ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাশিয়ার ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ ব্যবস্থা যুদ্ধে ব্যবধান গড়ে দিচ্ছে

প্রকাশ: ০৮:৪৫ এএম, ০৩ অগাস্ট, ২০২২


Thumbnail রাশিয়ার ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ ব্যবস্থা যুদ্ধে ব্যবধান গড়ে দিচ্ছে

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর এক মাসের মাথায় কিয়েভের বাইরে একটি পরিত্যক্ত রাশিয়ান কমান্ড পোস্টে অজ্ঞাতনামা একটি শিপিং কনটেইনার খুঁজে পান ইউক্রেনীয় সেনারা। এর ভেতরে কী আছে, তা তখন তাঁরা জানতেন না। কিন্তু  ওই কনটেইনার খোলার পর যা জানা গেল, তাতে সহসা বিস্ময়ের ঘোর কাটার কথা নয়। রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া ওই কনটেইনারটির ভেতরে ছিল রাশিয়ার অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক যুদ্ধব্যবস্থাগুলোর একটি। তখন যুদ্ধ সবে অল্প কয়েক দিনে গড়িয়েছিল। সে সময়ে এমন একটি অস্ত্র হাতে পাওয়াকে সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা সাফল্য বলে দাবি করেন ইউক্রেনের সেনারা।

রুশ বাহিনীর ফেলে যাওয়া কনটেইনারটির ভেতরে ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) সিস্টেমগুলোর মধ্যে অন্যতম ক্রাসুকা–৪। এই ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র ২০১৪ সাল থেকে ব্যবহার করছে রাশিয়া। ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ বা ইডব্লিউ সিস্টেম মানে হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বিত ব্যবহার। ক্রাসুকা-৪–কে রাশিয়ার কৌশলগত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে প্রধান সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এক্স ও কেইউ ব্যান্ডের আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ও কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক রাডারকে জ্যাম করে দেওয়ার জন্য তৈরি করা। এটি মূলত ক্রাসুকা–২ নামের আরেকটি ইডব্লিউ সিস্টেমের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়। ক্রাসুকা–২ মূলত স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এস–ব্যান্ডের অনুসন্ধানী রাডারগুলো নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করে। এ ধরনের রাডার যুক্তরাষ্ট্রের ই–৮ জয়েন্ট সার্ভিলেন্স টার্গেট অ্যাটাক রাডার সিস্টেমের (জেএসটিএআরএস) রাডার ও এয়ারবর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বা এডব্লিউএসিএস যুদ্ধবিমানের রাডার নিষ্ক্রিয় করতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা করা হয়, রাশিয়ার কাছে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। গত মার্চে ইউক্রেন ও তাদের মিত্র পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর হাতে ক্রাসুকা–৪ চলে আসায় তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করার সুযোগ মেলে। বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইইই) প্রকাশনা ‘স্পেকট্রাম’-এ সম্প্রতি রুশ সেনাদের ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র ও ইউক্রেন যুদ্ধে এর প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ সেনাদের হামলার প্রথম দিকে ইডব্লিউ সিস্টেমগুলো তেমন কোনো কাজে লাগেনি। কিন্তু এখন যুদ্ধের মোড় রাশিয়ার দিকেই ঘুরিয়ে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনের সেনারা শক্ত প্রতিরোধ গড়লেও অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্রের কারণে তাঁরা ঠিকভাবে পেরে উঠছেন না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ইলেকট্রনিক যুদ্ধের নানা কৌশলের সুবাদে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ক্ষেত্রবিশেষে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। যুদ্ধের একাধিক পর্যবেক্ষক বলছেন, আগ্রাসনের শুরুর দিনগুলোর চেয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে এখন বড় ভূমিকা পালন করছে রাশিয়ার ‘ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ)’ সিস্টেমগুলো।

রুশ সেনারা ক্রাসুকা–৪–এর মতো এত মূল্যবান ইডব্লিউ সিস্টেম ফেলে যাবেন, গত মার্চের আগে তা কারও ধারণায় ছিল না। ওই সময় ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা দখলে বেশ সফলতা অর্জন করেছিলেন রুশ সেনারা। এমনকি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের হুমকিও দিচ্ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের পাঁচ মাস পরে এসে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার প্রাথমিক ওই অগ্রগতির বিষয়টি বড় ধাক্কা খেয়েছে। ক্রাসুকা–৪–এর মতো সিস্টেম রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়াই তার প্রমাণ। পরিত্যক্ত ক্রাসুকা–৪ সিস্টেম আক্রমণের প্রথম কয়েক মাসে রুশ সেনাদের বিস্ময়কর ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধের প্রথম দিকে ইডব্লিউর তেমন প্রভাব ছিল না। তাই প্রশ্ন উঠেছিল, সত্যিই কি যুদ্ধের ফলাফল প্রভাবিত করতে সক্ষম হবে রাশিয়ার বিখ্যাত এই বৈদ্যুতিক সমরাস্ত্রব্যবস্থা?

ষষ্ঠ মাসে পা দিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এখন রাশিয়ার পাঁচটি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ব্রিগেডের মধ্যে অন্তত তিনটি ইউক্রেনে মোতায়েন রয়েছে। এখন ন্যাটোর সরবরাহ করা রেডিওর সংকেত সহজেই অভিজ্ঞ রাশিয়ার ইডব্লিউ–চালকেরা শনাক্ত করে ফেলছেন। এ কাজে তাঁদের সহায়তা করছে অতীত অভিজ্ঞতা। এর আগে রুশ ইডব্লিউ–চালকেরা সিরিয়ায় তাঁদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। তা এখন কাজে লাগাচ্ছেন ইউক্রেনের মাটিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক কালের যুদ্ধে ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সামরিক বাহিনী রেডিও, রাডার ও ইনফ্রারেড ডিটেক্টরের ওপর নির্ভর করে অপারেশন সমন্বয় করে থাকে। শত্রুকে খুঁজে বের করতেও ইলেকট্রনিক পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়। শত্রুসৈন্যদের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের সংযোগে বিঘ্ন ঘটানো ছাড়াও নিজস্ব স্পেকট্রাম নিয়ন্ত্রণ ও নিজস্ব যোগাযোগ রক্ষা করতে ইডব্লিউ ব্যবহার করতে দেখা যায়।

রাশিয়া থেকে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের দূরত্ব কম হওয়ায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বিশেষায়িত ইডব্লিউ সরঞ্জামগুলো সহজে যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে নিতে পারছে। এর ব্যবহারে ড্রোনের কার্যকারিতা কমছে বলে স্বীকার করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ইডব্লিউ সক্ষমতার সুবাদে ইউক্রেনের বাহিনীকে খুঁজে বের করে হামলা চালানো সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য। ইউক্রেনীয় সামরিক যোগাযোগের চ্যানেলগুলোতে আড়িপাতার চেষ্টাও সফল হয়েছে রাশিয়ার। ইডব্লিউ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় ড্রোনের রাডার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া। ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর কাছে ধরা পড়েনি রুশ বাহিনীর অবস্থান।


রুশ ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্রব্যবস্থা

মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা ইডব্লিউকে ইলেকট্রনিক অ্যাটাক (ইএ), বৈদ্যুতিক সুরক্ষা ও বৈদ্যুতিক সহায়তার (ইএস) যৌথ সমন্বয় সিস্টেম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইলেকট্রনিক আক্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত বিষয়টি হচ্ছে জ্যামিং। এ ক্ষেত্রে রেডিও বা রাডার তরঙ্গ চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো হয়। উদাহরণ হিসেবে রাশিয়া আর–৩৩০ জেডএইচ জিটেল জ্যামারের কথা বলা যায়। এটি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভিএইচএফ ও ইউএইচএফ ব্যান্ডের জিপিএস, কৃত্রিম উপগ্রহের যোগাযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারে। শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করাও ইএর একটি অংশ। এটি সিস্টেম প্রত্যাশিত রাডার বা রেডিও ট্রান্সমিশনের পরিবর্তে নিজস্ব সংকেত পাঠাতে পারে। এর আগে ২০১৪ সালে আরবি–৩৪১ভি লিয়ার–৩ সিস্টেম ব্যবহার করে পূর্ব ইউক্রেনের স্থানীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিনতাই করে নিজস্ব ভুয়া নির্দেশ প্রচার করেছিলেন রুশ সেনারা। এর বাইরে অরল্যান–১০ ড্রোনের মাধ্যমে লিয়ার–৩ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে পারেন তাঁরা।

ইলেকট্রনিক আক্রমণব্যবস্থার আরেকটি অংশ হলো ইলেকট্রনিক সাপোর্ট (ইএস) সিস্টেম। প্রতিপক্ষের যোগাযোগব্যবস্থাকে পরোক্ষভাবে শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে এটা ব্যবহৃত হয়। প্রতিপক্ষের রাডার বা রেডিওর সম্ভাব্য দুর্বলতা বোঝার জন্য ইএস অপরিহার্য। অধিকাংশ রাশিয়ান ইএ সিস্টেমের সঙ্গেই ইএস সক্ষমতা যুক্ত। এতে দ্রুত সম্ভাব্য জ্যামিং লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হন রুশ সেনারা। এ ছাড়া শত্রুর রেডিও ও সেলুলার যোগাযোগের অবস্থান শনাক্ত করে সেখানকার তথ্য নিজেদের সেনাদের সরবরাহ করতে পারে, যাতে দ্রুত সেখানে গোলা বা রকেট হামলা চালানো যায়। কিছু রুশ সিস্টেমে ইএস বিশেষভাবে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মস্কোভা–১। এটি নিখুঁতভাবে টিভি ও রেডিও সংকেত ধরতে পারে। এটি জাহাজ বা যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে সাহায্য করে।

রাশিয়া ইএ ও ইএস অপারেশন পরিচালনার জন্য বিশেষ ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার ইউনিট ব্যবহার করে। এর স্থলবাহিনীতে কয়েক শ সৈন্যের ইডব্লিউ ব্রিগেড পাঁচটি রাশিয়ান সামরিক জেলা পশ্চিম, দক্ষিণ, উত্তর, মধ্য ও পূর্বে নিযুক্ত করা হয়েছে। শত শত কিলোমিটারজুড়ে শত্রুপক্ষের নজরদারির রাডার ও স্যাটেলাইট যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোকে ব্যাহত করাই এর লক্ষ্য। ইডব্লিউ ব্রিগেডের কাছে রয়েছে ক্রাসুকা–২, ৪, লিয়ার–৩, মস্কোভা–১ ও মুরমানাস্ক–বিএন সিস্টেম। এ ছাড়া ব্রিগেডের সদস্যদের ছোট আকারের আর–৩৩০জেডএইচ জিটেল ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের ইএ ও ইএস ঠেকাতে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে রুশ সেনারা ইলেকট্রনিক প্রটেকশন (ইপি) সিস্টেম ব্যবহার করছেন। রেডিও ট্রান্সমিশনকে শনাক্ত করা বা জ্যাম হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ইপিতে বিশেষ কৌশল ও প্রযুক্তি যুক্ত রয়েছে।


একনজরে রাশিয়ার ইডব্লিউ সিস্টেম

ক্রাসুকা–৪: এক্স-ব্যান্ড এবং কে ইউ-ব্যান্ড রাডারগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে। বিশেষ করে যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং নিচু কক্ষপথের উপগ্রহগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত করতে এটি কাজে লাগানো হয়।

ক্রাসুকা–২: এস ব্যান্ড রাডারগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। বিশেষ করে আকাশে থাকা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের দুর্বলতা শনাক্ত করে এটি। ক্রাসুকা–৪–এর সঙ্গে এটি ব্যবহার করা হয়।

লিয়ার–৩: সামরিক রেডিও, সেলুলার যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে পারে। কয়েক শ কিলোমিটার পর্যন্ত এটি নেটওয়ার্ক জ্যাম করে দিতে পারে।

৩৩০ জেডএইচ জিটেল: জ্যামারটি ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত জিপিএস ও স্যাটেলাইট যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে পারে। এটি ট্রাক কমান্ড পোস্ট থেকেও চালানো যায়।

মুরমানস্ক–বিএন: দূরপাল্লার যোগাযোগ শনাক্তকরণ ও সামরিক রেডিও জ্যামে ব্যবহার করা হয়।

আর৯৩৪–বি ও এসপিএন ২, ৩, ৪: ওয়্যারলেস যোগাযোগ ও এয়ার টু সারফেস গাইডেন্স কন্ট্রোল রাডার জ্যাম করে দিতে সক্ষম।

রিপিলেন্ট–১: অ্যান্টিড্রোন সিস্টেম।

মস্কোভা–১: শত্রুর জাহাজ ও যুদ্ধবিমানের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে।


রুশ কৌশল

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সেরা সজ্জিত ইডব্লিউ ইউনিট বলে আসছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরপরই তাই অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন দ্রুতই ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন রুশ সেনারা। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার দখল নেওয়ার পর থেকেই রুশ সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ইডব্লিউ। দনবাস অঞ্চলেও দীর্ঘদিন ধরেই রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লিয়ার–৩ ও অরল্যান্ড–১০ ড্রোনব্যবস্থা ব্যবহার করে আসছিলেন। এগুলো ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় বাহিনীর রেডিও যোগাযোগ শনাক্ত এবং তাদের ওপর রকেট হামলা করে আসছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। কিন্তু ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকেই এ যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার চোখে পড়েনি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ড্রোনবিধ্বংসী ব্যবস্থা ব্যবহার করে ইউক্রেনের সেনারা শত শত রুশ ড্রোনের জিপিএস সংকেত জ্যামিং করে তা ধ্বংস করেছেন। এরপরই রুশ সেনারা তাঁদের ইডব্লিউর ব্যবহার বাড়িয়ে দেন। লিয়ার–৩ ব্যবহার করে ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান শনাক্ত করতে শুরু করেছেন।

সামনে কী

প্রশ্ন হচ্ছে, সামনে কী অপেক্ষা করছে? ক্রেমলিনের ভাগ্য এখন উন্নত হয়েছে। রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনের পূর্বে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে লড়াই করছেন। এখন ছড়িয়ে পড়ার বদলে তাঁরা ইডব্লিউর সহায়তায় ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান বের করে সেখানে হামলা করছেন এবং সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। আক্রমণে গতি আনতে বড় ব্রিগেডের বদলে ছোট ছোট দলে সেনাদের ভাগ করা হয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে, ব্যাটালিয়ন ট্যাকটিক্যাল গ্রুপ (বিটিজি)। এসব গ্রুপের হাতে আর–৩৩০জেডএইচ জিটেলের মতো স্বল্প দূরত্বে শত্রুসেনার অবস্থান শনাক্তকারী সিস্টেম তুলে দেওয়া হয়েছে। এই সিস্টেম বাইরাকটার টিবি২এস ও ডিজেআই ম্যাভিক ড্রোনের জিপিএস সংকেত জ্যাম করে দিতে পারে। বিটিজির কাছে থাকা আর–৯৩৪ বি ভিএইচএফ ও এসপিআর–২ জ্যামার দিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর যোগাযোগব্যবস্থাও নষ্ট করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাদের রয়েছে দুর্বল সিংকগার্স রেডিও সংকেত। এর বাইরে তাঁদের ঝুঁকিপূর্ণ সেলফোন ও রেডিও নেটওয়ার্কে নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া ‘কাউন্টার ড্রোন সিস্টেম’ তাদের কিছুটা সফলতা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইডব্লিউ সিস্টেমও পেয়েছে ইউক্রেন। এগুলোর ব্যবহারও বাড়াতে শুরু করেছে তারা।

ইডব্লিউ নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের বড় শিক্ষা হচ্ছে, তরঙ্গযুদ্ধে জয়ী হওয়া মানেই যুদ্ধ জয় নয়। তরঙ্গযুদ্ধে রুশ সেনারা এগিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে, দ্রুত তাঁদের বিভিন্ন এলাকা দখল করে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। পশ্চিমাদের সমর্থনের ইউক্রেন যদি আকাশপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং রাশিয়ার ইলেকট্রনিক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তবে মোড় ঘুরে যেতে পারে।


স্পেকট্রাম ও দ্য ভার্জ অবলম্বনে  মিন্টু হোসেনের প্রতিবেদন 


রাশিয়া   ইউক্রেন   ইসরায়েল   ক্ষেপণাস্ত্র   যুদ্ধ   ওয়ারফেয়ার  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

লোকসভা নির্বাচন: দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ শুক্রবার

প্রকাশ: ০৯:১৭ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটের প্রচার-প্রচারণা শেষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। এবার লোকসভা নির্বাচন হবে সাত ধাপে। চলবে প্রায় দুই মাস ধরে। ভোট পর্ব শেষ হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা।

এর আগে, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে এ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু-কাশ্মীরে আগামীকাল ভোটগ্রহণ হবে।

লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রথম দফা নির্বাচনে সব রাজ্যে গড়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে। 

১৯ এপ্রিল ভোট ছিল ১৭ রাজ্য ও ৪ কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের ১০২ আসনে। প্রথম ধাপে ভারতে ভোট পড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ব্যতিক্রম বাংলা। প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার এই তিন কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৭ শতাংশ। ১৯ এপ্রিল জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছেন।


লোকসভা   নির্বাচন   ভোট  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের জন্য বড় সুসংবাদ

প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

যেসব মুসল্লি ওমরাহ পালন করতে চান তাদের বড় সুখবর দিয়েছে সৌদি আরব। দেশটি জানিয়েছে, এখন থেকে যে কোনো ভিসা নিয়ে সৌদিতে আসলেই ওমরাহ করা যাবে। অর্থাৎ শুধুমাত্র ওমরাহ ভিসার প্রয়োজন হবে না। 

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, যেকোনো দেশ থেকে এবং যেকোনো ভিসায় আগতরা (সৌদি আরবে) এখন থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ট্রানজিট, শ্রম এবং ই-ভিসাসহ সব ভিসায় সৌদিতে প্রবেশ করে ইচ্ছা করলেই ওমরাহ করতে পারবেন। তারা বলছে, "আপনার ভিসার ধরন যাই হোক না কেন, আপনি ওমরাহ করতে পারবেন। 

এদিকে, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ইবাদত সহজ করতে ‘ডিজিটাল ব্যাগ’ চালু করেছে সৌদি সরকার। দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ব্যাগ প্রোগ্রাম হজ ও ওমরাহযাত্রীদের হজ ও ওমরাহ পালন সহজ করবে। আর এর মাধ্যমে মুসল্লিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।


ওমরাহ   সৌদি  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গাজায় ২০ জনকে জীবিত কবর দেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশ: ০৮:২৮ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল  এবং গাজা সিটির আল শিফা হাসপাতালের পাশে গণকবরের সন্ধান মিলেছে। গণকবর থেকে এখন একের পর এক মরদেহ বের করা হচ্ছে। যেগুলোর বেশিরভাগই বিকৃত হয়ে গেছে। 

ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মোহাম্মদ মুঘাইয়ের জানিয়েছেন, এসব গণকবরে পাওয়া মরদেহের অন্তত ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়ার আলামত পেয়েছেন তারা।  

তিনি বলেছেন, ১০টি মরদেহের হাত বাধা ছিল। অন্যদের শরীরে মেডিকেল টিউব সংযুক্ত ছিল। বিষয়টি নির্দেশ করছে তাদের খুব সম্ভবত জীবিত অবস্থায় কবর দেওয়া হয়েছে। 

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের গণকবর থেকে শিশুদের মরদেহও উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদ মুঘাইয়ের শিশুদের বিকৃত মরদেহের ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, গণকবরে শিশুরা কেন ? এসব প্রমাণ নির্দেশ করছে ইসরায়েলি সেনারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে।

দুই সপ্তাহ আগে খান ইউনিস থেকে সরে যায় দখলদার ইসরায়েলের সেনারা। এরপর সেখানে ফিরে যান সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তারা গিয়ে দেখতে পান খান ইউনিসকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদাররা। তাদের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি হাসপাতালও। সাধারণ মানুষকে হত্যা করে হাসপাতালের পাশেই পুঁতে রেখেছে তারা।


গাজা   কবর   ইসরায়েল   মরদেহ  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মার্কিন ও ইসরায়েলি জাহাজে হামলার দাবি হুতির

প্রকাশ: ০৭:৫৮ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

মার্কিন ও ইসরায়েলি জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলার দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। 

বুধবার (২৪ এপ্রিল) এডেন উপসাগর ও ভারত মহাসাগরে এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। 

পার্স টুডে বলছে, বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে হুতির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি হামলার তথ্য জানিয়ে বলেন, এডেন উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ মেয়ারস্ক ইয়র্কটাউন ও একটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার লক্ষ্য করে মিসাইল ছোড়া হয়েছে। এছাড়া ভারত মহাসাগরে ইসরায়েলি জাহাজ এমএসসি ভেরাক্রুজে হামলা করা হয়েছে। এ দুটি অপারেশনই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান জেনারেল সারি। 

এদিকে আরব নিউজ জানিয়েছে, সমুদ্র নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান আমব্রে বলছে, এডেন বন্দরের দক্ষিণ পশ্চিমে হামলা হয়েছে। আর মার্কিন কর্তৃপক্ষ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ইয়েমেনের উপকূলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট হুতিদের চারটি ড্রোন এবং একটি জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো আঘাত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।


ইসরায়েল   যুক্তরাষ্ট্র  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই: শাহবাজ শরিফ

প্রকাশ: ০৭:০৯ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

শিল্প প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বুধবার (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি অধিবেশন চলার সময় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন।

পাকিস্তানি গণমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন বেশ ছোট ছিলাম তখন আমাদের বলা হতো এটি (বাংলাদেশ) আমাদের কাঁধের বোঝা। আজ আপনারা সবাই জানেন সেই বোঝা কোথায় পৌঁছে গেছে। এ সময় শাহবাজ আরও বলেন, ‘আমরা যখন তাদের (বাংলাদেশ) দিকে তাকাই তখন আমরা লজ্জাবোধ করি।’

এদিন পাকিস্তানের বাণিজ্যিক রাজধানী করাচির সিন্ধু সিএম হাউসে অর্থনীতির উন্নতির উপায় খুঁজতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ। ব্যবসায়ী নেতারা এ সময় অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় শাহবাজের সংকল্পের প্রশংসা করলেও, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

দেশের অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোনিবেশ করারও পরামর্শ দেন করাচির ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করারও অনুরোধ জানান।


শাহবাজ শরিফ   পাকিস্তান   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন