ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মণিপুর ও মিজোরামের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে উঠবে মায়ানমারের 'গৃহযুদ্ধ'

প্রকাশ: ১০:৫৪ এএম, ৩১ মে, ২০২৩


Thumbnail

ভারতের মণিপুরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে জাতিগত হিংসা চলছে, তা উত্তর-পূর্ব ভারতের অসংখ্য সমস্যার  একটি মাত্র। এই হিংসা নানান সমস্যার একটা ফল— কারণ নয় এমনটাও বলা যেতে পারে এক্ষেত্রে। আগামী দিনে একটা বড় বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। বস্তুত, অঞ্চলটি ইতিমধ্যেই সমস্যায় আক্রান্ত। এই বিপদ হল মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ।

মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের প্রায় ১,৬৫০ কিলোমিটারের সীমান্ত। এই সীমান্তের প্রায় ৪০০ কিলোমিটার মণিপুরের সঙ্গে। মণিপুর-লাগোয়া মায়ানমারের দু’টি প্রদেশ হল সাগাইং এবং চিন। এই দুই প্রদেশেই গণতন্ত্রকামী বাহিনীর সঙ্গে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী টাটমাডো'র লড়াই চলছে। লড়াই তীব্র হয়েছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পরে। মাঝে মাঝেই টাটমাডো সাগাইং এবং চিনে বোমা ফেলছে। বছর ছয়েক আগে চিনের দক্ষিণে রাখাইন থেকে যখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন, তখন ভারত এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। রোহিঙ্গারা মুসলমান বলে তাঁদের ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এখন বিপদ অন্য ধরনের। চিন প্রদেশ থেকে যাঁরা গত দু’বছর ধরে ঢুকছেন, তাঁদের সঙ্গে জাতিগত (এথনিক) সম্পর্ক রয়েছে মিজোরাম এবং মণিপুরের জনজাতি সমাজের। ফলে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা অতীতে স্পষ্ট জানিয়েছেন, চিন প্রদেশ থেকে শরণার্থী আসতে দিতে হবে। সমস্যা হল, ভারত নানা কারণে আন্তর্জাতিক শরণার্থী চুক্তিতে (১৯৫১) সই করেনি। ফলে, শরণার্থী বলে কিছু ভারতে হয় না— যেটা হয়, তার নাম ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’।

এখন জ্ঞাতিভাইদের ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ বলতে নারাজ মিজোরাম। ফলে মিজোরামে ভারতের নীতি হচ্ছে চুপচাপ থাকা। মিজোরামের মানুষ চিন প্রদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের তাঁদের সামর্থ্য মতো খাবারদাবার, জায়গা দিয়ে বসিয়েছেন। শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছেন। আন্তর্জাতিক শরণার্থী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা মিজোদের মানবিকতার প্রশংসা করেছেন। শুধু ‘এথনিক’ সম্পর্ক নয়, মিজোরামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ অনেক কম। এর কারণ, মিজোরামের ৯৫% মানুষ জনজাতি সম্প্রদায়ের। প্রায় ৮৮% খ্রিস্টান। বিরোধের ক্ষেত্র সীমিত।

অন্যদিকে, মণিপুরের চিত্র আলাদা। সেখানেও কুকি সমাজের (এখানে বোঝার সুবিধার জন্য জনজাতি সমাজের কুকি-চিন-মিজো-যোমি-হামর জনজাতিদের কুকি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মণিপুরেও তা-ই করা হয়) মানুষ অরণ্য ও পাহাড় অঞ্চলে শরণার্থীদের বসিয়েছেন। গত বছরের মে মাসে এক প্রতিবেদনে ইম্ফল ফ্রি প্রেস জানিয়েছিল, ৯৬৬টি নতুন বসতি গড়ে উঠেছে মণিপুরের অরণ্য-পাহাড়ে। তারা সরকারি স্বীকৃতির আবেদন জানিয়েছিল।

কিন্তু মণিপুরে জনসংখ্যার ৪০% জনজাতি, যার মধ্যে প্রধান কুকিরা। এই ৪০% মানুষ রাজ্যের ৯০% পাহাড়-অরণ্য অঞ্চলে রয়েছেন বলে দাবি সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের, যাঁরা জনজাতিভুক্ত নন। তাঁদের বক্তব্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তাঁরা রয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ অঞ্চলে। এর উপরে মায়ানমার থেকে শরণার্থী প্রবেশের ফলে তাঁদের জায়গা আরও কমবে। ভবিষ্যতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার আশঙ্কা। সেই কারণেই তাঁরা জনজাতি হিসাবে সংরক্ষণ চেয়েছেন, যার পরিণতি গোষ্ঠী সংঘাত। আগামী দিনে মায়ানমারের ‘যুদ্ধ’ মণিপুর ও মিজোরামের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা।

দ্বিতীয় সমস্যা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির। দীর্ঘ সময় ধরে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রবক্তাদের একটা বড় অংশ উত্তর-পূর্ব ভারতে হিন্দুত্বের চর্চা করছেন। শুধু উত্তর-পূর্বেই নয়, গোটা ভারতেই জনজাতি অঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে হিন্দুত্বের চর্চা হচ্ছে। সম্প্রতি এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। এই গবেষকদের অন্যতম অর্কটং লংকুমের। উত্তর-পূর্ব নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চিত নাম তিনি। উত্তর-পূর্বে হিন্দুত্বের প্রসার নিয়ে তাঁর বই দ্য গ্রেটার ইন্ডিয়া এক্সপেরিমেন্ট: হিন্দুত্ব অ্যান্ড দ্য নর্থ-ইস্ট-এ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) কাজকর্মের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। “আমি যখন পিএইচ ডি-র ফিল্ডওয়ার্ক (২০০৪-০৫) করতে অসমের ডিমা হাসাও জেলার হাফলং এবং লাইসং-এ ছিলাম, তখনই সেখানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখেছিলাম। তাঁদের ‘কমিটমেন্ট’ দেখে অবাক হয়েছিলাম। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বুঝেছিলাম যে, তাঁরা গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে তাঁদের কাজকর্ম ছড়াতে চান,” অধ্যাপক লংকুমের লিখেছেন তাঁর বইয়ের মুখবন্ধে।

এই ছড়ানোর কাজ আরএসএস উত্তর-পূর্বে খুব ভাল ভাবে করেছে গত বিশ-ত্রিশ বছরে। উত্তর-পূর্বে সাতটির মধ্যে এখন ছ’টি রাজ্যে বিজেপি সরকারে রয়েছে। যেখানে নেই— অর্থাৎ মিজোরামে— সেখানেও ক্ষমতাসীন দল (মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট) পরোক্ষভাবে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এ রয়েছে। নানা ভাবে আরএসএস উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকেছে। এই প্রবেশের একটা প্রধান দিক হল, উত্তর-পূর্ব ভারতের ধর্মীয় বিশ্বাস ‘অ্যানিমিজম’ (নির্জীব বস্তু, উদ্ভিদ, প্রাকৃতিক ঘটনা, সব কিছুর মধ্যে প্রাণের দর্শন) এবং ‘শ্যামিনিজম’-কে (ভিন্ন ধরনের প্রাণের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক) বোঝা। অঞ্চলে পড়ে থেকে হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ দীর্ঘদিন এ কাজ করেছেন, এক ধরনের ‘মিশনারি’ প্রতিজ্ঞা নিয়ে। চিন-ভারত যুদ্ধের পরে, চিনের থেকে অরুণাচল প্রদেশকে সুরক্ষিত করতে কংগ্রেসও সেখানে হিন্দু জাতীয়তাবাদী চেতনাকে মদত দিয়েছে।

হিন্দুত্ববাদীদের গবেষণার যে অংশটা এখন সামনে আসছে, সেটা তাৎপর্যপূর্ণ। অরুণাচল প্রদেশে ‘ডনি-পোলো’ সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদীদের নির্দিষ্ট মতামত রয়েছে। ‘ডনি-পোলো’ হল সূর্য এবং চাঁদ এবং সংশ্লিষ্ট ধর্ম। যেহেতু হিন্দু ধর্মে চন্দ্র-সূর্য দেবতা, ‘ডনি পোলো’তে বিশ্বাসীদের বলা হচ্ছে যে, হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তাঁদের ধর্মের ‘ওভারল্যাপ’ রয়েছে। নাগাল্যান্ডে রয়েছে আরও চমকপ্রদ এক আধুনিক ধর্মীয় আন্দোলন, যার নাম হেরাকা। লংকুমেরের এ নিয়েও একটি বই রয়েছে। এর পাশাপাশি আরও একাধিক 'অ্যানিমিস্ট' বা 'শ্যামিনিস্ট' ধর্মীয় আন্দোলন রয়েছে উত্তর-পূর্বে (আমিক মাতাই, রংফ্রা প্রভৃতি), যা প্রধানত খ্রিস্টধর্ম আসার পরে চাপা পড়ে যায়। এখানেই রাজনৈতিক খেলা— হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি যেহেতু উত্তর-পূর্বের অন্যতম প্রধান খ্রিস্ট ধর্ম, তাই খ্রিস্টানদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে লোকজ ধর্মকে বোঝানো হচ্ছে যে, তাঁরা চাপা পড়ে গিয়েছেন খ্রিস্টানদের জন্য।

এর ফলে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে উত্তর-পূর্বে। কারণ উত্তর-পূর্বে তিন রাজ্যে (মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড) খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। অরুণাচল প্রদেশে দু’পক্ষই সমান, প্রায় ৩০ শতাংশ। মণিপুরেও তাই, দুই পক্ষই ৪১ শতাংশ। সমসংখ্যক হিন্দু এবং খ্রিস্টান থাকার ফলে মণিপুরে কী হয়েছে, সে সম্পর্কে পাঠক হয়তো অবগত। ‘গুডউইল মিশন’ নামে মণিপুরের গির্জাসমূহের সংগঠন জানায়, সাম্প্রতিক সংঘাতের দুই সপ্তাহে ২৯৩টি গির্জা বা গির্জা সংলগ্ন অফিস আংশিক বা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। এখানে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, যাঁরা লোকজ ধর্মের মধ্যে রয়েছেন, তাঁরা আবার সংগঠিত ধর্মের মধ্যেও থাকতে পারেন। তাছাড়া, জনজাতি সমাজের বড় অংশ এখনও খ্রিস্টান। ফলে সংঘাত আরও জোরালো হতে পারে। খ্রিস্টান সম্প্রদায় যে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন, তা সম্প্রতি বুঝতে পারলাম শিলঙে। শিলঙের এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মন্তব্য করলেন, “এর পরের টার্গেট তবে আমরাই।” তার এই মন্তব্যের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক স্পষ্ট। নিরাপত্তাহীনতা যে কোনও সমাজকেই অস্থির করে। আর সেটাই সত্যি। চূড়ান্ত অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটছে উত্তর-পূর্বের একাংশের।



মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

জাপানিদের রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলোর মতো জাপানেও রমজান মাসকে ঘিরে এক ধরণের আমেজ বিরাজ করে। রমজান এলেই জামাতের সাথে তারাবিহ আদায় করা ও ইফতার নিয়ে এক ধরণের উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয় মুসল্লিদের ঘরে ঘরে। 

রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। মুসল্লিরা যথেষ্ট ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে এই রমজান মাসকে পালন করে থাকেন। আর রোজাদারদের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। তাদের বিশ্বাস, এ সময় আল্লাহ তাআলা তার রোজাদার বান্দাদের দোয়া কবুল করেন। 

বাংলা ইনসাইডার আয়োজিত 'ইনসাইড রমজান' ধারাবাহিক এর আজকের পর্বে আমরা জানবো জাপানের মুসলিমদের রমজান ও ইফতার সংস্কৃতি- 

ইফতার মূলত খেজুর ও পানি দিয়ে শুরু করা হয়। কিন্তু অঞ্চলভেদে নানা ধরণের খাবার যুক্ত হয় এই ইফতারে।  

জাপানে মুসলমানের সংখ্যা অনেক কম। আর বাংলাদেশিদের আনাগোনা একটু বেশিই লক্ষ্য করা যায় দেশটিতে। এ কারণেই হয়তো তাদের ইফতারের তালিকায় কিছু বাঙালি খাবার যুক্ত হয়েছে।    

জাপানিরা তাদের ইফতারে মূলত, জুস, স্যুপ ও বিভিন্ন ধরণের ফল-মূল রাখেন। এছাড়াও থাকে মাশি মালফুফ নামের এক ধরণের ঐতিহ্যবাহী খাবার। যা আঙুর, বাঁধাকপি ও চাল মিশিয়ে বানানো হয়।  

এছাড়াও রয়েছে, মটরশুঁটি ও গরুর কলিজা মিশ্রিত কিবদা, রুটিতে মোড়ানো মাংসের কিমা ইত্যাদি।


জাপান   রমজান   ইফতার   সংস্কৃতি  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বন্দ্ব: বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রকাশ্য কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে ভারতের। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতি এবং অবস্থানের সমালোচনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যের পর ভারতে নিযুক্ত মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে নয়াদিল্লি। সেই তলবের প্রতিক্রিয়া নয়াদিল্লি আপত্তি অগ্রাহ্য করে আরও একবার ভারতের দমন নীতির সমালোচনা করে ওয়াশিংটন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ফের কড়া জবাব দেয় ভারত। সব মিলিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা এখন তুঙ্গে অবস্থান করছে। 

উল্লেখ্য যে, লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু করা হয়। এই আইন নিয়ে সমালোচনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। এদিকে কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক বাকবিতণ্ডা তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া আম আদমি পার্টির নেতা কেজরিওয়ালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সংশয় প্রকাশ করেছে এবং নয়াদিল্লিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার কাজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করে ভারত। সবকিছু মিলিয়ে এই অঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতিম কৌশলগত সম্পর্কে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি নেতিবাচক অবস্থানে ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি করে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছিল যে, যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয় তাহলে বাংলাদেশের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না। বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থান নেবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে আগে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি অবস্থান গ্রহণ করে। ভারতের অবস্থান ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং কোন দল অংশগ্রহণ করল, না করল সেটা বড় বিষয় নয়। সাংবিধানিক ধারায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়াটাই ভারত প্রত্যাশা করে এবং ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পাল্টানোর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কথা বলেছিলেন অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে। সবকিছু মিলিয়ে এই অঞ্চলে ভারতের কথা যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুনে সে নিয়ে দু দেশের মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এই কূটনৈতিক তৎপরতার ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত একটা নমনীয় অবস্থানে আসে। এই নমনীয় অবস্থান থেকেই নির্বাচনের পরপর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। 

অনেকেই মনে করেন যে, ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এখন যখন ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে তখন তার প্রভাব কি বাংলাদেশে পড়বে?

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেটি পড়বে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন বাংলাদেশকে নিয়ে পৃথক এজেন্ডা তৈরি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে বাংলাদেশের বাজারে যেতে চায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তার করতে চায়। কাজেই ভারতের সঙ্গে যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব সেটির প্রভাব বাংলাদেশ সম্পর্কে পড়বে না। তাছাড়া ভারতের এই কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দুদেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করে। বিশেষ করে ভারত একটি বড় দেশ। ভারতের সঙ্গে এর আগেও অনেক বিষয় নিয়ে মতদৈত্যতা ছিল। সেটি কাটিয়ে উঠে বৃহত্তর পরিসরে দু দেশ এক সাথে কাজ করেছে। এক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত   বাংলাদেশ   দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী   অরবিন্দ কেজরিওয়াল  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এবার কেজরিওয়াল বিতর্কে জাতিসংঘ

প্রকাশ: ০৩:৪৫ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর ভারতের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার দেশ জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র সংশয় প্রকাশ করার পর এবার বিতর্কে এলো জাতিসংঘ। 

বৃহস্পতিবার(২৯ মার্চ) রাতে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকও জানান, তাদের আশা, ভোটের সময় অন্য দেশের মতো ভারতেও রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের প্রত্যেকের অধিকার রক্ষিত হবে, যাতে সবাই সুষ্ঠুভাবে, মুক্ত মনে ভোট দিতে পারেন।  

কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার এবং তাকে হেফাজতে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে, ভারতকে তা বিব্রত করলেও কূটনৈতিক পর্যায়ে তার জবাব দেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে নিযুক্ত জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিকদের ডেকে এ ধরনের মন্তব্যে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকেনি। দ্বিতীয়বারও তারা এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, মন্তব্য করেছে। তাদের সঙ্গে এবার বিতর্কে যুক্ত হলো জাতিসংঘও। 

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে স্টিফেন ডুজারিককে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারসংক্রান্ত প্রশ্নে কংগ্রেস দলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার বিষয়টিও উত্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, ভোটের ঠিক আগে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনকর্মীরা মনে করছেন, এভাবে বিরোধীদের দমন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি জাতিসংঘ কীভাবে দেখছে?  

এমন প্রশ্নে, তিনি মুক্ত মনে ভোট দেওয়া এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের অধিকার রক্ষিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কথাটি ভারতের পক্ষে অবশ্যই বিব্রতকর।   

প্রথম দফায় সাত দিন হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালকে দিল্লির নিম্ন আদালতে পেশ করা হয়। সেখানে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হেফাজতের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানোর দাবি জানায়। বিচারক চার দিন মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। তবে তার আগে কেজরিওয়ালকে অনুমতি দেন এজলাসে নিজের হয়ে সওয়াল করার। অনুমতি পেয়ে কেজরিওয়াল বলেন, তাকে ফাসানোই ইডির একমাত্র লক্ষ্য।


কেজরিওয়াল   বিতর্ক   জাতিসংঘ   পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়   ভারত  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ফিলিস্তিনিরা এখনো যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে

প্রকাশ: ০২:১৭ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসকে নির্মূলের জন্য কয়েক মাস ধরে টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এমন আক্রমণের পরও হামাসের যুদ্ধ করার সক্ষমতা এখনো অটুট রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ওয়ার (আইএসডব্লিউ)। 

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আল শিফা হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে প্রায় ৭০টি হামলা চালিয়েছে। গত বছরে গাজার এ হাসপাতালটিতে তাণ্ডবের পর আবারও চলতি বছরের মার্চে সেখানে ফিরে আসে ইসরায়েলি সেনারা।

ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এবং ক্রিটিকাল থ্রেট প্রজেক্ট (সিটিপি) তাদের সর্বশেষ গাজার যুদ্ধাবস্থার মূল্যায়নে জানিয়েছে, হামলার তীব্রতা এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের যুদ্ধের সক্ষমতা এখনো অটুট রয়েছে। যদিও গাজায় ইসরায়েলের হামাসকে নির্মূলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক জানিয়েছে, আল শিফা হাসপাতাল এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের অন্তত ছয়টি যোদ্ধা দল সক্রিয় রয়েছে।

সবশেষ তথ্যে পর্যবেক্ষক সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ৩ মার্চ গাজার জেইতুন এলাকা থেকে হামাসকে পুরোপুরিভাবে নির্মূলের দাবি করে। তবে বুধবার এ এলাকায় আবারও ফিরে এসেছে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের ফিরে আসা এটাই প্রমাণ করে যে গাজার অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে হামাসের যোদ্ধারা।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দেশেটির এ হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের হামলার কারণে উপত্যকা এখন তাঁবুর বসতির জনপদে পরিণত হয়েছে।

ইসরায়েলের দাবি, গাজা থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তারা এ অভিযান চালিয়ে যাবে। অন্যদিকে অব্যাহত হামলার কারণে উপত্যকার ব্যপক আকারে খাদ্য ও মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।


ফিলিস্তিন   যুদ্ধ   ইসরায়েল   হামাস   গাজা  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কাশ্মীরে গভীর খাদে যাত্রীবাহী ট্যাক্সি, নিহত ১০

প্রকাশ: ০১:৫৫ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ভারতের জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী ট্যাক্সি গভীর খাদে গড়িয়ে পড়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) এবং কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। 

দেশটির গণমাধ্যম বলছে, শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে একটি যাত্রীবাহী ট্যাক্সি শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। পরে জম্মু ও কাশ্মীরের রমবান এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রী-সহ ট্যাক্সিটি আচমকা রাস্তার পাশে থাকা গভীর খাদের মধ্যে পড়ে যায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আসে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। তাদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে স্থানীয় বাসিন্দারাও যোগ দিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চলছে। তবে বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেজা থাকায় উদ্ধারকারীদের বেগ পেতে হচ্ছে।


কাশ্মীর   ট্যাক্সি   এসডিআরএফ   নিহত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন