ওসমানিয়া খেলাফতের করুণ সমাপ্তি ঘটে বিংশ শতাব্দীতে এসে। কিন্তু এমন একটি সমাপ্তি কি তাদের প্রাপ্য ছিল? এই ওসমানিয়া সাম্রাজ্যই তো ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তার ও উত্থান সংঘটিত করেছিল। সেটির চূড়ান্ত পর্যায় ঘটে পঞ্চবিংশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে এসে। সমসাময়িক অন্যান্য তাবৎ ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা তাদের উন্মেষ ঘটায়। এমনই খেলাফতের করুণ পরিণতি আমরা দেখতে পেয়েছি বিংশ শতাব্দীতে এসে।
ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া সেই সাম্রাজ্যর ভার এখন বহন করছে বর্তমান তুরস্ক। লুজান ট্রিট্রির মাধ্যমে তুরস্কের সকল উত্থান বন্ধ করে দেওয়া ইউরোপের শক্তিগুলোর দিনও আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসতে শুরু করেছে বোধ হয়।
১৯২৩ সালে সম্পন্ন হওয়া লুজান ট্রিটির মাধ্যমে ইউরোপের শক্তিগুলো নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যাতে ওসমানিয়া খেলাফতের ভবিষ্যৎ তুরস্ক যাতে কোন মতেই তার পূরবসরির পদচিনহ অনুসরণ করতে না পারে।
বর্তমান আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতারতুক খিলাফতের বিভাজনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করার পরেই দেশটিতে সেকুল্যার ধ্যান ধারণার প্রচলন শুরু করেন। দেশটিতে নারী পুরুষের অবাধ চলাফেরা এবং সম্পূর্ণ ইউরোপের রীতিনীতি প্রচলনে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালু করেন। তিনি ব্যাপক আকারে ইসলামের বিরোধী ছিলেন। যার কারণে তিনি দেশটি থেকে ইসলামের সকল প্রকার ইতিহাস মুছে ফেলার যথেষ্ট চেষ্টা করেন।
তার মৃত্যুর পর দেশটিতে বেশির ভাগ সময় সামরিক শাসনের আওতায় থাকে। এর ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তেমন একটা অগ্রগতি না হলেও সামরিক দিক থেকে দেশটি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ব্যাপক আকারে সহযোগিতা পেতে আরম্ভ করে। নিজেদের সামরিক শিল্পের এই উন্নয়ন ব্যাপক আকারে দেশটিতে অন্যর উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে শুরু করে। গড়ে উঠতে থাকে পশ্চিমা আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম তৈরির নানা কারখানা। ইউরোপের সহযোগিতার পিছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে দেশটির সেকুল্যার দৃষ্টিকোণ এবং পশ্চিমাদের চাটুকারিতা করার মানসিকতাকে।
তবে সবকিছু ভোজবাজির মত পাল্টে যেতে শুরু করে যখন দেশটিতে ক্ষমতায় আরোহণ করেন রিসেপ তায়েফ এরদোগান। দেশটিতে প্রথমবারে মত কোন ইসলামিক দল (একে পার্টি) ক্ষমতায় এলে মানুষের মত যে আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে তা বুঝতে শুরু করেন দেশটির রাজনৈতিক মহল। ক্ষমতায় এসে এরদোগানকে সবার প্রথম লড়াই করতে হয় দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সাথে। তিনি সেনাবাহিনীর অনেক রীতিনীতি পরিবর্তন করে ইসলামিক চিন্তাধারাতে পরিবর্তন করেন। যার কারণে ২০১৬ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ। তবে সেদিন জনগণের একক প্রচেষ্টায় বেঁচে যান তিনি। এরপর সংবিধান পরিবর্তন করে দেশটির একক ক্ষমতার দখল নেন এরদোগান।
এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তুরস্ককে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে সম্পৃক্ত করতে শুরু করেন। এর ফলে দেশটির সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে মধ্যপ্রাচ্যর শক্তিশালী ক্ষমতাধর দেশ সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যতে বহু দিন ধরে চলে আসা সৌদি আরবের একক ক্ষমতায় ভাগ বসাতে শুরু করে তুরস্ক।
সৌদি-আমিরাতের সাথে তুরস্কের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে যখন সৌদির নেত্তিত্বে আরব বিশ্বের ১০টি দেশ কাতারের সাথে সকল রকমের কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়। সেই সময় একাকী কাতারের পাশে এসে দাঁড়ায় এরদোগানের তুরস্ক। দেশটিতে সকল ধরণের খাদ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে দেশটিকে বহিশক্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য কাতারে নিজ দেশের সেনাবাহিনী মোতায়েন করে তুরস্ক সরকার।
এছাড়া সৌদি আরবের ডেরা থেকে অন্যান্য মুসলিম দেশ কে বের করে নিয়ে আসতে সৌদির সবচেয়ে বড় শত্রু ইরানের সাথে জোট বাধতে শুরু করে তুরস্ক। এর জোটে সামিল করতে শুরু করে পাকিস্তান, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশের মত উদীয়মান মুসলিম শক্তিগুলোকে। যদিও এইসকল দেশগুলোকে সৌদি আরব প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রাখে তুরস্ক কিংবা ইরানের সাথে জোট বাঁধতে তবুও এই জোট গত এক শতাব্দী ধরে চলে আসা একক এই সৌদি প্রভাব থেকে মুক্ত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে চলেছে।
এছাড়া তুরস্ক নিজের দেশের সীমান্তে সিরিয় বাহিনী ও কুর্দিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে আসছে। দেশটি তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য কুর্দিদের সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে। তার সিরিয়া সীমান্তে যেখানে কুর্দি বিদ্রোহীরা অবস্থা সেখানে নিয়মিত ভাবে সিরীয়ান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই হামলা পরিচালনা করে আসছে। এর ফলে সীমান্ত অঞ্চলে তুরস্কের অধিপত্যর এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
তুরস্ক আস্তে আস্তে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়াতেও নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে শুরু করেছে। দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সম্পূর্ণভাবে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে শুরু থেকেই। যার ফলে ভঙ্গুর লিবিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার আস্তে আস্তে বেশ শক্তিশালী ভূমিকায় চলে আসে। বিদ্রোহী দল খলিফা হাফতারের বাহিনীকে বেশ কিছু অঞ্চলে তুরস্কের সরাসরি সহযোগিতায় পরাজিত করতে সক্ষম হয় লিবিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার। এর ফলে দেশটিতে এবং পশ্চিমা বিশ্বে তুরস্ককে নিয়ে নতুন করে সমীকরণ শুরু হয়।
লিবিয়াতে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার সময় দেশটি আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া মাঝে যুদ্ধেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘদিন আর্মেনিয়ার হাতে দখল থাকা নাগর্নো-কারাবখ অঞ্চল দখল করতে সক্ষম হয় আজারবাইজান। এই যুদ্ধে আর্মেনিয়াকে সরাসরি সহযোগিতা করে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া সহ অনেক পশ্চিমা দেশ। এর পরেই তুরস্কের সহযোগিতার সামনে হাত মানতে বাধ্য হয় অন্য সকল দেশ।
তবে তুরস্ক নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা তৈরি হয় মেডিটেরিয়ান সী তে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কে কেন্দ্র করে। তুরস্কের সাথে এবার সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে গ্রীস। এর সাথে যোগ হয় মিশরের নাম। তবে গ্রীসের সাথে দ্বন্দ্বে সরাসরি তুরস্ককে যুদ্ধের হুমকি দেয় ফ্রাস সরকার। ফ্রাস গ্রীস কে সরাসরি সহযোগিতা করার জন্য ব্যাপক আকারে যুদ্ধ বিমান থেকে শুরু করে নিজেদের সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ করে মেডিটেরিয়ান সাগরে। সেই সময়কার অবস্থা এমন এক করুণ পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো যে, যেকোনো সময় তুরস্ক ও গ্রীসের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে আর একে কেন্দ্র করে আরো যুদ্ধ জড়িয়ে পড়তে পারে পশ্চিমা আরো অনেক দেশ।
তবে তুরস্কর সাথে সর্বশেষ ঝামেলা বাধে তুরস্কের বহু দিনের পুরোন বন্ধু আমেরিকার সাথে রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনা কে কেন্দ্র করে। এর ফলে আমেরিকা তুরস্কের কাছে পঞ্চম প্রজন্মের আধুনিক বিমান এফ-৩৫ বিক্রি বন্ধ করে দেয় এবং তুরস্কের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে। কিন্তু তুরস্ক এতে একটুকু না টলে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। যার ফলে পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে শুরু করে তুরস্ককে এত সহজে দমানো সম্ভব হবে না।
তবে এই সকল পরিক্রমা থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে তুরস্কে আটকে রাখা লুজাজ ট্রিটি যখন শেষ হওয়ার দ্বার প্রান্তে ঠিক তখনি তুরস্ক আবারো তার আগে দাপটে ফিরতে শুরু করছে। যার ফলে পশ্চিমা বিশ্ব তুরস্কের এহেন আক্রমণাত্মক আগ্রাসনকে নিজেদের হুমকি ভাবতে শুরু করেছে যেটি হয়তা তুরস্কের জন্য ভবিষ্যতে বেশ ঝামেলার উদ্রেক তৈরি করতে পারে। তবে এখন দেখার বিষয় তুরস্ক এই সকল ঝামেলা থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে কিভাবে আরো গতিশীল অবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের পূর্ণিমার চাঁদকে ‘পিঙ্ক মুন’ বা ‘গোলাপি চাঁদ’ নামে ডাকা হয়। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতের আকাশে এই চাঁদের দেখা মিলবে। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই চাঁদ দেখা যাবে।
এপ্রিলের পূর্ণিমার চাঁদের আরও নাম রয়েছে। যেমন- ‘ফিশ মুন’ (মাছ চাঁদ), ‘গ্রাস মুন’ (ঘাস চাঁদ) ও ‘এগ মুন’ (ডিম চাঁদ)।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিটে পূর্ণ গোলাপি চাঁদের দেখা মিলবে। অন্যদিকে ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় এই গোলাপি চাঁদ পূর্ণরূপে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে আগামীকাল বুধবার।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী যখন সূর্য ও চাঁদের মাঝবরাবর অবস্থান করে, তখনই পূর্ণ চাঁদ দেখা যায়। তবে নাম গোলাপি হলেও এপ্রিলের এই পূর্ণ চাঁদের রং কিন্তু পুরোপুরি গোলাপি নয়। কোথাও কোথাও কমলা রঙেও চাঁদটি দেখা যেতে পারে। রাত বাড়ার একপর্যায়ে চাঁদটি উজ্জ্বল সাদা রং ধারণ করবে। এছাড়া ধোঁয়াসহ আবহাওয়াগত নানা কারণে এই চাঁদ চোখে গোলাপি রঙে দেখা দেবে না। সাধারণত সোনালি রঙেই তা দেখা যাবে।
বিশ্বজুড়ে পূর্ণিমার চাঁদের বিভিন্ন নাম রয়েছে। আর এসব নাম এসেছে বিভিন্ন ঋতু, ঐতিহাসিক ফসল, এমনকি কোনো প্রাণীর বিচিত্র আচরণ থেকে। গোলাপি চাঁদ নাম এসেছে আমেরিকা অঞ্চলে বসন্তের শুরুতে ফোটা একটি বুনো ফুল থেকে।
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে। সাত দফার এই নির্বাচন শেষ হবে আগামী ১ জুন। ভোট গণনা ৪ জুন।
এমপি হিসেবে নির্বাচিত হলেন দলের সুরাত কেন্দ্রের প্রার্থী মুকেশ কুমার চন্দ্রকান্ত দালাল। নির্বাচনী ময়দান থেকে তার প্রতিপক্ষরা সরে দাঁড়ানোয় ওয়াক ওভার পেয়েছেন ৬২ বছর বয়সী দালাল। সোমবারই তাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জয়ের সনদও তুলে দেয়া হয়।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মুকেশের এই জয়ের পরই গুজরাট রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সি.আর পাতিল তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রবিবার এই কেন্দ্রে মুকেশের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস প্রার্থী নীলেশ কুম্ভানির মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় রিটার্নিং অফিসার সৌরভ পারধি। কারণ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তিন প্রস্তাবকের কেউই নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে উপস্থিত ছিলেন না ফলে প্রার্থীর সমর্থনে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরও করতে পারেননি। পরবর্তীতে সুরাত কেন্দ্রে নীলেশের পরিবর্তিত প্রার্থী হিসেবে সুরেশ পাডশালাকে মনোনয়ন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু তার মনোনয়নপত্রও অবৈধ বলে গণ্য হয়। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দান থেকে বেরিয়ে যায় কংগ্রেস।
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে। সাত দফার এই নির্বাচন শেষ হবে আগামী ১ জুন। ভোট গণনা ৪ জুন। এমপি হিসেবে নির্বাচিত হলেন দলের সুরাত কেন্দ্রের প্রার্থী মুকেশ কুমার চন্দ্রকান্ত দালাল। নির্বাচনী ময়দান থেকে তার প্রতিপক্ষরা সরে দাঁড়ানোয় ওয়াক ওভার পেয়েছেন ৬২ বছর বয়সী দালাল। সোমবারই তাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জয়ের সনদও তুলে দেয়া হয়।