল আসে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে। পার্লামেন্টে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোট পায় পিটিআই। ১৪৯টি আসনে এককভাবে জয় পায় দলটি। রাজনীতিতে আসার প্রায় দুই যুগ পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। তবে তাঁর নেতৃত্ব এতোটাই প্রবল যে, দলে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি হয়নি। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিটিআই মানেই ইমরান খান আর ইমরান খান মানেই পিটিআই।

‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার স্বপ্নভঙ্গ

২০১৩ সালের পর থেকে পিটিআইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। পরবর্তী সময়ে ইমরান খান পাকিস্তানের সব সমস্যাকে একক ট্যাগলাইন ‘দুর্নীতিতে’ আটকে ফেলেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো ‘ক্রুসেড’ শুরুর ঘোষণা দেন তিনি। এই লড়াইয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমও তাঁর পাশে দাঁড়ায়। বলা হয়, ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ হবে নৈতিকভাবে মদিনা আর উন্নয়নের দিক থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর (নরওয়ে, ডেনমার্ক) মতো। আরও বলা হয়, ক্ষমতার কেন্দ্রে যদি একজন যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত নেতা থাকেন, তাহলে পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত থাকবে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

কিন্তু ইমরানের আমলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। পরিবর্তন আসেনি। বরং ইমরানের আশপাশের লোকজনের নামে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেননি ইমরান। এমনকি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সূচকেও কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারেনি পাকিস্তান। দেশের অর্থনীতিও ক্রমশ ধুঁকতে শুরু করে। পাকিস্তানকে বাঁচাতে সৌদি আরব ও চীনের দ্বারস্থ হতে হয় ইমরান খানকে। অর্থনৈতিক সংকটই ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বড় অস্ত্র হয়ে ওঠে।

ইমরানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তোলার বিষয়ে নজিরবিহীন ঐক্য দেখিয়েছেন বিরোধীরা। তবে প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকে নতুন একটি অভিযোগ সামনে আনেন ইমরান খান। তিনি বলতে শুরু করেন, শুধু দেশীয় বিরোধীরাই নয়, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিদেশিরা। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের রাজনীতি এর আগেও অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মুখোমুখি হয়েছে। তবে এটা সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিযোগ।

এই অভিযোগ সামনে এনে গদি রক্ষা করতে চেয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হতে পারেনি তিনি। এর পেছনে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। পার্লামেন্টে মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তাঁকে।

তবে ইমরানের সামনে এখনও ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। আপাতত আগাম নির্বাচন না হলেও আগামী বছর পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ চাইলে ওই নির্বাচনে জিতে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন তিনি। এমন ঘটনা পাকিস্তানের ইতিহাসে আগেও ঘটেছে। তা না হলে অনেকের চোখে টিপু সুলতান বা নবাব সিরাজ উদ–দৌলার মতো একজন হয়ে উঠবেন ইমরান খান। সূত্র: ডন 

পাকিস্তান   অনাস্থা ভোট   ইমরান খান  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মোদির বিরুদ্ধে ইসিতে ২০ হাজার নাগরিকের চিঠি

প্রকাশ: ০৬:৫৪ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ভারতের নির্বাচনী প্রচারণায় কংগ্রেস ও মুসলমানদের সরাসরি আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়ার প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছেন প্রায় ২০ হাজার নাগরিক, যে চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।  

তারা বলছে, নির্বাচনি জনসভায় মোদি যা বলেছেন, তা ভয়ংকর। কমিশন ব্যবস্থা না নিলে নির্বাচনি সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বশাসনের চরিত্রকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে।

ভারতের নির্বাচনে এবারও ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একইসঙ্গে আক্রমণ করছেন প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসকেও।

সম্প্রতি রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশে পরপর দুটি নির্বাচনি জনসভায় কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ক্ষমতায় এলে তারা সাধারণ মানুষের ধন-সম্পত্তি দখল করে মুসলমানদের মধ্যে বিলি-বাটোয়ারা করে দেবে। এ কথা তারা তাদের দলের নির্বাচনি ইশতেহারেও জানিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ তার সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ ধরনের অভিপ্রায়ের কথা বলেছিলেন। এই কংগ্রেসকে জনগণ ভোট দেবে কিনা?

‘তারা কি চান, তাদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি, যারা শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি বাচ্চার জন্ম দেয়, তাদের মধ্যে বাঁটোয়ারা হোক? তাদের সম্পদের মালিক হোক অনুপ্রবেশকারীরা?’ মুসলমানদের বিদ্রূপ করে প্রশ্ন ছোড়েন মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। এসব উসকানিমূলক বক্তব্য ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে সাধারণ মানুষ।

তবে দুইদিন পেরিয়ে গেলেও ভারতের নির্বাচন কমিশন নিরুত্তর। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, মন্তব্য পর্যন্তও করেনি তারা। আর এ অবস্থার মধ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী   নরেন্দ্র মোদি   লোকসভা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কৃষকদের মাথার খুলি-হাড় নিয়ে বিক্ষোভ

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে, ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করা কৃষকদের মাথার খুলি ও হাড় নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ভারতের তামিলনাড়ুরর কৃষকরা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নয়াদিল্লির জন্তর মন্তরে অভিনব এই কায়দায় বিক্ষোভ করেন তামিলনাড়ুর দুইশর জনের মতো কৃষক। জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাড়ানো হয়নি ফসলের দাম। দাবি জানানো হয় ঋণ মওকুফের। তারা বলেন, ঋণের বোঝা বইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন হাজার হাজার চাষী।

তারা বলেন, কোনো দলের হয়ে নয় বরং সাধারণ কৃষক হয়েই সাহায্য চান তারা। দাবি না মানলে মোদির বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনে লড়ারও হুমকি দেন বিক্ষোভকারীরা। একই দাবিতে এই স্থানে এর আগেও বিক্ষোভ করেন ঋণগ্রস্ত কৃষকরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় শস্যের দাম দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন, শস্যের দাম দ্বিগুণ করা হবে এবং নদীগুলোকে আন্তঃসংযুক্ত করা হবে।


ভারত   তামিলনাড়ুর   কৃষক   মাথার খুলি   হাড়   বিক্ষোভ  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

নুডলসের প্যাকেটে কোটি টাকার হীরা পাচার

প্রকাশ: ০৩:১০ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

মুম্বাই থেকে ব্যাংকক যাওয়ার পথে এক ভারতীয় পর্যটকের স্যুটকেসের ভেতরে রাখা নুডলসের প্যাকেট থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল অঙ্কের সোনা ও হীরা। ভারতের মুম্বাই বিমানবন্দরে সোমবার ( ২২ এপ্রিল ) রাতে ৬ কোটি ৪৬ লাখ রুপি মূল্যের হীরা ও স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। খবর এনডিটিভির।

সোমবার রাতে একটি যাত্রীর ব্যাগ থেকে ৪ কোটি ৪৪ লাখ রুপি মূল্যের ৬ দশমিক ৮ কেজি সোনা ও ২ কোটি ২০ লাখ রুপির হীরা উদ্ধার হয়েছে। এ সময় ওই যাত্রীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে বিমানবন্দর কর্মকর্তারা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মুম্বাইয়ের শুল্ক দপ্তরের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।

এছাড়াও, কলোম্বো থেকে মুম্বাই আসা বিদেশী পর্যটকের অন্তর্বাসের ভিতরে লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় ৩২১ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এতো বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরা কোথায় পাচার করছিলো অভিযুক্তরা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।


ভারতীয়   পর্যটক   স্যুটকেস   নুডলস   প্যাকেট   হীরা   পাচার  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বন্যার পর এবার আরব আমিরাতে ঘন কুয়াশার প্রকোপ

প্রকাশ: ০৩:০১ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার ঘন কুয়াশার কবলে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির রাজধানী আবুধাবি ও ওমান সীমান্তবর্তী শহর আল আইনে বসবাসরতদের গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে খালিজ টাইমস এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি (এনসিএম) আজ বুধবার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ধূলিঝড়ের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। এছাড়াও প্রবল বাতাসের কারণে অনুভূমিক দৃষ্টিসীমা ২ হাজার মিটারের থেকেও কম।

এনসিএম পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ধুলো ও ময়লা বহনকারী উত্তর-পশ্চিমী বাতাস ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমন অবস্থায় ঘন কুয়াশার কারণে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে।


আরব আমিরা   ঘন   কুয়াশার  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পাকিস্তান সফর শেষে শ্রীলঙ্কার পথে ইরানের প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ: ০২:৫৩ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তিনদিনের পাকিস্তান সফর শেষে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে করাচি ছেড়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলম্বোর উদ্দেশে বিমানে চড়েন তিনি। এ সময় তাকে পাকিস্তানের গণপূর্তমন্ত্রী রিয়াজ হোসেন পিরজাদা ও সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর বিদায় জানান। খবর ইরনার
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের আমন্ত্রণে একদিনের সফরে দেশটির রাজধানী কলম্বো যাচ্ছেন রাইসি। এই সফরে রনিল বিক্রমাসিংহে ইরানের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দুটি বাঁধ ও একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। প্রায় ৫৩ কোটি ডলারের প্রকল্পটি ইরানি বিশেষজ্ঞরা নির্মাণ করেছেন।

এর আগে গত সোমবার (২২ এপ্রিল) পাকিস্তানে আসেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। গত ৮ এপ্রিল সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি ইসলামাবাদ সফর করেন। ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল দেশটিতে অবস্থান করেন ইব্রাহিম রাইসি। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক নথিতে স্বাক্ষর করেন রাইসি।

প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েক মাস আগে পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরান-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। তবে কূটনীতির মাধ্যমে সম্পর্ক জোড়া লাগায় মুসলিম বিশ্বের শক্তিধর এই দুই দেশ। পাকিস্তানের নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ইব্রাহিম রাইসির এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও উন্নত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।


পাকিস্তান   সফর   শ্রীলঙ্কা   ইরান   প্রেসিডেন্ট  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন